লেখাঃ ইমরান নিলয়
'ছোট একটা গল্প বলব, শুনবেন?'
'বলেন' নিতান্তই অনিচ্ছায় বললাম। ভদ্রতা একটা অভিশাপ। ইচ্ছে করছে লোকটাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে। অনেকক্ষন বসে আছে, উঠে যাবার নামগন্ধ নেই। জগতে কিছু মানুষ থাকে যাদের হাতে পায়ে তেমন কাজকর্ম থাকে না। এদের ধারনা অন্যদেরও কোন কাজকর্ম নেই।
'প্রতিদিন সকালে রহমান সাহেব হাঁটতে বের হন। আজকেও বের হয়েছিলেন। সকালবেলার দুনিয়া দেখতে তার ভালই লাগে। নানারকম মানুষজন দেখা যায়। ইদানিং দেশের অবস্থা ভালো না। মাঝে মাঝেই খবরে গাড়ি পোড়ানোর দৃশ্য দেখানো হচ্ছে। তাই একটু ভয়ে ভয়ে হাঁটতে হয়।
দুনিয়া দেখা শেষ করে বাসায় ফেরার সময়, বড় রাস্তার মোড়ে রহমান সাহেব একটা মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখলেন। পুড়ে কয়লা হয়ে আছে।
তার বাড়ির বিশাল গেইট দিয়ে ঢোকার সময় একটা অদ্ভুত দৃশ্য তার চোখে পড়ল। রাস্তায় কাগজের ঠোঙ্গায় এককেজির মত আলু পড়ে আছে। একবার ভাবলেন এগিয়ে যাবেন, আবার কি ভেবে এগুলেন না। সোজা পাঁচতলায় উঠে গেলেন। তার মাথায় আলুর ঠোঙ্গা ঘুরতে লাগল। কার আলু, এখানে আসল কিভাবে...
শেভ করার সময় রহমান সাহেব আয়নার দিকে চেয়ে চমকে উঠলেন। আয়নায় তার দেখা যাচ্ছে তার কপালের উপর লালকালিতে বড় করে একটা "অ" আঁকা। অথচ তার কপালে কোন 'অ' ছিল না। তিনি তার স্ত্রীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন তার কপালে কোনকিছু আঁকা আছে কিনা। তার স্ত্রী মনোয়ারা অবাক হলেন। বললেন যে কিছুই নেই।'
তিনি থামলেন। 'আপনি কি বলতে পারবেন, রহমান সাহেবের কপালে "অ" আসলো কোত্থেকে?'
'আমি বলব কিভাবে?'
'আমি বলব?'
'বলেন'
'রহমান সাহেব একজন মানুষ। তার কপালে "অ" মানে হচ্ছে মানুষের আগে একটা "অ"। মানে 'অ'মানুষ। আর ভাই আমার গল্প শেষ।'
এইবার মেজাজ বিগড়ালো আমার। 'গল্প শেষ মানে? আলুর ঠোঙ্গার কি হল শেষে...'
ভদ্রলোক জবাব দিলেন না। নীরবে হাসলেন। তার চোখে অদ্ভুত দৃষ্টি। উঠে যেতে যেতে বললেন,
'রহমান সাহেবের মত আলুটাই আপনার কাছে বড় হল। এখানে পোড়া মানুষের চেয়ে রাস্তার উপর একঠোঙ্গা আলু পড়ে থাকাটাই অদ্ভুত। আমরা সেটা নিয়েই বেশি ব্যস্ত।'
তার কন্ঠে একটু যেন অভিমান। আমার ভুলও হতে পারে। তিনি কোনদিক না তাকিয়ে চলে গেলেন।
শেষ কথাগুলো শুনে কি মনে করে হাতের কাছে থাকা আয়নাটা তুলে নিলাম। যা ভেবেছিলাম তা-ই। কপালের ওপর একটা 'অ' আঁকা। লাল কালিতে, বড় করে।