মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ২৩১- ১২ ই ফাল্গুন

লেখাঃ যুব রাজ


-আর কত ঘুমাবি?এখন তো ওঠ!(কণা)
-কয়টা বাজে?(সামি)
-৬ টা বাজতে চলল।
-যাহ্!ফাকে মর।১০ টা বাজার আগেই ডাকতে আসছিস কেন?
-উঠেক না প্লিজ।আর
ডাকতে আসছি,কারন কাল রাত ১২ টার
সময় আমাকে বলেছিস,তোকে যেন এখন ডেকে তুলি।
-মনে হয় ঘুমের মাঝে বলছিলাম!
ভুলে যা।আর এখন একটু ঘুমাতে দে।
প্লিজ...
-তোর ফোনটা একটু দে তো।এই
কথাগুলা রেকর্ড করে রাখি। যাতে পরে আমার আর
চাটি খাতে না হয়।
-আমার মুখের কথাই এখন সব।পরে কিছু
বলব না,যা।আর আমাকে ঘুমাতে দে।
-দেখ দোস্ত,ওঠ।
তোকে ছাড়া তো আমি বের হতেও পারছি না।
-ওই কিলার,এটা কি তোর
বাড়ি যে তোর মা বের
হতে দিবে না।আর বের যদি হতেই পারছিস না,রাস্তাটা পার হয়ে আমার
হাতে হারকিন ধরাতে এলি কি করে! ভালো করে বলছি সোজা রাস্তা পার
হয়ে গিয়ে তোর ঘরে ঢুকবি,তার পর বসে বসে আঙ্গুল চুসবি। খালি ঝামেলা!
-যাবো না আমি।তুই কি করবি কর।
-ভালোয় ভালোয়
বলছি যেতে পারছিস না?যখন
টয়লেটে আটকে রাখব না,তখন বুঝবি।
-তুই কিছু করতে পারবি না।আর
আমি দেখ কি করে তোর
গায়ে পানি মারি।(বলেই মেরে দিল
এক বালতি পানি)
সাথে সাথে এক চোখ
খুলা থেকে বৃদ্ধি পেল আর এক চোখ।আর
শুরু হল লঙ্কাকান্ড!
কনা আর সামির বন্ধুত্ব হল প্রায় মাস
দুয়েক হবে।এর আগে যে কণার কত বন্ধু ছিল তার ঠিক নেই।যাকে ধরে তাকেই
বেষ্ট হিসেবে ধরে।যখন ওর সাথে প্রতারনা করে,মনে মনে একটু
গালি দিয়ে আরেকটা ধরে। এভাবে ঘুরতে ঘুরতেই
পালি হিসেবে এসে গেছে সামি। কাকতালীয়ভাবে বাসাও
হয়ে গেছে রাস্তার ওপার এপার! সেজন্য একেকজনের বাসায়
আরেকজনের যেতে সমস্যা হয় না।
ওদের মারামারি যখন চলছিল,তখনই
রাস্তা থেকে ভেসে এলো গাফ্ফার
চৌধুরীর লেখা আর সুমধুর কন্ঠে গাওয়
গান,"আমার ভাইয়ের
রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী,আমি কি ভুলিতে পারি।" সাথে সাথেই
মারামারি থেমে গিয়ে শুরু হল ঝগড়া...
-ওই বিলাই,আমাকে আগে বলিস
নি কেন যে আজ ২১শে ফেব্রুয়ারী?
-ওরে বানর,কাল
যে বললি একসাথে বের হব,আর এখনই
ভুলে গেলি?
-তোরই তো দোষ,তুই
আমাকে বললি না কেন?
-হল,আমারই দোষ।তাও এখন রেডি হ
অভ্যাসমত আবারও দোষ মেনে নিল কণা। কিছুক্ষন পর
ওরা দুজনে বাসা থেকে বের হয়ে এলো,লক্ষ্য শহীদ মিনার।
রাস্তা থেকে অনেকগুলা ফুল
কিনে নিয়ে গেল শহীদ মিনারে।
ওখানে ফুল দেওয়ার আগমুহূর্তে জাতীয়
সঙ্গীত গাওয়ার সময় চোখ
দিয়ে পানি এসে গেল কনার।
তা দেখে সামি একটু খোচা যে মারল না,তা কিন্তু নয়।
সকলে মিলে একেএকে গিয়ে মিনারে ফুল
দিয়ে এলো।কয়েকজন
নিরাপত্তা বাহিনী সবাইকে সিরিয়ালমত চলার জন্য বলছে।
কিন্তু ওরা খেয়াল করল যে,ওদের সহ মাএ হাতেগোণা কিয়েকটা মানুষের
পা খালি।তাছাড়া প্রায় সকলের পায়েই স্যান্ডেল।এমনকি
নিরাপত্তা বাহিনীদের পায়েও উচু বুট।অথচ যাদের
চাকরি দেওয়া হয়েছে দেশকে রক্ষা করার জন্য।
বিশেষ করে কলেজ ছাএ ছাত্রীদের
পায়েই মডেলিং জুতা।
যারা কি না অদূর ভবিষ্যতে হবে দেশের মাথা।
স্কুলটার এক কোণের এক রুমে ক্লাস
টেনের ছেলেরা এনেছে বিশাল
বিশাল দু চারটা সাউন্ড বক্স!
সেখানে বাজছে দেশের গান।
ওরা দুজন একটা রিকশা নিয়ে চলল বই মেলায়।উদ্দেশ্য কিন্তু বই
কেনা নয়,উদ্দেশ্য হল বই দেখা।ওখানেও
কিছু ইংরেজী রাইটারদের বই!সবচেয়
বেশী দৃষ্টি আকর্ষণ করল
চটি রাইটার,তাসলিমা নাসরিনের
লেখা বইগুলার দিকে।আরও দেখল,ষ্টলগুলায়
বিক্রি হচ্ছে ইংরেজী ক্যালেন্ডার।
পরক্ষনেই মনে হল,আমরা তো পালন
করতে এসেছি ফেব্রুয়ারী!আজ ফাল্গুন
মাসের কয় তারিখ তা ই তো মাথায় নেই!
যে সকল ছেলেমেয়েরা ফাকা ফাকা কথা বলছে,তাদের
অধিকাংশই কথা বলছে বাংলিশে!
মানে হালকা বাংলা,হালকা ইংরেজী।
বাইরের বিভিন্ন জায়গায় বাজছে পিটবুলের গান।
কেউ কেউ রাস্তায় বের হয়েছে,কোট,টাই আর প্যান্ট পরে।
পার্কে ঘুরতে গিয়ে দেখল,বিভিন্ন
জায়গায় এই দিনটি পালিত
হচ্ছে বেশ্যা দিবস,১৪ই ফেব্রুয়ারী হিসেবে।
এসব কিছু দেখে যখন
একটা ভাঙ্গা একটা হৃদয়
নিয়ে রিকশা করে বাসায় আসছিল,তখন
শুনল স্কুলের কোণার রুমটায় বাজছে,সানি লিয়নের পিংক লিপস।!।
অবশেষে বৃদ্ধ রিকশা ওয়ালাটা বলল,
""বাবা সোনারা,তোমাদের হাবভাব
দেখে মনে হচ্ছে আজকের দিনটায়
তোমরা অসুখী!আমিও এদের
কান্ডকলাপ দেখে মেনে নিতে পারছি না।অন্য
ভাষা যাতে না শুনতে বা বলতে হয়
সে জন্য আজকের দিনে কয়েকজন মানুষ জীবন দিছে।কিন্তু এখনকার
ছেলেমেয়েরা এগুলো রক্ষা করা বাদ
দিয়ে আরো অন্য ভাষা টেনে আনছে! শহীদদের স্মরনে খালি পায়ে হাটার
উচিত,আর আমরা উচু জুতা!
আজকে বাংলা কত তারিখ,তা কেউই জানে না।কিন্তু ইংরেজীটা সবাই।
তাহলে বাংলার জন্য ওরা কেন জীবন
দিয়েছিল?এই কি তার প্রতিদান? আমি যুদ্ধ করিনি,কিন্তু যোদ্ধাদের
সবকিছু দিয়ে সাহায্য করেছি।তখন
দেখেছি যুদ্ধে আহত কত যোদ্ধার ভয়ার্ত মুখ।না জানি ১৯৫২ সালের
ওরা কত কষ্ট করেছিল এই ভাষা গ্রহন
করার জন্য!যারা আজ শহীদ হয়েছে,তাদের
তো মারা গেছে দেহটা,এখনও আছে আত্মাগুলো।তোমাদের
কি মনে হয়,ওরা এই দিনটা দেখে মনে মনে শান্তি পাচ্ছে?""
কণা আর সামি কি বলবে বুঝে পাচ্ছে না।আর
বলবেই বা কি করে,ওদের বুকের মধ্যে চাপ
ধরে আটকে আছে একটা মুক্তিযোদ্ধার
আক্ষেপ।।।

এই প্রশ্নগুলোই
যদি আমাকে বা আপনাকে কেউ
করে,পারবেন কি কোন উওর দিতে?