তখন ছোটো অনেকটা , মানে ওই ক্লাস ৫ কি ৬ এ পড়ি....গরমের ছুটি পড়ে গেছে তাই আমি আর বাবা বেড়াতে এসেছি, মা আসেনি কারন মা মামাবাড়ি ছাড়া কোথাও যায় না....জানি না বাপু কি মধু আছে মামাবাড়িতে...যাই হোক এই ঠাকুমার বাড়ি মানে যেখানে এসেছি সেটায় অন্য কেউ আসতেই চাইতো না বিশেষ করে অনামিকা যদি দেখতো তাহলেই আমার হাত শক্ত করে ধরতো কারন আমার জন্মদিনে যখন মেঘ ডাকছিলো আর লোডশেডিং হয়ে গেছিলো তখন আমার হাত ধরে কানে কানে বলছিলো "মা কোথায়" আমি বললাম আমার মায়ের সাথে রান্নাঘরে আছে এই শুনে আমাকে আমাকে জাপ্টে ধরে বললো "আমার খুব ভয় করছে, যুযু আমায় নিতে আসলে আমাকে যেতে দিবিনা তো??? আমায় ধরে রাখবি তো???" আমি বললাম "দ্যাখ আমার হাতে ডিম হচ্ছে, যুযু আসলে এক ঘুসিতে মুখ ফুলিয়ে দেবো...আর বলে দেবো যে আমার মিকাকে যেন আর না ভয় দেখায়....ঠিক আছে??? এবার হাত ছাড়..." হঠাত দুম করে আমাকে চুমু খেয়েছিল পাজিটা....কিন্তু এখন এই বাড়িতে এসে আমি আমার হাতের ডিম গুলো খুঁজে পাচ্ছি না....কেমন যেন বাড়িটা, আসেপাশে একটা বাড়ি নেই শুধু ক্ষেত আর ফাকা জমি....আর এখন আমাকে বাবা চাচা চৌধুরি পড়তে দিয়ে ঠাকুমাকে নিয়ে কোন কাজে গেছে.... ধুর শুধু মনে হচ্ছে চারিদিকে যুযু আর যুযু....এমন সময় কোথা থেকে এক ছেলে হৃজিত, হৃজিত করে ডাকছে....দরজা খুলতেই বললো "খেলবে আমার সাথে???? " আমি সাতপাঁচ না ভেবেই বললাম যে "হ্যা খেলবো কিন্তু কি খেলবো??? " ও বললো গর্ত খুঁড়তে হবে.... আমি কিছু বোঝার আগেই ও আমাকে টেনে দৌড়াতে লাগল.....হেব্বি ফাষ্ট দৌড়ায় ছেলেটা....বাবাকে বলতে হবে, বাবা এরকম ছেলেদের খুব পছন্দ করে...কিন্তু আমরা অনেকক্ষন ধরে দৌড়াচ্ছি এখনতো ভয় ও করছে কারন সন্ধ্যে হয়ে গেছে... এত জোরে দৌড়াচ্ছি যে মনে হচ্ছে যেন উড়ছি....অনেকক্ষন বাদে ও কথা বলল "কি ??? ভয় লাগছে ???" আমারও সোজা উত্তর "হুস ছেলেরা ভয় পায় নাকি ????"....এবার আমরা দাড়ালাম । ইশশশ কী আঁশটে, পোড়ার গন্ধ বেরোচ্ছে....ও যেন কেমন করে হেসে উঠে বলল "চলো খেলা শুরু করি"....আমি সত্যিই এবার ভয়ে ভয়ে বললাম "দেখো রাত হয়ে গেছে আমি তোমাকেই ঠিকমতো দেখতে পারছি না তাহলে খেলবো কি করে ????".....ও বলে উঠলো "আমাকে না দেখলেই তোমার মঙ্গল, দেখো তোমার পায়ের পাশে একটা কোদাল আছে, ওটা হাতে নিয়ে তোমার ঠিক দশ পা দূরে গিয়ে খুঁড়তে শুরু করো...." আমি কিন্তু কিন্তু করছিলাম, আমার এবার কান্না পাচ্ছিলো আর মনে হচ্ছিলো যেন এটাই যুযু.....ওর কথা আমাকে শুনতেই হবে কারন আমি কোন রাস্তা চিনি না আর আজ চাঁদমামাকে দেখাও যাচ্ছে না আকাশে তাই শুধু অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখছি না....এবার আমি ভ্যাএএএএ করে কেঁদে দিলাম কি হলো ভয় করছে নাকি??? ছেলেটা হাসতে হাসতে বলল...আমি কি করবো বুঝতে না পেরে পায়ের কাছে পড়ে থাকা ছোট্ট কোদালটা নিয়ে খুঁড়তে শুরু করলাম.... দেখলাম ছেলেটি চুপচাপ বসে আছে....না নিচে বসে না প্রায় ৪তলা উঁচু একটা গাছে আর অদ্ভুত ব্যাপার হলো আমি শুধু ওর চোখ ছাড়া কিছুই দেখতে পারছিলাম না....আমার ছোট্ট হাতে যদিও কোদালটা ঠিকই ছিল কিন্তু ভয় আর চিন্তা মিলিয়ে একটা খুব বাজে অনুভূতি আসছিল তাই আমি ওকে বললাম আমি আর খেলবো না আমায় বাড়ি পৌছে দাও....কিরকম যেন হেসে উঠল, আমি ভেবে পেলাম না কেন হাসলো, আমি এমন কি বললাম ????
-ভয় পাচ্ছ কেন??? আমি যুযু নাকি ???
-আমি আর খুঁড়তে পারছি না...আমাকে বাড়ি পৌছে দাও প্লিজ....
-আরেকটু যে তোমায় খুঁড়তে হবে হৃজিত নাহলে আমি জিতে যাব আর তুমি হেরে যাবে......
হারার কথা শুনে আমি আরো জোরে খুঁড়তে লাগলাম....
এখন আর ভয় লাগছে না কারন এরমধ্যে অনেক কথা হয়ে গেছে ছেলেটার সাথে....ওর নাম পটলা, ওর বাড়ি এই গ্রামে না, ওদের নাকি ১৫বিঘা জমি, অনেক গরু, বলদ আছে...আমি বলদের পিঠে চড়বো বললে ও বলল যে ওদের বলদগুলো খুব পাজি আর কদিন আগে নাকি ওকে গুঁতিয়ে দিয়েছে....এই শুনে আমি হেসে জিজ্জেস করলাম লাগেনি তোমার ??? ও বলল তখন নাকি খুব লেগেছিল এখন আর লাগে না...এসব বলতে বলতে, আমি আমার ছোট্ট কোদাল দিয়ে খুঁড়ছিলাম, হঠাত খটাস করে একটা শব্দ হল আর কে জেনো "ও মাগো" বলে উঠল আর আমার খোঁড়া জায়গা থেকে এক বীভৎস বিশ্রী গন্ধ বেরোতে লাগল....আমি নাক চাপা দিয়ে ছিটকে সড়ে গিয়ে পটলাকে ডাকলাম কিন্তু কোথায় পটলা??? আমি আর নিতে পারছিলাম না ওই বোটকা গন্ধ, আমার দমবন্ধ হয়ে আসছিল সাথে সাথে দেখলাম একটা চামড়াছাড়া মানে হাতে মাংস নেই বললেই চলে এরকম একটা হাড়বিশিষ্ট হাত উঠল তারপর আরেকটা হাত.... হাতগুলো সোজা রেখে মাথা তুলছে ওই শরীর আর আমি মাকে জোরে ডাকার চেষ্টা করছি কিন্তু ছিটেফোঁটা আওয়াজ বের করতে পারছি না....খুব ভয় লাগছে এর মধ্যে দেখছি ওই কঙ্কালসার শরীর আস্তে আস্তে গায়ের মাটি সড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে উঠে বসছে.....কি বাজে ভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে....আমি নড়তে পারছিলাম না নাহলে পালিয়ে যেতাম....হঠাত চারিদিকে বাবু, বাবু করে কে যেন ডাকছে....আকাশে, বাতাসে একটাই শব্দ পাচ্ছি "বাবু ওঠ".....সব মিলিয়ে যাচ্ছে, মাঠ,গাছ, সেই ভয়ংকর মূর্তি সবকিছু.....
চোখ খুলতেই বাবা বলল "কিরে ওঠ আর কতো ঘুমাবি??? দুপুরে খেয়ে আবার ঘুমাস..." আমি বুঝলাম পুরোটাই স্বপ্ন ছিলো.... বাবা আর ঠাকুমার সাথে ঠাকুমার দুর্দান্ত রান্না খেতে খেতে গল্প শুনলাম এরমধ্যে কালকের স্বপ্নের কথা সম্পূর্ণ ভুলেও গেলাম....কিছুক্ষন পর বাবা চাঁদমামা হাতে দিয়ে বলল "আমি আর জ্যেঠি একটু কাজে যাচ্ছি, তুমি চুপচাপ পড়ো আর কিছু লাগলে মুন্নিকে বোলো, ও ওপরের ঘরে আছে".....এরপর ঠাকুমা বেরোতে বেরোতে বলল "খবরদার একা বাইরে বাইর হবি না একটা পাগলা বলদ কিসুদিন আগে পটলা বইলা একটা তোরি মতো ছ্যামরা রে গুঁতাইয়া মাইরা ফালাইসে, হেইদিন তো আমারেও তাড়া করসিলো......যাইহোক সাবধানে থাকিস".....আমার মনে পড়লো ওই স্বপ্নে দেখা কঙ্কালসার মূর্তিটা অনেকটা ঠাকুমার মতো দেখতে ছিল....তার মানে কি ঠাকুমাকেও ওই বলদ.... ??? এমন সময় শুনতে পেলাম বাইরে থেকে কে যেন ডাকছে "হৃজিত হৃজিত" বলে....