প্রতিদিনের মত কেয়া আর
রূপা ছাদে হাটতে বেরিয়েছে। একটু
পরে দেখে একটা ছেলে ছাদে এসে উদাসভাবে পশ্চিম আকাশের
দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ছেলেটাকে তারা আগেও বেশ
কয়েকবার দেখেছে। ওদের
নিচতলায় তারা দুই ভাই ভাড়া থাকে। ছেলেটা কেমন
যেন অহংকারী। কারও
সাথে মিশে না, কথা বলে না।
সবসময় নিজেকে নিয়েই ব্যাস্ত থাকে।
কেয়ার মাথায় একটা দুষ্ট
বুদ্ধি চাপল। সে রূপাকে বলল,
“চল তো,
ছেলেটাকে বাজিয়ে দেখি।
কিসের এত অহংকার তার?”
-এই যে ভাইয়া
-জী বলুন
-আমাকে তুমি করে বলবেন
প্লিজ, আমি আপনার থেকে বয়সে ছোট
-জি আচ্ছা
-আপনি অনেক্ষণ
থেকে এখানে এক
দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
কি এত ভাবছেন আপনি?
-না। কিছু না।
-কিছু না হলে এভাবে স্টাচুর
মত দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
-জী, এমনিতেই। মন
ভালো লাগছে না। তাই ভাবলাম
ছাদে গেলে হয়তো মন ভালো হবে।
-আপনি তো আপনার ফ্রেন্ডদের
সাথেও আড্ডা মারতে পারেন।
-তা পারি। কিন্তু আমি ওদের
সাথে ফ্রী ভাবে মিশতে পারিনা।
তাই ওরাও আমাকে avoid করে।
-কেন? মিশতে পারেন না কেন?
-জানিনা। আমি হয়তো এরকমই।
-আপনি তো ছাদেও
আসতে পারেন।
-আসা হয় না।
তাছাড়া ছাদে আপনারা থাকেন
তো।
-কেন? ছাদ কি শুধু আমাদের
জন্য?
আর আপনি আবার
আমাকে আপনি করে বলছেন।
-জী, সরি।
-ওকে শুনুন, এরপর
থেকে আমাকে আপনি করে বললে আপনাকে আমি ছাদ
থেকে ফেলে দেবো।
-জী আচ্ছা।
-উফ! অসহ্য।
-কি?
-কি আবার? আপনি।
-ও, আচ্ছা।
রেগে সেখান
থেকে চলে আসলো কেয়া।
কি ছেলেরে বাবা! জী, আচ্ছা ছাড়া কোন
কথা বলতে পারেনা। এত লাজুক
হলে কিভাবে চলে?
রূপা : কিরে, এত রাগার
কি আছে?
-দেখিস না? অপদার্থ একটা।
-তবে ছেলেটা বোধহয় খারাপ না।
কোনও খারাপ ছেলেদের
সাথে মেশে না। মনে হয়
সিগারেটও খায় না।
-ও তো ভালো ছেলেদের সাথেও
মেশে না।
তুই এত কিছু জানলি কি করে?
-আমাদের তো লাভ ম্যারিজ। তোর থেকে আমার এসব
ব্যাপারে অভিজ্ঞতা একটু বেশিই আছে।
-তো আর কি বুঝলি?
-
ছেলেটাকে অহংকারী ভাবছিলাম।
কিন্তু ও সে রকম না। একটু
লাজুক প্রকৃতির।
-একটু না পুরোটাই লাজুক।
আমড়া কাঠের ঢেঁকি একটা।
-আচ্ছা তুই তো একটা প্রেম
করতে চাস বলছিলি। ওর
সাথে করবি না কি?
-ওর সাথে? আমার রুচি কি এতটাই
খারাপ?
-ধুর!
আমি কি সত্যি সত্যি প্রেম
করতে বলছি নাকি? কিছু দিন
বাজিয়ে দেখ। সময়ও কাটবে, মজাও
নিতে পারবি। পরে না হয়
ছেড়ে দিস।
-তা অবশ্য খারাপ বলিস নি। চল
তো।
-এই যে ভাইয়া
-জী বলুন।
-আবার?
-না মানে, জী বল।
-আপনার মন কি ভাল হল?
-জানি না। তবে খারাপ
লাগছে না।
-তাহলে প্রতিদিন
ছাদে আসবেন। মন ভালো থাকবে।
-জী দেখব।
-আপনার কথায় কথায় জী বলা বন্ধ
করবেন?
-জী আচ্চা। না মানে,
চেষ্টা করব।
-আর শুনুন, কাল থেকে প্রতিদিন
ছাদে আসবেন কিন্তু।
-জী আচ্ছা।
-উফ! অসহ্য।
-কি?
-কি আবার? আপনি।
-ও আচ্ছা।
কেয়া আবারও রেগে চলে এল।
কেয়া : উফ! এর সাথে কথা বললেই
মেজাজ খারাপ হয়ে যায়, আর তার
সাথে প্রেম করবো আমি?
অসম্ভব।
-দেখ, ছেলেদের
তৈরি করে নিতে হয়। তাছাড়া এই
ধরনের ছেলেদেরকে তোর মনের মত
তৈরি করে নিতে পারবি।
-থাক। আর উপদেশ দিতে হবে না।
কাল ও আসলে কিভাবে শুরু
করবো তাই বল।
যা হোক। পরের দিন
ছেলেটা ছাদে আসল। আগের মতই
কথা বলছে ছেলেটা। নিজ
থেকে কিছু বলছে না। শুধু
কেয়ার প্রশ্নের উত্তর
দিয়ে যাছে। আর “জী, আচ্ছা”
বলে তার মাথা গরম করে দিচ্ছে।
কেয়া ভাবে, “খারাপ না। দেখি,
কতদূর আগানো যায়।”
***
তিন মাস হয়ে গেল। প্রায়
প্রতিদিন ও ছাদে আসে। তাদের
মধ্যে কথা হয়। বেশ বন্ধুত্বও
তৈরি হয়েছে তাদের দুজনের
মধ্যে। এখন আর আগের মত “জী,
আচ্ছা” বলে কেয়ার
মাথা খারাপ করে দেয় না।
কেয়া ভাবে, “রূপা ঠিকই
বলেছিল। এসব ছেলেদের নিজের
মত করে তৈরি করে নেয়া যায়।
কেন যে মেয়েরা স্মার্ট
ছেলেদের পছন্দ করে??
বুঝি না আমি।
কিন্তু ইডিয়েটটা তো এখন
পর্যন্ত আমাকে প্রপোজই করল
না। এত ভীতু ছেলেদের নিয়ে এই
এক সমস্যা।
এত ভাবে বোঝালাম
যে আমি ওকে ভালোবাসি, তবুও
ও বোঝেনা। না ভুল বললাম।
বোঝে ও। আমার মনে হয় আবীরও
আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু
বলতে সাহস পায় না।
কি যে করি ওকে নিয়ে।”
কেয়া ভাবছে প্রপোজটা সে নিজেই
করে দেবে। কিন্তু রূপার বারণ।
ও বলে, প্রপোজ ছেলেদের
দিয়েই করাতে হয়। তাছাড়া যার
এতটুকু সাহস নেই, তার প্রেম
করার দরকার কি?
-তাহলে কি করবো আমি?
-তার ভেতরে সাহস
তৈরি করে দিতে হবে।
-কিন্তু কিভাবে?
-সিম্পল। একটানা তিন দিন তুই
ছাদে আসবি না। ওর সাথে কোনও
যোগাযোগ রাখবি না। ও
একা একা এসে যখন ঘুরে যাবে,
যখন তোকে মিস করা শুরু করবে,
তখন ওর সামনে আসবি।
দেখবি, গর গর করে ওর পেটের
ভেতরের সব কথা বের হয়ে আসবে।
-ওর সাথে তিন দিন
দেখা করবো না?
-আর ন্যাকামি করিস না।
তা না হলে কোনও দিনই ও
তোকে প্রপোজ করবে না।
দুই দিন হয়ে গেল।
কেয়া ছাদে যায় না। আবীর
ছাদে গিয়ে নাকি একা একা দাড়িয়ে থাকে।
কেয়ার খুব খারাপ লাগছে ওর
জন্য। না জানি কত কষ্ট
পাচ্ছে বেচারা।
নাহ, আর কষ্ট
দিতে ইচ্ছে করছে না। দুই দিন
তো হল। আজ সে যাবে। সেই
প্রপোজ করবো আবীরকে। হোক
না একটু ব্যাতীক্রম,
তাতে কি? অবশ্য
রূপা ওকে অনেক বারণ করছে।
-শুনব না। আমি আজ কারও কথা শুনব
না। আমার
ভালোবাসাকে আমি রূপার
কথায় কষ্ট দেবো নাকি?
-এই যে ভাইয়া,
আপনি দাড়িয়ে আছেন?
-তুমি এতদিন আসোনি কেন?
-এতদিন কোথায়? দুই দিন।
-ওহ। তাই তো।
আমি আসলে তোমাকে কিছু
বলতে চাই।
আমি ছোটবেলা থেকেই তেমন
কারও সাথে মিশতাম না। তাই
তেমন ভাল বন্ধুও নেই আমার।
তুমি আমার বন্ধু হলে। আমার
সবচেয়ে ভালো বন্ধু।
তোমাকে আমি হারাতে চাই না।
আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হবে এই
ভয়ে তোমাকে বলা হয়নি আমার
মনের কথা।
কিন্তু এই দুই দিন
মনে হচ্ছে তোমাকে না বললে হয়তো এভাবেই
একদিন হারিয়ে যাবে তুমি।
আমি আসলে বন্ধুর চেয়েও
বেশি কিছু ভাবি তোমায়। কি করবো বলো? অবুঝ
মনতো যুক্তি বোঝে না।
আমি... আমি... আমি তোমাকে Love You.
বলেই চোখ বন্ধ করে ফেলল আবীর। অজানা ভয়ে।
চোখ খুললে হয়তো দেখতে পেত
ওর সামনের মানুষটির মুখে পরম খুশীর ছাপ। কিন্তু
দু’চোখে অশ্রু। তবে এ অশ্রু
কষ্টের না। এতদিনের প্রত্যাশিত
জিনিসটা কাছে পাবার আনন্দ অশ্রু।