মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১৩৮- শ্রেয়া

আজ উনি এই উপাধীতে ভুষিত হলেন ।
আজ তার বক্তৃতায় তিনি তার এতদুর
যাবার পেছনে যার অবদান অতুলনীয়
তার কথা বলছেন । ঘটনাটা তখনের যখন আদিব একজন নতুন ক্যাডেট ছিলেন ।
.......
আর্মি ক্যাম্প । আদিব এখানকার নতুন ট্রেইনি । অনেক রুল আছে । যেহেতু এটা আর্মি ক্যাম্প!
: ক্যাডেট আদিব!! (মেজর নীল) আদিব এগিয়ে এসে একটা স্যালুট করলো
- রিপোর্টিং মেজর
: আজকের মত কাজ শেষ । স্টে রিলেক্স

- ওকে মেজর ।
: কল এভ্রিওয়ান টু দা টেন্ট ।
- ওকে স্যার!
সকলকে তাবুতে ডেকে নিয়ে এলো ক্যাডেট আদিবঁ এখানকার সবথেকে বেষ্ট
ক্যাডেট আদিব । আর আদিবদের ব্যাটেলিয়নটা মেজর নীলের
আন্ডারে । মেজর নীল !! বয়স খুব বেশি না । ত্রিশ
হবে না । তিনি এখানকার সবথেকে স্ট্রিক্ট ট্রেইনার । আবার
ট্রেনিং এর বাইরে খুব ভালো লোক । যদিও রুল ছাড়া কিছু উনি বোঝেন না ।
আর তিনি এরকম মিশনগুলো লিড করেন
যেখানে মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে 80%-90% । একবার
উনি বুকে গুলি খাওয়ার কারনে 7 দিন কোমাতেও ছিলেন ।তবুও
ঝুকি নিয়ে মিশনে যেতে চান তিনি । যেন লোকটার মরার খুব ইচ্ছে ।
রাত 9 টা ক্যাডেটরা রান্নাবারা শেষ
করে খাওয়াদা করে যে যার টিমের তাবুতে গিয়ে বসে বসে গল্প করছে ।
আদিব ছিল মেজর নীলের সাথে । ওনারা ছয়জন ছিলেন । ক্যাডেট
আদিব,শিশির,নিলয়,রিয়াদ,শেষ্ট আর
মেজর নীল ।মেজর নীল অবশ্য ক্যাডেট আদিবকে অনেক পছন্দ করতো ।
ক্যাডেটরা তাবুর ভেতর বসে গল্প করছিল নিজেদের জীবনের । কেও
এসেছে বাবার স্বপ্ন পূরন করতে ।কেও এসেছে দেশের জন্য মরতে । হঠাৎ
আদিব বলে উঠলো
: স্যার!!
- এখন আমরা ট্রেনিং এ না আদিব । ভাই বলে ডাকতে পারো
: নীল ভাই! একটা কথা জানার খুব ইচ্ছা
- বলে ফেল
: আপনি এত কড়া ট্রেইনার আবার বড় ভাইয়ের মত । কম বয়সেই এত বড় রেঙ্ক
পেয়েছেন । তবুও বিয়ে করলেন না আর শুধু মৃত্যুর ঝুকি নেয়া মিশনে কেন যান?
- সে অনেক কথা ।
: বলুন আজ শুনি ।কেন বিয়ে করেন নি । মরতেই বা চান কেন?
- কি বলবো!! মরতে চাই । আত্মহত্যা ছাড়া
: কেন? বলুন না প্লিজ
মেজর নীল শুরু করলেন । উনার কথাগুলো ছিল অনেকটা এরকম । আদিবের পুরটা মনে নেই । যতটুকু মনে আছে তা হলো এরকম
"নীল!!ইন্টারের ছাত্র । কৈশরের
মাতাল হাওয়ার জোয়ার তার গায়ে । নতুন বন্ধু বান্ধব আছে আরো অনেক
মজাদার ছিল জীবন । কলেজের 5ম দিন
কলেজে একটা মেয়ে আসে । # শ্রেয়া।
দেখতে এতটা সুন্দর ছিল যে একবার
দেখেই কেও প্রেমে পড়ে যাবে । চোখে কালো চশমা ।চুলে ছোট ছোট
সাতরঙে রঙিন ক্লিপ ।কাঁজল কালো চোখ নীল ওকে দেখেই প্রেমে পড়ে যায় ।
যাকে বলে লাভ এট ফার্সট সাইট । নীল নিজেই ছিল অনেক স্মার্ট আর
অনেক ফরসা । আর ও ভালো বাইক চালাতো নীল কিছুদিন শ্রেয়াকে চোখে চোখে রাখে ।
শ্রেয়াও বারবার তাকাতো । একদিন নীল,লিয়ানা আর রিশাদ তিন
বন্ধু ক্যান্টিনে বসে ছিল । পরের টেবিলে ছিল শ্রেয়া
: নীল!! আমার মনে হয় শ্রেয়া তোকে ভালোবাসে রে!
- ধাত!! তোর মাথা গেছে রিশাদ
> আমারো তাই মনে হয় রিশাদ ঠিক বলছেরে!
: লিয়ানা তুইও?
> ঐ দেখ দেখ ও তোকে কিরকম
চোখে দেখছে! আরে ওভাবে শুধু একজন তার লাভারকে দেখে । প্রোপোজ
করে দে রে । নীল কিছু বললো না ।
কয়েকদিন পর একটা কার্ড আর গোলাপ নিয়ে নীল শ্রেয়ার
সামনে গিয়ে দাড়াল গোলাপটা এগিয়ে দিয়ে বললো
: ভালবাসি তোমাকে শ্রেয়া । ভালোবাসোতো?
- হ্যা!! ভালোবাসি । এটা বলতে এতদিন লাগাবে ভাবিনি
: তুমিও বলতে পারতেতো
- না!! পারতাম না । সব কথার এক কথা লাভ ইউ
শুরু হয়ে গেল তাদের ভালবাসার গল্প । সব ঠিক চলছিল ।ওদের বাবা মাও
জানতো ওদের সবটা । তাদের আপত্তি ছিল না । অনেক অনেক ওয়াদা ছিল ওদের মাঝে
: নীল !আমি যদি মরে যাই?
- শ্রেয়া একটা চর মারবো! তুই মরলে আমি নিজেকে মেরে ফেলবো
: কি? সুইসাইড?? না নীল!
- আচ্ছা তবে এমন কিছু করবো যাতে বাঁচার আশা নেই কেঁদে ফেললো শ্রেয়া । নীলের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ
করে রাখলো ও দিন থেকে মাসে পড়লো ওদের
ভালোবাসাটা হঠাৎ একদিন কি যেন হলো ।
একটা রেসটুরেন্টে দুপুরের খাওয়া শেষ করে বেরোবার সময় মাথা ঘুরে পড়ে যায় শ্রেয়া!
: এই শ্রেয়া!! কি হলো? আরে!!
শ্রেয়াকে দুই হাতে তুলে দৌড়ে একটা হসপিটালে নিয়ে যায় নীল । 1 ঘন্টা পর ওর জ্ঞ্যান
ফিরে আসে ।ডাক্তার রিপোর্ট দেয়
যে শ্রেয়ার ব্রেন টিউমার । নীল শ্রেয়াকে কিছু বলে না । কিন্তু
ডাক্টার আর নীলের কথা শুনে ফেলে ও । জেনে যায় সব ।
নীল শ্রেয়ার বাবা মাকে জানায় । ওনারা ডাক্টারের
সাথে কথা বলে জানতে পারেন যে অপারেশন লাগবে । বাঁচার
আশা কম । তবুও শ্রেয়া অপারেশন করাতে চায়
কয়েকমাস পর অপারেশন হয় ওর ।4 দিন
কোমায় থাকে ও । পরেরদিন জেগেছিল ও আর নীলকে বলেছিল
: নীল!! আমার সময় শেষ! কথা দিয়েছিলে নিজের ক্ষতি করবে না । কথা দাও কথা রাখবে
- কিচ্ছু হবে না তোমার । আমি কথা দিচ্ছি
: লাভ ইউ নীল
- লাভ ইউ টু অনেক কষ্টে এতটুকু বলেই
ওপারে পাড়ি জমায় শ্রেয়া আর অন্ধকার হয়ে যায় নীলের জীবৎ । তার
কানে বাঁজতে থাকে শুধু শ্রেয়াকে বলে একটি কথাই
"আচ্ছা তবে এমন কিছু করবো যাতে বাঁচার আশা নেই"
.......
1 বছরের মাঝে সে আর্মি জয়েন করে উচ্চ পদে পৌছে যায় ।
আর বাছাই করে এরকম মিশনে যায় যেখানে মরার চান্সেস থাকে ।
.......
আদিবরা মেজর নীলের কথা শুনে অনেকটা সময় চুপ ছিল । আদিব
ভাবলে "সত্যি ভালবাসার জন্য সব করা যায়" ।তার চোখের কোনে জল
আসে কয়েক ফোটা সেদিন মেজর নীলের কথা শুনে ভোর
চারটায় ওরা ঘুমিয়ে যায় এরপর কয়েকমাস কেটে যায় । মেজর
নীল একটা আন্ডারকভার এজেন্টের মিশনে যায় । তারপর আদিব আর মেজর
নীলের কথা জানতে পারে নি তবে এতটুকু জেনেছিল যে ঐ
মিশনে কাজ করতে করতে একদিন বর্ডারে গুলাগুলিতে মুখোমুখী যুদ্ধে 17
টা গুলি শরীরে নিয়ে শ্রেয়ার কাছে চলে যায় মেজর নীল.......
জেনারেল আদিব তার বক্তৃতা শেষ করলেন মেজর নীল আর শ্রেয়ার
পরকালে এক হবার দু'আ চেয়ে কথাগুলো শুনে সকলেই চুপ হয়ে যায় !
জেনারেল আদিবসহ অডিয়েন্সের চোখে জল চলে আসে ........