মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১৮৭- ভাগ্য বিড়ম্বনা

লিখাঃ- 'হাসান'

অনেকক্ষন থেকেই জ্যামের মধ্যে আটকা পড়ে আছেন
ঢাকা শহরের অন্যতম একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি জনাব আদনান সাহেব।
এসব জ্যামের মধ্যে আটকা পড়া আদনান
সাহেবের কাছে নতুন কোন ব্যাপার না,এরকম জ্যামে প্রায়
প্রতিদিনই উনাকে পড়তে হয় তবে আজকে কি জন্য একটু
বেশি বোরিং লাগছে। তাই উনি গাড়ির
গ্লাসটা খুলে বাইরের দিকে তাকাতেই একটা রিক্সার
দিকে চোখ পড়লো।আর ঐ রিক্সায় বসা দু'জন মানুষের
মধ্যে একজনকে উনার খুবই পরিচিত মনে হচ্ছে।তাই একটু খেয়াল
করে ঐ মেয়েটির মুখ দেখতেই উনার আর
চিনতে বাকি রইলো না কারন সে যে আর কেউ নয় উনার জীবনের
সেই রাজকুমারী,যাকে নিয়ে এখন উনার এখন সংসার কথা কিন্তু
দূভাগ্যবশত সে এখন অন্য একজনের সাথে সংসার করছে।আদনার
সাহেব উনার বুকের ভিতর একটা অস্পষ্ট ব্যথা অনুভব করলেন আর
সাথে সাথে গাড়ির গ্লাসটা লাগিয়ে দিলেন।
কিছুক্ষনের মধ্যেই জ্যামটা ছেড়ে দিয়েছে,আদনান
সাহেবের গাড়িটাও চলতে শুরু
করেছে তবে উনি এখন বাড়ি যাবেন না।উনার প্রবল
ইচ্ছা হচ্ছে যে উনি আরিবার বাসাটা একটু
বাইরে থেকে দেখে আসবেন আর তাই উনি ড্রাইভারকে ঐ
রিক্সাটা ফলো করতে বললেন।ও হ্যাঁ আপনাদেরকে তো বলাই হয়
নি ঐ রিক্সায় বসা মেয়েটির নামই আরিবা।
উনার গাড়িটা এখনও রিক্সার পিছে পিছে যাচ্ছে,রিক্সাটা
এখন একটা সরু গলির ভেতর
দিয়ে ঢুকেই একটু সামনে থেমে গেল।আর আদনান
সাহেবের গাড়িটা মূল সড়কেই থেমে যায়,ওখান থেকেই
উনি দেখতে পেলেন যে আরিবা রিক্সা থেকে নামছে আর
ওর হাতটা ধরে আছেন একজন ভদ্রলোক।ঐ ভদ্রলোকই
যে আরিবার স্বামী এটা উনি এই দৃশ্যটা দেখেই নিশ্চিত হলেন।
আরিবা আর তার স্বামী রিক্সা থেকে নেমেই ঘরে ঢুকে পড়লেন আর আদনান
সাহেব আরিবাদের বাসাটা একটু ভাল করে চোখ
বুলিয়ে দেখে নিচ্ছেন। বাসাটা এভাবে দেখার
কারনটা হচ্ছে উনার কাছে বিশ্বাস হচ্ছে না যে,এটাই আরিবার স্বামীর বাসা।আর বিশ্বাস
না হওয়ার পেছনের কারনটা হচ্ছে আরিবার বিয়ের
সময় উনি জেনেছিলেন যে আরিবার শ্বশুর বাড়ির
লোকের অনেক ধনী।আর তাই উনি এত চিন্তা করছেন কারন এ
ধরনের বাসাতে নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকেরাই বসবাস
করে। আদনান সাহেবের মাথাটা আর
ঠিক মত কাজ করছে না,তাই উনি চিন্তা করা বাদ
দিয়ে গাড়ির সিটে মাথাটা একেবারে এলিয়ে দিলেন
আর ড্রাইভারকে গাড়িটা ঘুরিয়ে বাসায় চলে যেতে বললেন।
পরদিন সকালে আদনান সাহেব উনার অফিসে এসেই উনার একজন
একান্ত সহকারীকে আরিবার বাসার ঠিকানাটা দিয়ে তাদের পারিবারিক বর্তমান
এবং অতীতের অবস্থা সম্পর্কে তথ্য যোগাড় করতে বললেন।
বিকেলে আদনান সাহেবের
সহকারী যখন উনাকে আরিবাদের অবস্থা সম্পর্কে জানাল তখন
উনি তো একটা বিরাট ধাক্কা খেলেন।
কারন উনার সহকারীর তথ্যমতে,আরিবার স্বামীদের
অবস্থা পাচঁ বছর আগে অনেক ভাল
ছিল।তাদের নিজস্ব দুটো কাপড়ের গার্মেন্টস,ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায়
অনেকগুলো ফ্ল্যাট এবং নিজস্ব গাড়িও ছিল।কিন্তু ভাগ্যের
নির্মম পরিহাসে তাদের গার্মেন্টস দুটোতে তাদের
কোনও এক পূর্ব শত্রু আগুন ধরিয়ে দেয়।যার কারনে তাদের
কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে যায়।আর এই
টাকাগুলো ব্যাংক থেকে লোন হিসেবে আনা হয়েছিল,আর
গার্মেন্টস জ্বলে যাওয়ায় এই ব্যাংকের টাকাগুলো পরিশোধের জন্য সমস্ত
সম্পত্তি বিক্রি করে দিতে হয়েছে। যার কারনে এখন সমস্ত পরিবার
এখন ঐ ছোট বাসাটিটে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকেন।
আর আরিবার স্বামী একটা এনজিওতে ছোটখাট
একটা চাকরি করেন। আদনান সাহেব তার সহকারীর মুখ
থেকে কথাগুলো শুনে আশ্চর্য হয়ে আছেন। উনার মনের মাঝে এখন আরিবার
সাথে হওয়া শেষ কথাগুলো খুবই মনে পড়ছে,ঐ দিন যখন আরিবার
সাথে আদনান সাহেব দেখা করেছিলেন তখন আরিবাই প্রথমে উনাকে বলেছিল,
-
আদনান,তুমি আমাকে চিরজীবনের জন্য ভুলে যাও!
-এ কি বলছও তুমি,আরিবা।
-হ্যাঁ সত্যিই বলছি এবং আমার বিয়েটাও ঠিক হয়ে আছে,কয়েকদিনের মধ্যেই বিয়ে হয়ে যাবে।
-তাহলে আমার কি হবে?
-তুমিও কিছুদিন পর সুন্দর দেখে একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিও। 
-কিন্তু আমি তো শুধু তোমায়
ভালবাসি। তোমার জায়গায়টা আমি আর অন্য কাউকে দিতে পারব না। তুমি আমাদের রিলেশনের
কথাটা তোমার পরিবারে বলে দাও,হয়তবা উনারা এটা মেনে নেবেন।
-অসম্ভব ব্যাপার,
আব্বু কখনই রাজি হবেন না।
-তাহলে চলো দু'জন
পালিয়ে বিয়ে করে ফেলি।
-
আচ্ছা,পালিয়ে বিয়ে করে আমাকে খাওয়াবে কি।
-আপাতত যেগুলো প্রাইভেট পড়াই তাতেই আমাদের
সংসারটা চলে যাবে।আর কিছুদিনের মধ্যেই একটা চাকরির
ব্যবস্থা করে ফেলব ;তুমি কোন চিন্তা করো না।
-আমি তোমার এসব খামখেয়ালী কথায় কখনই তোমার সঙ্গে পালিয়ে যাব না।
-ওও এটাই কি তোমার শেষ কথা।
-হুম,আমি এখন যাই।
-আচ্ছা যাও, আর
একটি কথা মনে রেখো,'অর্থ-সম্পদ সবসময় মানুষের
কাছে থাকে না,কিন্তু সত্যিকারের ভালবাসা আজীবন
বজায় থাকে;যা দিয়ে কুড়েঁঘরেও অনেক সুখে থাকা যায়'।
-আচ্ছা।
এই বলে আরিবা চলে যায়।আর আদনান সাহেব অনেকদিন পর্যন্ত আরিবার জন্য কান্না করেন;আর
তখন থেকেই উনার মাথায় একটাই চিন্তা ছিল যে উনাকেও অনেক
সম্পদের মালিক হতে হবে যাতে একসময়
আরিবা যেন উনার সম্পদ দেখে আফসোস করতে পারে।তাই
তিনি তার জীবনের এই লক্ষ্যটাও অর্জনের যুদ্ধে নেমে পড়েন আর
এদিকে আরিবার ও বিয়ে যায়। আদনান সাহেব উনার কঠোর পরিশ্রমের ফলে অবশেষে দীর্ঘ
পাঁচ বছর পর আজকের এই অবস্থানে আসতে পেরেছেন।
এদিকে আদনান সাহেব হঠাৎ উনার সহকারীর ডাকে সম্বিত
ফিরে পান।এতক্ষন ধরে চিন্তা করায় উনার চোখ
দিয়ে কখন যে কয়েক ফোঁটা অশ্রু বেরিয়ে গেছে তা খেয়াল
করেন নি।তাই উনি তাড়াতাড়ি চোখটা মুছে,চেয়ার
থেকে উঠে পড়েন এবং বাসায় চলে যান।
অতঃপর আদনান সাহেব আরিবার পরিবারের অবস্থার উন্নতির জন্য
আরিবার স্বামীকে উনার কোম্পানিতে একটা চাকরির
ব্যবস্থা করে দেন। চাকরিটা দেওয়ার মূল কারন
উনি কখনই চান না যে আরিবা কষ্টে থাকুক।আর
তাই তো আদনান সাহেব পাঁচ বছর আগে আরিবার ইচ্ছায়
তাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন আর এখন তার সুখের জন্য তার
স্বামীকে একটা চাকরির বন্দোবস্ত করে দিচ্ছেন।আর এই
ছোট ছোট ত্যাগের মাধ্যমেই আদনান সাহেব নিজের সুখটুকুকে খুজেঁ নিবেন।