সংকলন ৯- যে ভাবে ওদের থু থু ছেটেঁ খেতে হলো!
লিখাঃ আহমদ জসিম জার্নাল
মায়ের জন্য ঔষধ আনতে গিয়ে ছিলাম মোড়ের ফার্মেসিতে, অর্থাৎ বড়ুয়া বাবুর দোকানে। ঔষধ হাতে নেওয়ার আগেই শুনতে পেলাম একটা সম্মিলিত কণ্ঠের চিৎকার। চিৎকার আরেটুক স্পষ্ট হতে বুঝতে পারলাম, এটা আসলে একটা মিছিল; স্লোগান ছিল এই রকম: মিলন ভাইয়ের রক্ত বৃতা যেতে দেব না, মিলন হত্যার পরিণাম বাংলা হবে ভিয়েতনাম, ইত্যাদি ইত্যাদি। কর্মব্যস্ত- সব মানুষ যেন কাজ ফেলে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল মিছিলটার দিকে, কিংবা বলা যায় মিছিলটাকে স্বাগত জানাচ্ছে হৃদয় থেকে। মাঝে বড়ুয়া বাবু একবার বলে উঠলেন: ৬৯-এর পর মানুষের এমন গণজাগরণ আর দেখিনি। তারপর ছোট মিছিলটা বড় হয়ে মোড় অতিক্রম করল, মিছিলে যুক্ত হলো মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক মানুষ। এখন আর মনে করতে পারছি না, সেটা আওয়ামীলী নাকি বিএনপির মিছিল ছিল। কিংবা তখন ওই ভাবে দুই দলকে আলাদা করার মতো বোধ বিবেচনাও খুব বেশি হয় নাই। তারপর একদিন ঘুম থেকে ডেকে তুলে আপা বললেন, এরশাদ পদত্যাগ করেছে। এরশাদ পদত্যাগ করলে আমাদের কি লাভ-ক্ষতি? সেই হিসাব কষার বয়স তখনও হয় নি। তবুও আমি মহা খুশি- বড়দের খুশি ছোটদেরও খুশি করবে এটাইতো স্বাভাবিক। ছুটে গেলাম মোড়ে, দেখি এরশাদের একটা পোষ্টারে কেউ থু থু দিচ্ছে, কেউ বা জুতা পেটা করছে। শুধু একজন বৃদ্ধ গর্জন করে বলল: এত থু থু দিয়েও না, ব্রিটিশ দেখছি, পাকিস্তান দেখছি, বাংলাদেশ দেখছি। এই বাঙালিরে আমি চিনি, দেখবা এই থু থু আবার ছেঁটে খেতে হবে। বুকের ভিতর একটা মোচড় দিল। ভাবছি সত্যি বুঝি আমাদের থু থু ছেঁটে খাবার সময় চলে এসেছে।