মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১৩৬- অর অর অরপিতা (অর্পিতা )

লিখা >মহাকালের সৈনিক

~কি ব্যাপার এখনও বিছানা গুছাচ্ছিস
না কেন ?
~প্রতিদিন বিছানা গুছাতে গুছাতে আমি ক্লান্ত মা ,এবার একটা বউ এনে দেও ।
~দেখছো কেমন বজ্জাত ছেলে ।। আমি যে এত বছর ধরে তোদের রান্না বান্না করে খাওয়াচ্ছি তাতে তো আমার ক্লান্তি আসে না..!
~সেটাই তো ভাবছি মা ।কত কষ্ট করছো ,এখন একটু রেষ্ট দরকার
তোমার ।তাই তো একটা বউ চাচ্ছি ।
~ছিঃ ছিঃ লজ্জা করে না তোর নিজের মায়ের কাছে বিয়ের কথা বলছিস ?
~নিজের মায়ের কাছে বিয়ের
কথা বলবো না তো তবে কি আলম মামার
দোকানে গিয়ে বলবো ,"মামা ,মামা আমাকে একটু বিয়ে করিয়ে দিবা !!!"
.
~আন্টি কার বিয়ের কথা বলছেন ?
~(এই যে আসছে ,অর অর অরপিতা ।
মা কি আমার ইজ্জত ভুলন্ঠিতই
করে ফেলে কি না কে জানে... )আর বল
না ,মা আমার বিয়ের কথা ভাবছেন ।এই
যে বলছি , মা আমি এখন বিয়ে করবো না ।কে শুনে কার কথা ।
মা আমাকে বিয়ে করাবেই ।তুমিই বল অর্পিতা আমার মত নিষ্পাপ বাচ্চার
কি এখন বিয়ে করার বয়স..!! কথাটা শেষ করেই মার দিকে তাকালাম
।মা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে আর
কুখ্যাত সেই ভাজা কাঠি তুলে আমাকে মারার
ইঙ্গিত করলো ।রাস্তাঘাটে বের হলে এখন সরাসরি বন্দুকযুদ্ধ ,বোমা যুদ্ধ সহ নানা ধরনের যুদ্ধে জীবনে বহুত অস্ত্রই দেখেছি কিন্তু এ
ভাজা কাঠি নামক অস্ত্রটির মত অন্য কোন অস্ত্র দেখলে ততটা ভয়
লাগে না ।যখন স্কুলে পড়তাম তখন প্রতিদিন সকালে পিঠে কয়েক
ঘা ভাজা কাঠির স্পর্শ না পেলে ঘুমই ভাঙ্গতো না ।পড়াশোনা যখন শেষ
পর্যায়ে তখন সিগারেট খাওয়ার অপরাধে মা আমার পিঠে গরম
ভাজা কাঠির সেঁক দিয়েছিল ।চাঁদের নাকি কলংক আছে ,আমারও কলংক
এই ভাজা কাঠির দাগ...
.
~অর্পিতা একটা হেল্প করবে ?
~কি ?
~আমার ঘরের বিছানাটা একটু
গুছিয়ে দিবে ?
~কেন আমি আপনার
বিছানা গুছিয়ে দিব কেন ?
~মানবতার খাতিরে...দেখ
অর্পিতা তুমি আমাকে দেখতে পারো না ঠিক
আছে কিন্তু তোমার আন্টিতো তোমার খুব প্রিয় ।আমার অফিসের সময় হয়ে গিয়েছে তাই
বিছানা গোছানোর সময় নেই ।একটু কষ্ট করো না প্লিজ...
~উমম...শখ কত ।আমি পারবো না ।
চললাম...
.
প্রতিদিন সকালের চিত্র এটা । প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই
অর্পিতাকে একই কথা বলি আর অর্পিতাও একই উত্তর দেয় কিন্তু
ঠিকই গুছায় ।না জানি মনে মনে কত বকে আমাকে...
অর অর অরপিতা ।আমাদের পাশের বাসাতেই থাকে ।তবে সারাদিন
আমাদের বাসাতেই থাকে ।আমাদের পরিবারে মা আর আমি ছাড়া কেউ নেই
তাই বাবা মারা যাওয়ার পর অর্পিতাই মার একমাত্র সঙ্গী ।আমি সারাদিন
থাকি অফিসে ।মা সারাদিন একাই বাসায় থাকে ।মার জায়গায়
বাবা হলে একটা শাহ আমানত লুঙ্গি কিনে দিতাম বাবার সারাদিন
চলে যেত ।কারণ বিজ্ঞাপনে আছে ,"বুড়াকালের সঙ্গি ,শাহ আমানত লুঙ্গি.."
.
একদিন বাথরুমে পিছলা খেয়ে পড়ে কোমরে ব্যাথা পেয়েছি । শুয়ে আছি খাটে উপুড় হয়ে আর মা কোমড়ে মুভ দিয়ে দিচ্ছেন ।তখন আসলো অর অর অরপিতা ।
অর্পিতাকে অর অরপিতা ডাকি কারণ অর্পিতা ছোট
থাকতে তুতলা ছিল ,তাকে তার নাম জিঙ্গেস করলে বলত অর অর
অরপিতা ।কিন্তু তুতলামি ছাড়লেও আমি তার নামটা ছাড়তে পারি না..
.
অর্পিতা আমার পিছল খেয়ে পড়ার ইতিহাস শুনে হেসেই খুন ।প্রথমে তার হাসিটা বিরক্তিকর লাগলেও একটুপর আমিও হাসতে লাগলাম..কারণ
মেয়েদের হাসি হচ্ছে নাইট্রাস অক্সাইডের মত ।মেয়েদের
হাসি যেমন হৃদয়ে কাঁপন ধরাতে পারে ঠিক তেমনি মেয়েদের
হাসির মাঝে এক ধরনের গ্যাস আছে । যে গ্যাস বিজ্ঞানীরা এখনও
আবিষ্কার করতে পারে নি ।আপনার যখন খুব মন খারাপ তখন আপনার
সামনে যদি একটি মেয়ে এসে খুব জোরে জোরে হাসে তখন
প্রথমে আপনার বিরক্ত লাগবে কিছুক্ষণ পর মেয়েটির
সাথে আপনিও বেশরমের মত হাসতে থাকবেন তারও কিছুক্ষণ পর
মেয়েটির যখন হাসি থামবে তখন আপনার হৃদয় ঢিপ ঢিপ করতে থাকবে ।
বিশ্বাস না করলে কোন সময় বুকে ধরে দেখবেন...
.
প্রতি শুক্রবার দুপুরে ঘুমায় আমি । বিকেলে যখন ঘুম থেকে উঠলাম
দেখি ,মা বসে বসে কাঁদছে । কি হলো মা কাঁদছে কেন..
>মা কি হয়েছে ,কাঁদছো কেন ?বাবার
কথা মনে পড়ছে ?
>অনেক বড় হয়ে গেছিস তুই তাই না ?
>আমি কি করেছি মা ?
>আমাকে একবার বলতে তো পারতিস
তাই না ?
>কি হয়েছে মা ???
>যা ভাগ এখান থেকে..
.
সাথে সাথে অর্পিতার ফোন..
>আমাকে বিয়ে করার খুব শখ
জেগেছে তাই না ? পালিয়ে বিয়ে করছেন আমাকে ?এসব
বলার সাহস হল কি করে ? বিয়েটা একবার হউক ।তারপর
দেখাবো মজা... আমার সাথে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না । আমি কাকে কি বললাম ???
.
সন্ধ্যায় আমাদের বাসায় অর্পিতার বাবা মা আসলো ,অর্পিতার ছোট ভাই
আর বিয়ের কাজি আসলো ।অর্ঘ (অর্পিতার ছোট ভাই ) নাকি অর্পিতার মার কাছে বলেছে ,আমি আর অর্পিতা প্রেম করি । পালিয়ে বিয়ে করার প্ল্যান করছিলাম আমি ।আমি নাকি অর্ঘকে এসব
বলেছি...
.
অর্ঘের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ।অর্ঘ মুচকি মুচকি হাসছে । কাছে গিয়ে দাড়ালাম ।সে বলছে..
>>দুলাভাই কেমন দিলাম ???তুমিও আপুকে ভালবাসার
কথা বলতে পারছো না ।আর আপুও পারছে না ।তাই
একটা মিথ্যে দিয়ে কত কত সত্য বানিয়ে দিলাম ।চুপচাপ
বিয়ে করে ফেলো.. আমরা বড় হয়েছি মায়ের দুধ
খেয়ে আর আজকালকার পুলাপুন হরলিক্স খেতে খেতেই বড় হয় ।তার
প্রমাণ আবার পেলাম..
.
.
বাসর রাতে সবাই কত ফস্টি নস্টি করে ।কিন্তু আমাকে কান ধরে বসে থাকতে হয়েছে সারারাত । অপরাধ বিয়ের পরেও অর অর অরপিতা ডাকা..
ভেবেছিলাম হয়ত আধ ঘন্টা পর রাগ কমবে কিন্তু না ছয় ছয়টি ঘন্টা কান
ধরে বসে ছিলাম আমি ।আর অর্পিতা বসে বসে আমার ফেসবুকের
আইডিতে মেয়েদের সাথে চ্যাটিং চেক করেছে..
.
সকালে খাওয়ার সময় যখন মাকে বিচার দিলাম ।তখন অর্পিতাই বলে উঠল ~ দেখেন মা ,ও যদি এমন করে তুতলামি করে তবে একদিন
সত্যি সত্যি তুতলা হয়ে যাবে তাই শাস্তি দিলাম ।
আমার মা আর কি বলবে ! হাসতে হাসতেই শেষ ।আমিই বললাম
>সরি অর অর অরপিতা..
>আবার !দাড়াও দেখাচ্ছি মজা ।বলেই
কান
ধরে রুমে এসে দরজা জানালা বন্ধ করলো ।ঢাকার বাসাগুলোতে দিনের
বেলাও সূর্যের আলো আসে না ।তাই রাত আর দিন পার্থক্য নেই ।তাই
দিনেই হল আমাদের বাসর দিন... রুমে ঢুকে অর অর অরপিতা আবার
শেষ বারের মত বললাম ।আর সাথে সাথেই আমার ঠোঁট দিয়ে দু ফোটা তাজা রক্ত গড়িয়ে পড়লো । দাঁতের কি ধার রে বাবা !!! কি টুথপেস্ট ইউস করে কে জানে..!!!