লিখা: বিস্কুট পাগলা(ধূসর কাব্য)
-স্যার আ...আমি যে আপনাকে চোখের সামনে দেখছি তা বিলিভ হচ্ছেনা!
-আমি আপনাকে বিলিভ করতে বলেছি?
-সরি স্যার আসলে আমি আপনার অনেক বড় ফ্যান!
-ও আচ্ছা!তো আমি কি করতে পারি?
-স্যার আমি অপনার সব লিখা নিয়মিত পড়ি!
-তো কি করবো এখন?আপনাকে পুজো করবো!
-না স্যার যদি একটা অটোগ্রাফ দিতেন!
-পারবোনা!যাও এখন!
-প্লিজ স্যার!প্লিজ!
-মহা মুশকিলতো!এই যানতো!যত্তসব!
আসিফ একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক।তার লিখার হাত চমৎকার।বিধাতা যেন তাকে লিখার জন্যই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন!তার লিখার ক্যারিয়ার শুরু হয় কয়েকবছর আগে!বিধাতা এক একজন মানুষকে একেক বিষয়ে পারদর্শিতা দান করেছে!আর আসিফকে দিয়েছন লিখার ক্ষমতা!আর আসিফ তা নিয়ে অহংকার করে!আজ তার অনেক ফ্যান আছে।তার মধ্যে একজন হল তরু!তরু আসিফের বিরাট বড় ফ্যান।আসিফ তাদের শহরে এলে সে তার কাছে কেবল একটি অটোগ্রাফ চেয়েছিলো!কিন্তু অহংকারি আসিফ তরুকে একটুও মুল্য দেয়নি!
তরু ভারাক্রান্ত মনে চলে আসে বাড়িতে!তার মনে খুব আঘাত লাগে!
*******
-কিরে দোস্ত অটোগ্রাফটা দেখা!
-হুম?
-আরে অটোগ্রাফটা দেখা!
-আনিনি!
-কেন?
-আরে স্যার কতো ব্যস্ত মানুষ!বলেছেন পরে দেখা হলে দেবেন!
-কেন মিথ্যে বলছিস তরু!আসিফ স্যার কতোটা অহংকারী তা আমরা জানি!উনি তোকে কি কি বলেছেন তা আমি জানিনা তবে এটুক বলতে পারি উনি তোকে অপমান করেছেন!
-ভাই আমার হাত নেই!থাকলে আমিও লিখতাম!উপরওয়ালা আমাকে কেন যে হাত দিলেন না!
একথা বলে কেঁদে ওঠে তরু!তরুর বন্ধু রাতুল তরুকে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দেয়!তরুর কান্নায় সেখানে দাড়িয়ে থাকা কারো হৃদয় কাপেনি!কেপেছিলো শুধু এক কোনায় দাড়িয়ে থাকা এক ছেলের বুক!ছেলেটি কে ছিলো তাকে কেও দেখেনি!
ছেলেটি মনে মনে ঠিক করে সে ও আজ থেকে লিখবে!কাওকে জানতে দেবেনা সে যে লেখক!কেবল একজন জানবে!যে কিনা তার পরিচিত এক লেখক!
-ভাউ লিখালিখি করবো!কোথাথেকে স্টার্ট করবো বলেন
-আরে ভাউ নো টেনশান!ফেসবুক দিয়ে শুরু কর!আমরা লগে আছি!আমাদের গ্রুপে লিখা দাও!
-ওকে ভাউ!বাট নামটা ছদ্মনাম দিব!
-ওকে ভাউ নো প্রবলেম!
-তো আজ থেকেই শুরুকরে দিই!
-ওকে ভাও!ওয়েলকাম ইন আওয়ার ওয়ার্ল্ড!
ছেলেটির সেই ওয়েলকামের মাধ্যমেই তরুর স্বপ্নের বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠিত হয়!ছেলেট লেখাপড়ার পাশাপাশি লিখতে থাকে ছোট গল্প ও কবিতা!শুরুর দিকে রেসপন্স না পেয়েও সে হাল ছাড়েনি!লিখার পরিমান বাড়িয়ে দেয় সে!
নয় মাস কেটে যায় সে লিখালিখি করছে!তাকে এখন দেশের অনেক লোক চেনে!বড় বড় পেজে ওর লিখা দেখা যায় প্রায়ই!তারও আজ পরিমানে অল্প হলেও ফ্যান আছে!
-হ্যালো
-জি বলুন!
-আপনি খুব ভালো লিখেন ভাই!
-ধন্যবাদ ভাই!আপনাদের কথায় অনুপ্রেরণা পেয়েই লিখছি আরকি!
-কিপ ইট আপ!
-আচ্ছা ভাই!
এভাবে প্রায়ই মানুষ ছেলেটির লিখা গল্পের সুনাম করতে থাকে!ছেলেটি তার আইডির নাম দেয় "লক্ষের খোজে"!সে তার লক্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তার প্রতিটি লিখার সাথে!অন্যদিকে তরু রোজ তার একমাত্র ছোট ভাই নিশানকে একটি কথা বলছে!
-নিশান দেখে যা!রাতুল এ লিখাটা বের করে দিয়ে গেল! "লক্ষের খোজে" আইডিটার লিখা রোজ পরছি!লোকটা এতো ভালো কিভাবে লিখে!
-ভালো লাগে তার লিখা তোমার?
-হ্যা রে!
-ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দাও!
-না
-কেন?
-যদি আসিফ ভাইয়ের মতো অপমান করে!তাছাড়া আমি কথা বলবো কি করে!টাইপ করতে পারবোনাতো!
-পাঠাও রিকোয়েষ্ট!আমি টাইপ করে দিব!
-আচ্ছা
তরুর আইডি থেকে নিশান "লক্ষের খোজে" আইডিকে রিকুয়েষ্ট পাঠায়!একসেপ্ট হয়ে যায় সাথে সাথে!"লক্ষের খোজে" তাকে মেসেজ পাঠায়!
-হাই!
-ভাইয়া আমি আপনার ফ্যান।অপনার প্রতিটি গল্পই আমি পড়ি!
-ধন্যবাদ ভাইয়্যা!
-আপনি কোথায় থাকেন?
-আপনি কোথায় থাকেন আগে বলুন!
-ময়মনসিংহ!আপনি কোথায় থাকেন একটু বলেন!
-আপনার আশেপাশেই থাকি ভাই!আমি একদিন আপনার কাছে আসবো!দেখা করবো!
-অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই!
নিশান ভাইয়ের কথাগুলি এভাবেই সেই "লক্ষের খোজে" আইডিকে লিখে দেয়!
আজ ভাইয়ের চেহারায় সে আজ একটি নিঃশ্পাপ হাসি দেখতে পায়!ভাইয়ের এ হাসির দ্বারা সে আজ বহুদিন পর দেখছে!মনে মনে খুব খুশি হয় সে!
দেখতে দেখতে কেটে যায় দুটি বছর!
শুরু হয় গল্প লিখার প্রতিযোগিতা যেখানে দেশের বিখ্যাত লেখকরা অংশ নেয়!মোট পনের জন লেখক নির্বাচিত হয়!তার মধ্যে একজন হচ্ছে সেই নাম না জানা "লক্ষের খোজে"।
********
এবারে আসিফ এ প্রতিযোগিতার চান্স পায়নি!কারণ তার গল্পে ভোট ছিলো খুব কম!আসিফ এবার একেবারে সাধারণ দর্শক!তার অহংকারের জন্য মানুষ তাকে এখন অপছন্দ করে!ইদানিং তার নাম আর কোথাও পাওয়া যায়না!তাকে রেখে সবাই নতুন লেখকদের নিয়ে ব্যাস্ত!
কিছুদিন পর পনেরজন প্রতিযোগি পনেরোটা গল্প পাঠায়!সবার গল্প ছিলো ভালোবাসা আর রোমান্টিক বিষয়ে!তবে একটি গল্প ছিলো যার নাম ছিলো "তরু"!তরুর সাথে আসিফ যা যা করেছে তা গল্পের মাধ্যমে লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন!আসিফের চরিত্রকে আতিফ নাম দিয়ে প্রকাশ করেছিলো সে!
গল্পের শেষ লাইন ছিলো-"বিধাতা সবাইকে সব দেন না!তরুকে হাত দেন নি তিনি!কিন্তু আতিফরা ভুলে যায় যে তাদের সাথেও এমন হতে পারতো!ধিক্কার জানাই এই অহংকারি আতিফদের"
গল্পটি সবার মন ছুয়ে যায়!
অসংখ্য মানুষের ভোট আর বিচারকদের রায়ে শ্রেষ্ঠ লেখক নির্বাচিত হয় "লক্ষের খোজে"॥লক্ষের খোজে বেরিয়ে অবশেসে নাম না জানা লোকটি তার লক্ষকে খুজে পায়!
আজ "লক্ষের খোজে" আইডির লেখককে পুরষ্কৃত করা হবে!কেও জানেনা সে কে!মন্চে যখন তাকে আমন্ত্রণ জানানো হলো তখন মন্চে পৌছে গেল নিশান!তরু তাকে দেখেই অবাক!
যাকে বলে সে এই লিখায় এসেছিল উনি এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন যৌথভাবে!তাই কারো মনে এ সন্দেহ রইলোনা যে লক্ষের খোজে আর কেও নয় তরুর ভাই নিশান।তবুও প্রমাণ স্বরূপ সে একটি স্টেটাস দেয় যা সে মন্চে দাড়িয়ে বলেছিল তার ভাই তরুকে ডেকে তার পাশে নিয়ে-
"আমি নিশান!আজ আমার ভাই তরুকে আমি আমার সব লিখা উপহার দিলাম!তার হাত নেই!তার লিখার স্বপ্ন আজ আমি পূরণ করলাম!একদিন যারা অহংকার করে আমার ভাইকে একটি অটোগ্রাফ দেয়নি তারা দেখুক!আজ আমার ভাই নিজেই এক অটোগ্রাফ!লেখক নিশানের অটোগ্রাফ".....