মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ২৫- ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত

সালটার কথা মনে নেই! দেশে কি কারনে যেন
আর্মি নেমেছে। আমাদের গ্রামটা রাজনৈতিক কারনে গুরুত্বপূর্ন
তাই সেখানেও আর্মি ক্যাম্প হয়েছে। তখন সময়টা বর্ষাকাল। একদিন রাতে আমার চাচাতো বোন মারাত্বক অসুস্থ হয়ে পড়ে। অবস্থা এতই
খারাপ হয়ে পড়ে যে ডাক্তার ছাড়া কোন উপায় নেই। রাত তখন ২টা !
গ্রাম রাত মনে চারিদিকে অন্ধকার আর বিদ্ভুটে সব পোকার ডাক। কাকা হুন্ডা বের করে আমায় বললেন চল আমার সাথে ডাক্তার নিয়ে আসি।
অগত্যা কাকার সাথে বের হলাম বাজারের উদ্দেশ্যে।
কিছু দূর আসার পর দেখলাম একটা আর্মির গাড়ী দাড়িয়ে আছে এবং আমাদের
দেখে দাড় করালো। ভালমন্দ জিজ্ঞাসা করে ছেড়ে দিল।
আমরা বাজারে ডাক্তারের ফার্মেসীতে এলাম। কিন্তু ডাক্তার
নেই! ডাক্তারের অ্যাসিস্ট্যান্ট কিছু ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে বললো ডাক্তার
আসলে খবর বলবে বাড়িতে যেতে।
আমাদের গাঁয়ে তখন ডাক্তার একজনই ছিলেন তাই আর
অপেক্ষা না করে বাড়ীর পথে রওনা দিলাম। কাকা থাকায় চারিদিকে বিদঘুটে অন্ধকার আর
ঝিঝি পোকার আওয়াজে আমি ভয় পাইনি।
হঠাৎ কি মনে করে কাকা প্রচন্ডভাবে পথের
মাঝে ব্রেক চাপলেন। আমার দিকে তাকলেন এবং বললেন তুই
কি আমায় কিছু বলেছিস ? আমি ভয়ে বললাম কই না তো ?
কাকা এদিক সেদিক মাথা ঘুরিয়ে কিছু শোনার
চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমি প্রথম থেকেই কিছুই শুনতে পাইনি। হঠাৎ ঘটল আমার
জীবনের সেই অভাবনীয় ঘটনা। একটা বোরকা পরিহিত
মহিলা কোথা থেকে এসে কাকাকে ধরে কান্না জুড়ে দিল।
এই মহিলাকে আমি আগে কখনো দেখিনি? মহিলাটির
সাথে দেখি কাকা স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে। যাই হোক তাদের
কথার সারাংশ হলো এই যে - মহিলাটির বাচ্চা অসুস্থ!
তাকে হাসপাতালে নিতে হবে! আমাদের পাড়াগায়ে একটা রাস্তাই
পাকা ছিল, বাকী বাই রোড গুলো ছিল কাঁচা মাটির। আমি আর কাকা ঐ মহিলার সাথে তার বাড়ি দিকে হাঁটছি! হাঁটছি তো হাটছি পথ যেন আর শেষ হয় না। এদিকে আমার প্রচুর তৃষ্ঞা পেল। আমি কাকাকে বললাম কাকা আমি আর
হাটতে পারবো না। কাকা মহিলাটিকে বললেন- তোমার
বাড়ি আর কত দূর? মহিলাটা বলল- এই
তো বেশী না অল্প! আরো প্রায় আধাঘন্টা হাঁটার পর
আমি কাকাকে বললাম কাকা আমি বাড়ি যাব। তখনই
মহিলাটি বলল- আচ্ছা তোমরা ঐ
আমগাছটির নিচে বস আমি তাহলে আমার
বাচ্চাকে নিয়ে আসি। আমরা হাপ ছেড়ে বাচলাম। কাকা আর আমি আম
গাছের নিচে বসলাম। ক্লান্তিতে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম
থেকে জাগার পর আমি আমার চোখের
সামনে কয়টি পরিচিত উদ্দিগ্ন মুখ দেখলাম। পূর্বের ঘটনাগুলো মনে পড়তে আমার
মনে পড়লো আমারতো অন্য কোথাও
থাকার কথা। আম গাছটা আমার কল্পনায় ভেসে উঠলো।
এই সব ভাবতে ভাবতে একজন হুজুর আর
বাবা আমার ঘরে ঢুকলেন। হুজুর কি সব বিড়বিড় করে বলে আমার গায়ে ফুক
দিলেন। মা আমাকে কি একটা শরবত খাওয়ানোর পর আমার ঘুম এলো। ঘুম
থেকে জাগার পর আমি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে উঠলাম।
মাকে কাকার কথা জিজ্ঘাস করে জানলাম তিনি ভাল আছেন?
কাকার ঘরে গিয়ে দেখি তিনি মোটামুটি স্বাভাবিক।
তারপর সবার কাছে যানলাম ঐ রাতের কথা। সেদিন নাকি কর্দমাক্ত অবস্থায়
আমাদের খুজে পাওয়া যায় আমাদের গ্রাম থেকে প্রায় ৭/৮ মাইল দুরের
আরেকটি গ্রামে। কাকার হুন্ডাটি পাওয়াযায় রাস্তার
পাশে একটা ডোবায়। শুনে আমার গায়ে কাটা দিল ভাবলাম
বেচে আছি নাকি? কাকা ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে বাইরের
দিকে তাকিয়ে আছে ! আর ঐ মহিলার
কোন অস্তিত্ব বিগত ৩০ বছরেও ছিল না।
কারন কাকা যখন ছোট ছিলেন তখন ঐ মহিলা বিষ খেয়ে মারা যায়। এই
ঘটনা আপনাদের কাছে গাল গল্প মনে হতে পারে। কিন্তু আমার কাছে নয়। আমি এখনও সেই ঘটনার
কথা ভাবি ! আর কিছু উত্তর খুজি !