মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ২৫- দুই এবং তিন এর মাঝামাঝি -মিকসেতু মিঠু

পরপর কোন কিছু তিনবার ঘটলে সেটাকে হ্যাট্রিক বলে। ফুটবল এবং ক্রিকেট খেলা দেখে ছোটবেলায় রাতুল এটাই শিখেছিল। কোন বোলার পরপর তিনটা উইকেট পেলে যেমন সে হ্যাট্রিকের মালিক হয়ে যেত তেমনি কোন ফুটবলার এক ম্যাচে তিনটা গোল পেলে সেও গোলের হ্যাট্রিক করে ফেলত। এসব দেখে দেখে ছোট বেলা থেকেই রাতুলের খুব ইচ্ছে ছিল সেও হ্যাট্রিক করবে। তবে সে যেহেতু খেলাধুলা করতে পারে না তাই সিদ্ধান্ত নিলো পড়াশুনায় পরপর তিন ক্লাসে একই রোল রেখে রোলের হ্যাট্রিক করবে। যেই ভাবা সেই কাজ। ভালোভাবে পড়াশুনা শুরু করলো। ক্লাস ফাইভ এবং সিক্সে ওর রোল ছিল এক কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সেভেনে উঠে রোল হয়ে গেলো দুই। এতে রাতুলের বাবা মায়ের যেমন মন খারাপ তেমনি রাতুলেরও মন খারাপ হল। রাতুলের বাবা মায়ের মন খারাপ তাদের ছেলের রোল পেছানতে আর রাতুলের মন খারাপ একটুর জন্য রোলের হ্যাট্রিক টা হল না। ক্লাস সেভেন, এইট পরপর দুইবার দুই রোল হওয়ায় রাতুল আবার আশার আলো দেখতে পেলো। কিন্তু ক্লাস নাইনে উঠে ওর রোল আবার এক হল। নাইন টেন দুই বছর এক রোল করে ও যখন হ্যাট্রিক এর দিকে এগুচ্ছিল তখন অবাক হয়ে দেখল ক্লাস টেনেই রোলের হিসেব শেষ! কলেজে উঠে কারো এক রোল হয় না। যে আগে ভর্তি হয় তার রোলই এক হয়। হতাশ হলেও রাতুল হাল ছাড়লো না।
রাতুলদের সময় জেএসসি ছিল না, তারপরেও এসএসসি এবং এইচএসসি তে পরপর দুইবার পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে ভাবলো ভার্সিটিতে উঠে জিপিএ ৫ পেয়ে হ্যাট্রিক করবে। কিন্তু বেচারার কপালটাই খারাপ। ভার্সিটিতে জিপিএ ৫ এর কোন কারবার নেই। যা হয় সব কিছু জিপিএ ৪ এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এটা দেখে যারপরনাই হতাশ হয়ে বেচারা পড়াশুনা করাই ছেড়ে দিলো!
স্কুলে পড়ার সময় জীবনের প্রথম প্রেমটা যখন ভেস্তে গেলো তখন রাতুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রোলে না হোক অন্তত প্রেমের ক্ষেত্রে সে হ্যাট্রিক করবে। জীবনে সে তিনটা প্রেম করবে, করে প্রেমের হ্যাট্রিক করবে। কিন্তু এখানেও বিধি বাম। প্রথম প্রেম ভেঙ্গে যাওয়ার বছর দুয়েক পর রাতুল আবার প্রেমে পড়লো। না দেখে না জেনেই মোবাইলে একটা অচেনা মেয়ের সাথে রাতুলের প্রেম হয়ে গেলো। রাতুল তখন কলেজে পড়তো। আর্মিদের কলেজে পড়ার কারণে অনেক নিয়ম কানুন মেনে চলতে হতো। চুল কাটাতে হতো হিসেব করে। দেড় ইঞ্ছির বেশী চুল লম্বা হলে টিচাররা ক্লাসেই চুল কেটে দিতেন! এরকম ছোট ছোট চুলে রাতুলের চেহারার সৌন্দর্য অনেকটাই ঢেকে গিয়েছিলো। এরকম সময়ে স্মার্ট স্মার্ট ছেলেদের বাদ দিয়ে ওর মতো বক সাইজের ছেলের সাথে কোন মেয়ের প্রেম করার কথা না। ভাগ্যিস মোবাইল ফোন জিনিসটা ছিল। না হলে জে কি হতো! দীর্ঘ দুই মাস মোবাইলে প্রেম করে ওরা সিদ্ধান্ত নিলো যেহেতু কেউ কাউকে দেখে নি তাই ওরা একে অপরের ঠিকানায় ছবি পাঠাবে। এরকম সময়ে কলেজের পড়াশুনার চাপে রাতুল ছবি তোলার সময়ই পেলো না। তাই কলেজের জন্য তুলে রাখা পাসপোর্ট সাইজের দুইটা ছবি ও মেয়েটার ঠিকানায় কুরিয়ার করলো। সাত দিন পর মেয়েটার একটা চিঠি পেলো ও। তাতে লেখা- এরকম কাউয়া মার্কা ছেলে আমার পছন্দ নয়। আমি আর তোমার সাথে প্রেম করবো না। চিঠি পড়ে রাতুল বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে গেলো। শুধুমাত্র ও দেখতে খারাপ এই কারণে প্রেম ভেঙ্গে যাওয়ায় রাতুল সিদ্ধান্ত নিলো জীবনে আর কখনো কোন মেয়ের সাথে প্রেম করবে না। তাই প্রেমের লাইনেও রাতুলের হ্যাট্রিক করা হল না।
প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে সবাই যা হয় রাতুলও তাই হল। রাতুল কবি হয়ে গেলো। একের পর এক কবিতা লেখা শুরু করলো। কিন্তু শুধু কবিতা লিখলেই তো আর হবে না কবিতা ছাপাতেও হবে। কারণ ছাপানো কবিতা ছাড়া বন্ধুদের টিটকারী আর রাতুল সহ্য করতে পারছিল না। কিন্তু কে ছাপবে কবিতা। পত্রিকা অফিস ঘুরে ঘুরে ও যখন বুঝল এই লাইনেও কিছু হবে না তখনই আইডিয়াটা মাথায় এলো। ওরা কয়েকজন বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিলো ওরা নিজেরাই একটা পত্রিকা বের করবে। নিজেদের টাকায় পত্রিকা, নিজেরাই কবিতা গল্প ছাপাবে। কে ঠ্যাকায়? কিন্তু বন্ধুরা টাকা দেয়ার প্রশ্নে আপত্তি তুললো। রাতুল ওদের কোন ভাবে বুঝিয়ে রাজী করাল। “সাহিত্য এক্সপ্রেস” নামের সেই পত্রিকা পরপর দুইটা সংখ্যা বেরও করে ফেললো। কিন্তু তৃতীয় সংখ্যা বের হওয়ার আগেই বাকী বন্ধুরা এই লস প্রজেক্ট থেকে চম্পট দিলো। রাতুল একা একা আর কি’ই বা করবে? বেচারাও হাল ছেড়ে দিলো।
হাল ছেড়ে দেয়ার পর রাতুল অবাক হয়ে আবিস্কার করলো এবারো ওর চাকা দুইয়ে আটকে গেছে। ইস্‌! যদি তিন নম্বর সংখ্যাটা ওরা বের করতো তাহলেই রাতুলের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্যটা পূর্ণ হতো। রাতুল হ্যাট্রিকের মুখ দেখতে পেত। বুঝলো না... কেউ বুঝলো না!