মদীনার আউস ও খাযরাজ গোত্র দুটির মধ্যে কয়েক শতাব্দী ধরে শত্রুতা ছিল। রাসুল(সাঃ) এর নেতৃত্বে মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবার পুর্বে প্রায়ই তারা ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধে লিপ্ত থাকত। অথচ ইসলাম গ্রহণের পর তারাও বিভেদ ভুলে পরস্পরের ভাই ভাই হয়ে যায় এবং এর ফলে উভয়ের বিবাদে সুবিধাভোগী ইহূদীরা চোখে আঁধার দেখতে থাকে। মদীনার ইহুদীরা গুপ্তচর নিযুক্ত করে যাতে তারা আউস ও খাযরাজের সভাস্থলে গমন করে এবং তাদেরকে তাদের পুরাতন যুদ্ধ-বিগ্রহ ও শত্রুতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তাদের নিহত ব্যক্তিদের কথা যেন নতুনভাবে তাদের মনে করিয়ে দেয় এবং এভাবে যেন তাদেরকে উত্তেজিত করে তুলে। এভাবে দিনের পর দিন প্রচেষ্টায় তারা একদিন সফলও হয়। উভয় গোত্রের মধ্যে পুরাতন অগ্নি প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠে। এমনকি তাদের মধ্যে তরবারী চালানোরও উপক্রম হয়। সেই অজ্ঞতার যুগের চিৎকার গণ্ডগোল শুরু হয়ে যায় এবং একে অপরের রক্ত পিপাসু হয়ে উঠে। স্থির হয় যে, তারা প্রাণ খুলে যুদ্ধ করবে এবং পিপাসার্ত ভূমিকে রক্ত পানে পরিতৃপ্ত করবে। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সংবাদ জানতে পেরে তৎক্ষণাত ঘটনাস্থলে এসে হাজির হন এবং উভয় দলকে শান্ত করে দেন। অতঃপর তিনি তাদের উভয় দলকে বলেন,
"পুনরায় তোমরা অজ্ঞতা যুগের ঝগড়া শুরু করে দিলে? আমার বিদ্যমানবস্থায় তোমরা পরস্পরের মধ্যে তরবারী চালনা শুরু করলে?"
অতঃপর তিনি তাদেরকে এই আয়াতটি পাঠ করে শুনিয়ে দেন-
"আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহ তোমাদিগকে দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে, এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা এক অগ্নিকুন্ডের পাড়ে অবস্থান করছিলে। অতঃপর তা থেকে তিনি তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ নিজের নিদর্শনসমুহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হতে পার"। [আলে ইমরান- ১০৩]
যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের প্রতি এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন, তারা অনুশোচনা করলেন, নিজেদের ভুল বুঝতে পারলেন, এরপর তারা মিটমাট করে নিলেন এবং অস্ত্র ফেলে দিলেন।