মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১২৪- তুমি রবে নীরবে

বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। এক দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছে সাদাফ।
বাইরে পৃথিবীটা অন্ধকারের চাঁদরে মোড়া।। এমন বৃষ্টির
দিনে অবণিকে খুব miss করছে সে। অবণি বরাবরই বৃষ্টিপ্রেমী। বৃষ্টির
দিনগুলোতে সে সাদাফকে নিয়ে বৃষ্টিবিলাসে বের হতো।
.
কথাগুলো ভাবতে গিয়ে সাদাফের চোখে জল এসে পড়ে। প্রকৃতির বৃষ্টি আর তার চোখের বৃষ্টি আজ মিলেমিশে একাকার।।
.
এমন সময় মেঘা এসে বলল, " বাবা খেতে চলো।"
মেঘা কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে আবার বলল, "
কি হয়েছে বাবা? তুমি কাঁদছ কেন? তুমি নিশ্চয়ই আবার মায়ের কথা চিন্তা করছো?"
.
আমি স্মিত হেসে বললাম, " না রে মা....চল খেতে যাই।"
.
মেঘা অবাক হয়ে বাবাকে দেখে। জন্মের পর থেকেই মায়ের আদর
পায়নি সে। তার বাবাই তার সব। কোনদিনও তাকে মায়ের অভাব
বুঝতে দেয়নি তার বাবা। সবসময় আগলে রেখেছে।
.
খাওয়া শেষে নিজের রুমে চলে এলো সাদাফ। আলমারী থেকে তার ডায়েরিটা বের করল।
পাতা উল্টাতেই তার সাথে অবণির হাসি-মাখা মুখের একটা ছবি। ছবিটা তাদের বিয়ের আগে তোলা। কত সুখময় দিনই না ছিল সে সময়।
.
ডায়েরির পাতা উল্টাতে উল্টাতে সাদাফ ফিরে গেল সেই হারানো অতীতে।
.
***কলেজের পাঠ চুকিয়ে সবেমাত্র ভার্সিটিতে পা রেখেছি এখন। ভয়ংকর সুন্দরি সব মেয়েদের সাথে ক্লাস। প্রথমদিন সবাই মোটামুটি পরিচিত হলাম। শুধু একজনকে দেখলাম ক্লাসের এক কোণায় চুপচাপ বসে আছে। তার সাথে পরিচিত
হওয়া এখনও বাকি। তাই নিজে থেকেই পরিচিত হতে গেলাম।
.
" হাই আমি সাদাফ। তোমার নাম?" বলে হাতটা বাড়িয়ে দিলাম। মেয়েটা আমাকে দেখে এমন ভাব করল যেন আমি একটা তেলাপোকা!! আমার কথার কোন জবাব না দিয়েই
উঠে চলে গেল। কী আর করা!!
.
মনে বললাম, কলেজে থাকতে কত মেয়ে পেছন পেছন ঘুরেছে আর
তুমি কী? ২ দিন যাক, দেখা যাবে নিজে থেকেই এসে পরিচয় দিবে।
.
কয়েকদিন পর আমার ধারনা ভূল প্রমাণিত হল। পরিচয় হওয়া তো দূরে থাক, মেয়েতো আমার দিকে তাকায় না!!
.
হায় খোদা!! তুমি কি সমস্ত দৃষ্টি আমাদেরকেই দিলা না?? নারী জাতিকে রুপের সাথে একটু দৃষ্টি শক্তিও দান করতা!!
.
একদিন দেখলাম মেয়েটা বিমর্ষ অবস্থায় বসে আছে। চেহারায়
কান্না কান্না ভাব। তার এক বান্ধবীকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম মেয়েটার
এডমিট হারিয়ে গেছে। আর কালকে পরীক্ষা!! এডমিট ছাড়া পরীক্ষা দিতে দিবে না।ভার্সিটিতে আমার এক চাচা চাকরি করত। সেই সুবাদে চাচার
মাধ্যমে তার এডমিটের ব্যবস্থা করে দিলাম।
.
ঐদিনের পর থেকে মেয়েটা ধীরে ধীরে আমার সাথে মিশতে শুরু করে। মেয়েটার নাম অবণি।
.
আয়নায় এখন নিজের চেহারাটা না দেখে ওরটাই বেশি দেখি। ও যখন সামনে আসে তখন আর আমার মধ্যে থাকি না। অনুভূতিটা অনেকটা এমনই যেন আমি ডুবছি ওর অন্তরের সমুদ্রে।
.
আমার নীরব ভালোবাসা আর অবণির প্রাণোচ্ছল বন্ধুত্বে কেটে গেল তিনটি বছর। এদিকে আমি ভালো বন্ধুর অভিনয় করতে করতে ক্লান্ত। ওকে ছাড়া থাকা আমার পক্ষে আর
সম্ভব নয়। যা হবার হবে, মনের কথাটা বলেই দিব।
.
বিয়ের পর থেকে আমার প্রতি অবণির ভালোবাসা যেন বহুগুন
বেড়ে গিয়েছিলো। মাঝে মাঝে আমি ভাবতাম এত ভালোবাসা আমার কপালে সইবে না!!
.
**একটা ব্যাপারে অমিমাংসিত থেকে গেল।
অবণিকে প্রপোজটা কিভাবে করেছিলাম? মুখে বলতে যেয়ে যখন পারলাম না, তখন
চিঠির মাধ্যমে আমার মনের কথাগুলো তাকে জ্ঞাপন করলাম।
চিঠি দেয়ার দুদিন পর তার সাথে দেখা। কিন্তু আমার সাথে এমন
ভাবে কথা বললো যেন কিছুই হয়নি। আমি তাকে কোন প্রস্তাবই দিই নি। প্রচন্ড অবাক হলাম!!
.
তাকে ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করতেই সে বললো, " এ আর তেমন কি!! আমিতো আগেই বুঝতে পেরেছিলাম। শুধু তোমার বলার অপেক্ষায় ছিলাম।"
.
তার মানে অবণিও আমাকে ভালবাসে। ও যতই নির্বিকার ভঙ্গিতে বলুক না কেন, আমি অনেক খুশি হয়েছি।
.
আসলে মেয়েদের মন বোঝা আর ঘোলা কাঁচে নিজেকে স্পষ্ট
করে দেখার করা একই জিনিস!! বিধাতা রহস্য সৃষ্টি করেছেন কিন্তু
সৃষ্টির সব রহস্য নারীর মাঝে লুকিয়ে রেখেছেন!!!
.
এরপর আমাদের ভালোবাসার পথযাত্রায় আর তেমন বাঁধা আসেনি।
গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর ভালো একটা চাকুরি পেয়ে গেলাম।
অবণির পরিবার আমার পরিবারের কেউই আমাদের সম্পর্কের
বিরুদ্ধে যায়নি। তাছাড়া পাত্র হিসেবে তো আর আমি খারাপ ছিলাম না!!
.
ভালোই কাটছিলো আমাদের বিবাহিত জীবন। কিন্তু সুখের
সময়গুলো হয়তো আমাদের কপালে বেশিদিন ছিলনা।
মেঘা হওয়ার সময় যতই ঘনিয়ে আসছিলো আমি ততই উদ্বিগ্ন
হয়ে উঠছিলাম। কারণ দিন দিন অবণির শরীরের অবস্থার অবনতি ঘটছিলো।
.
অবণির অবস্থা আরো খারাপ হওয়ায় ডাক্তাররা বলল ইমিডিয়েট সিজার
করতে হবে। ওটি তে নিয়ে যাওয়ার সময় অবণি আমার হাত ধরে বলেছিল, "
চিন্তা করোনা, আমার কিছু হবে না। আমি ঠিক তোমার কাছে ফিরে আসব।"
.
অপারেশন কক্ষটার সামনে আমি ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উদ্বিগ্ন ভাবে অপেক্ষা করছি। মাথার মধ্যে শুধুই দুশ্চিন্তা কাজ করছে।
একটু দূরে কোথাও থেকে বিলাপ ভেসে আসছে। হয়তো কেউ মারা গেছে, আর তার
স্বজনরা কান্না করছে।
.
অনেক্ষন পর ওটির দরজা খুলল। ডাক্তার বেরিয়ে এসে আমার
হাতে মেঘাকে তুলে দিয়ে বললেন, " আপনার মেয়ে হয়েছে, কিন্তু আপনার স্ত্রীকে বাঁচাতে পারলাম না।"
.
আমি অবিশ্বাসি দৃষ্টিতে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। বিশ্বাস
হতে চাইছিল না অবণি আমায় ছেড়ে চলে গেছে!!
সেতো বলে ছিলো, সে ফিরে আসবে!! অবণি তার কথা রাখেনি,
সে ফিরে আসেনি!!**
.
কাঁধে কারো স্পর্শ পেলাম, পেছন ফিরে দেখি মেঘা!!
" বাবা, তোমাকে না কতবার বলেছি এই ডায়েরিটা তুমি আর পড়বে না!!"
.
" কি করব রে মা? এটাই তো তোর মায়ের শেষ স্মৃতি।" বলতে বলতে চোখ বেয়ে ক'ফোঁটা জল ছাড়িয়ে পড়ল।
: বাবা, চল ছাদে যাবো।
-- চল.....
.
ছাদে এসে দেখলাম বৃষ্টি থেমে গেছে। আকাশে আবছা ভাবে চাঁদটা উকি দিচ্ছে। অদ্ভুদ মায়াবী আলোয় ছেয়ে আছে ধরনী। মেঘাকে বললাম, " একটা গান শুনাবি?"
.
মেঘা গেয়ে উঠে.......
" সন্ধ্যা বাতি জ্বালিয়ে রেখো ধূপ কাঠিটা সাথে দিও....
সাঝের বেলায় আসবো আমি, বন্ধু তোমার আঙ্গিনাতে....."
.
মেয়েটা একদম ঠিক তার মায়ের মতই গায়। আজ
অবণি বেঁচে থাকলে দেখতে পেতো তার মেয়েটা ঠিক তার মতই
করে গড়ে উঠেছে। ঠিক যেন অবণিরই প্রতিচ্ছবি।
.
আমি গান শুনছি আর নিঃশব্দে কাঁদছি। আমার হারানো মিছিলে মেয়েটাই
যে শেষ সম্বল।।