এমন অলক্ষুনে বৌ কেন যে আল্লাহ আমার এমন সাদা সিধে ছেলেটার কপালে জুটালো তা ভেবে পাই না । কি কুক্ষনে যে এমন অপয়া বৌ ঘরে আনলাম । একবার যদি ঐ ফটিক ঘটক কে সামনে পেতাম তাহলে ওকে ঝাঁটা পিটা করে ঘটকালি করার সাধ ঘুচিয়ে দিতাম। আশার শাশুড়ি এক নাগাড়ে আশাকে যা ইচ্ছে তা বলে যাচ্ছে । সকালে আশা ভাত রান্নার জন্য পুকুর থেকে পানি আনিতে গিয়ে ঘাটে পা পিছলে যাওয়ায় কাগ থেকে মাটির কলসটি পড়ে ভেঙে যায় । এতে করে তার শাশুড়ি হাটুর গাউনি গায় ।
কথায় কথায় উঠিতে বসিতে আশার শাশুড়ি আশাকে তার মা বাবা কে টেনে গালি দেয় । এই তো সলেমানের ছেলের বৌ তার বাপের বাড়ি থেকে চাল , কাঠ , আলমারী সহ অনেক জিনিস নিয়ে আসে এ দেখে তার শাশুড়ি বাড়ি যেয়ে তাকে বলে বিভিন্ন বচন ভন্তি কাটে । শুধু সলেমানের ছেলের বৌ বলে না পাড়ায় যে কারোর বিয়ে হলে তার বৌ দেখিতে গিয়ে নতুন কোন জিনিস আনিলে তা বলে তার বাপ মাকে টেনে গালি দেয় । দেখো অমুকের বৌ কত সুন্দরী আর বাপের বাড়ি থেকে কত জিনিস নিয়ে এসেছে আর আমার বউ একটা ছিকলির জিনিস পর্যন্ত আনলো না । লোকের বৌরা দেখ প্রায় বাপের বাড়ি যায় অতচ আমার বৌ মোটেও বাপের বাড়ি যাওয়ার নাম করে না । আর বাপের বাড়ি যাবেই বা কি করে ওর বাপ তো এমন অপয়া মেয়েকে এমন সোনার টুকরো ছেলের ঘাড়ে ঝুলিয়ে দিয়ে এ অপয়া থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছে ।
আজ দুইটি বছর বিয়ে হল অতচ ফিরুনির দুই চালান ব্যতীত তার বাপের বাড়ি থেকে কেউ তার খোঁজ নেই নি । যে মেয়েটা বেঁচে আছে কি মরে গেছে ।
আশা প্রায় আড়ালে চোখের জল ফেলে । সত্যিই তার শাশুড়ি ঠিকই তো বলে তাকে যে সে অপয়া । তা না হলে তার জন্মের পর কেন তার মা মারা যাবে । কেন তাকে তার সত্ মায়ের কাছে যে অপয়া নামটি শুনতো তাহা কেন শশ্বুর বাড়ি এসেও শুনতে হবে । বাপের বাড়ি থাকা কালে সে এক চিমটি সুখ পাইনি কখনো । সত্ মায়ের অত্যচারের কথা বললেও বাবা কখনো ও তাহা প্রতিবাদ করতো না । সত্ বোনটি যখন স্কুলে যেত তখন তাকে থালাবান বা কাপড় পরিষ্কার করিতে দিত । এসব কথা ভাবে আর মেয়েটি অঝরে চোখের জল ফেলে ।
মাঠ থেকে আশার স্বামী বাড়ি এসে দেখে আশা বসে আছে বারন্দায় । কি হলো এই ভাবে বসে আছিস কেন মুখে হাত দিয়ে । এই তাড়াতাড়ি ভাত দে মাঠে যাবো ।
ভাত তো বাড়া আছে । স্নান করে আসো তার পরে খেয়ো । কেবল তো মাঠ থেকে আসলা আবার এখন যাবে ।
আজ ফুরুনে জমির ধান রোপন করিতে হবে রফিক বিশ্বাসদের । না কথা বাড়িয়ে ভাত নেয় ।
আশার স্বামী ভাত খেয়ে আবার মাঠে চলে যায় । ছেলেটা খুব কর্মঠ আট পিটে খাটে । আশা মাঝে মাঝে ভাবে তার শাশুড়ি যদি তার স্বামীর মতো হতো খুব ভালো হতো হয়তো সে খুব সুখি হতো ।
আশা যখন মুখ গোমরা করে থাকে তখন সে প্রায় তাকে শান্ত্বনা দেয় আর বুঝায় । দেখ আমার মা বড় কথা বললে কখনো যেন তুই রাগ করিস না ।
আসলে আমার মা আমাকে খুব কষ্ট করে মানুষ করেছে । আমি যখন পেটে তখন আমার বাবা মারা যায় । শশ্বুর বাড়িতে আর ঠাঁই হয়নি বলে মা বাপের বাড়িতে চলে আসে । ধৈর্য ধর দেখবি এক সময় সবঠিক হয়ে যাবে ।
আশা তার শাশুড়ির কথায় দুঃখ পেলেও তার স্বামীর এক চিমটি ভালবাসায় তার সমস্ত দুঃখ এক নিমেষে দূর হয়ে যায় । মাঝে মাঝে আশা ভাবে এমন ভালবাসা যদি সারা জীবন পাওয়া যায় তবে থাকুক না অপয়া নামটি ।