মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১৮- ইতলে ভূত বিতলে ভূত

(এক)
অপূর্ব সোনার আজ ভীষণ মন খারাপ। সকাল থেকে সে তার স্কুলের কোন হোমওয়ার্কই ঠিকমত করতে পারছেনা।
নোটখাতায় পেন্সিলের লেখা একটিও থাকছেনা।
যতবারই লিখছে, লেখাগুলো প্রজাপতির মতো উড়ে উড়ে জানালা দিয়ে পালিয়ে দূরের শিমুল গাছে মিলিয়ে যাচ্ছে। এটা আবার কেমন ব্যাপার! কাগজের লেখাও কি আবার উড়তে জানে নাকি?
বাসার সবাই থ!

(দুই)
অপূর্ব একদিন ক্লাসে বন্ধুদের মাঝে বোকা বনে গিয়েছিল।
তার বন্ধু মন্ময় এসে বলল- “মনে করো, তোমার হাতে একটা কালো কালির কলম আছে, এখন সেই কালো কালির কলম দিয়ে লাল লিখবে কি করে?”
অপূর্ব খুব অবাক হয়ে গিয়েছিল। সত্যি সত্যি কি কালো কালির কলম দিয়ে লাল লেখা সম্ভব!
না, এ হতেই পারেনা।
সেই ধাঁধার ঘোর কাটতে না কাটতেই আজ আবার এ কী নতুন ঝামেলা হতে শুরু করল!

(তিন)
অপূর্ব’র হোমওয়ার্ক আর হলোই না। সারা সকাল চলে গেল।
তার টিচার এলো। এটা কি ঘটছে আসলে। লেখাগুলো আসলে যাচ্ছে কোথায়!
শুরু হলো অভিযান।
যে পেন্সিল দিয়ে লেখা হচ্ছিল সেটা ভাল আছে কিনা।
খাতার পাতাগুলো কি ভেজা ছিল, যে কারণে মিলিয়ে যাচ্ছে। নাকি খাতার উপর কেউ কোন কিছু ঢেলেছে, দিনদুপুরে এমন ভূতুড়ে কান্ড।
নাকি তাদের পোষা হুলো বিড়াল কিছু করেছে?
না, হুলোও তো তার পাশেই বসা, এক ধ্যানে অপূর্ব’র লেখালেখি দেখছিল।

(চার)
বাসার সবাই এখন কাজ ফেলে অপূর্ব’র পড়ার রুমে।
চারপাশেও ততক্ষণে খবর ছড়িয়ে পড়লো। বন্ধুরাও এসে হাজির।
নাহিম, বাপ্পী, রাতুল, তাকবীর, রনি, এরা সবাই এসে তোলপাড়- কি হলো?
কি হলো?
কি হলো?
কি হলো?
এই সাত সকালে তোমার খাতায় ভূত এলো কি করে?
ভূতটা দেখি লেখাপড়া জানে। ওমা, কি দারুন ভূত রে বাবা! দেখি দেখি কি লেখা ছিল তোমার খাতায়?

(পাঁচ)
দুপুর অবধি অনেক খোঁজাখুজি হলো।
সব বন্ধুরা এসে তাদের ক্ষুদে গোয়েন্দাগিরি দেখালেও খাতার লেখা আর ফিরে পাওয়া গেলনা।
তবে- অপূর্ব’র মন ভারী খুশি বন্ধুদের কাছে পেয়ে।

(ছয়)
বন্ধুরা বলতে লাগলো- এটা ম্যাজিক আঙ্কেলের যাদু নয়তো অপু?
বন্ধুরা অপূর্বকে অপু বলেই ডাকে।
সপ্তাহ দুই আগে অপূর্বদের স্কুলে যাদু দেখিয়েছিলেন ‘ম্যাজিক আঙ্কেল’ নামের একজন যাদুকর।
তার মন্ত্রের যাদু কী এখনও লেগে আছে নাকি, কিছুই বুঝা গেলনা। …..ইলি, গিলি, ছুঃ ছুঃ ছুঃ মন্তর ছুঃ…
এই ‘ম্যাজিক আঙ্কেল’ তো অনেক ভালো। সাদা কাগজ কুড়িয়ে এনে তিনি আমাদের ছবির বই বানিয়ে দিয়েছিলেন।
নাহ, ‘ম্যাজিক আঙ্কেল’ সেটা করতেই পারেনা।

(সাত)
তাহলে আমার লেখা বর্ণমালা উড়লো কেমন করে?
অপূর্ব’র মন কিছুতেই মানতে চায়না।
এখন দরকার ছিল সেই আলাদিনের যাদুর চেরাগ চেরাগ ঘষা দিলেই জ্বিন এসে বলতো- “আদেশ করুন অপূর্ব সোনা, কি করতে পারি আপনার জন্য”
আর অপূর্ব আদেশের সুরে বলতো- ‘যাও, এক্ষুণি আমার হারিয়ে যাওয়া লেখা গুলোকে নিয়ে এসো।”

(আট)
সবাই সবার কাজে চলে গেছে।
বন্ধুরাও।
অপু শুধু বসে আছে একা একা।
মনটা আবারও খারাপ হতে লাগলো। তার নানা ভাইয়ের কথা মনে পড়লো।
নানাভাই কাছে থাকলে একটা বুদ্ধি পাওয়া যেতই। নানাভাই যতগুলো গলপ জানে, আর কেউ জানেনা।
গতবছর নানুবাড়ি গিয়ে অপু পুকুরে বড়শি ফেলে এক ডজন পুঁটি ধরেছিল, ছুঁ বলে বড়শি ফেলে আর ছিপকাটি তলিয়ে যায়।
কি মজা- বড়শি টানলেই পুঁটি ঝুলে আছে।

(নয়)
এই সংকটে সে নানাভাইকে খুব মিস করছে। নানাভাই তো আসলে দারুন মজার মানুষ।
ঝিলে নৌকো দিয়ে শাপলা তোলার সময় নানাভাই এক দারুন গলপ বলেছিলেন- ডালিম কুমারের গলপ।
কিন্তু ডালিম কুমার আর এটাতো এক না। কি করা যায়?
কি করা যায়?

(দশ)
অবশেষে পাওয়া গেল। কোথায় গেল সেই লেখা।
সবাই বলতে লাগলো- কোথায় গেলো?
কোথায় গেলো?
কোথায় গেলো?

(এগারো)
কিছুদিন আগে অপূর্বদের বাসায় এসেছিল গল্পের ডালি নানাভাই।
একটা নতুন ভূতের ছড়া শিখে লিখছিল খাতায়।
ছড়াটাতে বলা হয়েছিল- ভূতেরা সব সময় ঝগড়া করে, পড়াশোনা করে না।
ছড়াটা পড়ে ভূতদের নাকি খুব রাগ হয়েছিল।
ভূতেরা কি শুধুই ঝগড়া করে?
ভূতেরা গলপ করে, খেলাধুলা করে। তাই- খাতার সব লেখা উঠিয়ে নিয়েছিল। সেই লেখাগুলো ভূতের ছেলেমেয়েরা শিখেও ফেলেছে।

(বারো)
ভুতেরা এসেছিল লুটোপুটি খেতে খেতে।
অপুদের জানালার পাশে শিমুল গাছে ওদের বাসা।
এই ভূতেরা তিন বন্ধু। ইতলে ভূত বিতলে ভূত আর- মামদো ভুত।

(তেরো)
ভূতেরা ‘সরি’ বলেছে।
আর এমনটি হবেনা। তবে- তাদের যেন আর না বকে। অপুর নানাভাইয়ের ছড়াটি তাদের ভালো লেগেছে,
কিন্তু আরেকটি নতুন ছড়া লিখতে হবে-
“ইতলে ভূত, বিতলে ভূত মামদো ভূত তিনে,
স্কুলে যাবে ঠিক করলো মঙ্গল বারের দিনে।”
তাহলে তারা খুশি। ওরাও নাকি স্কুলে যেতে চায়। ভূতের জন্য কি কোন ইশকুল আছে?

(চৌদ্দ)
হুম, ভূতেরা তাহলে সত্যি সত্যি ইশকুলে যাবে!
যাক, ভূতগুলো যদি মানুষ হয় তাহলে ক্ষতি কী!
এবার তাহলে শুনি নানাভাইয়ের সেই আসল ভূতের ছড়াটা- ভয় পেয়ো না, তোমাদের বই-খাতা গুলো নিজে নিজে গুছিয়ে রাখো- তাহলে আর ভূত এসে লেখা নিয়ে যেতে পারবেনা।
এবার এসো অপুর নানাভাইয়ের লেখা ছড়াটি পড়ি-

“ইতলে ভূত, বিতলে ভূত, মামদো ভূত তিনে,
ঝগড়া করবে ঠিক করলো মঙ্গলবারের দিনে।
শক্তি তারা করবে পরখ কাহার কতখানি,
মালকোচাতে সাজলো তাই করতে হানাহানি।
প্রথমেতে ইতলে-বিতলে যুঝলো কতক্ষণ,
জখম হয়ে ভীষণভাবে, ভাঙলো নাকো রণ।
অবশেষে ইতলে-বিতলে ক্লান্ত হয়ে হায়,
কোমর ভেঙ্গে পড়লো তারা ভীষন মুর্ছায়।
মুর্ছা তাদের ভাঙ্গে নাকো কোনকালেই আর,
এসব দেখে মামদো ভূতে কান্না করে সার।
কান্না শুনে ধেয়ে আসে আন্দা ছান্দা ভূত,
লেংটিতে সে বেঁধে আনে লক্ষ ভূতের পুত।
ভূতের দলে এসে সবাই জাগিয়ে তোলে রোল,
পথে-ঘাটে বন-বাদাড়ে ভূতের গণ্ডগোল।