মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৬৩- ঘটনার নায়কঃ রুহুল আমিন সরকার

ঘটনার নায়কঃ রুহুল আমিন সরকার ঘটনার সময়ঃ ১৯৫৮ সাল
রুহুল আমিন সরকারের নিজের মুখে ভাষায় লেখছি………
তখন আমার বয়স প্রায় ১৮। আমি ছোটকাল হতেই বেশ ফুরতিবাজ ছিলাম, বাড়ির
ছোট ছেলে হওয়ায় আমার কোন কাজেই কোনদিন কেও বাধা দেয়নি।
আমার একটি ঘোড়া ছিল, তার নাম মানিক। আমি মানিক
কে নিয়ে দূরদুরান্ত ঘুরে বেড়াতাম আর গান- বাজনা এবং যাত্রার প্রতি ছিল
আমার দুর্নিবার আকর্ষণ। একদিন খবর পেলাম দেওয়ানগঞ্জে যাত্রা দল
এসেছে , আমি সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম। বিকালের পর আমি যেয়ে পৌঁছাই।
সন্ধ্যার পর জাত্রার আসর বসে, শেষ হয় অনেক রাতে।
আমি যাত্রা শেষে মানিক কে নিয়ে আবার বকশিগঞ্জ পুবের
পাড়ার উদ্দেশ্য রওনা দেই। আমি যখন পল্লাকান্দি তখন রাত আনুমানিক ১০
টা বা তার কাছাকাছি। তখন নিঝুম রাত , পুরো এলাকা নিস্তব্ধ নীরব। শুধু
মাঝে মাঝে ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ আর রাতের আকাশের নাম
না জানা পাখির আর্তনাদ। কখনও কানে আসে হুতুম পেঁচার ডাক।
পরিবেশটা মোটেও সুখকর নয়, তবে আমি ছিলাম শিক্ষিত এক
সাহসী যুবক, গ্রাম্য কুসংস্কার কখনই মনে দানা বাধতে দিতাম না, তাই
নদীর পাড় ধরে এগিয়ে গেলাম নৌকার সন্ধানে। ঘাঁটের শেষ মাথায়
একটি নৌকা পেলাম, নৌকায় মানিককে নিয়ে উঠলাম। আমার
সাথে নৌকায় আরোহী মাত্র একজন আর নৌকার মাঝি। আমি, মানিক ,সাথের
যাত্রি আর মাঝি ছাড়া মনে হয় আশেপাশের এলাকায় আর জীবিত কোন
প্রাণী নেই। হটাত মাঝি বলে উঠে, ভাইজান আপনাকে দেখে তো মনে হয়
বড় ঘরের ছেলে, তবে এত রাতে এখানে কি করেন , কই যাবেন ?
আমি তাকে সব খুলে বলি আর তার আমি হেসে ফেলি আর বলি কোন
ডাকাতের সাহসে কুলাবেনা আমার নাম শোনার পর আর আমাকে আটকাবে।
তখন আমার সাথের ডাকাততো মানুষ, আমরা যে বিপদের
কথা বলছি তা ঠিক মানুষ না। আমি হেসে বললাম যে এসব
আমি বিশ্বাস করিনা। তখন তারা বলল, বাড়ি কাছেই, রাতটি কাটান আর
সকালে যেয়েন, পথে জন্তু -জানোয়ার তো থাকতে পারে। আমি বললাম,
আমার যেতেই হবে। এরপরও তারা সাবধান করে দিলো আর
বলে দিলো সারমারা বাজার থেকে বামের রাস্তায় উঠতে,
ডানে না যেতে কারন ওই রাস্তা জঙ্গল এলাকার ভিতর।
কথাটা আমারও মনে ধরলো। রউনা দিলাম। রাত আনুমানিক ১টা, তখন
আমি সারমারা বাজারে , পুরো এলাকা নিস্তব্ধ বিরান ভুমির মত
দেখাচ্ছে। কোথাও বিন্দু মাত্র জীবনের চিহ্ন নেই, পোকামাকড়
কিংবা পাখিরও শব্দ নেই, যেন সমস্ত এলাকাটাই মারা গেছে। আমার তখন খুব
খারাপ অবস্থা, মানিকেরও পানি দরকার। আমি খেয়াল করলাম ওই
ডান পাশের রাস্তাতেই বেশ দূরে একটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে যার
আঙ্গিনায় আগুন জ্বলছে। আমি আশা নিয়ে ওদিকে গেলাম।
কিন্তু মানিক আমার কথা না, মানিক কখনও এমন করেনা, ছোট
একটা বাচ্চা অবস্থা থেকে ওকে বড় করেছি, কখনও আমার অবাধ্য হয়না, তবু
আমি ওকে রাস্তায় রেখেই হাঁটা দিলাম। বাড়ির আঙিনায়
এসে দেখি এক অগ্নি কুণ্ড জলছে , যেন কেও আগুন তাপানোর জন্য খরে আগুন
দিয়েছে। এক মহিলাকে দেখলাম , সেই আগুনের আলোয়
মাটিতে বসে হাড়ি পাতিল মাজছে। নীল শাড়ি পড়া, দেখেই বোঝা যায়
নতুন বউ কারন তার মাথায় লাগলো কারন এত রাতে কেও
উঠানে আগুনের আলোয় হাড়ি-পাতিল মাজে না আর বাড়িতে অন্য কোন
লোকেরও আনাগোনা দেখছিনা। আমি একটু কাছে যেয়ে বললাম
“খালাগো আমাকে একটু পানি দিবেন, আমার আর আমার ঘোড়ার জন্য”
সে পাতিল মাজা বন্ধ করে দিলো, আর চুপ হয়ে থাকলো , আমি আবার
কাছে যেয়ে বললাম , ও খালা শুনেন না? তখন সে ধীরে ধীরে আমার
দিকে চাইলো……আমি যা দেখলাম, তা … ঘোমটার ভিতর
কালো ঘুটঘুটে অন্ধকার , শুধু দুটো রক্ত লাল চোখ আর মুখের গহব্বর
থেকে এক হাত লম্বা জিভ ঝুলছে। সেই জিভ নড়েচড়ে উঠলো আর বের
হয়ে এলো এক আঙ্গুল সমান লম্বা দুইটা শ্বদন্ত। আমার দিন
দুনিয়া আধার হয়ে এলো,কিন্তু টোলে পড়ার আগে শেষ
মুহূর্তে মনে হলো,বাঁচতে চাইলে পালাতে হবে। আমি ঘুরে দৌড় দিলাম রাস্তার
দিকে , আর পিছন থেকে শুনতে পেলাম এক জান্তব আর্তনাদ মিস্রিত চিৎকার।
মানিকের কাছে পৌঁছে ওকে সামনের দিকে টান দিলাম,
কিছুটা রাস্তা পাড় হউয়ার পর দেখি মানিক থেমে গেলো। চারজন
মানুষ আসতে দেখলাম একটু মৌলানা গোছের।
তারা কাছে এসে আমাকে দেখে বলল ভাই আপনি সরকার সাহেবের
ছেলে না ? এই
অন্ধকারে কিভাবে চিনলো আমাকে , তা ঠিক বুঝলাম না কিন্তু বললাম , হ্যাঁ।
তাদের সব খুলে বললাম আর একটা দেয়াল ঘেরা বাগান টাইপ
এলাকার কাছে এনে আমাকে বলল গাছের নিচে বসে বিস্রাম নেন। ভয়
পাবেননা , এখানে আপনি নিরাপদ। আর আমরা আপনার থাকার ব্যবস্থা করে আসছি, আমরা ছাড়া অন্য কেও এসে যদি আপনাকে ডাকে , তবে বের হবেন না।
এটা বলে তারা চলে গেলো আর আমি ওই গাছের
নিচে যেয়ে বসে পড়লাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বলতে পারবোনা।
ঘুম ভাঙলো ফজরের আজান শুনে তখন
ভোরের হালকা আলো