মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ২- "আলাদিনের দৌড়" -সাদাত শাহরিয়ার।

দীর্ঘদিন রাজপ্রাসাদে শুয়ে বসে থেকে থেকে আলাদিন যথেষ্ট মোটা হয়ে গেছে। তাই তার বউ তাকে এখন আর আগের মতো ভালবাসছে না। বউয়ের মন জয় করার জন্য আলাদিন চিন্তা করল তাকে শুকাতে হবে,স্লিম হতে হবে। কিন্তু কিভাবে? ঘষা দিয়ে আশ্চর্য প্রদীপের দৈত্য বের করে আলাদিন বলল,ওহে দৈত্য বল তো কি করা যায়।
-কি হয়েছে মালিক আমার?
-এই মেদভুঁড়ি কি করি?
-মালিক আমার,প্রতিদিন সকাল বিকেল দৌড়ান। সব ঠিক হয়ে যাবে।
-না,না। এখানের সবই তো আমার চেনা। চেনা জায়গায় দৌড়াতে আমার ভাল লাগে না।
কিছুক্ষণ চুপ করে রইল দৈত্য। মস্তিস্কের অলিগলি সার্চ করতে লাগল- নতুন উপায়ের সন্ধানে। শেষে দৈত্যের মুখে হাসি দেখা গেল। সে বলল,মালিক আলাদিন,চলুন একটা দেশ ভ্রমন করে আসি।
-কোন্ দেশ?
-বঙ্গদেশ। সে দেশের পথে ঘাটে শুধুই রঙ্গ। ও দেশে মালিক আপনাকে এতটাই দৌড়ের ওপর থাকা লাগবে যে মুহূর্তেই ফ্যাট হাওয়া হয়ে যাবে।
-বাহ্ ভালই তো। নতুন দেশও দেখব। স্লিমও হব। এক ঢিলে দুই পাখি। আচ্ছা ও দেশের মানুষ বুঝি খুব রসিক?
-জ্বি। অত্যাধিক রসিক।
যেমন ভাবনা তেমনি কাজ। আলাদিন ও দৈত্য চলল বঙ্গদেশ ভ্রমণের পথে। অবশ্য দৈত্য মানুষের রূপ নিয়ে নিল,পাছে লোকে যদি চিনে ফেলে।
ঘুরতে ঘুরতে আলাদিন ও দৈত্য এক জায়গায় এলো। তখন বেলা বারোটা। মাথার ওপর সূর্য গনগন করছে। গরমে ঘেমে নেয়ে উঠল আলাদিন। চলতে চলতে হঠাৎ দেখল এক রাস্তায় লোকজনের অনেক ভিড়। রাস্তাটার দু’ধারে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা দাঁড়িয়ে। কি ব্যাপার!
দৈত্যকে জিজ্ঞেস করল আলাদিন। দৈত্য বলল,মালিক বঙ্গদেশের মহারাজ আজ এ পথ দিয়ে যাবেন তো। এরা সবাই ওকে স্যরি,ওনাকে স্বাগত জানাবে।
-কিন্তু বাচ্চাদের স্কুল নাই। ওদের লেখাপড়া শেখানো বাদ দিয়ে এসব কি হচ্ছে?
-মালিক এখানেও ওদের পরোক্ষভাবে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। যেমন যেমন ধরুন, এই যে ওরা রোদে পুড়ে খাক হচ্ছে। এতে ওরা কষ্টসহিষ্ণুতা শিখছে। তারপর কিভাবে কাউকে তেল দিতে হবে বা তেল নিতে হবে তার প্রাথমিক ধারণা লাভ করছে। কিভাবে মানুষকে কষ্ট দেয়া যায় তাও শিখছে।
-থাক,থাক। আর শিখে কাজ নেই।
এরপর আলাদিন ওখানকার ষণ্ডামার্কা এক লোককে বলল,ভাই এ বাচ্চাদের এভাবে কষ্ট দেয়ার মানে কি? লোকটা চোখ লাল করে তাকাল। আলাদিন বলে যেতে লাগল, শিশুদের অধিকার নিয়ে তো আপনারা কত কি বলেন। অথচ ওদের নিরাত্তা নিয়ে ভাবেন না কেন? আলাদিন আরও কি যেন বলতে যাচ্ছিল,কিন্তু সুযোগ পেল না। ষণ্ডা লোকটা গুণ্ডাদের মতো হাঁক দিল,হারামজাদা হালার পুত,তরে খাইছি। ওই তোরা এ ব্যাডারে ধর। বিরোধী দলের লোক। ওরে মার।
শুরু হয়ে গেল আলাদিনের দৌড়। সঙ্গী তার মানুষরূপী দৈত্য। দৈত্য বলল,মালিক আপনার ফ্যাট কমা শুরু হয়েছে!
দৌড়াতে দৌড়াতে আলাদিন আর তার দৈত্য ছোটখাটো এক জনসভাস্থলে হাজির হলো। এক বক্তা হম্বি-তম্বি করে কার যেন চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করছে। আলাদিন বলল,দৈত্য, উনি কি বলে?
উনি বলেন,পাকি আমলে ওনারা নাকি ভাল ছিল। এক লেখক পাকিদের বিরুদ্ধে লিখছে বলে তার শাস্তি চান।
দৈত্যের কথা শেষ হতেই জনসভাস্থলের এক শ্রোতাকে আলাদিন বলল,ছিঃ ছিঃ ভাই,যে পাকিস্তান আপনাদের কত কষ্ট দিল তাদের সাফাই গাইছেন।
-নাউজুবিল্লাহ! পেয়ারা পাকিদের বিরুদ্ধে কথা। শালা মুরতাদ। মার শালারে। আরেক দফা দৌড় শুরু হল আলাদিনের।
এবার শহীদ মিনারের সামনে এল আলাদিন ও দৈত্য। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছিল। দর্শকদের মাঝে কয়েকজন ‘ইয়ো ইয়ো’ চেহারার তরুণের কথোপকথন শুনতে পেল আলাদিন। একজন বলল,রাবিশ অনুষ্ঠান। মঞ্চে বাংলা গান পরিবেশনের সময় আরেকজন বলল,বেঙ্গলি সং আই ডোন্ট লাইক। শিট্ বাংলা!
আলাদিন আর চুপ করে থাকতে পারল না। বলল,এইটা কি বললেন ভাই। বাংলা আপনাদের ভাল লাগে না। যে ভাষার জন্য মানুষ প্রাণ দিল তারে আপনারা বলেন ‘শিট বাংলা’। ছিঃ ছিঃ ছিঃ।
-ও ড্যাম। শিট্ ডাল ম্যান। গো ফ্রম হিয়ার।
-ঝাড়িটাও ইংলিশে মারলেন। এটা অন্তত বাংলায় কন। আচ্ছা ভাই ভিক্ষাবৃত্তি কি ভাল? দেশীয় সংস্কৃতিকে দূরে ঠেলে বিদেশীকে ধার নেয়া.... ব্যাপারটা কেমন না? আপনারা ইংলিশ পারেন ভাল কথা। বাংলাকেও শ্রদ্ধা করতে শেখেন।
-ও ইউ ব্লাডি। আই উইল কিল ইউ।
আলাদিনের আবার ভুঁড়ি কমা শুরু হল। দৌড়ে দৌড়ে হাঁপিয়ে সে বলল,দৈত্য,এত দৌড়ালে তো আমার ফ্যাটের লগে জানটাও যাবে। চল দেশে ফিরে যাই।
এবার আলাদিন তার দেশের দিকে দৌড় দিল।