মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১১২- ভালবাসার রং....

লেখক:- আকাশের তারা।
--------------------------
বাসে বসে থাকতে থাকতে অসহ্য লাগছে,কখন যে বাস
ছাড়বে কে জানে। মুহিত এতক্ষণে নিশ্চয়ই রিসাইন
লেটারটা স্যারের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। অবশেষে জব ছেড়ে দিলাম
সাথে সাথে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যাওয়া হচ্ছে।
কি হবে জব করে ? যার জন্য এতকিছু করা তাকেই
যদি না পাই তাহলে এসবের আর কি দরকার ! এখন
আমি চিন্তামুক্ত,আর কাউকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
গ্রামে গিয়ে নিশ্চিন্তে মা আর ছোট বোনের
সাথে থাকব আর গ্রামের
স্কুলে শিক্ষকতা করে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিব।
হয়তো কষ্ট হবে একজনকে ভুলে থাকতে কিন্তু যে আমার
না তাকে ভুলে থাকা ই শ্রেয় .....
বাস চলতে শুরু করেছে। ফোনটা বন্ধ করে রেখে ভাল
করেছি না হলে এতক্ষণে অর্থির ফোন আসতেই থাকতো।
এতদিনের এক অকৃত্রিম ভালবাসার
সম্পর্ককে গলা টিপে হত্যা করে চলে যাচ্ছি আমি এতে অর্থি হয়তো আমাকে স্বার্থপর
ভাববে,কাপুরুষ ভাববে ! ভাবতে থাকুক,যেখানে ওর
পরিবারের কাছে আমার মত সামান্য চাকরিজীবি ছেলের
মূল্য নেই সেখানে আমাদের ভালবাসা মূল্যহীন। অর্থির
বাবা-মা এর চাহিদা অনেক বেশি,তারা চান তাদের
মেয়ের বিয়ে হউক কোন সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ছেলের
সাথে যা আজকে তারা আমাকে তাদের সূক্ষ্ন অপমানের
মাধ্যমেই বুঝিয়ে দিয়েছেন।
বাস ছুটে চলছে তার রাস্তা ধরে। অর্থির সাথে প্রথম
পরিচয়ের কথা খুব মনে পড়ছে। সেদিন আমি গিয়েছিলাম
চারুকলায় এক প্রদর্শনীতে। তখন আমি আবার ঢাবির
ছাত্র। ঘুরে ঘুরে ছবি দেখছিলাম এমন সময় হঠাত্
অসতর্কতা বশত একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খাই তখন
মেয়ের হাতে থাকা ছবির ফ্রেমটা নিচে পড়ে ভেঙে যায়।
প্রচন্ড কাঁচ ভাঙার শব্দে সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে।
স্বাভাবিক ভাবেই তখন মেয়েটার রাগ দেখানোর
কথা কিন্তু অস্বাভাবিক ভাবে মেয়েটা কিছুই
বললো না,ছবিটা হাতে নিয়ে চুপচাপ বেরিয়ে গেল।
অনেক অবাক হলাম আমি। স্যরি বলার জন্য আমিও
মেয়েটার পিছন পিছন বের হলাম। মেয়েটার
সামনে গিয়ে স্যরি বললাম।
উত্তরে মেয়েটা বললো,"স্যরি বলার কিছু নেই।
দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। আমি কিছু
মনে করি নি।"একথা বলে মেয়েটা চলে গেল।
দ্বিতীয়বারের মত অবাক হলাম। একটা মেয়ে কি করে এত
অমায়িক হতে পারে ? সত্যিই অসাধারণ মনে হল মেয়েটাকে .....
কিছুদিন পরের কথা। ফেসবুক ইউজ করছি এমন সময় এক
ফ্রেন্ডের লাইক দেয়ার কারণে একটা মেয়ের
ছবি হোমপেজে চলে আসলো। ভাল
করে তাকিয়ে দেখি সেই মেয়েটার ছবি আর তার আইডি।
ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আর একটা মেসেজ পাঠিয়ে দিলাম .....
রাতে ফেসবুকে এসে দেখি রিকুয়েস্ট একসেপ্টেড আর
মেসেজের রিপ্লে। অর্থির সাথে সেদিন রাতে অনেক
সময় ধরে চ্যাট হয়। আমার পরিচয় দিতে গিয়ে যখন
সেইদিনের ঘটনা বলেছিলাম তখন
অর্থি হাসতে হাসতে বলেছিল,"আপনি সামান্য
একটা ব্যাপারে এত আপসেট হয়ে যাবেন ভাবি নি"।
অর্থির সম্পর্কে ও অনেক কিছু জানা হল। যখন আমাদের
পরিচয় তখন অর্থি ভার্সিটি এডমিশনের জন্য
কোচিং করে। অত্যন্ত অমায়িক ছিল অর্থির ব্যবহার যার
কারণে মেয়েটাকে আরও বেশি ভাল লাগতো।
আস্তে আস্তে খুব ভাল বন্ধুত্ব হয়ে যায় আমাদের মাঝে।
যখন সময় পেতাম তখনই চ্যাট করতাম দুইজন। একসময়
দেখা যায় আমরা একজন অন্যজনের সাথে সব কথাই শেয়ার
করতাম। অর্থি অবশ্য আমার তিন বছরের জুনিয়র ছিল।
কিন্তু এরপর ও বয়সটাকে কোন সময় আমাদের বন্ধুত্বের
দেয়াল মনে হত না। এভাবেই চলতে থাকলো আমাদের
কথাবার্তা। মাস-দুয়েক পর ফোনে কথা বলা ও শুরু হল।
মাঝে মাঝে দেখাও হত আমাদের। সপ্তাহে অন্তঃত
একবার আমাদের দেখা হতো ই। আমাদের
বন্ধুত্বটা যে আস্তে আস্তে ভালবাসার
দিকে চলে যাচ্ছে তা আমরা কেউ ই টের পাই নি .....
দেখতে দেখতে ওর এডমিশন চলে আসে আর
অর্থি ঢাবিতে চান্স পায়। এক ভার্সিটিতে পড়ার
কারণে তখন বন্ধুত্বটা আরও গভীর হয়ে যায়। একসময়
বুঝতে পারলাম যে আমি অর্থিকে ভালবেসে ফেলেছি।
অর্থি নিজেও যে আমাকে পছন্দ করত তা ওর আচার-
আচরণে অনেক আগেই বুঝে গিয়েছিলাম।
দ্বিধা না করে একদিন জানিয়ে দেই আমার ভালবাসার
কথা। অর্থি আমার কাছে সময় চায়। এরপর সাতদিন পর ও
আমাকে জানায় যে ও আমাকে ভালবাসে। তারপর থেকেই
আমাদের পথচলা শুরু। কিন্তু ,আমাদের
পথচলা যে এভাবে থেমে যাবে,
স্বপ্নগুলো ভেঙে যাবে তা কি আর তখন জানতাম .....
বাসের হেল্পারের ডাকে আমার চিন্তার ঘোর ভাঙলো।
কখন যে এসে পড়েছি খেয়াল ই করি নি। বাস
থেকে নেমে রিকশা নিয়ে বাড়ির
উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সকল চিন্তা ঝেড়ে ফেলে অনেক
দিন পর মুক্ত বাতাসের স্বাদ নিতে লাগলাম .....
যখন বাড়ি পৌঁছেছি তখন সন্ধ্যা সাতটা বাজে। মা তখন
রান্না করছে। মাকে সারপ্রাইজ দিব বলে যেই
না রান্নাঘরে ঢুকেছি তখন আমি নিজেই সারপ্রাইজ
হয়ে গেলাম। অর্থি আর মুহিত বসে আছে মা এর পাশে !
মা কে সালাম করে মুহিতকে জিজ্ঞেস করলাম,"এসব কি ?"
মা বললেন,"কি মানে কিছুই না !
তলে তলে মা কে না জানিয়ে এত কিছু ?" 
"মা আসলে.."
"থাক আমার আর কিছু শুনতে হবে না। আমার এত সুন্দর
বৌ মা কে ফেলে চলে এসেছিলি ? তুই গাধা গাধাই রয়ে গেলি"
পাশ থেকে ছোট বোন বললো,"ভাইয়া,ভাবী কিন্তু অনেক সুন্দর"
আমি তখন বার বার অবাক হচ্ছি।
মুহিতকে জিজ্ঞাসা করলাম কিভাবে কি ?তখনই
অর্থি হাজির আর মুহিত কেটে পড়ে,
"আমি বলছি। তোমার রিসাইন লেটার দেয়ার পর ই মুহিত
ভাই আমাকে ফোন দিয়ে সব বলে। আমি তখনই বাসায়
গিয়ে জানতে পারি বাবা তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার
করেছেন। সাথে সাথে তোমাকে ফোন দেই কিন্তু ফোন
বন্ধ। এরপর বাসা থেকে বের হয়ে চলে আসি আর এরপর
মুহিত ভাইকে নিয়ে সোজা তোমার বাড়িতে।
তুমি তোমার ভালবাসাকে হারাতে পার কিন্তু
আমি পারি নি।"
"তোমার বাবা-মা ?"
"আমি আমার বাবা-মা এর ভালবাসা।
তোমাকে ছাড়া যেমন আমি থাকতে পারব
না তেমনি আমার বাবা-মা ও
আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেন না। কাল
সকালে তারা আসবেন মা এর সাথে কথা বলতে।"
"অর্থি,আই এম স্যরি"
"স্যরি বলার যোগ্যতা তোমার নেই, ভীতুর ডিম। কেন
বোঝনা আমি তোমাকে কত ভালবাসি"
একথা বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো,
"প্লিজ কাঁদবা না,আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি"
"সত্যি ?"
"সত্যি, আই লাভ ইউ অর্থি"
"আই লাভ ইউ টু নীল"
মাঝে মাঝে জীবনে এমন কিছু সারপ্রাইজ
থাকে যা জীবনকে আরও সুন্দর করে দেয় !!