ঢাকা শহরের প্রচন্ড জ্যামে বসে টাইমপাস করতে গান শুনতে শুনতে ফেইসবুকিং করেন অনেকেই।দৃশ্যও ফেইসবুকিং করছে কিন্তু আফসোস হেডফোনটা ভুলে বাসায় ফেলে আসায় গান শুনতে পারছেনা এখন।বাসে বসে ফেইসবুকিং করতে করতে হঠাৎ চোখ চলে গেলো দাড়িয়ে থাকা এক মহিলা যাত্রীর দিকে।দৃশ্যর মনে হচ্ছে বেচারি আন্টি ঘামতে ঘামতে গোসল হচ্ছে প্রতি মিনিটে কমপক্ষে পাঁচবার।আহারে আমাদের দেশ! ঠিক ওই জোকস টার মতো.. "মামা বাসে সিট আছে উঠেন উঠেন ".. যাত্রী উঠার পর দেখলো বসার কোনো জায়গাই নাই,হেল্পার দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে ডায়লগ মারলো.. "মামা সিট আছে তো দেহেননা? কিন্তু সিট খালি নাই! "
মহিলা যাত্রীটি দৃশ্যর সিটের পাশেই দাড়িয়ে আছেন। দৃশ্য ফেইসবুকিং করতে করতে ভাবছে
উঠে দাড়িয়ে উনাকে বসতে দেবে কিনা,
মহিলাটা দৃশ্যর অনবরত মোবাইল চাপাচাপি দেখে
দৃশ্যর দিকে এমনভাবে তাকালেন যে দৃশ্য ভয় পাওয়ার বদলে মুচকি হেসে ফেললো! দৃশ্য জানে আন্টিটা হয়তো ভাবছেন.. "আজকালকার ছেলেমেয়েরা মোবাইল ম্যানিয়ায় পড়ে উচ্ছন্নে গেলো! "
দৃশ্য মহিলাকে খুব একটা ভাবাভাবির সুযোগ না দিয়ে একটা হাই তুলে উঠে দাঁড়ালো, বললো.. "আন্টি আপনি বসেন। "
ভদ্রমহিলা কপালের ঘাম শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছতে মুছতে বসে পড়লেন। দৃশ্য ভেবেছিলো আন্টিটা বিনিময়ে অন্তত একটা ধন্যবাদ দেবেন,কিন্তু আন্টিটা যেই ভাব দেখালেন সেটা ভাষায় প্রকাশ করলে এমন হয়.. "পুঁচকা পোলা তুমি এতোক্ষনে উঠলা,তোমার কর্তব্য ছিলো আমাকে আরো আগে বসানো,ফাযিল পোলা!"
দাড়িয়ে দাড়িয়ে চাপাচাপি আর গুঁতা খেয়ে ফেইসবুকিং করায় খুব একটা মজা নেই।বোরিং হয়ে ফোন পকেটে রেখে দেবার সময় বসে থাকা সেই আন্টির দিকে তাকিয়েই ভড়কে গেলো দৃশ্য,ওমা আন্টি নিজেও মোবাইল বের করে ফেইসবুকিং করছেন! তাহলে তখন অমনভাবে তাকিয়েছিলেন কেনো দৃশ্যর দিকে! অদ্ভুত! নিজে করলে বিন্দাস অন্যজন করলে বাঁশ! .. ভাবতে ভাবতে কল্পনায় হারিয়ে গেলো দৃশ্য.. প্রত্যেক আন্টি খালাম্মাদের যদি ফেইসবুক একাউন্ট থাতো তবে কি হতো.. অবিশ্বাস্য গতিতে কমে যেতো প্যাঁচাল পাড়তে ইনাদের প্রতিবেশীর বাড়িতে হরদম যাতায়াত! ভাবতে ভাবতে রাস্তা কেটে গেলো , ভীড় ঠেলে নিজ গন্তব্যে বাস থেকে নামলো দৃশ্য।
বাস থেকে নেমে পকেটে হাত দিতেই দেখলো মোবাইল গায়েব!মোবাইল কই গেলো! দৃশ্যর কানে দুপুরের ঝিমঝিমানো বাতাস মশকরার সুরে বলে গেলো.. সিট পাইয়াও মহান আন্টি সম্প্রদায়কে বসতে দিয়া, ভীড়ের মধ্যে বাঁদড়ঝোলা হয়া দাড়ালে এমনই হয়রে বাছা!
ওদিকে ধানমন্ডি লেকে অপেক্ষা করছে ছন্দা।রোদের মধ্যে এই ভরদুপুরে আজ ছন্দা দৃশ্যর জন্য একটা কারনেই অপেক্ষা করছে.. কারনটা হলো দৃশ্যর জন্মদিন।সকালে ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে এই দুপুরে সময় হয়েছে নবাব দৃশ্যের! আধঘন্টা ধরে ওয়েট করতে করতে ছন্দার এখন ইচ্ছে হচ্ছে নিজের ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে ধানমন্ডি লেকেই ডুবে মরতে। পুরো পার্কটা রাউন্ড দিচ্ছে ছন্দা, এক জায়গায় বসে থাকা ওর কাছে সবচেয়ে বিরক্তিকর কাজ। ছন্দার রাউন্ড দেয়ার স্টাইলই বলে দেয় ছন্দাই হতে পারে একজন যোগ্য টহলদার পুলিশ! ছন্দা যখন ফাঁস দেয়ার ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে দৃশ্যকে কল দিলো,অপরপ্রান্ত থেকে রিসিভ করলো এক সুকন্ঠী..
-- হ্যালো কে..
-- আমি মানবী!
-- দৃশ্য কই? দৃশ্যের ফোন আপনার কাছে কেনো?
-- হি হি হি! কি যে হাসি পাচ্ছে আপনার প্রশ্ন শুনে! আপনার বয়ফ্রেন্ড কই সেটা আমাকে কেনো জিজ্ঞেস করছেন?
-- শাটআপ!
-- সময় থাকতে বয়ফ্রেন্ডকে সামলে রাখতে পারেননা আন্যজন নিয়ে যাবার আগে? আই থিংক ফেইসবুকে ঢুকলেই পুরো ব্যাপারটা ক্লিয়ারলি বুঝতে পারবেন!
ছন্দা রাগে দুঃখে ফোন কেটে দিয়ে ফেইসবুকে ঢুকতেই দেখতে পেলো দৃশ্যর নতুন লাইফ ইভেন্ট ..ইন এ রিলেশনশিপ উইদ টুপুর।
মোবাইল অফ করে নিজের ব্যাগের ভেতর ছুড়ে মারলো ও। ছন্দা অনুভব করলো ওর রাগ বাড়ছে,ছন্দা জানে রাগ বাড়ার সাথে সাথে ছন্দা হয়ে যায় দুইভাগ ,মানে ছন্দা নামের শেষঅংশটুকু,দা হয় যায় ও..এই দা বড়ই বিপজ্জনক, কোপাকুপিতে এক্সপার্ট!
এখন কোপাকুপির ঝাল মেটাতে দৃশ্যর জন্য কেনা ফার্স্ট ও লাস্ট গিফট জন্মদিনে অর্ডার দিয়ে বানানো বাক্সবন্দি কেকটাকেই বেছে নিয়েছে ছন্দা। পার্স থেকে সুইস নাইফ বের করে বক্স খুলে কেকের শরীরটা প্রথমে দুইভাগ করে জবাই করলো ও,এখন নিজের ম্যানিকিউর করা সুন্দর হাতে ধরা নাইফটা দিয়ে ও কেকটাকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে ওর প্রতিটা কোপ দেবার এক্সপেরিয়েন্সড স্টেপে সুনিপুনভাবে!
এই মূহুর্তে আশেপাশে কোনো কোপাকুপি মাস্তান বা কসাই থাকলে নিশ্চয়ই ছন্দার ওপর একবার হলেও ক্রাশ খেতো!
দৃশ্য বেচারার মাথা নষ্ট মোবাইল হারিয়ে,এখন খাবারের দোকান থেকে কি কিনবে ছন্দার জন্য ,প্রথম দেখায় কি দেয়া উচিত তা ভাবতে ভাবতে দুইটা কোল্ডড্রিংস্কের বোতল কিনে, সেটা হাতে নিয়ে পুরো ধানমন্ডি লেক ঘুরে খোঁজাখুঁজি করতে করতে এতোক্ষনে দেখলো ছন্দা কে.. এতোদিন শুধু ফেইসবুকে দেখেছে আজ প্রথমবার সরাসরি দেখা তাও আবার এমন বিধ্বংসী রূপে! কোল্ডড্রিংস্কের বোতল ঘামছে ভাদ্রের টকটকে রৌদ্রে আর দৃশ্য ঘামছে ছন্দাকে দেখে।
দূরে দাড়ানো দৃশ্যর দিকে চোখ পড়তেই দৃশ্যর ফেইসবুকে রিলেশন হওয়া গার্লফ্রেন্ড ছন্দা ছুরি হাতেই তেড়ে এলো।
-- ফাইজলামি পাইসো?! একমাস যাবৎ আমার সাথে চ্যাটে প্রেম শেষে আমাকে এখানে ডেকে আবার আরেকজনের সাথে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস! ছুরিটা যে তোমার গায়ে না ইউজ করে তোমার জন্য আনা কেকের ওপর ইউজ করেছি সেজন্য তোমার আমার প্রতি গ্রেইটফুল হওয়া উচিত!আমার মনে হইতেছে আমি তোমার জন্মদিনের না ব্রেকাপডের কেক কাটলাম!
-- সরি ছন্দা! আমার মোবাইল পটেমারে নিয়ে নিসে!
-- পকেটমার নাকি সুকন্ঠী পকেটমারনী?! যিনি তোমার আইডিতে ঢুকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসও চেঞ্জ করে! আমাকে অন্য মেয়েদের মতো ফুলিশ ভাবছো?
-- আরে এমনটা হতেই পারে! সরি বললামতো! আর তোমাকে ফুলিশ না দারোগা পুলিশনি ভেবেছিলাম তোমার এপ্রোচে! হা হা হা!
--কি বললা?! যেই আমি কারো জন্য দশ মিনিটও ওয়েট করিনা সেই আমাকে আধাঘন্টা ওয়েট করাইলা প্রথম দেখাতেই এই রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেখানোর জন্য? আবার বলতেছো এটা হইতেই পারে?! আমি তুম্রে ব্লক মারুম! গুডবাই!
-- আরে শুনো.. তোমার মন ভালো করতে ফান করসিলাম, এই নাও কোল্ডড্রিংস্ক খাও মাথা ঠান্ডা করো!
ছন্দা কোল্ডড্রিংস্কের একটা বোতল খুলে পুরাটা দৃশ্যর মাথায় ঢেলে দিয়ে হনহন করে হেঁটে চলে গেলো। কোল্ডড্রিংস্ক ঢালার সময় দৃশ্য হা করে ছিলো ফলে মাথায় ঢাললেও কিছু কোক দৃশ্যর পেটেও গেছে।এতে করে দৃশ্যর তেমন একটা খারাপ লাগেনি,কোক মাথায় ঢাললে যে এতো আরাম বোধ হয় তা এই প্রথম অনুভব করছে দৃশ্য। বাকরুদ্ধ দৃশ্য ক্ষতবিক্ষত কেকের দিকে তাকিয়ে দেখলো হ্যাপি বার্থডে টু ইউ দৃশ্য ' এর " দৃশ্য " লেখাটার ওপরই ছুরি চালানো হয়েছে ইচ্ছেমত!কেকটার ক্রিম আঙুল দিয়ে নিয়ে একটু চেটে খেয়ে বিস্বাদ লাগলো দৃশ্যের কাছে।
দৃশ্য চলে যাচ্ছে.. কোক দিয়ে ভেজা মাথা আর শার্ট গায়ে। আরেকটা কোকের বোতলে থাকা ২৫০ এমএল কোক দিয়েই দৃশ্যের আজ লাঞ্চ সারার পরিকল্পনা।দৃশ্য একবার পেছনে ফিরে দেখলো কাকদের দুপুরভোজন হচ্ছে সেই কেক দিয়ে, বেশ কয়েকটি কাকের পুরো পরিবার মিলে লাঞ্চ করছে,কেকের সাদা বাদামি নীল ক্রিম লেগে আছে কাকেদের ঠোঁটে মুখে! দৃশ্যটা মন্দনা! ছবি তোলা যায়.. ফেইসবুকে আপলোডানোর উদ্দেশ্যে ছবি তুলতে নিয়েই মনে পড়লো মোবাইলটা আজ হারাতে হয়েছে।
মনের দুঃখে বাড়ি ফিরে পুরোনো জাভা সেটটা দিয়ে ফেইসবুকে ঢুকেই টাশকিত হলো দৃশ্য! টুপুর আবার কে! আধুনিক মেয়েরাও মোবাইল চোর হয়!
ফেইসবুকের পাসওয়ার্ডটা চেইঞ্জ করতে করতে বাসে থাকার সময়টুকু মনে করার চেষ্টা করলো দৃশ্য। ইউরেকা! ..মনে পড়েছে!
বাসে দৃশ্যর পাশে দাড়িয়ে শ্যামলবর্না একটা মেয়ে ফেইসবুকিং করছিলো ব্ল্যাক কালারের শর্টকামিজ আর ব্লু জিন্সে! ওই মেয়েটার সাথে টুপুরের ফেইসবুক প্রোফাইল পিকচার মিলে যাচ্ছে! মেয়েটা মোটামুটি ভালোই দেখতে তবে দৃশ্যর চেয়ে লম্বা, দৃশ্য লম্বায় পাচ ফিট সাত,মেয়েটা বোধহয় পাচফিট আট বা নয় হবে,এজন্যই কেমন যেন লজ্জা লাগায় বাসে আর ওই মেয়ের দিকে তাকায়নি দৃশ্য! কিন্তু ওই মেয়ের হাতে আইফোন থাকতে দৃশ্যর সিম্ফোণীর একটা পুরোনো মডেলের এন্ড্রয়েড সেটের দিকে নজর গেলো কেনো! অদ্ভুত দুনিয়া,ডিজিটাল চোর - চুন্নীতে ভরে গেছে দেশ! ভাবতে ভাবতে মেজাজ আরো খারাপ হচ্ছে দৃশ্যর।
বিকেলের দিকে চ্যাটে টুপুরই নক করলো দৃশ্যকে..
টুপুর প্রথমেই দৃশ্যকে আইসক্রিমের ছবি পাঠালো। টুপুরের পাঠানো আইসক্রিমের ছবিটা ইয়াম্মি হলেও সেটা দেখে রাগে দৃশ্যর মনে হচ্ছে এই আইসক্রিম সামনে পেলে বাথরুমে ফেলে ফ্লাশ করে দিতো দৃশ্য!
টুপুরঃ
-- হাই! ভালো আছেন? হ্যাপি বার্থডে!
মেসেজ দেখে রাগে দৃশ্যর পায়ের আঙুলের নখগুলোও কিচমিচ করে উঠলো।তবুও রিপ্লাই দিলো দৃশ্য..
দৃশ্যঃ
জ্বি খুব ভালো আছি,এতো ভালো যা আপনি সামনে থাকলে বুঝতেন! আর আপনার উইশ আমার জন্য অভিশাপ!
টুপুরঃ
খুব রাগ? আমাকে সামনে পেলে মারতেন নাকি!
দৃশ্যঃ
আপনিতো বেশ স্মার্ট চুন্নী!
টুপুরঃ
মাইন্ড ইয়োর ল্যাংগুয়েজ!
দৃশ্যঃ
ওমমা আবার ইংলিশও পারে! আমার জমানো টাকা দিয়ে বহুকষ্টে কেনা ফোন পকেটমারবেন , এরপর আবার লগ ইন থাকা একাউন্টে ঢুকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চেঞ্জ করবেন আবার আমার জিএফকে ফোন দিয়ে আমার ব্রেকাপ করাবেন এরপরও আমি আমার ল্যাংগুয়েজ মাইন্ড এর সিন্দুকে তালা দিয়ে রাখবো! হাউ ফানি!
টুপুরঃ
আপনার জিএফ আপনাকে লাভ করলে এভাবে আরেকজন মেয়ের কথায় বিলিভ করে নিজের বয়ফ্রেন্ডকে ছেড়ে দিতোনা! তারপরও আই এম এক্সট্রিমলি সরি,আমার ডোজ নেবার ডেট ছিলো আজ কিন্তু টাকা যোগাড় করতে না পারায় পকেটমারতে বাধ্য হয়েছি।আজ সময়মতো ইয়াবা না নিলে আমার সিচুয়েশন খুব খারাপ হয়ে যেতো! তবে দোষটা আপনারই!
দৃশ্যঃ
হোয়াট! আর ইউ ম্যাড?
টুপুরঃ
ইউ ওয়াজ সো মাচ এবসেন্ট মাইন্ডেড। দ্যাটস হোয়াই আই টুক দ্যা সুযোগ!
দৃশ্যঃ
আপনি ড্রাগ এডিক্টেড,কিভাবে নিজের প্রয়োজন পূরন করবেন সেটা আপনার ব্যাপার। আমাকে এখন আমার ফোন ফেরত দেন!
টুপুরঃ
ফর্মালিটি বাদ দিয়ে তুমি করেই বলি,
টাকা যোগার করেই আমি ফোন কিনে দেবো তোমাকে।একচুয়ালি তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে,হ্যাট মাথায় তোমাকে এততো কুউল লাগছিলো যে আমি পুরাই ফিদা! তাই রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়েছি। আমার সাথে ইয়াবা পার্টনার হবা?
দৃশ্যঃ
আপনার মাথার স্ক্রু ঢিলা এবার সেটা সম্পূর্ণ প্রমাণ হয়ে গেলো! আপনি আমাকে কি পুতুল ভেবেছেন? যে পছন্দ হলো আর নিয়ে নিলেন? আর আমাকে আপনি বলবেন তুমি নাহ!
টুপুরঃ
ও বেবী,আই জাস্ট ওয়ান্ট ইউ এন্ড নাথিং! তুমিই বলবো! তুমি! তুমি! তুমি!
দৃশ্যঃ
পুলিশের হাজতে যদি নিজেকে দেখতে না চান তাইলে এক সপ্তাহের মধ্যে আমাকে এন্ড্রয়েড সেট কিনে দেবেন। ফোন কেনা হলে যোগাযোগ করবেন। আমি এসে ফোন নিয়ে যাবো,এরপর আপনাকে ব্লক মারবো। এখন আপনার সাথে আজাইরা প্যাঁচাল পেরে সময় আর নষ্ট করতে চাইনা।
লগআউট হলো দৃশ্য। একদিকে ছন্দা ব্লক মেরেছে তারওপর ছন্দার ফোনও অফ। অন্যদিকে ওর মাথাটা পুরো জ্যাম লাগিয়ে দিয়েছে টুপুর নামের এই মেয়ে।
রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস রিমুভ করে একটা ঘুম দিলো দৃশ্য। স্বপ্নে দেখলো টুপুর নামের মেয়েটা জোর করে দৃশ্যকে বেঁধে রেখে ইয়াবা খাওয়াচ্ছে .. আর পৈশাচিক হাসি হাসছে।
ধরফরিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠে চোখে পানি দিয়ে ফেইসবুকে ঢুঁ মারতেই আবারো মেসেজ পেলো..
টুপুরঃ
বেইবি তুমি তোমার শ্বাশুড়ী আম্মাকে এতো দয়া দেখিয়ে বসতে না দিলে তোমার ফোন হারাতোনা। তবে আমার মাম্মির প্রতি তোমার কেয়ার দেখে আমি ইমপ্রেসড!
দৃশ্য হাসবে না কাঁদবে ঠিক বুঝতে পারছেনা। তারমানে ওই আন্টি এই মেয়ের মা! মা মেয়ে মিলে প্যাঁচ লাগিয়ে এমনভাবে বোকা বানালো দৃশ্যকে! ভাবতেই পারছেনা দৃশ্য, কি হচ্ছে এসব আজ।
দৃশ্য রিপ্লাই দিলোঃ
দৃশ্যঃ
মা মেয়ে মিলে জোচ্চুরি! ছিঃছিঃ
টুপুরঃ
তুমি ভুল বুঝো কেনো? আমার মাম্মি আমাকে খুঁজতে মিরপুরে আমার এক ফ্রেন্ডের বাসায় যাচ্ছিলো,আমি জানতামনা মাম্মি ওই বাসে! ইন্ট্রেসটিং ব্যাপার হলো আমার খবর রাখার জন্য মাম্মি ফেইসবুক একাউন্ট খুলেছে ! আর আমি মিরপুরেই বাস থেকে নেমেছি পেছনের গেট দিয়ে তারপর আমার আরেক ফ্রেন্ডের ইয়াবা পার্টিতেযোগ দিয়েছি তোমার মোবাইলটা ওই ফ্রেন্ডের কাছে সেল করে। এই টাকায় ভালো ইয়াবাও হয়না,চম্পা নামক ইয়াবা খেতে হয়েছে যেটার মান নিম্ন, ইউ একটু দামি মোবাইল ইউজ করতে পারোনা?!
দৃশ্যঃ
নিজের মোবাইল বেঁচে ইয়াবা খেতে পারেননা?!
টুপুরঃ
আমি আমার মোবাইল বিক্রি করেছিলাম এর আগে,এর আগে অনেকগুলো ছেলের সাথে আমি রিলেশন করেছি ভেঙেছি,তাই মাম্মি আমাকে একদম ট্রাস্ট করেনা। আমার পিছনে লেগে থাকে, ডোন্ট ওয়ারি তোমাকে এতো সহজে ছাড়ছিনা আমি! ড্যাডের সাথে আমার মাম্মির ডিভোর্স হয়ে গেছে বাট ড্যাড জাস্ট আমার জন্য খরচ পাঠায় ,ইউনিক সব গিফট দেয়। আই লাভ মাই ড্যাড! ড্যাডের দেয়া এই সেলফোন আমার জান! আমার মাম্মিটা একদম ওল্ড মেন্টালিটির বাট শী ইজ টু গুড,তারপরও শী ডাজেন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড মি!
দৃশ্য আর রিপ্লাই না দিয়ে ফেইসবুক থেকে বেরিয়ে আসে। দৃশ্য মনে মনে ভাবছে.. এই মেয়েকে কি কোনোভাবে সঠিক পথে ফেরানো যায়না? মেয়েটার মাকেতো ভদ্রই মনে হয়,আর মেয়েটা কিরকম বখে গেছে,ফ্যামিলির ভাঙনে সন্তানরা এভাবে ডিটাচড হয়ে পড়ে প্যারেন্টস থেকে আর ফলাফলটা হয় টুপুরের মতোন!
সো স্যাড!
***
সাতদিন পার হয়ে গেছে, এভাবেই টুপুরের সাথে না চাইতেও চ্যাট হয় দৃশ্যর।দুদিন ধরেতো স্টুডেন্টদের পড়ানোর সময়ও চ্যাট হয়। দৃশ্যর মা বাবা দুজনই দৃশ্যর প্রতি কেয়ারফুল কিন্তু দৃশ্য যে ইদানিং কেমন বদলে যাচ্ছে সেটা কিভাবে যেন ওনাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যাচ্ছে। দৃশ্য টিউশন পড়িয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ চালায়। তবে ইদানিং টিউশনির টাইমটুকুও টুপুরের সাথে চ্যাট করে কাটাতে ইচ্ছে হয় ওর, এই ইচ্ছের কোনো নাম নেই। দৃশ্য জানেনা এই ইচ্ছের ফলাফল কি।দৃশ্য শুধুই ছুটে চলেছে অজানা গন্তব্যে..
***
আরও পনেরদিন পর টুপুর চ্যাটে জানায় টাকা যোগাড় করে দৃশ্যর জন্য এন্ড্রয়েড সেট কিনেছে ও। দৃশ্য তাই ফোন নিতে একটু পরই দেখা করবে সেই ধানমন্ডি লেকে,ওই পুরোনো জায়গাটাই দৃশ্যর বেশী পছন্দ। পনের মিনিট ওয়েট করার পর টুপুরকে দেখতে পেলো দৃশ্য। সাদা শর্ট কামিজ আর ব্লু জিন্স।টুপুরের লম্বা সিল্কি চুলগুলো এই গরমেও খোলা রাখা,অথচ কি অপার স্নিগ্ধ লাগছে মেয়েটাকে। সেদিন বাসে ভালো করে বুঝতে পারেনি দৃশ্য যে টুপুর হাইহিল পড়েছিলো। আজ ফ্ল্যাট স্যান্ডেল পড়ায় বোঝা যাচ্ছে টুপুর আর ওর উচ্চতা একই।
-- হাই দৃশ্য!
-- হুমম ... মোবাইল কই?
-- ইউ আর সো আনরোম্যান্টিক!
বলেই এক দৌড়ে দৃশ্যর পেছনে গিয়ে দৃশ্যকে কয়েক মূহুর্তের জন্য পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো টুপুর। কয়েক ভোল্টেজের শক খেলো দৃশ্য এমন আচমকা আলিঙ্গনের স্টাইলে!
-- কি ব্যাপার এখন কি ঈদ নাকি যে কোলাকুলি করছো?! তাও আবার পেছন থেকে! টুপুর,আমি কিন্তু বলিনি যে তোমার সাথে রিলেশন আমি মেনেছি। সো,কেনো তুমি তবুও এমন উদ্ভট সব বিহেভ করছো?
-- বি কুউল দৃশ্য! হা করোতো..
দৃশ্যর মনে ভেসে উঠলো সেই দুঃস্বপ্নটা যেখানে দৃশ্যকে জোর করে ইয়াবা খাওয়াচ্ছে টুপুর!
-- না...!কেনো? হা করবো কেনোওওওও?!
-- দৃশ্য ডার্লিং, মেন্টোজ খাও, বুদ্ধির বাত্তি জ্বালাও!
-- আমার মেন্টোজের প্রয়োজন নেই,আই এ্যাম ওককে! তুমি কি আরো কিছু বলবা নাকি আমাকে মোবাইলটা দিবা এবার?!
--আরে তোমার বুদ্ধির বাত্তি এখনো জ্বলেনি! পকেটে হাত দাও আগে!
হতচকিত হয়ে নিজের প্যান্টের পকেটে হাত দিতেই নিজের চিরচেনা সাধের সেই মোবাইলটা পেয়ে গেলো দৃশ্য।
-- কিভাবে?! হাউ ইটস পসিবল টুপুর ?!
-- সেদিন তোমার মোবাইলটা সেল করার ঠিক আগ মূহুর্তেই আমার এক ফ্রেন্ড আমাকে ইয়াবা গিফট করেছিলো, ওই যে তোমাকে বললামনা যে ইয়াবা পার্টিতে! কিন্তু আমি এতোদিন ধরে তোমার মোবাইলটা লুকিয়ে রেখেছিলাম কারন ফার্স্ট দেখায়ই তোমাকে আমার খুব ভালোলেগে গিয়েছিলো,তোমার চোখ দুটোই বলে দেয় তুমি মানুষকে রেসপেক্ট দিতে জানো! মোবাইলের কথা তখনি বলে দিলে আর এতোদিন তোমার সাথে কথা বলার সুযোগ পেতামনা হয়তো। সরি এগেইন।
-- তুমিতো বহুত ডেঞ্জারাস! আমি যাই এখন,টা টা।
-- তুমিকি আমাকে ভয় পাচ্ছো দৃশ্য? আমি কিন্তু তোমার ব্যাপারে অন্যরকম সিরিয়াস,বিকজ এই প্রথম একজন ছেলেকে পেয়েছি যে আমার সুযোগ নিতে চায়না,আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি দৃশ্য! আচ্ছা কি করলে তুমি আমার সাথে রিলেশনটা রাখবে?
মাথা নিচু করে বসে আছে টুপুর। লেকের পানির মতো কেঁপে কেঁপে উঠছে টুপুরের চোখের পাতা। ওর গাল বেয়ে চোখের পানি ঝরছে টুপটাপ..
টুপুরের সুন্দর কপালটা কেনো যেন খালি খালি লাগছে,এই মেয়েটা টিপ পরেনি কেনো তা ভাবতে ভাবতে মন কে অন্যদিকে ডাইভার্টের চেষ্টা করেও টুপুরের চোখ জলে টইটুম্বর হয়ে থাকার দৃশ্যটা দেখে কেনো যেন খুব কষ্ট হচ্ছে দৃশ্যের। বিকেলের খোলা হাওয়া আজ দৃশ্যর কানে ফিসফিসিয়ে একটা প্রশ্ন রেখে গেলো..
এই কয়েকদিনে দৃশ্য তুমি কি নিজের অজান্তে হলেও টুপুরের প্রতি এতোটুকুও দুর্বলতা অনুভব করোনি? ফেইসবুকে টুপুরের মেসেজের একবারো কি অপেক্ষা করোনি?
দৃশ্যর হৃদয় থেকে একটি জবাবই এলো.." হ্যাঁ করেছিতো! বারবার করেছি! এতোবেশী অনুভব করেছি যার অর্ধেক অনুভবও ছন্দার জন্য এভাবে আসেনি আমার মনে!
রবীন্দ্র সরোবরে আজ অনুষ্ঠান হচ্ছে, ভেসে আসছে গানের নরম সুর। সাহস করে টুপুরের কোলের ওপর থেকে টুপুরের হাতটা নিজের হাতে নিয়ে দৃশ্য বললো..
-- তুমি যতবেশী নেশার পথ থেকে সরে আসতে থাকবে,আমিও ততবেশী তোমার কাছে আসতে থাকবো ,এট দিজ মোমেন্ট আই একসেপ্ট ইউ এ্যজ মাই বার্থডে গিফট। হ্যাপি?
টুপুরের ঠোঁটে ভীত হাসি আর চোখে এক রাজ্য চিন্তা দেখতে পেলো দৃশ্য..
-- আমি চেষ্টা করবো,কিন্তু জানিনা পারবো কিনা!
-- তোমাকে পারতেই হবে টুপুর! তোমাকে আমি হেল্প করবো তারপরও সমস্যা হলে রিহ্যাবে ভর্তি করিয়ে দিবো,কিন্তু তোমার নিজের ইচ্ছে থাকতে হবে,সেটাই তোমার সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে কাজ করবে। আর ওইসব ইয়াবা বন্ধুদের নিজের জিন্দেগী থেকে কিক-আউট করতে হবে, পারবা?
-- আমাকে পারতেই হবে! আমিও চাই তোমাদের মতো স্বাভাবিক একটা জীবনে ফিরতে কিন্তু এতোদিন কেউ যে সাহস দেয়নি আজো তোমার মতো করে!
টুপুরের দু চোখের নৌকোয় খুশির প্রতিবিম্ব, এই খুশি হলো দৃশ্য.. টুপুরের চোখে দৃশ্যের প্রতিবিম্ব যেন টুপুরের হৃদয়ের আয়নায়ও ফুটে উঠেছে সুখী একটা জীবনের স্বপ্নে। বিকেলের খোলা হাওয়া যেন দমকা হাওয়ায় রূপ নিলো। ঝড় আসছে বুঝি। এই মৌসুমে হঠাৎ এ কেমন ঝড়! টুপুর আর দৃশ্যের কোনো ভয় নেই, ওদের হাতের বন্ধনীটা আরো দৃঢ় হয়ে উঠেছে ঝড়ের আগমনে। দৃশ্যর বিশ্বাস টুপুরকে ফিরিয়ে আনার,টুপুরকে ভালোবাসা দিয়ে ভালো রাখার। টুপুরের মা কে এটা বুঝিয়ে দেবার যে.. ফেইসবুক চালানো আজকালকার ছেলেরাও ভালোবেসে টুপুরের মতো মেয়েকে ভালো রাখতে পারে,যেটা মা বাবা হয়েও অনেকে পারেননা।
আইসক্রিমের ভ্যান দেখে এক দৌড়ে দুটো আইসক্রিম কিনে আনলো টুপুর। দৃশ্যর খুব হাসি পাচ্ছে, প্রথম কথায় বার্থডেতে সেদিন আইসক্রিমের ছবি চ্যাটে ফেইসবুকে পাঠিয়েছিলো টুপুর,যেটা দেখে টুপুরের প্রতি রাগ আরো বেড়ে গিয়েছিলো দৃশ্যর আর আজ সরাসরি আইসক্রিম ট্রিট দিচ্ছে টুপুর ,আজ কিন্তু বেশ ভালোই লাগছে দৃশ্যর। পৃথিবীতে মানুষের কখন কোনটা ভালোলাগবে কোনটা খারাপ লাগবে তা স্বয়ং ব্যক্তি নিজেও জানেনা!
-- এই দৃশ্য আবারো এবসেন্ট মাইইন্ডেড! আবারো কিন্তু পকেটমারবো!
টুপুরের কথায় দৃশ্য হাসতে হাসতে বললো..
-- পকেটমারতে গিয়ে হৃদয় চুরির বিদ্যায় তুমি মন্দনা!
আকাশে অনেক কালো মেঘ,যেই কালো মেঘ টুপুর একসময় ভয় পেতো সেই কালো মেঘে সাঁতরে যাবার জন্য এই প্রথম আজ টুপুরের পাশে আছে এমন একজন যে টুপুরের ইয়াবা পার্টনার নয় লাইফ পার্টনার হবার সাহস নিয়ে টুপুরের হাত ধরেছে ..।।