রহস্যময় ভূতের বাড়ি ভূতুড়েবাড়ি হিসেবে যেটির
নাম বেশি খ্যাতি পেয়েছে সেটি হল মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধানের
আবাসস্থল হোয়াইট হাউস। এ ভবনের ভূত নিয়ে অনেক কাহিনী প্রচলিত
আছে। অবশ্য হোয়াইট হাউসে ভূতদের আনাগোনা যখন ছিল, সে সময়
নাকি বাড়িটি এত সুরক্ষিত ছিল না। প্রথম মার্কিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে হোয়াইট
হাউসে বসবাস করেছিলেন জন অ্যাডামস। সে সময়ের ফার্স্ট
লেডি অ্যাবেগেইল অ্যাডামস জামাকাপড় ধোওয়ার পর ইস্ট
রুমে এসে সেগুলোকে শুকোতেন। ফার্স্ট লেডির মৃত্যুর পরও
তাকে ওইভাবে কাপড় শুকোতে দেখেছেন অনেকে।
হোয়াইট হাউসের বহু ভূতের মধ্যে অ্যাবেগেইল অ্যাডামসের ভূতই
নাকি সবচেয়ে পুরনো বলে মনে করা হয়। তবে এ বাড়ির জনপ্রিয়তম ভূত
নাকি রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকনের ভূত। হোয়াইট
হাউসের অনেক পরিচারকই রাতে ঘরের মধ্যে লিংকনের উপস্থিতি অনুভব করেছে। সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি গ্রেস কুলিজও একবার ওভাল অফিসের জানালায়
নাকি লিংকনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন! লিঙ্কন
রাষ্ট্রপতি থাকাকালীনই হোয়াইট হাউসে তার
ছেলে উইলি মারা যান। ইউলির আÍাকেও
নাকি মাঝেমধ্যে দেখতে পাওয়া যায় বাড়িতে। আর এক সাবেক
মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধান অ্যাণ্ড্র– জ্যাকসনের প্রিয় ঘর ছিল ‘রোজ রুম’। এই রোজ
রুমেই নাকি তার অট্টহাসি আর শ্বাস- প্রশ্বাসের আওয়াজ শুনেছেন
কেউ কেউ। ডেভিড বার্নস নামে এক ভদ্রলোকের
জমিতে তৈরি হয়েছিল হোয়াইট হাউস। এখনও
নাকি বাড়ির কয়েকটি ঘরে শোনা যায় এক অশরীরীর
গলার স্বর। ‘আমিই বার্নস’, বলতে বলতে নাকি এঘর সেঘর ঘুরে বেড়ায় সেই আওয়াজ। অবশ্য শুধু হোয়াইট হাউসই নয়, গোটা মার্কিন মুলুক জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অনেক ভুতের
বাড়ি। এরকমই এক ভূতুড়েবাড়ি হল হলিউডের রুজভেল্ট হোটেল।
পুরনো দিনের বহু নামি চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব এক সময় থেকেছেন এই
হোটেলে। তাদের কেউ কেউ এখনও মায়া কাটাতে পারেনি এখানকার
আতিথেয়তার। এদের অনেককেই দেখা যায় এ হোটেলে, মৃত্যুর বহু
বছর পরেও। যেমনÑ এ হোটেলে এক সময় থেকেছেন মেরিলিন মনরো।
তার পছন্দের ঘরটিতে ছিল একটি আয়না। অনেক পরে অভ্যাগতদের কেউ
কেউ ওই আয়নায় মনরোর প্রতিবিম্ব দেখেছেন। অথচ ঘাড় ঘুরিয়ে কাউকেই দেখা যায়নি! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরও কয়েকটি ভূতের বাড়ির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ফিলাডেলফিয়ার ফিলজফিক্যাল সোসাইটির পাঠাগার। বিখ্যাত লেখক, দার্শনিক ও বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের আÍা নাকি এখানে রাতে বইপত্র
ঘাঁটাঘাঁটি করে। নিউ অরলিয়ন্স শহরের অনেক পুরনো বাড়ির সঙ্গেই জড়িয়ে আছে বহু জলদস্যুর অতৃপ্ত আÍার ইতিহাস। তাদের অনেকেই আজও
ফিরে ফিরে আসে। ন্যাশভিলের পুরনো এক গান রেকর্ডিং স্টুডিওতে আবার দেখা যেত এল্ভিস প্রিসলির ভূত। সেই স্টুডিও ভেঙে এখন তৈরি হয়েছে নতুন একটি টিভি প্রোডাকশন হাউস। সেখানেও বিরাজমান এল্ভিসের আÍা। যতবারই এল্ভিসের নাম উচ্চারিত হয়, ততবারই নাকি অশৈলী কাণ্ড ঘটে সেখানে।
কখনও বাল্ব ফেটে যায়, কখনও বা মিউজিক সিস্টেমের মধ্য দিয়ে বের হয়
ভুতুড়ে শব্দ, আবার কখনও বা সোজা দাঁড় করানো জিনিসপত্র উলটে যায়। নিউ ইয়র্কের হাইডসভিলের এক বাড়িতেও নাকি বিভিন্ন শব্দের মাধ্যমে সদ্য
বাড়িটির মালিকানা পাওয়া অধিবাসীদের সঙ্গে কথাবার্তা চালাত এক
প্রেতাÍা। পরে জানা যায়, ওই বাড়িতে খুন হয়েছিলেন একজন।
তারই অতৃপ্ত আÍা ঘটাত এই কাণ্ড। মাটি খুঁড়ে উদ্ধারও করা হয়েছিল নিহত ব্যক্তির কঙ্কাল। সান ফ্রান্সিসকো উপকূলের কাছে একটি দ্বীপে আছে ভয়ংকর জেল আলকাতরাজ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাগী অপরাধীদের এক সময় নাকি ওই দ্বীপের জেলেই নির্বাসন দেয়া হতো। সেসব আসামির অনেকের আÍাকেও নাকি দেখা যায়
আলকাতরাজের জেলে। ওই জেলেই এক সময় ছিল কুখ্যাত
মাফিয়া আল কাপোন। জেলে থাকার সময় সে প্রায়ই অভিযোগ করত যে, তার
নির্দেশে যেসব ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছিল, তাদের আÍা নাকি তাকে বিরক্ত করছে। আল
কাপোনের ভূতের কথাও শোনা যায় এখানে।
যে কুঠুরিতে তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, সেখানে নাকি নানারকম শব্দ হয়,
শোনা যায় কাপোনের পছন্দের বাঞ্জো ড্রামের আওয়াজও।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর একটি নামি ভূতের বাড়ি হল
নিউ জার্সির বার্লিংটন কাউন্টি প্রিজন মিউজিয়াম। এক সময়
এখানে ছিল জেল। সেখানকার এক বন্ধ ঘর
থেকে নাকি গোঙানি আর শিকলের আওয়াজ শুনতে পায়
পাহারাদাররা। পরে এই জেলকে সংস্কার
করে মিউজিয়াম তৈরি করা হয়। সেসময় কর্মচারীরাও নানা অভিযোগ
করতে থাকে। প্রায়ই নাকি তাদের কাজকর্মের দরকারি যন্ত্রপাতি অদৃশ্য হয়ে যায়, শোনা যায় বিকট চিৎকার, কখনও বা ঘরের
তাপমাত্রা বেড়ে বা কমে যায়। অনুসন্ধান করে জনা যায়, ১৮৩৩
সালে এখানে ফাঁসি হয়েছিল জোয়েল ক্লো নামে এক খুনির।
জোয়েলের ভূতই নাকি এসব কাণ্ড ঘটাত। এখন অবশ্য এই ‘ভূতের বাড়ি’
তথা মিউজিয়াম ঘুরে দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।