মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১৬- দুর্নীতি, দূর নীতি -মিকসেতু মিঠু

‘বুঝলি, এই দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার!’ অনেকক্ষণ থেকে ঝিম মেরে বসে থাকার পর অবশেষে নাইম ভাই মুখ খুললেন। আমি বললাম-‘ভবিষ্যৎ অন্ধকার কি না জানি না, তবে অতীতে অন্ধকার ছিল। গত পহেলা নভেম্বরে বিদ্যুতের গ্রিড ফেইল করার কারণে সারা দেশ অন্ধকারে ডুবে ছিল।’
-আরে গাধা, আমি ওই অন্ধকারের কথা বলিনি। শুনেছিস তো বাংলাদেশ এবারে দুর্নীতিতে চৌদ্দতম হয়েছে।
-ভালোই তো।
-এটাকে তুই ভালো বলছিস! নাইম ভাই অবাক হয়ে জানতে চান।
-না মানে, আগে এক নম্বর ছিলাম এখন চৌদ্দ, সেই তুলনায় ভালো না?
-তুই এখনো অতীতেই পড়ে রইলি, আফসোস।
-আফসোস করার মত কিছু হয় নাই ভাই। এমন দিন আসবে যেদিন দেশ থেকে এমনিতেই দুর্নীতি উঠে যাবে।
-সেই দিনটা কবে শুনি?
-ভাই মন দিয়ে শোনেন, এটা ২০১৪ সাল। আর এজন্যই আমাদের দেশ দুর্নীতিতে চৌদ্দ হয়েছে। এভাবে সাল যত বাড়বে দুর্নীতিতে দেশ তত পেছাবে। ২০৭০ সালে দেখবেন দেশ দুর্নীতিতে ৭০ তম হয়ে গেছে!
আমার কথা শুনে নাইম ভাই চুপ মেরে গেলেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন-‘তোকে ডাকলাম একটা কাজে সাহায্য করার জন্য, আর তুই কি-না শুরু থেকেই ব্যাপারটা নিয়ে ফাজলামি করছিস। আসলে আমারই ভুল হয়ে গেছে, সবাইকে সব কাজে ডাকা ঠিক না।’
নাইম ভাইয়ের অভিমান দেখে একটু খারাপ লাগলো। আলাভুলা নাইম ভাই একটুতেই কষ্ট পান, তারপর অভিমান করে কয়েকদিন যোগাযোগ বন্ধ রাখেন, মাথায় নতুন কোন আইডিয়া এলে আবার নিজ থেকেই যোগাযোগ করেন। এজন্য নাইম ভাইকে আমার খুব ভালো লাগে। ওনার মন খারাপ হওয়া দেখে এবারে সিরিয়াস হয়ে বললাম-‘সরি ভাই, ভুল হয়ে গেছে। বলেন কি সাহায্য লাগবে। আমি এবারে সিরিয়াস।’
এতক্ষণে নাইম ভাইয়ের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। বললেন-‘মুবিন, আমি ঠিক করেছি আজ থেকেই আমি পথে নামবো। যতক্ষণ বাইরে থাকবো ততক্ষণ চোখের সামনে যে কোন ধরণের দুর্নীতি হতে দেখলেই তার বিরধিতা করবো।’
-‘এতে কি লাভ!’ আমি ভেতরে ভেতরে আঁতকে উঠলাম।
-কি লাভ মানে, আমরা যদি এরকম প্রতিবাদ করি, আমাদের দেখে অন্য মানুষেরাও প্রতিবাদ করতে শিখবে। এভাবে সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে ২০৭০ সাল লাগবে না, আগামী বছরেই বাংলাদেশ দুর্নীতিমুক্ত হবে।
নাইম ভাইয়ের কথায় খুব একটা ভরসা পেলাম না। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম-‘তা ভাই কবে থেকে নামবেন? আমাকেও কি থাকতে হবে?’
-‘তুই তো হবি আমার একমাত্র সঙ্গী। আর কবে থেকে মানে আজ এখন থেকেই শুরু হবে। চল বেড়িয়ে পড়ি।’ বুঝলাম নাইম ভাইয়ের হাত থেকে সহজে মুক্তি নেই।

বেশ কিছুক্ষণ ধরে বিজয় সরণী ফ্লাই ওভার দিয়ে হাঁটছি। ফ্লাই ওভার এর এক পাশের রাস্তা জ্যামে আটকে আছে, অন্য পাশটা ফাঁকা। এখন পর্যন্ত চোখের সামনে কোন দুর্নীতি ধরা পড়ে নি। তবে একটু সামনে এগুতেই ধরা পড়লো। ফ্লাই ওভারের যে সাইড দিয়ে আমরা হাঁটছি, তার বিপরীত দিক থেকে একটা পুলিশ বাইকে করে আসছে। দূরে থাকতেই নাইম ভাই বললেন-‘দেখ দেখ, আইনের লোক নিজেই আইন ভেঙ্গে রং সাইড দিয়ে যাচ্ছে। দাঁড়া, আজ আর ছাড়ছি না।’ আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নাইম ভাই রাস্তায় নেমে পড়লেন। পুলিশের বাইকের সামনে হাত তুলে দাঁড়ালেন। হাত তোলা দেখে পুলিশ বাইক থামালো। আমি তখনো ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছি। পুলিশের সাথে নাইম ভাইয়ের কথোপকথন বেশ উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি করলো। আশেপাশে অনেক লোক জমে গেলো। নাইম ভাই বলতে লাগলেন-‘আপনি আইনের লোক হয়ে আইন অমান্য করছেন কেন?’
-কোন আইন অমান্য করেছি?
-এই যে রাস্তার রং সাইড দিয়ে বাইক চালাচ্ছেন। পুলিশ কিছুটা ভয় পেয়ে বললো-‘ভাই আপনি কি সাংবাদিক?’
-না।
-তাহলে?
-আমি সাধারণ একজন নাগরিক। আপনি আমার প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য।
-আর যদি জবাব না দেই?
-জবাব থাকলে না দেবেন, আপনার মত লোকের কারণেই দেশ আজ দুর্নীতিতে চৌদ্দ তম হয়েছে। আপনাদের শাস্তি হওয়া দরকার। এবারে পুলিশ কিছুটা রেগে গেলেন-‘ওই মিয়া, আপনার কথা তো নরমাল লাগতাছে না। পাগল ছাগল কই থেকে কি হাবিজাবি খেয়ে আসছেন?’
-‘হাবিজাবি আমি খাইছি না আপনি খেয়েছেন?’ নাইম ভাইও বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন।
-‘বেশী তেড়িবেড়ি করলে কিন্তু হাজতে ঢুকাবো। এখনো সময় আছে, যান নিজের কাজে যান।’ এবারে রাস্তার দুই একজন লোকও বিদ্রোহ করে উঠলো। তখন পুলিশটা আবার বললো-‘ভাই আপনারা অযথা উত্তেজিত হবেন না। এই লোক হাবিজাবি খায়, এরে আমি ধরে নিয়ে যাচ্ছি।’
-‘বললেই হলো! হাবিজাবি যে খায় তার প্রমাণ কই?’ ভিড়ের মধ্যে একজন বলে উঠলো।
পুলিশটা বললো-‘একে চেক করলেই প্রমাণ পাওয়া যাবে।’ বলেই উনি নাইম ভাইয়ের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিলেন। একটু পর হাত বের করলেন। হাতে দুই পোটলা গাঁজা ধরা! মুখে বিশ্বজয়ের হাসি।
-‘বলেছিলাম না, হাবিজাবি খায়। এই ওঠ, গাড়িতে ওঠ, আজ হাবিজাবি খাওয়া বের করতাছি।’ লোকজন নাইম ভাইকে পাগল মনে করে হাসাহাসি করে যে যার কাজে চলে গেলো।

সব লোক চলে যাওয়ার পর পুলিশটা বললো-‘শুনুন, এবারের মত আপনাকে ছেড়ে দিলাম। ভদ্র ঘরের ছেলে, ভদ্র থাকুন। পুলিশের সাথে লাগতে আসবেন না।’ উনি বাইক নিয়ে রং সাইড দিয়েই চলে গেলেন। আমরা চেয়ে চেয়ে দেখলাম, কিছু বলতে পারলাম না।
নাইম ভাই হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, মুখ ফ্যাঁকাসে হয়ে গেছে, একটু একটু কাঁপছেন। ওনার পকেটে গাঁজা পাওয়া গেছে এটা এখনো মেনে নিতে পারছেন না। ‘মুবিন, আমাকে একটু ধর তো...’ বলেই নাইম ভাই জ্ঞান হারিয়ে আমার গায়ে ঢলে পড়লেন!