দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ঘটনা। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল এসেছেন হোয়াইট হাউসে। সারা দিনের কর্মব্যস্ততায় ক্লান্ত শরীরটাকে জুড়িয়ে নিতে চমৎকার একটা সান্ধ্য-স্নান নিলেন চার্চিল। স্নানাগার থেকে সোজা নিজের ঘরে। পরনে কোনো পোশাক নেই। নিজের মতো করে পাওয়া সময়টাকে আরেকটু উপভোগ করতে ধরালেন একটা চুরুট। সেই চুরুটে কয়েকটা টান দিয়েছেন কি দেননি, অমনি চার্চিল আবিষ্কার করলেন, ফায়ারপ্লেসের পাশে বিষণ্ন চেহারা নিয়ে বসে আছেন আব্রাহাম লিঙ্কন! যেন যুদ্ধ-উন্মত্ত পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীষণ চিন্তিত।
এভাবে একেবারে জন্মদিনের পোশাকে লিঙ্কনের সামনে পড়ে যাওয়ায় চার্চিল তো লজ্জায় মাটির সঙ্গে প্রায় মিশে যান। কিন্তু সেই লজ্জা কর্পূরের মতো উবে গিয়ে সেখানে ভর করল বিস্ময়—আব্রাহাম লিঙ্কন! তিনি তো মারা গেছেন সেই ১৮৬৫ সালের এপ্রিলে! এই কি তাহলে আব্রাহাম লিঙ্কনের সেই বিখ্যাত ভূত? জনশ্রুতি আছে, চার্চিল নাকি একটুও ভয় না পেয়ে লিঙ্কনের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘শুভ সন্ধ্যা, মিস্টার প্রেসিডেন্ট। আমাকে একেবারে অপ্রস্তুত অবস্থায় পেয়ে গেলেন দেখছি!’
শুধু চার্চিল নয়, হোয়াইট হাউসে লিঙ্কনের ভূত অনেকেই দেখেছেন বলে শোনা গেছে। এর মধ্যে চার্চিলের এই লিঙ্কন-দর্শনই সবচেয়ে বিখ্যাত। অনেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট, ফার্স্ট লেডি, রাষ্ট্রীয় অতিথি, কর্মকর্তা-কর্মচারী হোয়াইট হাউসে বিভিন্ন সময়ে ভূত দেখেছেন বলে দাবি করেছেন। সরাসরি ভূত না দেখলেও ভুতুড়ে আওয়াজ পেয়েছেন কেউ কেউ। এঁদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ভূত আব্রাহাম লিঙ্কনেরটাই। এ নিয়ে খোদ উইকিপিডিয়ায়ও একটা ভুক্তি রয়েছে।
লিঙ্কনের ভূত প্রথম দেখেছিলেন প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজের (১৯২৩-২৯) স্ত্রী গ্রেস কুলিজ। প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসনের (১৯৬৩-৬৯) স্ত্রী লেডি বার্ড জনসনও লিঙ্কনের ভূত দেখেন বলে নথিপত্রে উল্লেখ আছে। তবে ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের সময়ই সবচেয়ে বেশিবার লিঙ্কনের আত্মা ঘোরাফেরা করেছে! ওই সময়টাতেই লিঙ্কনের ভূত দেখার ঘটনা সবচেয়ে বেশি বার ঘটে। লিঙ্কনের শোবার ঘরটিকে পাঠকক্ষ বানিয়েছিলেন ফার্স্ট লেডি এলিনর রুজভেল্ট। একদিন সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করতে গিয়ে লিঙ্কনের ভূত দেখার অভিজ্ঞতা হয় তাঁর।
লিঙ্কনের ভূত যে শুধু ফার্স্ট লেডিদের ব্যাপারে আগ্রহী ছিল, তা কিন্তু নয়। হোয়াইট হাউসের আতিথ্য নেওয়া নেদারল্যান্ডসের তখনকার রানি উইলহেলমিনার দরজায় টোকা মেরেছিলেন সেই বিখ্যাত লম্বাটে হ্যাট মাথায় দেওয়া প্রেসিডেন্ট লিঙ্কন! চার্চিলের ভূতদর্শনের কথা তো প্রথমেই জেনেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে ভয় না পেলেও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আর সে রাতে ওই রুমে থাকতে রাজি হননি বলেই জানা যায়।