লেখা: কূলহীন মাঝি
রাত জেগে এখন আর কারো সাথে কথা বলি না।কারণ রিয়ার সাথে দুই দিন হল ব্রেকয়াপ
হয়েছে। মেয়েটার আবদার পূরণ করতে করতে আমার মানিব্যাগটা আজ
অসুস্থ হয়ে পরছে।তাই আমার সাথে চালিয়ে যেতে ওর খুব কষ্ট হচ্ছে দেখে, ও বলার আগেই আমিই ওকে ছুটি দিয়ে দিলাম। কষ্ট লাগেনি? নাহ,কেননা আমার সাথে তু ওর
ভালবাসা ছিল না ওর ভালবাসা ছিল আমার পিছনের পকেটের মানিবেকটার
সাথে। রাত না জাগার কারণে এখন খুব ভোরে উঠতে পারি,তাই ভাবলাম
ফজরের নামাযটা পড়ে ফেলি। ফজরের নামাজটা পড়ে রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম।
কিছুক্ষণ পর এই রাস্তা দিয়েই মীরা প্রাইভেটে যাবে। আমাকে দেখে হইত আংগুল কামড়ে দেখবে,স্বপ্ন দেখছে নাতো সে! যে ছেলে ঘুমের কারণে পরীক্ষা পর্যন্ত মিস করে,তার সামনে সেই ছেলেটাই ফজরের নামাজ পড়ে হাটছে।বিশ্বাস হওয়ার কথা না।তবু বিশ্বাস করতে হবে, কারণ আমি আজ সত্যি ই ফজরের নামায পড়ছি।মীরাকে আরো চমকে দেওয়ারর
জন্য এগিয়ে যাচ্ছি কিন্তু তার আগে তু মীরার
পরিচয়টা দিয়ে নেয়। মীরা, খুব নম্র,ভদ্র,আর স্বল্পভাষী একটা মেয়ে।
ক্লাস নবম থেকে দশম শ্রেণীতে উঠল।খুব মেধাবী, স্যারদের কাছে তার খুব
সুনাম।বন্ধু-বন্ধব খুব কম,কারো সাথে তেমন একটা মেশে না।আজ অবদি কেউ তার
চেহারা দর্শনের সুযোগ পাইনি।কারণ সে মাদরাসায়
কখনো বোকরা ছাড়া আসেনি।হালকা- পাতলা,লম্বা কমলা সুন্দরী একটা মেয়ে,
চোখ জোড়া দেখলেই বলে দেয়া যাই। কোন ছেলেই তার
সাথে মাততে আসে না,শিক্ষকদের সাথে তার ভাল সম্পর্ক।
জানতে পারলে খবর আছে। এদিকে আমি, দাখিল(ssc)পরীক্ষার্থী।পড়া-শুনা তে গাছের ডাল।বাঁদরামির জন্যে নাম্বার ওয়ান।ক্লাসের ফাস্ট বয় পর্যন্ত আমার বাঁদরামির কাছে ফেল
করত।তবে শিক্ষক সহ ক্লাসের সবাই খুব ভালবাসত।কারণ কারো বিপদে তিনশ
হাত এগিয়ে থাকতাম আমি বান্দর খান সাগর।তাই মাদরাসার সবাই
আমাকে চিনত দরদী বাঁদর হিসেবে। এই সাগরের একটা দূর্বল জাইগা হল রিয়া।
রিয়া, সাগরদের ক্লাসের মেধাবী+ভাবওয়ালী মেয়ে রিয়া।
বোকরা ত পরেই না ওড়নাটাও ঠিক মত মাথায় রাখে না।ছেলেদেরকে তার
পেছনে ঝুলাই রাখাই তার প্রধান বৈশিষ্ঠ।যেমন সাগর ও পরে আছে তার
পেছনে।কিন্তু কি পেয়েছে এই রিয়ার মাঝে? সেটা সাগর
আদো বলতে পারবে না। সাগরের বাঁদরামি,
রিয়ার সাথে দেখা করার জন্য সাগর বসে আছে মাদরাসার বারান্দায়। এদিকে মীরা ক্লাস শেষ করে বের হয়ে আসছিলো। সাগর দুষ্টুমি করে মীরাকে চোখ মারে। সাগর ভেবেছিল মীরা রেগে যাবে, কিন্তু না! মীরা একটা হাসি দিয়ে চলে গেল। বাঁদরামির জন্য ফেঁসে গেলেম নাতু? হ্যা সেদিনের পর থেকে মীরা সাগরকে ভালবাসতে শুরু কেরে।অনেক বুঝানোর পর মীরা বুঝতে পারে যে আসলে সেদিনের চোখ মারাটা ছিল সাগরের দুষ্টুমি।
সেদিন মীরা অশ্রু ভেজা চোখে বলেছিল
- আজ আমাকে আপনি ফিরিয়ে দিলেন কিন্তু আমি আপনাকে ফেরাবো না।
আমি অপেক্ষায় রইলাম। সেদিন ফজরের নামাযের পর মীরকে চমিয়ে দেয়া,
-এই মীরা
-হ্যা সাগর ভাইয়া
-আজ আমতলায় দেখা করতে পারবা?
-মীরার বিশ্বাস করতে পারছেনা,যে ছেলেকে ২মিনিট দাড়িয়ে কথা বলাতে পারিনি ওনি নাকি নিজে এসে আমতলায় দেখা করতে চাচ্ছে।বড় বড় চোখ
করে আমার দিকে ছেয়ে আছে।
-কি হল এমনভাবে ছেয়ে আছ কেন? পারবে কিনা বল?
-সত্যি
-হ্যা সত্যি, চারটায় আসবা। মীরা প্রচন্ড খুশি হয়ে চলে যাচ্ছে আর বার পিছন ফিরে আমার দিকে তাকাচ্ছে।হঠাৎ দৌরে আমার দিকে আসতে শুরু করে।
-সত্যি আসবেন?
-আরে বাবা সত্যি বলছি। আসলে মীরা চমকেগেছে গেলাম বাসায়, একটু কোরআন শরীফ পড়লাম।তারপর ক্লাসের পড়াগুলা দেখে নিলাম। পেছনে ফিরে দেখি আম্মু কাঁদছে
-কি হল তোমার? কাঁদছ কেন?
-তুই সব সময় এরকম থাকবি ত বাবা? আমি তর কাছে আর কিছু চাই না, শুধু এরকম ভাবে প্রত্যেকদিন চলবি বল?
-হ্যা চলব,তাই বলে কাঁদতে হবে নাকি? বোঝতে পারলাম আম্মুকেও
চমকিয়ে দিয়েছি গেলাম মাদরাসায় সাফায়েত স্যারের ইংরাজি ঘন্টা।
-এই পড়া কি ছিল?
-Newspaper স্যার।
- সবাই লিখে নিয়ে আসো লিখা শুরু করলাম মুখস্থ করছি ঠিকি কিন্তু বানান পারি না,বই দেখে সবার আগে লিখে স্যারের কাছে ।
-কিরে সাগর! আর কত বাঁদরামি করবি? পারিসনা ঠিক আছে, বসে থাক।
তা না করে বই দেখে দেখে লিখে আমার কাছে নিয়ে আসছিস।
-না স্যার পারি, রাতে ডেটিং বাদ দিয়া তিনটা পর্যন্ত জীবনের প্রথম
রচনা মুখস্থ করছি।এই নিয়ে অপবাদ দিয়েন না।কলিজায় লাগব।
-তাইলে বল দেখি
-কি আর করা, চোখ বন্দ করে শুরু করলাম।The news paper is a........ চোখ
খুলে দেখি রিয়া আমার দিকে হা করে তাকিয়ে, ঐ
হা দিয়ে একটা একটা ফুটবল অনায়েসে আসা-যাওয়া করতে পারব।
স্যার চশমা খানা খুলে আমার নিচ থেকে উপর পর্যন্ত পরিদর্শন করতেছে।
স্টুডেন্টগুলা লিখা বন্দ করে আমার দিকে বেটকি মাইরা তাকাই আছে। যে ছেলে বাংলা রচনা এক পেরা জীবনে বলতে পারেনি সে নাকি News paper !
-স্যার খাতাটা
-নেন ন ন নেউ ন ন নে ধর বোঝলাম স্যারকে চমকিয়ে দিয়েছি বারান্দায়য় দাডিয়ে আছি, হঠাৎ মীরার আগমন।
-সাগর ভাই, আমতলায় কি সত্যি আসবেন?
-তোমার কি বিশ্বাস হয় না? যাও
তোমার আসতে হবে না।
-না না আসব, রাগ করবেন না প্লিজ আর বলব না।আমি আসব
-আসবা ঠিক আছে তবে বোকরা ছাড়া
-হা বো ব বোকরা ছাড়া। দূরে দাড়িয়ে রিয়া আমাদের দেখছিল।
রিয়াকে না দেখি না দেখি করে ওর সামনে দিয়ে চলে গেলাম। রিয়া ছানাবড়া দৃষ্টিতে আমার চলে যাওয়া দেখছে। যে ছেলে রিয়াকে ছাড়া অন্য কিছু
চোখে দেখত না সে আজ-কাল তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না।
বোঝলাম রিয়াকেও চমকিয়ে দিয়েছি আমতলায় যেতে ৫টা বেজে গেল।
নির্ধারিত সময় থেকে এক ঘন্টা লেইট। মীরা অবশ্য রাগ
করবে না,আমি এসেছি এতেই ও খুশি হবে। সামনের
বেন্সটাতে কালো শাড়ী পরে মীরা বসে আছে। আমি ভেবেছিলাম নীল শাড়ী পরবে।
সমস্যা নেই আমার ভালবাসার রং হবে কালো,কালোই ভাল।
মীরার সামনে গিয়ে দাড়ালাম একি আমি কার সামনে দাড়িয়ে আছি!
এ যে মানুষ নামের কমলা পরী। কালো টিপ,কালো চুড়ি,কালো শাড়ীতে জড়ানো আমার
কমলা সুন্দরী।তার উরন্ত চুলের ঘ্রাণে আর ডাগর ডাগর মায়াবী চোখের
চাহনিতে আমি হারিয়ে গেয়েছিলাম কিছুক্ষণের জন্য।
-এইযে কি হল! আপনি কি এভাবে তাকিয়েই থাকবেন!
সেই কখন থেকে এভাবে ছেয়ে আছেন, আমার বুঝি লজ্জা লাগে না
-না, হ্যা, না,মানে, ইয়ে ... বোঝতে পারলাম মীরা আমাকে চমকিয়ে দিয়েছে।
কিছু না বলেই মীরাকে জড়িয়ে ধরলাম, I LOVE YOU।
হ্যা মীরা লাভ ইউ, আমি এত দিন রিয়া নামের ছাই এর
মাঝে মুক্তা খুঁজেছি কিন্তু আজ মীরা নামের সাগর পানে ঝাপ
দিতে চাই,তুমি অক্সিজেন হয়ে পাশে থেকো,আমি তোমার
মায়াবী চোখের মায়ার জালে বন্ধী থাকতে চাই,তোমার
কালো চুড়ির ঝনঝনিতে আমার সকালের ঘুম ভাঙ্গতে চাই,তোমার
কালো শাড়ীর আছলে আমার ক্লান্তি মুছতে চাই,তোমার
কালো টিপটার সুন্দর্যে আর গাড় কালো চুলের ঘ্রাণে হারিয়ে যেতে চাই।
এই চাই এর চাওয়া গুলা পূরণ করবা তুমি, বল " মেয়েটা ডুকরে কেঁদে উঠল
-কি হল কাঁদছ কেন?
-ভেবেছিলাম আপনি আমাকে মেঘ না চাইতে বৃষ্টি উপহার দেবেন কিন্তু তার সাথে ঝড়-তুফানও ফ্রি দিয়ে দিলেন। I LOVE YOU 2,3,4,5,6 বোঝতে পারলাম মেয়েটাকে আবারো চমকিয়ে দিয়েছি,খুশিতে কি সব আবোল তাবোল বলছে I LOVE YOU 2,3,4,5,6
হই নাকি!