মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ২২- সহযাত্রী সমাচার --মিকসেতু মিঠু

লং জার্নির সময় অধিকাংশ যুবক ছেলের একটাই স্বপ্ন থাকে-পাশের সিটটা যেন কোন সুন্দরী মেয়ের হয়। আমার মনের কোনেও এরকম একটা স্বপ্ন লুকায়িত ছিল । স্বপ্ন দেখতাম কোন একদিন আমার পাশের সিটে সুন্দরী একটা মেয়ে বসবে। আমি যে-ই সিটে বসতে যাবো ওমনি মেয়েটা অচেনা কাউকে দেখে ভয় পাবার ভান করবে। আমি চুপচাপ থাকবো। ভাব দেখাবো এরকম সুন্দরী মেয়ে তো হর হামেশাই আমার পাশে বসে থাকে, এ আর এমন কি! পুরো রাস্তায় মেয়েটার সাথে যেচে কোন কথা বলবো না। এমনকি গন্তব্য এসে গেলেও তার ফোন নম্বর চেয়ে বসবো না। এই যুগে এরকম ভদ্র একটা ছেলে দেখে বাস থেকে নামার আগে মেয়েটাই গায়ে পড়ে আমার সাথে কথা বলবে, ফোন নাম্বার চাইবে। তারপর বাঙলা সিনেমার মতো আমারও প্রেম হয়ে যাবে! দুর্ভাগ্যের বিষয় স্বপ্নটা আজও স্বপ্নই থেকে গেছে।
কাজের সূত্রে প্রতি মাসেই আমাকে কয়েকবার লম্বা জার্নি করতে হয় । কিন্তু সুন্দরী মেয়ে তো দূরের কথা কোন মহিলাও ভুল করে কোন দিন আমার পাশে বসে নি। প্রতিবারই এক বুক আশা নিয়ে টিকেট হাতে বাসে উঠে দেখি পাশের সিটে হয় কোন হোঁতকা লোক ভুঁড়ি বের করে দিয়ে ঘুমুচ্ছে না হয় লুঙ্গি পড়া কেউ সিটে এক পা তুলে বসে ছাগলের মতো পান চিবুচ্ছে! এভাবে চলতে চলতে হতাশ হয়ে যখন সহযাত্রীর সাথে প্রেমের স্বপ্ন বিসর্জন দিতে যাবো ঠিক তখনই বন্ধু ইমন আমার দিকে ওর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে ধরলো। বন্ধু মহলে আমি ইমনের ভক্ত বলা চলে। কারণ আমাদের মধ্যে এক মাত্র ইমনই প্রেম করে বিয়ে করেছে। তাও যে সে প্রেম নয়। ট্রেনে করে যাবার সময় কোন এক মেয়েকে ভালো লেগেছিল। ট্রেন থেকে নামার আগেই মেয়ের সাথে ওর প্রেম হয়ে যায়। এখন ওরা সুখে শান্তিতে ঘর সংসার করছে। সে-ই ইমন যখন আমাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তখন আর চিন্তা নেই। ইমন বললো-‘তুই টিকেট বুক করিস কিভাবে?’
-কাউন্তারে ফোন করে দিই।
-ফোন করে কি বলিস?
-কি বলি মানে? আমার নাম বলে একটা ভালো সিট রেখে দিতে বলি!
-গাধা, এজন্যই তোর কপালে মেয়ে জোটে না। শোন, নেক্সট দিন ফোন করে বলবি যে তোর বউ/ছোট বোনের জন্য একটা ভালো সিট লাগবে। একা যাবে, সুতরাং কোন মেয়ের পাশে সিট দিলে ভালো হয়।
-আমাকে মিথ্যে করে মেয়ের নামে সিট বুকিং দিতে বলিস?
-হুম, এটা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
ভেবে দেখলাম, ইমনের বুদ্ধিটা খুব একটা খারাপ না। পরের সপ্তাহে সিলেট থেকে গাইবান্ধা যাবো। ফোন করে বললাম-‘ভাই আমার স্ত্রীর জন্য একটা ভালো সিট দরকার। টাকা পয়সা হালকা বেশী লাগলেও সমস্যা নেই।’ উত্তরে বললো-‘চিন্তা কইরেন না, কাজ হয়ে যাবে।’
বউয়ের কল্যাণে কাজ হয়ে গেলো নাকি টাকা বেশী দিতে চাওয়ায় কাজ হলো আমি ঠিক নিশ্চিত না, তবে আমার কপাল যে একেবারেই খারাপ সেটা আবারও নিশ্চিত হলাম বাসে ওঠার পর। পাশের সিটে কথা মতো এক মহিলা বসেছিলেন। আমার দাদীর বয়সে বয়স হবে। সারা পথ জুড়ে সেই দাদীর জ্বালায় আমি অস্থির। একবার বলে-বাবা,মাথা ঘুরতাছে, জানালার পাশে একটু বসতে দাও, আর একবার বলে শীত করছে সিটটা চেঞ্জ করো। সেদিন এতোটাই আশাহত হয়েছিলাম যে রাগ করে ইমনের সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছি।
সহযাত্রীর সাথে প্রেম করার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। কিন্তু আসল ঘটনা তখনো বাকী ছিল। ঘটনা ঘটলো এবারের ঈদে। ঈদের পর সিলেট যাবো। টিকেট নেই। অনেক কষ্টে সৃষ্টে শেষ পর্যন্ত একটা টিকেট ম্যানেজ হলো। বাসে উঠে দেখি আমার পাশের সিটে পরীর মতো সুন্দর একটা মেয়ে বসে আছে। প্রথম দেখাতেই মনের মধ্যে প্রেমের বীণ বেজে উঠলো। ভাবলাম শেষ পর্যন্ত মনে হয় হয়েই গেলো! ২৫ বছরের জীবনে এই প্রথম প্রেমের সুবাতাস লাগলো! কিন্ত না, ব্যাগ রেখে যে-ই বসতে যাবো ওমনি মেয়ের আব্বু এসে বললো-‘বাবা আমার দুই মেয়ে এক সাথে যাচ্ছে কিন্তু ওদের সিট আলাদা পড়েছে, যদি কিছু মনে না করো তাহলে এই সিটটা আমার বড় মেয়েকে দেয়া যাবে?’ কি আর করা...ছেড়ে দিতে না চাইলেও ছেড়ে দিলাম। জানালার পাশের সিট ছাড়তে মন খারাপ হয়েছিলো ঠিকই তবে শেষ পর্যন্ত সেই মন খারাপ ভাব থাকে নি।
বাস চলার সময় কয়েকবার মেয়েটাকে লক্ষ্য করলাম। দেখি বাস ছাড়ার পর সেই যে মুখের কাছে ইয়ার ফোন তুলে কথা বলা শুরু করেছে, পুরো জার্নিতে তা আর থামে নি! এনগেজড মেয়ের পাশে বসে প্রেমের গ্যাঁজগ্যাঁজানি শুনতে হয় নি-এটা ভেবেই মন ভালো হয়ে গেছে। অন্যের প্রেমিকার পাশে বসে থাকার চেয়ে ময়লা উপচে পড়া দুর্গন্ধযুক্ত ডাস্টবিনের পাশে বসে থাকা শতগুণ ভালো!