সংকলন ৬৭- মধ্য রাত
ঘটনাটি আমার মামাতো ভাইয়ের জীবনে ঘটে গিয়েছে। ঘটনাটি তার মনে আজও ভয় আনে। প্রায় পাঁচ বছর আগের কথা। তখন আমার মামাতো ভাইয়ের বয়স ছিল ১৬ বছর। সে খুবই ভালো ছাত্র ছিল। গভীর রাতে পড়াশোনা করার অভ্যাস ছিল তার। তো একদিন সে রাত জেগে পড়াশোনা করছিলো। তার থাকার রুমটি আলাদা ছিল। সে তখন দশম শ্রেণীর ছাত্র। সে সাইন্সে পড়তো। সেদিন মধ্য রাতে সে পড়াশোনা করছিল। তখন প্রায় রাত ২ টা বাজে। চারিদিকে নিস্তব্ধ। সবাই ঘুমিয়ে আছে। সে খুবই ক্লান্ত বোধ করছিলো সেদিন। তবুও সে তার পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিলো। তবুও তার মনে কেমন জানি ভয় লাগছিলো। অন্যদিকে গরমের কারণে তার ঘাম ঝরাচ্ছিলো। সে গরমের কারণে তখন বারান্দায় যাওয়ার কথা ভাবলো। তোসে সিদ্ধান্ত মতই কাজ করলো। বারান্দাটি তার রুম থেকে একটু দূরে ছিল। তো সে একটা চেয়ার নিয়ে বারান্দায় গেল। বারান্দা খোলামেলা ছিল। সেখানে কোনো গ্রিল ছিল না। সে খুবই সাহসী ছিল। তাই সে ভয় পেলো না। বারান্দায় চেয়ারে বসে সে পড়ছিলো। বাইরের বাতাস তার গায়ে এসে লাগলো। তাদের বাড়িটি ছিলো দোতালায়। আকাশে ছিল ঝলমলে চাঁদের আলো। তো সে মন দিয়ে পড়ছিলো। পড়তে পড়তে কিছুক্ষণ পর সে ভয় ভয় অনুভব করলো। কারণ বারান্দা পুরোপুরি খোলামেলা ছিলো। রাস্তায় কোনো লোকজন ছিল না। বাইরের গাছপালা থেকে কেমন জেনো শব্দ হচ্ছিলো। এই শীতল বাতাসেও সে ঘামতে লাগলো। তার কাছে মনে হচ্ছিলো ঝোপঝাড়-গাছপালার মধ্যে কেউ জেনো আছে। কেউ জেনো তাকে দেখছে। সে ভয়ে চিৎকারও করতে পারছিলো না। তার হাত পা শক্ত হয়ে আসছিলো। কেউ জেনো তার দিকে এগিয়ে আসছিলো। ভয়ে তার বুকটা শুকিয়ে গেল। সে খেয়াল করলো কেমন জানি একটা জিনিস তার দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছিলো। সে কম আলোয় ভালো করে দেখতে পেল না। জিনিসটা বাতাসের মতো উড়তে উড়তে তার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। সে (মামাতো ভাই) না পারছিলো চিৎকার করতে, না পারছিলো দৌড় দিতে। তার কাছে এমন মনে হচ্ছিল চেয়ারটা জেনো তাকে আঁকড়ে ধরে আছে। তার মা ঘুমুচ্ছিলেন তখন। সে(মামাতো ভাই) ভয়ে কিছু না বলতো পারলেও মনে মনে আল্লাহর নাম নিচ্ছিলেন। বার বার আল্লাহর নাম নিতে থাকলেন। বাতাসের মতো উড়তে থাকা জিনিসটা একসময় তার থেকে মাত্র দুই হাত দূরে ছিলো। আরো এগিয়ে আসতে আসতে যখন প্রায় তার কাছে এসে পড়লো তখনি পড়লো আজান। আজানের সাথে সাথে ঐ জিনিসটা দূরে চলে যেতে থাকলো। যেতে যেতে জিনিসটা একসময় উদাও হয়ে গেল। এর কিছুক্ষণের সে অজ্ঞান হয়ে পড়লো। সকালে সে তাকে নিজ বিছানায় দেখলো। তার পাশেই বসে ছিল তার মা। তার সেদিন প্রচণ্ড জ্বর এসেছিলো। সে তার মাকে জিজ্ঞেস করলে তার মা বলল সে বারান্দায় অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলো। তখন তার মা তাকে তার ঘরে নিয়ে আনে। তার মাথায় জ্বরপট্টি ছিলো। তার মা এ সম্পর্কেজানতে চাইলে সে সেদিন কিছু বলতে পারলো না। আল্লাহর রহমতে সে পরে সুস্থ হয়ে পড়ে। ঐ জিনিসটা আসলে কি ছিল সে তা আজও জানতে পারেনি। তার জীবনে একটা ক্ষত রয়ে গেল।