মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১২২- ভালোবাসার খোঁজে

লিখা-- রুপকথার মেঘবালক


হঠাৎ করেই পেছন ফিরে তাকালো রিয়া। আমি তাড়াতাড়ি দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে গেলাম। কিছুক্ষন এদিক-ওদিক তাকিয়ে আবার হাঁটা শুরু করল সে।
.
বেশকিছুক্ষন ধরে ফলো করছি রিয়াকে। আমার হাতে একগাদা গোলাপ।
প্রতিজ্ঞা করেছি আজ যে কোন উপায়েই এগুলো রিয়াকে দিয়ে মনের কথাটা বলে দিব।
.
আবার ওর পিছন পিছন হাঁটা শুরু করলাম। হাটতে হাটতে একটা কানাগলিতে উপস্থিত।
এমন সময় রিয়া আবার ফিরে তাকালো। দেখে ফেলল!! না দেখে উপায়ও কি? লুকাবার যে কোন পথ নেই!!
.
: কি ব্যাপার অভি ভাইয়া?
-- না, কিছু না তো!!
: কিছু না হলে পিছন পিছন ঘুরছেন কেন? যা বলার বলে ফেলুন? আর
হাতে এগুলো কি? আমি আমতা আমতা করে বললাম, " আসলে, আমি তোমাকে......."
: আমি তোমাকে কি? ( ধমকের সুরে বলে উঠল রিয়া)
.
রিয়ার কন্ঠস্বর শুনে আমার সাহস আবার তলানীতে ঠেকল। মনে মনে আবার নিজেকে সাহস দিলাম, " আজ নেহি তো, কাভি নেহি।"
.
চোখ দুটো বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললাম," রিয়া, আমি তোমাকে ভালোবাসি।"
বলে গোলাপগুলো বাড়িয়ে দিলাম।
.
: কি? তাহলে আপনার এই মতলব? নিজেকে কখনো দেখেছেন আয়নায়? চুল কতগুলো শজারুর কাটাঁর মত। গলায় মোটা চেইন, প্যান্টে জোড়া-তালি, মনে হয় কোন গ্যাংস্টারের দলনেতা!!
.
-- রিয়া আমি তোমাকে সত্যিই খুব ভালোবাসি।
: ও তাই! তাহলে আগে নিজেকে পরিবর্তন করুন। নিজেকে একটু সভ্য বানান। আর
এগুলো কি?? বাসি ফুল নিয়ে ভালোবাসার প্রস্তাব দিতে এসেছেন? ফুলগুলোতো আজই নষ্ট
হয়ে যাবে? তার চাইতে প্লাষ্টিকের ফুল আনতেন? এই আপনার ভালোবাসা.......
.
.
আমি রিয়ার হাত ধরে বললাম," please, accept me..। আমি তোমার জন্য সব করব....
please, accept me......."
***
→এই অভি? কি হয়েছে? এমন করছিস কেন?
.
আরে!! এতো দেখি মায়ের হাত ধরে আছি? রিয়া কোথায়?? এতক্ষন
তাহলে স্বপ্ন দেখছিলাম। যাক বাবা বাঁচা গেল!! স্বপ্নে reject করেছে, বাস্তবে তো নয়।
.
-- এই অভি, তোর কি হয়েছে রে? ঘুমের মধ্যে বিড়বিড় করছিস?
: না, মা কিছু না! হয়তো স্বপ্ন দেখছিলাম।
-- হয়েছে, এবার ঘুম থেকে উঠ। বাজারে যেতে হবে।
.
মা চলে গেলে রিয়াকে নিয়ে আবার ভাবতে বসলাম। রিয়া আমাদের সামনের বাসায়
থাকে। এবার এইচ.এস.সি দিয়েছে। দেখতে খুব একটা খুব
একটা আহামরি সুন্দরী না হলেও, চেহারায় খুব একটা মায়া আছে।
ওরা আমাদের পাড়ায় এসেছে বছরখানেক হলো। ওকে দেখার
পর থেকেই ভালো লেগে যায়। সেই থেকে আজ অনেক চেষ্টা করেছি মনের
কথা বলার, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাহস করে আর বলা হয়নি।
.
না অনেক হয়েছে! আজকে এর একটা বিহিত করতেই হবে।
.
মনস্থির করে ফেললাম, আজই রিয়াকে বলে দিব। মুখ ধুয়ে তৈরি হতে লাগলাম।
চুলগুলো স্পাইক করতে যাবো, হঠাৎ স্বপ্নের কথা মনে পড়ল!!
.
গলার চেইনটা খুলে রাখলাম, ভদ্র একটা লুক নিয়ে তৈরি হলাম। বের হতে যাবো এমন সময় আবার মায়ের ডাক,
→ কিরে, বাজারে যাবি না?
-- না, আজকে বাজারে যেতে পারবো না? কাল যাবো......
→ তাহলে একেবারে কালকেই ভাত খাবি!!
-- চলবে......
.
বাসা থেকে বের হয়ে এলাম। পেছনে তাকালে দেখতে পেতাম মায়ের অবাক করা দৃষ্টি, কারণ আমাকে তো কখনো এইরুপে দেখেনি!!
.
দোকান থেকে ৭টা প্লাষ্টিকের গোলাপ কিনে গলির মুখে দাঁড়িয়ে রইলাম। প্লাষ্টিকের
কেনার পেছনেও স্বপ্নের হাত আছে। এই গোলাপ নষ্ট হবেনা কখনো।
.
বেশকিছুক্ষন পর দেখলাম রিয়া আসছে। আমিও এগোতে যাবো এমন সময়
দেখি আমাদের পাড়ার বগা(ভাল নাম মনি) রিয়ার সামনে গিয়ে দাড়াঁল।
তার হাতে কিছু ফুলও দেখা যাচ্ছে। কি ব্যাপার, কি হচ্ছে এসব??!!
.
বগা ফুলগুলো রিয়াকে দিল। এরপরই বগার গালে রিয়ার হাত পড়ার আওয়াজ।
বুঝতে পারলাম বগা নিশ্চয়ই রিয়াকে প্রপ্রোজ করেছে, তাই
বেচারার এই দশা!! হয়েছে। আজ আর আমার
হিরোগিরি বা রোমিওগিরি কোনটাই চলবে না!! কেটে পড়াই ভালো।
.
: অভি ভাই! একটু এদিকে আসুন তো......
.
এই যা! রিয়া ডাকছে......... কি আর করা,গেলাম তার কাছে।
বগা তখনও দাঁড়িয়ে, বেচারা হতভম্ব অবস্থায় আছে এখনো। মনে মনে বললাম,
বেটা হয়তো আমার চড়টাই তোর কপালে জুটেছে!!
.
: অভি ভাই, দেখুন না....এই ছেলেটা আমাকে প্রপোজ
করতে আসছে। কি সব আজে বাজে ছেলে আপনাদের পাড়ায়!!
-- কি রে বগা!! এমন করলি কেন? ও তো তোর ছোট বোনের মতই।
.
বগা কিছু না বলে হা করে আমাদের কথা গিলছে, চড় খেয়ে বেচারার
বাকশক্তি হয়তো সাময়িক লোপ পেয়েছে।
.
বগাকে উদ্দেশ্য করে রিয়া বললো, " অভি ভাইকে দেখো। উনি কত ভালো!!
এতদিন এখানে আছি কখনো আমাকে ঐসব নজরে দেখে নাই। সবসময় আমার বড়
ভাইয়ের মত থেকেছে। রোমিও হতে আসেনি। উনার মত ভাই পাওয়া অনেক মুশকিল।"
.
হায় হায়!! রিয়া কি বলে এসব!! ভাইয়া.....আমাকে শেষ পর্যন্ত ভাইয়া বানিয়ে দিল!!
.
: তো ভাইয়া, প্লাষ্টিকের ফুল নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?
-- বাসায় নিয়ে যাচ্ছি, ফুলদানিতে দিব.....
: ও, আচ্ছা। চলি তাহলে ভাইয়া। ভালো থাকবেন.....
.
রিয়া চলে যেতে লাগল। আর আমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।
আর বগা, সেতো আপাতত মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত!!
.
কি থেকে কি হয়ে গেল! এসেছিলাম রোমিও হতে, বানিয়ে দিল ভাইয়া।
বাংলালিংকের বিজ্ঞাপনের ডায়ালগটা মনে পড়ে গেল......
.
" এ জগতে হায়, কে ভাইয়া হতে চায়!!"
.
না, কি ভাবছি এসব! ভাইয়া কেন হব? আবার চেষ্টা করতে হবে।
পরবর্তী মিশনে নামার আগে পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে হবে। ভাবছি আমাদের পাড়ার লাভগুরু রাজা ভাইয়ের কাছে যাবো।
দেখি উনি কোন নতুন
ফর্মুলা দিতে পারেন কিনা..................!!