মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১১৬- আকাশ ছোঁয়া বাড়ি

লিখাঃ মারুফা তামান্না

ইরিনা ফেসবুকের নীল সাদা ক্রিনে তাকিয়ে আছে। ভাবছে আজ আর কিছু লেখা হবেনা। হাতে কাজ অনেকগুলো। দুইটা নাটকের স্ক্রিপ্ট আর একটা ভার্সিটির মঞ্চনাটকের স্ক্রিপ্ট লিখতে হবে তাকে। আর সাথে তার উপন্যাস এর লেখাতো আছেই। কিন্তু উদাস উদাস লাগছে তার। শুণ্যতা বোধ করছে ভীষণ।একটা স্ট্যাটাস লিখে: টাইপিং.....

আমি আকাশ ছুঁবো শুন্য হাওয়ায়, আমি রৌদ্র ছুঁবো, মেঘের ভেলায়.... নগ্ন পায়ে হাঁটবো আমি দূর অজানায়.. তুমি আগলে রাখবে মেঘ, তোমার ছায়ায়....

আমি মিলবো ডানা শুন্য দিগন্তে- একলা বিকেলে অভিমানী রংধনুর সাথে। আমি জোৎস্না ছুঁব আঁধার রাতে, আমায় আগলে রাখবে মেঘ, বৃষ্টি সাথে। আপলোডিং.........

ওদিকে হাদিত মুঠোফোনে দেখতে পায় ইরিনার স্ট্যাটাস। ওর দারুন ভাল লাগে স্ট্যাটাস টা।এর আগে ইরিনার একটা উপন্যাস হাতে পেয়েও পড়েনি হাদিত।মনে মনে আফসোস করে হাদিত।

অতি আগ্রহ নিয়ে ইরিনার প্রোফাইল চেক করছে হাদিত। ভারী মিষ্টি মেয়ে ইরিনা মনে মনে ভাবে। বিড়বিড়িয়ে গোটা পাঁচ ছয়বার ইরিনার স্ট্যাটাসটা জপলো। ওর মাঝে এক অদ্ভুত ভাল লাগা কাজ করছে। একটা মানুষ কত উপলব্ধি দিয়ে এমন কবিতা লিখতে পারে। ও জানে এত বড় রাইটার হয়তো ওর ভাল লাগাটা কখনো জানবেওনা। তারপরও ওর ইচ্ছা হল ইরিনার প্রোফাইলে একটা মেসেজ দিবে। .....জানি খুলবেননা আমার এই বার্তা, তবু লিখছি। আমি আপনার বড় কোন ফ্যানও না, আসলে তেমন কিছুই না। যদি সময় হয় কিছু বলতাম। wating for ur reply... --Hadit

ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাবে বলে এড ফ্রেন্ড এ ক্লিক করে কিন্তু the friend cant be receive any more request but u r now follow in.... বুকের মধ্যে ঢিপ ঢিপ করছে তার। কি অসহ্য রকম ভাল লাগা কাজ করছে ওর।অস্থিরতা নিয়ে ভার্সিটিতে চলে যায় হাদিত। কথা গুলো কারো কাছে শেয়ার করতে চাইছিল। রিয়ার সাথে দেখা হয়ে যায় ওর। : (হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে রিয়াকে বলে) দোস্ত, আমি তো শেষ!আমি আর পারছিনা। : কি হইছে তোর?? : আরে, ওই যে ইরিনা আছেনা? : কোন ইরিনা?? : ইরিনা হায়াত, ওই যে নতুন লেখিকা। তার আকাশ ছোঁয়া বাড়ি বইটা, ওই যে আমাকে গিফট করলি। : হুম, কি হইছে উনার। বুঝতে পারছিনা কিছু। আমি যাই এখন ক্লাস আছে। (রিয়ার মন খারাপ হতে থাকে। ও হাদিতকে ভালবাসে কিন্তু হাদিত অন্য কারো প্রতি আসক্ত হচ্ছে ভেবে না বোঝার ভান করল।) : রিয়া, দাঁড়া না! (হাত টান দিয়ে) : হুম, বল।চোখ ছলছল করছিল ওর। : আই এম ইন লাভ, ইয়ার..... বুঝতেছিস না কেন!! আই লাভ ইউ..... (চোখ বন্ধ করে) ইরিনা। বুকের মধ্যে ধ্বক করে ওঠে রিয়ার। ক্ষণিকের জন্য মনে হয়, হাদিত ওকে ভালবাসে। কিন্তু না। রিয়া: তো আমি কি করব?? হাদিত: কিচ্ছুনা।চল্, আজকে আমি তোকে খাওয়াব। চল না, বেবী। রিয়া: বেবী বলবিনা। আমি কি তোর বাচ্চা নাকি? হাদিত: ওকে দোস্ত চল। রিয়া আর হাদিত রেষ্টুডেন্টে বসল। হাদিত ইরিনার কথা সারাক্ষণ জপলো। আর বেচারী রিয়াকে তা হজম করতে হল।

হাদিত মেসেজ চেক করে। নাহ্। কোন রিপ্লাই নেই। ধুর!! এ কেমন ভাল লাগা তার। মন খারাপ লাগে তার। অনেক খোঁজ করে ইরিনার মোবাইল নাম্বার জোগাড় করে হাদিত। তাও আবার রিয়ারই পরিচিত এক ফ্রেন্ডের আত্মীয়ের মাধ্যমে।

রিয়া আর হাদিত ভার্সিটির মাঠে বসে। মোবাইল গুঁতাতে গুঁতাতে হাদিত বলে- : একটা ফোন দিই, রিয়া। : দে... দিচ্ছিস না কেন? দেরী করলে তো আমার প্রেমে আবার পড়ে যাবি। তোর তো ঠিক নেই কিছু। : ধুর, পাগলী। তোর প্রেমে তো আমি সেই কবেই পড়ছি।(ভাব নিয়ে) ওকে, ফাইজলামি না। ফোন দিচ্ছি। রিং যাচ্ছে...... অনেকক্ষণ ধরে রিং হচ্ছে। ওদিক থেকে কেউ রিসিভ করছেনা। খানিক বাদে ফোন ধরল কেউ.... অত্যন্ত উত্তেজিত গলায়, হ্যালো কে?? হাদিত : (চমকে গিয়ে) জ্বী, মানে, আমি হাদিত। নারী কন্ঠ : ভাই আমি খুব ঝামেলায় আছি। আমার হাসবেন্ড খুব অসুস্থ। আপনি পড়ে ফোন দিয়েন।

ফোন কেটে দেয় ওপাশ থেকে। হাদিতের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। ইরিনা বিবাহিত!! এ কেমন করে সম্ভব। হাদিত: (হাসিমুখে) আমি যাইরে। বাসায় একটা কাজ আছে। (রিয়া বুঝতে পারে মিথ্যা হাসিটা) চলে যায় হাদিত......

৭দিন পর--- হাদিতের ফেবুতে মেসেজ নোটিফিকেশন আসল। অনাগ্রহ নিয়ে খুলে হতভম্ব হয়ে যায় সে। ইরিনার মেসেজ... ইরিনা: জ্বী বলুন, কি বলতে চান? রিপ্লাই দিল: না তেমন কিছুনা, ভাইয়া ভাল আছেন?? ৫মিনিট পর রিপ্লাই: সরি বুঝলাম না, কোন ভাইয়া? হাদিত: আপনার হাসবেন্ড?? ইরিনা: লুল!! আমার বিয়ে হল কবে? হাদিত: মানে,আপনি বিবাহিত নন?? ইরিনা: না!! হাদিত: ও সো সরি...আমি হয়তো ভুল নাম্বারে ফোন দিয়েছিলাম। ইরিনা: মানে? হাদিত: না কিছুনা! ইরিনা: আরে আপনি তো জব্বর মানুষ!! কি সব উল্টাপাল্টা বকছেন। হাদিত: সরি,just a misundrstding! nothing else.. forgive me . ইরিনা: its ok... এভাবে কথা চলতে থাকে ইরিনা আর হাদিতের। বেশ ভাল বন্ধু হয়ে যায় ওরা। এক বছর গড়িয়ে যায়। কিন্তু হাদিত তার ভাললাগা কথাটি কখনো বলে না। শুধু বলেছিল, কিছু কথা ছিল। যখন তাদের দেখা হবে তখন বলবে। কিন্তু বলা হলনা আর... এক মাস দুই মাস গেলো। হঠাৎ ইরিনার রিপ্লাই দেওয়া বন্ধ হয়ে গেল। সব শেষ হয়ে গেল হাদিতের।মিথ্যে স্বপ্ন এক নিমিষে চুরমার হয়ে গেল।হাদিত হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। অনেক খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ইরিনার এক্সিডেন্ট হয়েছে। তার দুটো পা ই প্যারালাইজড । ইরিনা আর কারো সাথেই দেখা করেনা। ভিতর থেকে ও পুরোপুরি ভেঙ্গে গেছে। লেখালেখিও বাদ দিয়েছে ইরিনা। হাদিত ছুঁটে যায় ইরিনার বাসায়।

দরজা খুলে দেয় ইরিনার মা। হাদিত: আন্টি, ইরিনা আছে?? ইরিনার মা: হুম, তুমি কে বাবা? হাদিত: আমি হাদিত। ইরিনার মা: ও হাদিত এসো। ইরিনা তোমার কথা অনেক বলেছিল। হাদিত: আন্টি, থাক।আমি যাই। একটু পর আবার আসব। আর আমাকে একটু ইরিনাকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিবেন??আর ওকে কিচ্ছু বলবেন না যে আমি এসেছি। ইরিনার মা: আচ্ছা।ঠিক আছে। হাদিত চলে যায়।

কিছুক্ষন পর হাদিত আবার আসে।ইরিনা ও তার মা তৈরী হয়ে নেয়। প্লেন এ করে তারা কক্সবাজার এর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ইরিনা এখনো জানেনা হাদিত তার সাথে আছে। কক্সবাজারে পৌঁছে ইরিনাকে নিয়ে বের হয় ওর মা। হঠাৎ ছেড়ে চলে যেতে নেয় ওর মা। ইরিনা: মা,কোথায় যাচ্ছ?? ওর মা তাড়াতাড়ি চলে যায়.... দমকা হাওয়া শরীরে লাগে। ঢেউ এর তালে উড়ছে ইরিনার চুল।

পিছন থেকে একটা পুরুষ কন্ঠ বলে,

"তুমি আকাশ ছোঁবে শুন্য হাওয়ায়, তুমি রৌদ্র ছোঁবে মেঘের ভেলায়.... নগ্ন পায়ে হাঁটবে তুমি দূর অজানায়.. আমি আগলে রাখবো তোমায় মেঘের ছায়ায়....

তুমি মিলবে ডানা শুন্য দিগন্তে- একলা বিকেলে অভিমানী রংধনুর সাথে। তুমি জোৎস্না ছোঁবেআঁধার রাতে, তোমায় আগলে রাখবে মেঘ, বৃষ্টি সাথে।..... কিছু কথা বলতে পারিনি আমি- আজ বলবো ভেবে, বৃষ্টি জল মেখে তাই- বলতে চাই ভালবাসি ভালবাসি। তোমায় আমি ভালবাসি।"

মেঘেদের দল এসে ঘিরে ধরে তাদের। বৃষ্টি নামে ধরনীতে আর ইরিনার চোখে। ইরিনা: হাদিত, এ হয়না। আমি হাঁটতে পারবনা কখনো। হাদিত: তাতে কি হয়েছে।আমি তোমাকে ভালবাসি... আমার সাথে তুমি বিশ্ব দেখবে।। গল্প লিখবে, কবিতা লিখবে...আমি কান পেতে শুনব বৃষ্টির গান।। প্লিজ, না বলনা... ইরিনা উত্তর দেয়না। হাদিতের হাত টেনে ধরে। হাদিত আর উত্তরের অপেক্ষা করেনা। বৃষ্টি ছোঁয়ায় বুঝে নেয় ইরিনার না বলা কথা। জড়িয়ে ধরে ইরিনাকে।

বৃষ্টি তাদের ভালবাসার সাক্ষী হয়ে থাকে যুগের পর যুগ....

(সমাপ্ত)