মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ২০- হযরত মুয়াজের (রাঃ) বুদ্ধিমত্তা

নাম হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল। দুরন্ত সাহসী এক সাহাবী। অত্যন্ত মেধাবী ও অসাধারণ জ্ঞানী ছিলেনতিনি। তবে স্বভাবে ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী ও উদার। তিনি অতি সাধারণভাবে জীবনযাপন করতেন। তাঁরজীবন চলায় বাহুল্য বলতে কিছু ছিল না। জাঁকজমক ও চাকচিক্য তিনি মোটেও পছন্দ করতেন না। কোনরকমে চলতে পারলেই তিনি খুশি হতেন।
একদিনের এক ঘটনা।
শাম দেশের ফাহলে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠল। মুসলিম বাহিনী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলো। খ্রিস্টান রোমনরাছিল মুসলমানদের প্রতিপক্ষ। তারা মুসলিম বাহিনীর রণ-প্রস্তুতির কথা শুনে ঘাবড়ে গেল। রোমানরা ভাবলমুসলমানদের সাথে এখনই যুদ্ধ করা সমীচীন হবে না। তাই রোমান সেনাপতি সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে এগিয়েএলো।
মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি হযরত আবু উবাইদা (রাঃ)। অত্যন্ত দক্ষ ও কুশলী সেনাপতি তিনি। সুনিপুণযুদ্ধবিশারদ হিসেবে আবু উবাইদার নাম সর্বত্র আলোচিত হতো। আর হযরত মুয়াজ? তিনিও একজন দক্ষসৈনিক ও পারদর্শী কূটনীতি হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত। জ্ঞান, বুদ্ধি ও পরিকল্পনা রচনায় তিনি ছিলেনঅনন্য।
তাই সেনাপতি উবাইদা রোমানদের সাথে আলোচনার জন্য হযরত মুয়াজের নাম ঠিক করলেন। সন্ধিস্থাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ যে কারোর পক্ষে সমাধা করা সম্ভব নয়। তার জন্য চাই জ্ঞানী ও অভিজ্ঞকূটনীতিক। এ কাজে হযরত মুয়াজ ছাড়া বিকল্প নেই। সিদ্ধান্ত মুতাবিক মুয়াজ ইবনে জাবাল সময়মতরোমান সেনাছাউনিতে গিয়ে হাজির হলেন। দুঃসাহসী মুয়াজ বীরদর্পে ছাউনিতে পা রেখেই অবাক হলেন।তাঁবুটি রোমানরা অত্যন্ত জাঁকজমক ও চাকচিক্যময় করে সাজিয়েছে। তাঁবুতে বিছানো হয়েছে সোনালিকারুকাজ করা গালিচা। দেখে মনে হলো, এটা যেন এক বাদশাহী বালাখানা।
একজন পদস্থ রোমান সৈনিক তাঁবুর গেটে হযরত মুয়াজকে সম্ভাষণ জানাল। তারপর রীতি অনুযায়ী তাঁকেতাঁবুর ভেতর নিয়ে গেল। একটি অনিন্দ্য সুন্দর আসনে নিয়ে মুসলিম দূতকে বসানো হলো। এসব বিলাসীআয়োজন হযরত মুয়াজের মোটেও পছন্দ হলো না। তাই তিনি খানিকটা বিরক্ত হলেন। আর তিনি বললেন,
: দেখুন ভাই, আমি এসব রাজকীয় ব্যবস্থা পছন্দ করি না। কারণ, দরিদ্র মানুষকে শোষণ ও বঞ্চিত করেএসব দামি আসন বানানো হয়েছে।
একথা বলেই হযরত মুয়াজ (রাঃ) মাটির ওপর বসে পড়লেন। মুয়াজের অবস্থা দেখে খ্রিস্টানরা তোহতবাক। তারা বলল,
: আপনি একজন মহান ব্যক্তি, দেশের নামিদামি লোক। চারিদিকে আপনার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে।আপনাকে সবাই যথেষ্ট সম্মান করে। আর আমরাও আপনাকে অসম্ভব সম্মান করি। তাই সম্মানজনক স্থানেইআমরা আপনাকে বসাতে চাই। অথচ আপনি তা পরিহার করলেন?
খ্রিস্টান সৈন্যের কথা শুনে মুয়াজ (রাঃ) মুচকি হাসলেন। তারপর তিনি বললেন,
: শোন সেনারা! তোমরা আমাকে অনেক বড় বলে জানলেও আমি কিন্তু মোটেও তা নই। আমি অতিসাধারণ ও নগণ্য মানুষ মাত্র। অত সম্মান ও চাকচিক্য আমার প্রয়োজন নেই। আর তাই মাটিতে বসতেওআমার অসুবিধা নেই।
হযরত মুয়াজের কথা শুনে খ্রিস্টানরা আরেকবার বিস্মিত হলো। তারা বলল,
: কী অবাক কথা বলেছেন আপনি! আপনি তো অনেক বড় মাপের মানুষ। আপনি মোটেও সাধারণ নন।তাই মাটিতে বসা আপনাকে মানায় না। মাটিতে তো বসবে দাসেরা।
খ্রিস্টানদের কথায় মুয়াজ আরেকবার হাসলেন। তিনি মনে মনে বললেন, তোমরা জান না, এ মুয়াজইআল্লাহর দাস। আর এ দাসের কোনো বিলাসিতা নেই। এবার হযরত মুয়াজ দৃঢ়ভাবে বললেন,
: হ্যাঁ ভাই, তোমরা ঠিকই বলেছ। মাটিতে বসা দাস শ্রেণীর লোকদেরই কাজ। সমাজে ওরা ছোট, তাইওরা মাটিতে বসে। আমিও যে খুবই নগণ্য আল্লাহর এক দাস। তাই মাটিতে বসতে পারায় আমি ধন্যহয়েছি।
মুয়াজের মুখে নিজেদের দাস বলে স্বীকৃতি দেয়ায় খ্রিস্টানরা হতবাক হলো। তাই তারা অবাক বিস্ময়ে হযরতমুয়াজের মুখের দিকে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে রইল। তাদের বিস্ময়ের ঘোর যেন কাটে না। মুয়াজের প্রতিতাদের কৌতূহল আরো বেড়ে গেল।
: আপনার চেয়েও বড় ও মর্যাদাবান ব্যক্তি কী আপনাদের মধ্যে আরো কেউ আছে? - জিজ্ঞেস করলখ্রিস্টানদের একজন।
: কী বলছ তোমরা? আমি মর্যাদাবান? কে বলল তোমাদের? -বিস্ময়ে প্রশ্ন করলেন মুয়াজ।
: মুসলমানদের মধ্যে আমিই সবচেয়ে নিকৃষ্ট। আমার মতো অধম আর কেউ নেই। হযরত মুয়াজ আবারোজানালেন।
এবার খ্রিস্টানদের বিস্ময় আরো একবার বেড়ে গেল। হযরত মুয়াজের কথাবার্তা শুনে তারা বেশ ভাবনায়পড়ে গেল। মুসলমানদের শক্তি ও সামর্থ নিয়ে তারা চিন্তিত হলো। মুসলমানদের আচরণ, ঐতিহ্য ওউদারতা তাদের মনকে নাড়া দিলো। তারা আরো ভাবনায় পড়ল মুসলমানদের সাহস ও বীরত্ব নিয়ে। ফলেরোমানদের মনে ভয়ের উদ্রেক হলো। তারা ভাবল, মুয়াজ যদি একজন সাধারণ মানুষ হন, তাহলেমুসলমানদের না জানি আরো কত অসাধারণ মানুষ আছেন! এমন অসাধারণ ও খোদাভীরু মুসলিম বাহিনীরসাথে লড়াই মানে সাক্ষাৎ মৃত্যু। এদের সাথে যুদ্ধে জয়লাভের চিন্তা করাও বোকামী। তাই রোমানরা হযরতমুয়াজের সাথে সন্ধি স্থাপন করাকেই শ্রেয় বলে মনে করল। ফলে ভয়ানক যুদ্ধের আশঙ্কা কেটে গেল।
হযরত মুয়াজের বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলের কাছে হেরে গেল রোমান খ্রিস্টানরা।