মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ২৪- অবিকল অবিকল

১.
প্রনির উচিত ছিল খুব বেশি অবাক হওয়ার।কিন্তু সে অবাক হতে পারলো না,কারণ এমন ঘটনা এখন সে হরহামেশায় দেখছে।তবে নিজের ক্ষেত্রেও যে এমনটা ঘটতে পারে তা সে কখনো ভাবিনি।এমন ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ২৫৩৩ সালে,তখন যদি এমন ঘটনা ঘটতো তবে সবাই অবাক হত কিন্তু আজ ২৭১২ সালে এইটা শুধুই নিজের অবিকল আরেক জনকে নিজের সামনে দেখা।

এন্ড্রোহিউমেনয়েড প্রযুক্তির সাথে জিন রেপ্লিকেশনের মিশ্রণে এই ক্লোনিং রোবট বা IHCOO(identical homologous copy of own) কে বানিয়েছেন দেশের বাঘাবাঘা সাইন্টিস্টররা।এখানে একজন মানুষের ব্রেনের কোষগুলোকে নিয়ে রোবটের ভিতরে বসিয়ে তারপর মানুষের সব ক্রোমসোমকে স্কান করিয়ে রোবটটিতে আপগ্রেড করা হয় এবং পরবর্তীতে বায়োঅটোমেকানোটেকনোলজির মাধ্যমে বোনস,মাসল,নার্ভ,অর্গান এবং দরকারি সব কিছু বসিয়ে মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় একটা বাচ্চার মত সবকিছুকে ডেভেলপ করা হয়।মাত্র কয়েক ঘন্টায় অবিকল একজন মানুষের জন্ম হয়,এবং সে তার মাদার বডির(যার কোষ নিয়ে ক্লোন তৈরি করা হয়,ঠিক একজন মায়ের মত)মতই আচরণ করে।বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্য একজন বুদ্ধিমান মানুষের মত হাজারো বুদ্ধিমান ক্লোন বানানো যাদেরকে অটো রেপ্লিকেশনের মাধ্যমে আপেক্ষিক অমরত্ব দেওয়া আছে।

প্রনি তার রোজকার মত ডাটা এনালাইসিসে ব্যস্ত ছিল।ঠিক তখনই সে তার ক্লোনকে দেখে তার কিছুটা সামনেই ইনক্লুভারে(হাই স্পিড সোস্যাল নেটওয়ার্ক বেইসড মিডিয়া) বসে কি যেন চিন্তা করছে।প্রনির খুব ইচ্ছে হল তার ক্লোনের সাথে কথা বলতে কিন্তু সে ভাবে সে ই তো ক্লোনটার মাদার বডি।সে কেন তার কাছে আগ বাড়িয়ে যাবে।তাই নিজের ভাব বজায়ে রাখতে সে তার চেয়ারে বসে কাজে মন দিলো।
২.
রাত ১১.২০ এ প্রনি তার বাসায় পৌছে হট শাওয়ার নিচ্ছিলো আর মনে মনে ভাবছিলো,"আহ কতটা বুদ্ধিমান আমি,চারপাশে আমার কত সম্মান।এই অসাধারন বুদ্ধিমত্তার জন্য আমার ক্লোন বানানো হয়েছে।"অহংকারে তার মনে হল এই লুনেট ফ্লোরে পা ফেলায় উচিত না।সে ভাবলো আগামীকালই তার ক্লোন গুলোকে কনফারেন্সে ডেকে তার ক্লোনগুলোর প্রতি অবদানের কথা বলতে হবে।ক্লোনগুলোর জন্য সে কত কি ই না করেছে,এইসব কথা ভাবা মাত্রই সে তার মাথায় চিন চিন ব্যাথা অনুভব করে,আর হঠাৎ করেই ফ্লোরে পড়ে যায়।

৩.
প্রনির যখন জ্ঞান ফিরলো সে নিজেকে একদম সাদা একটা রুমে আবিষ্কার করলো,যেখানে শুরু এবং শেষ কোনটাই বোঝা যাচ্ছেনা।মাথা ঘুরাতেই সে তার মতই একজনকে দেখতে পেলো।ক্লোনটি তাকে জিজ্ঞাসা করলো
-মাথা ব্যাথা কি কমে গেছে?
-হ্যা,মোটামুটি কম,কিন্তু তুমি কে?
-প্রনি কাল রাতে তুমি যা যা ভেবেছো তার সবই আমি জানি,কিন্তু আমার প্রশ্ন তুমি কেন এমন ভাবলে,তোমাকে স্বাধিনভাবে চিন্তা ভাবনা করতে দেওয়ার মানে এই না যে তুমি এমনটা ভাববে।
-তুমি কিভাবে জানলে আমি কি ভেবেছি?আজকাল আমার ক্লোনগুলোকে কি CID টে চাকরি দেওয়া হচ্ছে?
-আমি তোমার প্রশ্নের উত্তর পরে দিচ্ছি,তুমি কেন এমন ভাবলে?
-তোমরা আমার থেকে এসেছো,আমি কি পারিনা তোমাদেরকে নিজের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করাতে?
-একসময় এই দুনিয়াটা আত্ম অহংকারে ডুবে গিয়েছিল,চারিদিকে শুধুই রেষারেষি আর কলহ,তখন বিজ্ঞানীরা শুধু ভালো মনের আর কলুষমুক্ত এই নতুন দুনিয়া বানালেন,যেখানে কোনো ভেদাভেদ নেই এবং একই মনের মানুষ থাকবে,কিন্তু সেই বিজ্ঞানীরা চিন্তাও করেননি,এমন ক্রোমোজোমাল ইমব্যালান্স হবে।
-কিন্তু এখানে তো কোন কলহ নেই,আর আমি তো কিছুই করিনি,শুধু নিজের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে অল্পকিছু ভাবনা ভেবেছি।কিন্তু কোন সাহসে তুমি আমাকে এখানে এনেছো?আমি এখনই পুলিশকে খবর দিব।
-একটু সবুর কর,সবই জানবে।তুমি গত কাল যা ভেবেছো অই অল্প অহংকার থেকেই বড় কিছুর জন্ম হয় আর আবারো হয়তোবা এভাবে আগের দুনিয়া ফিরে আসবে,এই তোমাদেরই জন্যে।
-দেখো,ক্লোন তুমি কিন্তু তোমার মাত্রা ছাড়াচ্ছো।
-আমি ভুল কিছুই বলিনি আর যদি অহংকার করতেই হয়,তোমার মত আনুগত্যের সম্মানের কথা ভাবতেই হয় তা ভাবা বা বলা একমাত্র আমারই সাজে।কিন্তু আমি তো তা চাই না।
-কেন?কে তুমি?তুমি কেন ভাববে?
-প্রণি,আমি তোমার মাদার বডি।
৪.
মাদার বডি হিসেবে উখি অনেক চেষ্টা করলো তার ক্লোন প্রণিকে বাচাতে কিন্তু হোম ডিরেক্টর নাকোচ করে দিলেন।প্রণির অপরাধ গুরুতর কিছুই না।সে শুধু রুলস ভেংগেছে।কিন্তু এখনকার এই পৃথিবীতে রুলস ভাংগাটাই সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ।২৭১২ সালে এসেও মানুষ অনেক কিছু ভুলতে পারলেও ভুলতে পারেনি তার আপনজনের প্রতি মায়াকে।উখিকে যখন প্রথম ক্লোনিং এর জন্য প্রস্তাব করা হয়,উখি বিন্দু মাত্র দ্বিধা করেছিল না,কারণ তার বাবা মা তো সেই ৮ম বিশ্বযুদ্ধেই মারা গিয়েছিল।ভাই বোনও কেউই ছিল না।তাই নিজের অবিকল আরেকজন অথবা তার আরেকজন অথবা তার আরেক জনের আরেক জনকে অবলম্বন করে বেচে থাকতে চেয়েছিল,কিন্তু আজ সেই হাজারো আপনজনের এক আপনজনের ডি.এফ.এন(ডিসকানেশন ফ্রম নেটওয়ার্ক বা মরণ)ডেই আজকে।উখি মনে মনে ভেবেই যাচ্ছে কিভাবে সে এখনো প্রণিকে বাচাতে পারবে,কিভাবে??

৫.
প্রণির জীবনের আজই শেষ রাত।আধো অন্ধকারময় রুমে বসে রুট অফ ৯৪০৩৭১৬০৩৪৬ বের করছিল মনকে শান্ত করার জন্য।দশমিকের পর ৩৯৪১ ঘর আসার পর পরই একটা খুট করে শব্দ হয়।প্রিজনের দরজা খুলে যায় আর একটা ছায়া তার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে থাকে।তার বুকের ভিতরটা ধক করে উঠে।তার মানে,এই গ্রহে তার থাকার সময় কি শেষ?এখনি কি সে ছেড়ে যাবে এই সুন্দরতম গ্রহ ছেড়ে?কেন আর কিছুটা ক্ষন সে থাকতে পারলোনা এই দুনিয়াতে???কিন্তু দূর থেকে ছায়াটা যত কাছে আসতে থাকে ছায়াটাকে তত চেনা চেনা লাগতে থাকে।হয়তোবা যমকে সবারই এমন চিরচেনা মনে হয়।একটু পর মাথায় এক ধরনের চিন চিন ব্যথায় প্রণি জ্ঞান হারায়।

৬.
প্রণিকে চেয়ারে বসানো হয়েছে।তার সারা গায়ে ইলেকট্রিক ওয়ার লাগানো।আর ১০ সে এ তার মরণ ঘটবে।কাউন্টডাউন ও শুরু হয়ে গেছে।৯..৮..৭..৬..৫..৪..৩..২..১....

প্রণির চোখে অশ্রু ঝরে পড়লো....

৭.
ক্লোন ডি.এন.এফ. করার পর কমিটি কিছুটা সমস্যার সম্মুখিন হয় কারন ক্লোন ডি.এন.এফ এ নরমালি স্পার্কি হয় কারণ তার ভিতরে মেটাল বডি থাকে,কিন্তু প্রণির ক্ষেত্রে তার কিছুই ঘটেনি।শুধুই আত্মচিৎকার।নো স্পার্কিং।

৮.
জ্ঞান ফেরার পর পকেট থেকে চিঠিটা বের করে প্রণি..

প্রণি,
পুরনো পৃথিবীতে একজন মা তার সন্তানকে অনেক বেশি ভালোবাসতেন।এমন অনেক নজির আছে যেখানে নিজের সন্তানকে বাচানোর জন্য মা নিজের জীবন পর্যন্ত দান করে গেছেন।আমি তোমার মাদার বডি।আমিও পারলাম না পুরনো পৃথিবীর ভালোবাসা মায়া থেকে দূরে যেতে।

ইতি
তোমার মাদার বডি,উখি।