সুলতান আলাউদ্দিন খালজী তার প্রধান কাজীকে (বিচারপতিকে) দরবারে আহবান করলেন। কাজী দরবারেএলেন। সুলতান জিজ্ঞেস করলেন, 'দূর্নীতিপরায়ণ কর্মচারীদের বিকলাঙ্গ করে শাস্তি দেয়া যায় কিনা?'
কাজী রায় দিলেন, 'এরূপ শাস্তি ইসলাম বিরুদ্ধ।' এই উত্তরে সুলতান মনক্ষুন্ন হলেন।
তিনি আবার জানতে চাইলেন, 'দেবগিরি থেকে আমি যে ধনসম্পদ লাভ করেছি, তা আমার না জনসাধারণের প্রাপ্য?'
নির্ভীক কাজী উত্তর দিলেন, 'ইসলামের সৈন্যবল দিয়ে তা অধিকৃত হয়েছে, সে সম্পদ আপনার হতেপারেনা। জনসাধারণের কোষাগারে তা অবিলম্বে জমা দেয়া উচিত।'
সুলতান এবার আর ক্রোধ রাখতে পারলেন না। ক্রুদ্ধ ও বিরক্ত কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন, 'জনসাধারণেরকোষাগারে আমার ও আমার পুত্র-পরিজনদের অধিকার বা অংশ কতটুকু?'
অবিচল কন্ঠে কাজী উত্তর দিলেন, 'একজন সৈনিকের যতটুকু, ততটুকু অংশ আপনার ও আপনার পুত্রেরপ্রাপ্য। আপনার খেয়ালখুশীমত অর্থ যদি আপনি জনসাধারণের কোষাগার থেকে ব্যয় করেন, তাহলে এরজন্য মহা বিচারের দিন আপনাকে আল্লাহর কাছে জবাব দিহি করতে হবে।'
কাজীর কথায় সুলতান ভীষণ রেগে গেলেন। চরম শাস্তি দেবেন বলে সুলতান তাকে শাসালেন।
অকম্পিত কন্ঠে কাজী বললেন,
'ফাসিই দিন আর যাই করুন, যা সত্য তা বলবই।'
উপস্থিত সকলেই কাজীর ভবিষ্যত ভেবে শংকিত হয়ে পড়ল।
পরদিন কাজী দরবারে হাজির হলেন। সুলতান কাজীকে সসম্মানে গ্রহণ করলেন দরবারে। বহু মূল্যবানউপঢৌকন দিয়ে তাকে সম্মানিত করলেন। নির্মম হলেও আলাউদ্দিন খালজীর সত্যগ্রহণ করার সাহস ছিল।তার বাহুবলের সাথে এই সত্য-প্রীতি যুক্ত ছিল বলেই তার একচ্ছত্র প্রভাব সিন্ধু নদ থেকে রামেশ্বরমেরসেতু পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল।