মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৮৯- ইরা

লিখাঃ কাব্যপ্রেমী রিফাত

ইরা ! ইরা ! এই যে ইরা শুনছো?
পেছন থেকে অচেনা ছেলের ডাক শুনে পেছনে তাকায়
ইরা বিনতে রহমান।পেছনে আসা ছেলেটা দেখতে বোকার মত।
চোখে ইয়া মোটা চশমা।কাছে এসে দাঁড়িয়ে বড় বড় চোখ
করে বললোঃ
- হা করো তো !
: কেন?
- কাজ আছে ।
: কি অদ্ভুত।
- প্লিজ !
: ধ্যাত !
- ওমা ! একি !
: কি ?
- তোমার তো সামনের দাঁত আছে !
: থাকবে না কেন ?
- ওরা যে বললো বিন্তীর সামনে দাঁত নেই।
: কারা ?
শুভ্র আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয় কতগুলো ছেলেকে।ওরা হাসছে।
ওদের ওপর রাগ করে হাত প্রায় উঠিয়ে ফেলেছিলো ইরা।কিন্তু
ছেলেটার চোখ দেখে কেমন জানি লাগে।পশুর মত পৈশাচিক
আনন্দ পাওয়া ছেলেগুলোকে শায়েস্তা করতে শুভ্রের হাত
ধরে ইরা।
দেখে ছেলেটা কাঁপছে।
বলেঃ রিকশা ডাকো।
- আমিইইই ?
: কেন ? পারবে না সাহস নেই?
- ডাকছি ।কোথায় যাবেন ?
: সি-ব্লক।
- আচ্ছা
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রিকশা ডাকেঃ
- এই মামা যাবে ?
: কই যাইবেন ?
- সি ব্লক ।
: যামুনা কেন ? যামু ।
- কত ?
: আশি টাকা দিয়েন !
পাশে তাকিয়ে দেখে ইরা সামনে গিয়ে রিকশাওয়ালাকে বলেঃ
- আশি টাকা ? ফাজলামো ?
: ভাইজান তো দাম ঠিক করলো ।
- এখান থেকে তো চল্লিশ টাকা ।
: যামু না তাইলে!
- যাবা না মানে ।
: আশি টেকা দেন তাইলে যামু ।
ইরা তাকিয়ে দেখে শুভ্র চলে যাচ্ছে।ডাক দেয়ঃ এই যে রিকশায়
উঠুন।
- কেন?
: আমি বলেছি তাই।
- না উঠবো না।
: থাপ্পড় চেনো ? উঠো !
শুভ্র একেবারে দূরে বসে।ইরা শুভ্রকে আগে থেকেই চেনে।শুভ্র
ক্লাসে প্লেস করে।ইরা অনেক চেষ্টা করেও
পিছে ফেলতে পারে না।ছেলেটার প্রতি রাগ ছিলো !কিন্তু
আজকে কেমন জানি মায়া লাগছে। এত বড় একটা মানুষ এত
লাজুক কেন?গলা চড়িয়ে বলেঃ
- আপনি গোছল করেনাই ?
: করেছি?
- তো কাছে বসেন ।
: না।
- বলুন তো আমি কে ?
: ইরা থুক্কু ।না ইরা না । ইরার তো দাত নেই । আপনি কে ?
- আমি তোমার ক্লাসে ।
: আজকেই প্রথম ?
- না।আমার দিকে তাকাও।
: তাকাইছি তো।
- চোখের দিকে।
: না।চোখের দিকে তাকানো যাবো না।
শুভ্র প্রায় পড়ে যাচ্ছিলো রিকশা থেকে ইরা আবার হাত ধরে।
শুভ্র ধাতস্ত হয়ে হাত ছাড়িয়ে নিতে ধরে কিন্তু ইরা ছাড়ে না।
মানুষটাকে এভাবে অপ্রস্তুত করে দিতে ভালো লাগছে।
হয়তো এতদিন একটা রাগ ছিলো ছেলেটার প্রতি।কিন্তু
এতো কিউট মানুষের প্রতি রাগ করা যায় না।
আস্তে করে হাত ছেড়ে দিতেই শুভ্র হা করে তাকিয়ে থাকে ইরার
দিকে।তারপর বলেঃ আম্মু বলছে কোন মেয়ের পাশে না বসতে।
তাহলে নাকি ইয়ে হয়।
- কিয়ে ?
: আম্মু তো বলেনি কিয়ে হয় । কিয়ে হয়?
- প্রেম।
: ছিঃ ছিঃ তা কেন হবে?
- হলে কি করার আছে?
: থামানো যায় না?
- যায়।
: কিভাবে?
- ফোন বের করে লেখো 01*********।
: লিখেছি।এটা দিয়ে কি হবে?
- কল দাও।
: দিচ্ছি।
ইরার ফোনটা বেজে ওঠে।শুভ্র বলেঃ এটা তোমার নাম্বার?
- হুম।
: তো এখানে কেন ফোন দিতে বললে?
- আমরা কথা বলবো?
: আম্মু বকবে তো!
- প্রেম হলে বেশি বকবে তাই না ?
ফোনে কথা বললে আমরা বন্ধু হবো।
: আচ্ছা।
ইরা হঠ্যাত্ রিকশা থামিয়ে দেয়।শুভ্রকে বলেঃ ভাড়া ঠিক
করছো মিটিয়ে দিয়ো।সিব্লক তোমার বাসা।এখান
থেকে সামনেই।
- ইয়ে আমার জন্য তো গাড়ি ছিলো।ড্রাইভার চাচ্চু
অপেক্ষা করছে।আবার ফিরে যাবো!
: আচ্ছা ।
- কিন্তু আমার কাছে তো টাকা নেই।ভাড়া?
: বন্ধু না হতেই ধার।
- সরি । আম্মু বলে টাকা দিলে...
: চুপ গাধা ! আম্মু বলে আম্মু বলে লাগায় রাখছে । নিজে কিছু
বলতে পারো না ?
রিকশা ছাড়তেই শুভ্র পিছে তাকায় ।
দেখে মেয়েটা দাঁড়িয়ে হাসছে।
জীবনে এতটা ভালো লাগা আগে কখনো কাজ করে নি।হাতটা বুক
পকেটে ভরে রাখে।স্পর্শটা মুছে যেতে দেবে না।
রাত্রে শুভ্র কেন জানে মেয়েটার ফোনের অপেক্ষা করে।
হ্যা ইরা ফোন করছে।
শুভ্রের হাত কাঁপছে।
কেন জানে না মেয়েটাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারছে না।কল শেষ
হওয়ার আগেই ধরে ফেলে।ধরেই বলেঃ কাল আবার রিকশায়
বাসায় যাবে?
- কেন?
: এমনি।
- আমার পাশে বসতে ইচ্ছা করতেছে?
: হুম । ইয়ে না । মানে...আম্মু । না আম্মু না । আমার .
না মানে ।হ্যাঁ ।
- আচ্ছা একটা গোলাপ আনবে কিন্তু ।পারবে না?
: কেন?
- প্রশ্ন করলে উত্তর দিবা।
: আচ্ছা।
- আর গিফট।
: কি গিফট ?
- যা খুশি।
: আছা।
শুভ্র দাঁড়িয়ে আছে।হাতে একটা লাল গোলাপ।
ইরাকে সে খুঁজে পাচ্ছে না।ইরা এসে পাশে দাঁড়িয়ে পড়ে।হঠ্যাত্
করেই পারফিউমের গন্ধ পেয়ে পাশে তাকায়।
ইরা কালো শাড়ী পড়ে এসেছে।একটু সেজেছেও।
শুভ্র রিকশা ডাকেঃ
- এই মামা ।
: কই যাবেন ?
- সি ...
ইরা মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলেঃ
লেক ভিউ এ চলেন ।
- এটা কোথায়?আমি যাবো না।
: থাক তাইলে।
বলেই রিকশায় চড়ে।শুভ্রও চড়ে।ইতস্তত করে জিজ্ঞাসা করেঃ
- কই যাচ্ছি ?
: ভয় নাই কেউ তোমাকে রেপ করবে না।
- রেপ কেন করবে?
: তোমার মত গাধাকে রেপ করাই উচিত ! ফুল কার জন্য
এনেছো ? রিকশাওয়ালাকে দিতে ?
- দিবো ?
: দাও।
রিকশা থামতেই শুভ্র রিকশাওয়ালাকে ফুল দিতেই
রিকশাওয়ালা বলেঃ ফুল আপামনি রে দেন ।
হেতে গোত্সা পানি অইয়া যাইবো ।
শুভ্র তাকিয়ে দেখে মেয়েটার চোখে জল।কি ভেবে যেন হাত ধরে।
সামনে বড় একটা ক্যাফে।লেকের ওপর করা ক্যাফে।
ইরা হঠ্যাত্ শুভ্রের কাঁধে মাথা রেখে বলেঃ তুমি এত
বোকা কেন ?
- ফুল না দিলে কেউ কাঁদে ?
: না। আমি কেন কাঁদছি জানো ?
: না।
- আমি তোমাকে পছন্দ করি।
: তাই?
- না।এমনি বলা।গাধা!!
: আমি আম্মুকে তোমার কথা বলছি।আম্মু কিছু বলেনি।
তবে বলেছেঃ আমি নাকি তোমাকে অনেক পছন্দ করি।এটা যেন
তোমাকে না বলি।আর এই পায়েল দিছে।এটা আম্মুর।ধরো।
এই প্রথম গাধাটার একটা গাধামী ভালো লাগে ইরার।তবু বলেঃ
- পায়েল পায়ে পড়ায় দিতে হয়।
: কেন ?
-এটা নিয়ম ।
: মা তো বলে নাই।
- চুপ।না হলে থাপ্পড় দিবো ।
: আচ্ছা পড়ায় দিচ্ছি।
আধাঘন্টা হয়ে গেছে।শুভ্র একবার চশমা খোলেএকবার পড়ে।
শার্ট ঘামে ভিজে গেছে।সে পায়েল পড়াতে পারছে না।
আর
ইরা একদৃষ্টিতে দেখছে শুভ্রকে।
কিছু ভালোবাসা স্বর্গ থেকে নেমে আসে কিছু মানুষের জন্য।
নিজের স্বর্গটা চিনে নিতে হয়।কেউ সত্যিকার
ভালোবাসলে তার
ভালোবাসাকে মূল্য দিতে শিখুন ।