সকালে উঠেই দিনের কাজকর্মের একটা তালিকা তৈরি করলাম। প্রথমে ভার্সিটিতে ম্যাথ পরীক্ষা দিয়ে শুরু। পরীক্ষা শেষে বেলা ১ টার আগেই ব্যাংকে গিয়ে টাকা তুলতে হবে। ওখান থেকে জরুরী একটা কাজে যেতে হবে। কাল সারা রাত ক্যালকুলাসের অংক করে মাথা ধরে গেছে। পরে ব্যাংকের চেক নিতে ভুলে যাবো ভেবে ভার্সিটি যাওয়ার আগেই চেক বই বের করে একটা পাতা ছিঁড়ে নিয়ে মানি ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলাম। এর আগে একবার অনেক জরুরী কাজে ব্যাংকে গিয়েছি টাকা তোলার জন্য। খুব তাড়া ছিল। ব্যাংকে গিয়ে দেখি বিকাল সাড়ে তিনটা বাজে। হাঁফ ছেড়ে চেক বের করতে গিয়ে দেখি ভুলে চেক নিয়ে আসি নি। মাথায় হাত দেয়া ছাড়া আর কোন কিছু করার ছিল না। এবার আর সে ভুল করলাম না, আগেই চেক নিয়ে নিলাম।
পরীক্ষার হলে ঢুকে দেখি পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। স্যারের কাছ থেকে প্রশ্ন আর খাতা নিয়ে গিয়ে সিটে বসলাম। খাতায় নাম ধাম লিখে মার্জিন টেনে প্রশ্নপত্র পড়তে লাগলাম। প্রথম প্রশ্ন দেখেই ফ্যনের মতো মাথা ঘুরতে লাগলো। জ্যামিতির একটা অংক দিয়েছে। ক্যালকুলাস পরীক্ষায় জ্যামিতি এলো কোত্থেকে ভাবতে ভাবতে পরের প্রশ্নে গেলাম। সেটাও দেখি জ্যামিতি। পুরো প্রশ্ন উল্টে পাল্টে দেখি জ্যামিতি দিয়ে ভরা। পাশের সিটের বন্ধু দেখি মাথা নিচু করে লিখছে। ওকে জিজ্ঞেস করলাম ও বললো-আজ তো জ্যামিতি অংশের পরীক্ষা, ক্যালকুলাস না। বন্ধুর কথা শুনে প্রশ্নের উপরে তাকালাম সেখানে বেশ স্পষ্ট করেই লেখা আছে সাবজেক্ট-জিওমেত্রি। নিজের ভুল বুঝতে পারলেও ততক্ষণে সর্বনাশ যা হওয়ার হয়ে গেছে। সারা রাত ধরে ক্যালকুলাস করে এসে যদি পরীক্ষার হলে এসে শুনতে হয় আজ জ্যামিতি পরীক্ষা তাহলে যা হওয়া উচিত তাই হল।
পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে ব্যাংকে যাওয়ার সময় এক বন্ধুকে কথায় কথায় বললাম-‘এতো কষ্ট করে ভুল পরীক্ষা দিয়ে ব্যাংকে গিয়ে যদি দেখি ভুলে সাথে চেক সাথে আনি নি তাহলে বেশ মজা হবে, তাই না?’ আমার সাথে যেহেতু চেক আছে সুতরাং এধরনের কিছু হওয়ার চান্স নেই, সেজন্যই বন্ধুকে ফান করে কথাটা বললাম। শাহবাগ মোড়ে এসে দেখি আরেক কাহিনী। সরকার নাকি ফিটনেসহীন গাড়ি ধরছে তাই রাস্তায় বাস নেই বললেই চলে। যে দুয়েকটা আসছে তাও ভিড়ের কারণে ওঠার মতো জায়গা নেই। ঘণ্টা খানেক দাঁড়িয়ে থাকার পর একটা বিআরটিসি ফাঁকা বাস পেয়ে চোখ বন্ধ করে উঠে গেলাম। বাসে উঠে দেখি বাসের ভেতর প্রায় পুরোটাই ফাঁকা। আমাকে বাসে উঠতে দেখে সামনের সিটের দুই তিন জন সুন্দরী মেয়ে অবাক নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। ওদের অবাক দৃষ্টি দেখে বুঝতে পারলাম ভুল করে মনে হয় স্টাফ বাসে উঠে পড়েছি। স্টাফ বাসে ওঠার কারণেই হোক আর মেয়েদের অবাক দৃষ্টির কারণেই হোক পরের সিগন্যালে নেমে পড়লাম। নেমে দেখি বাসের গায়ে লেখা “বিআরটিসি মহিলা বাস সার্ভিস!”
দুপুরের রোদে পুড়ে ব্যাংকে গিয়ে আগে ব্যালান্স চেক করলাম। এরপর চেক হাতে নিয়ে কলম বের করতেই গার্ড এসে বললো-‘স্যার কি করবেন?’ আমি বললাম-লিখবো। আমার কথা শুনে গার্ড একটা চেয়ার এগিয়ে দিলো। চেয়ারে বসে চেক বের করে লিখতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম সবই ঠিক আছে কিন্তু টাকার পরিমাণ লেখার জায়গা নেই। চেকটা উল্টে পাল্টে ভালো করে দেখে বুঝলাম ইহাকে চেক বলে না। কি বলে সেটাও জানি না।
আসলে চেক বইয়ের ভেতর একটা অতিরিক্ত পাতা থাকে যেটার কাজ হচ্ছে চেকের পাতা শেষ হয়ে গেলে ওই কাগজ টা দেখিয়ে নতুন চেক বই নেয়া। আমি সকালে তাড়াহুড়া করে অতিরিক্ত পাতাটাই ছিঁড়ে নিয়ে গিয়েছি! একবারও লক্ষ্য করার প্রয়োজন মনে করি নি।
আমি হতাশ চোখে চেক বই এর পাতাটার দিকে তাকিয়ে আছি। গার্ড বেচারা অধীর আগ্রহে আমার কলমের দিকে তাকিয়ে আছে, মনে হয় কত টাকা লিখবো সেটা সে দেখতে চায় । কিন্তু টাকা লিখতে হলে তো টাকা লেখার জায়গাটা থাকতে হবে! সেটা যখন নেই তখন কি আর করা যাবে। গার্ডের আগ্রহী চোখের সামনে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। তারপর অপরাধীর মতো ধীর পায়ে ব্যাংক থেকে বের হয়ে এলাম।