রাসুল (স) এর সময় কালের দুটি বিয়ের কথা
মদিনা থেকে সুদুর সিরিয়ায় ছুটলেন হযরত বিলাল (রাঃ)। সেখানে একটি বাড়ির দরজায় এসে দাড়ালেন।অচেনা অজানা এক দেশে অচেনা কারো বাড়ী। দরজার কড়া নাড়লেন, সালাম দিলেন। ভেতরথেকে বাড়িরকর্তা এসে দরজা খুললেন। পরিচয় জানতে চাইলেন। হযরত বিলাল পরিচয় দিলেন যে “আমি বিলাল,মদিনা থেকে এসেছি” বাড়ির কর্তা শুধালেন “আপনিই কি মসজিদে নববীর মুয়াজ্জিন বিলাল?” বিলাল(রাঃ) বললেন “হ্যাঁ” এবার বাড়ির মালিক তাকে ভেতরে নিলেন, মেহমান কে বসতে দিলেন। পরিশেষেবিলাল (রাঃ) এর তার বাড়িতে আগমনের উদ্দেশ্য জানতে চাইলেন। বিলাল বললেন “রাসুলুল্লাহ (সঃ) এরনির্দেশে আমি আপনার কাছে এসেছি, তিনি বলেছেন আপনারা যদি রাজি থাকেন তাহলে আমি যেনোআপনাদের মেয়েকে বিয়ে করি” একথা শুনে বাবা তার মেয়েকে ডাকলেন এবং বললেন “রাসুলুল্লাহ (সঃ)এই লোকটিকে পাঠিয়েছেন তোমার সাথে এর (বিলালের) বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে তুমি কি রাজি?” মেয়েটি বল্ল“যেখানে আল্লাহর রাসুল আমার জন্য পাত্র পছন্দ করে পাঠিয়েছেন সেখানে আমার কিইবা বলার থাকতেপারে?” ব্যাস হয়ে গেল! বিয়ে হয়ে গেল!! একজন সুন্দরী যুবতী মেয়ে কালো হাবসী গোলামের কাছেদিব্যি বিয়েতে রাজি হয়ে গেলো!!! কোন ঢোল নেই, তবলা নেই, গায়ে হলুদ নেই, বউ ভাত নেই, ফিরানিনেই, মেয়ে দেখাদেখি নেই, আকাশ চুম্বি মোহরানার জন্য হাউকাউ নেই, যৌতুক নেই, কৌতুক নেই কিচ্ছুনেই।
একদিন রাসুলুল্লাহ (সঃ) এক যুবক সাহাবীর সাথে কথা বলছিলেন। এমন সময় রাসুলের কাছে একজনযুবতীমেয়ে এলো কিছু জরুরী বিষয়ে আলোচনা করতে। রাসুলুল্লাহ (সঃ) মেয়েটির সাথে কথা বলছিলেন।এমন সময় খেয়াল করলেন পাশের যুবকটি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। রাসুল (সঃ) নিজের হাত দিয়েছেলেটির মাথাটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন। কিছুক্ষন পর ছেলেটি আবার তাকালো। রাসুল (সঃ) আবারোতাই করলেন। কিন্তু ছেলেটি আবারো একই কাজ করলো, মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলো। এবাররাসুলুল্লাহ (সঃ) ছেলেটিকে প্রশ্ন করলেন “তুমি কি মেয়েটিকে বিয়ে করতে চাও?” ছেলেটি “হ্যাঁ” সুচকজবাব দিলো। এবার রাসুলুল্লাহ (সঃ) মেয়েটির দিকে ঘুরলেন, তাকে জিজ্ঞেস করলেন “তুমি কি তাকেবিয়ে করতে রাজি?” মেয়েটিও তার সম্মতি জানালো। ব্যাস হয়ে গেল! বিয়ে হয়ে গেল!!
এবার তথাকথিত “ফ্রী” তথা প্রগতীশীল সমাজের দিকে তাকান। গাছের ছায়ায়, চিপায় চাপায় গিয়ে পুরোবছর প্রেমরসের অমিয় ধারায় শিক্ত হও তাতে কোন সমস্যা নাই কোন লম্বা প্রসিডিওর ও নাই । গার্ল ফ্রেন্ডআর বয় ফ্রেন্ডের ডলাডলিতে দুনিয়া গন্ধ হয়ে যাক তাতেও সমস্যা নাই, কোন লম্বা প্রসিডিওর ও নাই ।কিন্তু যখনি বিয়ের কথা আসে তখনি কেন যেন প্রসিডিওরটা হাজার ক্রোশ লম্বা হয়ে যায়। অনেক কে তোদেখলাম বছর তিনেক খালি উপযুক্ত পাত্র/পাত্রি খুজতই কাটিয়ে দিলেন। হায়রে মানুষ! কত রঙ দেখালিতোরা!! আসলে তথাকথিত এই প্রগতিশীল সমাজটা প্রগতীর নামে আদতে প্রাগৈতিহাসিক যুগের দিকে যাত্রাকরছে।
যাই হোক বলছিলাম বিয়ের কথা। বিয়ে করতে হলে এটা করো, ওটা করো, সিরিয়াল মেইন্টেইন করো,পড়াশোনা শেষ করো, চাকরি পাও, নিজের পায়ে দাড়াও আরও কতো কি! শুধু কি তাই! নিজের পায়েদাড়ালেই কি সব শেষ হয়? না আরো আছে। চৌদ্দ জায়গায় বায়োডাটা পাঠাও, মেয়ের জন্য শ খানেকছেলে দেখো, ছেলের জন্য শ খানেক মেয়ে দেখো। এটা মিল্লে ওটা মেলে না। আরও কতো সাত-পাঁচ করেযখন মেয়ে বা ছেলে পছন্দ হয় তখন অমুক তারিখ তমুক তারিখ করতে করতে আরও কিছু তাফালিং।মোহরানা নিয়ে ক্যাচাল, একেকজন তখন মনে হয় গরু ব্যাপারি বনে যান। উচ্চ শিক্ষিত লোকদের আসলহীনতা যে এসব তর্জন গর্জনে স্পষ্ট দেখা যায় তা এখন থেকে মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করুন বুঝতেপারবেন। আচ্ছা মেয়েটাকি কোরবানীর হাটের গরু নাকি যে তার জন্য লাখ বিশেক দাম হাঁকাতে হবে? যারাবিয়ে করতে যাচ্ছে তারা কি তাদের পারপ্সপরের সাথে ব্যাবসায়িক সম্পর্ক গড়তে যাচ্ছে? নাকি আত্মিক ওসামাকিজ বন্ধন গড়তে যাচ্ছে? যে টাকায় সব কিছু গোনা লাগবে? এদের মাঝে যদি আমরা সুন্দর মানবিকও সামাজিক বন্ধনই তৈরী করে দিতে না পারলাম তাহলে কোটি টাকার কাবিন দিয়ে হবেটা কি? ওটা ধুয়েধুয়ে পানি খেলেও কি শান্তি আসবে? যত্তসব শিক্ষিত গন্ডমুর্খ।
এর পর কি হয়, সব কিছু ঠিক-ঠাক হয়ে গেলে মেহমানদের তালিকা বানাও, কার্ড ছাপাও, দাওয়াত দাও।অমুকের কাছে স্বশরীরে যেতে হবে। তমুককে ফোনে বললে হবে না। মার্কেটে যাও, গহনা কিনো, শাড়ীকিনো, হলুদ মাখো এটা সেটা কতো কি! ভাবখানা এমন যে এগুলো না হলে বিয়ে হবে না। আর আগুলোনা হলে নাকি সংসার করা দায় হয়ে যায়। যত্তসব আজগুবী ধ্যান-ধারনা।
একটি বৈধ বলে স্বিকৃত সম্পর্কের আগে যদি এতো লম্বা ও জটিল প্রক্রিয়ার পাহাড় থাকে তাহলে কার এতোঠ্যকা পড়েছে এতদিন ধরে অসয্য এসব কান্ডকারখানা সওয়ার? যেখানে সে চাইলেই একটা মেয়ের সাথেসম্পর্ক তৈরী করতে সক্ষম হচ্ছে, শুধু তাই নয় বরং ঐ মেয়েকে যেভাবে চাইছে সেভাবে পাচ্ছে, সেখানেএতো লম্বা প্রক্রিয়া অনুসরন করার মতো পাগলামি সে করতে যাবে কেন? আমাদের সমাজে অনৈতিকতাদিন দিন যে বাড়ছে তার একটি কারন হচ্ছে নৈতিক কাজ করতে সবাইকে অনেক জটিল সব ফাঁদ পাড়িদিতে হয়। এই ফাঁদ গুলোর একেকটা একেকটার চেয়ে বেশী অনিশ্চয়তায় ভরা। উদাহরন দিয়ে বলতে হলেবলতে হয় যে, আমাদের দেশে দুর্নীতির সয়লাব কেন হয়েছে তা চিন্তা করে দেখুন। আইনি ধারায় সিদ্ধপথে বা নৈতিক কোন পন্থায় প্রসাশনিক বা অপ্রসাশনিক যেকোন কাজ করতে গেলে তা দিনের পর দিনদৌড়ঝাপ করেও সমাধা করা যায় না। অথচ জায়গা মতো কিছু পাত্তি দিলেই তিন মাসের কাজ তিন ঘন্টায়হয়ে যাচ্ছে। তাই দুর্নীতি করতে দেশের মানুষ এক প্রকার বাধ্য। তা না হলে বরং ক্ষতিই হয় বেশী, তাইঅযথা ভালো সেজে কে মরতে যাবে? তাই সবাই দুর্নীতি করে আবার এরা সাবাই ই দুর্নীতিকে ঘৃনা করে।তেমনি ভাবে অযথা কেউ আর একাকি বসে নেই, যখনি যুবকদের মনে একজন সঙ্গিনীর প্রয়োজন অনুভুতহয় তখনি সে গোপনে গোপনে অভিসারে লিপ্ত হয়। কারন সে জানে বৈধ উপায়ে কিছু করতে হলে বাবা-মাকে বলতে হবে, আর বাবা-মা কে বললে ঠেঙ্গানি একটাও মাটিতে পড়বে না। শুধুকি নিজের বাবা-মা কেনিয়ে সমস্যা? সমস্যাতো মেয়ের বাবা-মা কে নিয়েও, সেই সাথে সমাজের মানুষগুলোও বাদ যায় না।অগ্যতা কি আর করা, সহজ জিনিস সহজ ভাবেই সে নিয়ে নিচ্ছে যাস্ট একটু অবৈধতার আঙ্গিকটাই যাসমস্যা।
উপরে উল্লিখিত রাসুল (স) এর সময় কালের দুটি বিয়ের কথাই চিন্তা করুন। কেমন ওপেন সোসাইটি হলেএমন সহজে ভালো ও বৈধ কাজ গুলো নিমেষেই সমাধা হয়ে যেতে পারে। আমিতো চিন্তা করে মরি যে,যদি আমাদের কেউ কোন মেয়ের বাপ কে বলে যে “আপনি রাজি থাকলে আমি আপনার মেয়েকে বিয়েকরতে চাই” তাহলে তার কি অবস্থা দাড়াবে। কিল লাথি গুতা একটাও মাটিতে পড়বে কি না সন্দেহ।তছাড়া ঝাড়ুর বাড়িতো আছেই। কিন্তু ঐ বাবা কে কিছু না বলে মেয়েটাকে পটিয়ে যা ইচ্ছা তা করেন কোনসমস্যা নাই। ধরা খাইলেও সমস্যা নাই। কয়দিন ঘাড় ত্যাড়ামি করে ঠিকই ঘরে তুলে নেবে। এজন্যইলোকে বলে “গাধায় পানি খায় ঘোলাইয়া”।
বিশাল বিশাল চিন্তাবিদ, শরিয়তের শিরায় শিরায় তাদের গমনাগমন, কথা শেষ না হতেই ফতোয়া জারিহয়ে যায়। এতো কোয়ালিফাইড স্কলাররাও আজ পর্যন্ত উপযুক্ত সময়ে সহজ উপায়ে বিয়ের ব্যপারেইসলামের তাগাদার বিষয়টি মানুষকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করেন নি। এতো এতো চিন্তা গবেষনাকরেও তারা বিয়ে-শাদির পেছনে এতো জটিল প্রক্রিয়াগুলোর ভয়ংকর অসুবিধা গুলো খুজে পান নি।ভাবতেই অবাক লাগে। আমার বিশ্বাস এই EMC গ্রুপে আমরা যেসব যুবকরা আছি তারাই এই ইস্যুটাজাতির কর্ন কুহরে পৌছে দিবো। আমরা যুবসমাজের নৈতিক পদস্খলনের আরও কিছু কারন খুজে বের করেএক তুমুল সামাজিক আন্দোলনের সুচনা করতে চাই যা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক মুক্তির সোপানে পরিনতহবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন। এই EMC গ্রুপের সকল ভাই বোনদেরকেজানাই আমার সালাম এ অনারারি স্যালুট।