মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১৩৩- একজন হতভাগীর গল্প

লিখা : নূরুজ্জামান ভূইয়া

-মা আজ স্কুলে যাবনা !
~কেন বাবা ?
-মিজান স্যার আমারে অনেক মারে ।
~কেন মারেন তিনি ?
-আমি নাকি অনেক দুষ্টামি করি,
মা তুমি কি কখনো আমাকে দুষ্টামি করতে দেখেছো ?
~নারে বাবা তুই আমার লক্ষ্নী বাবা, তোকে কখনোই
আমি দুষ্টামি করতে দেখিনি, আজ আমিও তোর সাথে স্কুলে যাবো ।
-ঠিক আছে আমি রেডী হই । ছেলে সিফাত-কে নিয়ে স্কুলের
রওনা হলেন ইয়াসমিন বেগম । ছেলের স্কুলটা শহরের একপ্রান্তে অবস্থিত ।
শহরের অপর প্রান্ত
বাসা থেকে স্কুলে যেতে অনেকটা পথ হাটতে হয় । এইভাবেই প্রতিদিন
হেটে স্কুলে আসা- যাওয়া করে ছেলেটা । প্রতিদিন
ছেলেটাকে স্কুলে পাঠিয়ে কত দুশ্চিন্তায় না থাকেন তিনি ।আজকাল
আবার রাজনৈতিক দলগুলোর হরতাল অবরোধও চলছে ! কত মানুষ
যে রাস্তাঘাটে পুড়ছে, মরছে, কারোও কোনো নিশ্চয়তা আছে ।
সাথে করে নিয়ে যেতে পারেন না । কি আর করবেন, স্বামী রহমান সাহেব
একটা সামান্য সরকারি চাকুরী করেন মাত্র । এই টাকা দিয়ে অভাবের
সংসারের বাসা বাড়াটা আর খাওয়া খরচটা কোন মাসে চললেও,
অনেক মাসেই টাকা ধার নিতে হত । আবার ছেলের লেখাপড়ার খরচ ! এতকিছু
সামলাতে তিনি একেবারে বেসামাল হয়ে পরতেন । নিজের স্মামীটাকে একটু
শান্তি দিতে তিনি কিছু টাকা ধার
করে একটা সেলাই মেশিন কিনেন । বাপের
বাড়িতে থাকাকালে সেলাইয়ের কাজটা তার শিখা ছিল । তারপর
থেকে ভালই কাজের অর্ডার পেতেন তিনি । নিজের সংসারের হালটা এখন
স্বামী-স্ত্রী দুজনেই সমান ভাবেই পালন করেন । এখন সংসারের সবকিছু
মিটিয়ে কিছু টাকা গচ্ছিতও রাখতে পারেন প্রতিমাসে । ছেলের ভবিষতের
কথা চিন্তা করে কয়েকটা বিমাও করে রেখেছেন তারা । ছেলেটা দুষ্টামিটা একটু বেশীই করে, তা তিনি ভাল করেই জানেন । বাসায় থাকলে কত কিছুই তো ভেঙ্গে ফেলে পাশের বাসার বিড়ালটাকে মারতে গিয়ে । বাসায় একটা খেলনার জিনিসও কি আর আস্ত
করে রেখেছে । কি আর করবেন ? একমাত্র আদরের সন্তান হওয়াই সবকিছু
হাসি মুখেই মেনে নেন তিনি । স্কুলের টিচাররা কি দুষ্টামি সহ্য করতে পারে । প্রতিদিন কত বিচার শুনবেন ? তাই খুব মারও খেতে হয়
সিফাতকে । আজ তিনি মনে মনে ভাবছেন
স্যারদেরকে বলবেন, যাতে নিজের ছেলেটাকে এইভাবে না পিটায় ।
যদিও স্যারেরা ভালর জন্যই মারেন, তবুও নিজের আদরের ছেলের গায়ে কেউ
এভাবে আঘাত করুক তিনি এটা চান না ।
ছেলেকে নিয়ে স্কুলের কাছা- কাছি চলে এসেছেন, এমন সময়
একটা মিচিল আসতে লাগল বিপরীত পাশ থেকে । মিচিলের মাঝে কয়েকজন
লোক ডিল ছোড়ার মত ককটেল ছোড়তে থাকে ! এভাবে ককটেল
ছুড়তে দেখে ইয়াসমিন বেগম ভয় পেয়ে যান । ছেলেটা ভয়ে কাঁদতে শুরু
করে । বাবা কাঁদিস না বলে পিছন দিকে ফিরেন তিনি ।
কিন্তু ভাগ্য সেদিন তাদের সহায় ছিলনা, পিছু
ফিরে দেখে আরেকটি মিচিল কে পুলিশ দৌড়াতে থাকে । আর
বিকটা শব্দ গুলি ছোড়তে থাকে অবিরত !
কোন দিশা না পেয়ে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা একটা বাসের
দিকে দৌড়ান তিনি । বাসকে উদ্দেশ্য করে ছোড়া একটা ককটেল হঠাত্ তার
পায়ের কাছে এসে ফোটে । মুহুর্তের মাঝে মা-ছেলের
আহাজারিতে সেখানটা কম্পিত হয়ে ওঠে । জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন
ইয়াসমিন বেগম । ছেলেটা মাকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে ।
কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে একটা ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যায়
তাদেরকে । একটি হাসপাতালের বার্ণ ইউনিট তাদের আর্ত চিত্কারে কম্পিত
হয়েছিল । ইয়াসমিন বেগমকে আর বাঁচানো সম্ভব
হলনা । ছেলেটাকে একগাদা প্লাস্টার নিয়ে বার্ণ ইউনিটে মুত্যূর
সাথে পাঞ্জা লড়তে দেখা গেল । আর
রহমান সাহেবকে দেখা গেল চোখের অশ্রু শুকিয়ে বরফের
মতো জমে থাকা দুটো চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে । তার কোন
অনুভূতি নেই ! কিন্তু ইয়াসমিন বেগম আজ কোথায়
ছেলেকে রেখে গেলেন ? আর নিজেই বা কোথায় গেলেন ? সবগুলো আজ
একটা প্রশ্ন । এই প্রশ্নের উত্তরটা হলো আমাদের নষ্ট
রাজনীতির সিস্টেমটাকে বদলানো । ধীক্কার জানাই এই রাজনীতিকে ।
আল্লাহ যেন এই নষ্ট রাজনীতির হাত থেকে আমাদেরকে রেহায় দেয় ।
রক্ষা করেন হতভাগ-হতভাগীদের কে ।