অধ্যাপক ফারহানা চৌধুরী। তিনি মারা যাবেন আর মাত্র তিন ঘণ্টা পর। হয়তো 'আরোপরে মারা' যেতেন। যে কারণে 'সময়ের আগেই তাঁকে চলে যেতে হলো' সেটা বেশআধুনিক! পাশ্চাত্যের আধুনিকতা!
ফারহানা চৌধুরীর স্বামী অধ্যাপক শাহেদ চৌধুরী। তাঁদের ঔরসে আছেন তিন ছেলে,এক মেয়ে। চারজনই থাকেন বিদেশে। বড্ড আধুনিক জীবনের ঢেউয়ে দোলায়িত তাঁদেরজীবন। বউ, বান্ধবী, বন্ধুর সঙ্গে যৌনতায় লেপ্টে থাকা জীবন। মদ, সিগারেট, যৌনউত্তেজক ট্যাবলেট, টাকা- তাঁদের জীবনের সবচেয়ে বড় দিক। তারা এতো আধুনিক, বাতাঁদের কাছে সময় এতো মূল্যবান যে, মাকে শেষবারের মতো দেখে 'সময় নষ্ট করারসময়টুকু' পর্যন্ত নেই!
তবে মারা যাওয়ার আগে ফারহানা চৌধুরীর মন প্রচণ্ড কেঁদেছে ছেলেমেয়েকে দেখতে।নিজের জরায়ু ছেঁড়া সন্তানকে শেষবারের মতো আদর করতে। ছেলেমেয়েগুলো 'মানুষেরমতো মানুষ' বটে!
ফারহানা চৌধুরী স্বামীসহ থাকতেন ঢাকায়। তিনি ক্যান্সারে ভুগছিলেন ছয় মাস ধরে।মৃত্যুর তিন ঘণ্টা আগে থেকে তাঁর স্বামী শুরু করেন ছেলেমেয়ের মুখ মাকে দেখানোর'সংগ্রাম'।
প্রথমে শাহেদ চৌধুরী ফোন করেন যুক্তরাষ্ট্রে বাসরত বড় ছেলেকে। বড় ছেলে বাবাকেসাফ জানিয়ে দিলেন, 'মা অসুস্থ্য তো চিকিৎসক দেখাও। তোমাদের বউ মার পেটেঅনেক বছর পর বাচ্চা ধরেছে। এ অবস্থায় ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই মাকে দেখতে আসতেপারছি না।'
শাহেদ চৌধুরী এরপর ফোন দিলেন মেজো ছেলেকে। তিনি থাকেন কানাডায়। তিনিজানান, 'বাবা, আমি নতুন প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছি। এখন কিছুতেই ছুটি পাবো না।আগামী মাস তিনেকের মধ্যে দেশে আসতে পারছি না। মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও।'
খানিক পর শাহেদ চৌধুরী ফোন দিলেন যুক্তরাজ্যে থাকা তাঁর ছোট ছেলেকে। মা দেখতেচাচ্ছেন বলতেই ছোট ছেলে বলতে থাকেন, 'বাবা, তোমার আর মায়ের স্বপ্ন ছিল আমিপিএইচডি করবো। এর শেষদিকে আছি, বাবা। এখন দেশে ফেরা সম্ভব নয়। পড়াশোনাশেষ করেই ফিরবো।'
সবশেষ শাহেদ চৌধুরী ফোন দিলেন যুক্তরাজ্যে থাকা তাঁদের একমাত্র মেয়েকে। মেয়েজানান, 'ড্যাডি, তোমাদের জামাই নতুন ব্যবসা শুরু করেছে। এ মুহূর্তে দেশে এলে ব্যবসাসামলাবে কে? প্লিজ, রাগ করো না। আমরা এখন আসতে পারছি না।'
ফোন করতে করতে তিন ঘণ্টা কেটে গেলো। প্রত্যেকটা ফোন শেষে ছেলেমেয়ের বক্তব্যপাশে শুয়ে থাকা মৃত্যু পথের যাত্রী স্ত্রীকে জানাচ্ছিলেন পরাজিত শাহেদ চৌধুরী। সবশেষেমেয়ের বক্তব্য জানানোর পর স্ত্রীর শরীরে হাত দিতেই অনুভব করেন, বেশ ঠাণ্ডা। নেয়াহলো হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানালেন, 'ফারহানা চৌধুরী আর নেই'।
বি:দ্র:- ঘটনাটা সত্য। নামগুলো কাল্পনিক। তাঁদের প্রকৃত নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছি না।ঘটনাটা ঈদের চার, পাঁচদিন আগের।
আরেকটা বিষয়, কোনো সন্তান তার বাবা, মায়ের কাছ থেকে যতোটা আদর, ভালোবাসাপায়, ততোটা তার বাবা, মাকে ফেরত দিতে পারে না। এটা অনাদিকালের নিয়ম। কারণ,স্নেহ নাকি সবসময় নিচের দিকে বয়ে চলে। তাই বলে কি এতোটা নিচের দিকে? আর'মানুষের মতো মানুষ' হওয়ার ঠিক সংজ্ঞা কোনটা?