----------------------
ক্লাস নাইন। অনেক গুলো কিশোর কিশোরী দিয়ে ভরা একটা শ্রেনী।
অনেক হৈ হুল্লুর পুরো ক্লাস জুরে। একটা প্রানবন্ত শ্রেনী কক্ষ
বলতে যা বুঝায় তাই আর কি। এই
শ্রেনীতেই পড়ে সুমিত্রা। অনেক চঞ্চল প্রকৃতিরএকটা মেয়ে। সারাক্ষন নানান
দুষ্টুমি তে মেতে থাকে মেয়েটা। ক্লাসটা কে একবারে মাথায়
তুলে রাখে সে। ওদের পাঁচ জনের
একটা গ্রুপ আছে। তবে গ্রুপের সবাই মেয়ে। সেই গ্রুপের প্রধান ছিল
সুমিত্রা। পড়াশুনায় ও বেশ
ভালো ছিলো সে। সব শিক্ষক
শিক্ষিকাগন ও ওকে খুব পছন্দ করতো।
তবে ওদের পাঁচজনের পুরো গ্রুপটা সবসময়
এক বেঞ্চেই বসা চাই। আর
এটা সুমিত্রার একধরনের জেদ
বলে ধরতে পারেন। আর তাই প্রতিদিন
তাদের বস্তে হয় ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চে। কারণ
ওরা দুষ্টুমি করে ক্লাসে আসতে আসতে সামনের
বেঞ্চ গুলো সব বুকিং হয়ে যায়। আর তাই
ওদের ও কোন উপায় না দেখে গিয়ে বসতে হয় একেবারেই
লাস্ট বেঞ্চে। তবে আজ ওরা একটু
আগে আসাতে দুই বেঞ্চ পরেই বসার
জায়গা পেলো সবাই। তাই দেরি না করে তারাতারি নিজেদের
দখলে নিয়ে নিলো বেঞ্চটা। শুধু মেয়েদের গ্রুপই নয়। ছেলেদের
একটা গ্রুপ ও আছে ক্লাসে। ছেলেদের
গ্রুপটাও খারাপ না। সবাই পড়ালেখায়
খুব ভালো। তার উপর আবার তাদের
সাথে আজ নতুন একজন যোগ দিয়েছে।
ছেলেটার নাম ইমরান। অনেক
ভালো একটা ছেলে। পড়াশুনায় খুব
মেধাবী, দেখতেও বেশ স্মার্ট।
একদিনেই মনে হয় সেই গ্রুপের প্রধান
হয়ে উঠেছে ইমরান । সবাই
তাকে নিয়েই মেতে আছে।
ক্লাসের ঘন্টা বাজলো। যথারিতি সবাই ক্লাসে এসে উপস্থিত
হয়েছে। স্যার ও চলে এসেছে ক্লাসে।
নিয়ম অনুযায়ী রোল কল ডাকছে স্যার।
ইমরান মনোযোগ দিয়ে রোল আর নাম
গুলো শুনছিল। এমন সময় মিষ্টি একটা কন্ঠ
শুনে পিছনে তাকায় ইমরান। পিছনে তাকিয়ে দেখে অসম্ভব
রুপবতি একটা মেয়ে প্রেজেন্ট দিয়েছে। ইমরান অনেক্ষন
তাকিয়েছিলো মেয়েটার দিকে।
চোখ সরাতে পারছে না ইমরান।
সে ভাবছে কি করে একটা মানুষ
এতোটা সুন্দর হতে পারে?
সে কি সত্যি মানুষ নাকি মানুষ
রুপি পরি? স্যার এর ডাকে পিছন থেকে সামনে তাকায় ইমরান।
স্যার তখন ক্লাসের পড়া নিচ্ছেন। একজন
ছেলে একজন মেয়ে করে পালাক্রমে পড়া নিচ্ছিলেন।
কিন্তু অধিকাংশ ছেলেই পড়া ঠিক মত
দিতে পারে নি। আর মেয়েদের সবাই
এই পর্যন্ত ঠিকঠাক উত্তর দিয়েছে। স্যার ও মেয়েদের দেখিয়ে ছেলেদের
বিভিন্ন কথা বলে অপমান করতে লাগলো। কিন্তু সেই অপমান
ইমরানের সহ্য হলো না। প্রতিবাদ করলো স্যার এর কথার উপর। স্যার এর মুখের
উপর বলে দিলো যে সব ছেলে কে যেন
ক্লাসে পাঁচ মিনিট সময় দেয়। তার মধ্যেই ওরা পড়া ঠিক করে ফেলবে।
ইমরান কথা টা বললো ঠিক। কিন্তু ওর
মনোযোগ পড়ার দিকে ছিলো না। সে তাকিয়ে আছে সুমিত্রা র দিকে।
সুমিত্রা বিষয়টা লক্ষ না করলেও
শ্রেয়া ঠিকই লক্ষ করেছে। শ্রেয়া সুমিত্রা র সবচেয়ে কাছের
বান্ধবী। দুজন দুজনের অনেক আপন।
শ্রেয়া সুমিত্রা কে হালকা ধাক্কা দিয়ে:-
শ্রেয়া : কিরে সুমিত্রা,
ছেলেটা তোর
দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন?
সুমিত্রা : কোন ছেলেটা?
শ্রেয়া : কেন দেখতে পাচ্ছিস না। ঐ
যে নতুন ছেলেটা। কি যেন নাম? ওহ
হ্যা ইমরান।
তাতক্ষনিক সুমিত্রাও তাকায় ইমরানের
দিকে। সুমিত্রার চোখে চোখ পরতেই
অন্য দিকে নিজের চোখ ফিরিয়ে নেয়
ইমরান। মনে হয়
লজ্জা পেয়েছে ছেলেটা। কিন্তু
কিছুক্ষন পর আবার তাকায় সুমিত্রা র
দিকে। এবার সরাসরি সুমিত্রার
চোখের দিকে তাকিয়ে আছে ইমরান।
ইমরানের মনে হচ্ছে কোথায় যেন
হারিয়ে গিয়েছে সে। যেই চোখ
এতোটা সুন্দর সেই চোখের
দিকে তাকালে তো হারানোর কথাই।
এবার একটু মুচকি হাসে সুমিত্রা।
তবে সেটা ইমরান কে বুঝতে দেয় নি।
এখন টিফিন টাইম। ইমরান পুরো স্কুল
তন্নতন্ন করে খুঁজছে সুমিত্রা কে।
কোথাও পাচ্ছে না। পুরো স্কুল খুঁজেও
যখন ইমরান সুমিত্রা কে পেলো না তখন
ভেবে নিলো টিফিনে বাড়ি চলে গিয়েছে সুমিত্রা।
টিফিন টাইম শেষ হয়ে যাওয়াতে ক্লাসের
ঘন্টা পরে যায়। সবাই যার যার
মতো ক্লাসে চলে যায়। ইমরানের
মনটা একটু খারাপ হয়ে যায় কারণ জীবনে এই প্রথম কোন
মেয়েকে ভালো লেগেছে ওর। আর
সেই মেয়ের সাথেই আজ কথা বলতে পারে নি। তবে কাল
কথা বলবে ভেবেই ক্লাসে যায় সে। কিছুক্ষন পরেই
দেখে সুমিত্রা ক্লাসে এসেছে। আবার তাকিয়ে থাকে সুমিত্রার দিকে।
সুমিত্রাও তাকিয়ে থাকে ইমরানের দিকে।
সুমিত্রা ভাবছে ছুটির পর ছেলেটা কে ইচ্ছে মত বকে দিবে।
কিন্তু পরক্ষনেই ভাবছে ছেলেটা কে বকতে গেলে হয়তো মন
খারাপ হবে। আগে কথা বলে দেখি ও
কেনো এভাবে তাকাচ্ছে? যথারিতি স্কুল ছুটি হলো।
একে একে সবাই ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। সুমিত্রার
গ্রুপের ও তিনজন চলে গিয়েছে। কিন্তু সুমিত্রা আর ওর ফ্রেন্ড
শ্রেয়া বসে আছে ক্লাসে। কারণ ইমরান
ও কি যেন করছে ক্লাসে। মনে হয় খাতা অথবা ডায়েরিতে কিছু
লিখছে। আর সুমিত্রার উদ্দেশ্য হলো ইমরানের সাথে মজা করবে। কিন্তু
কিছুক্ষন পর সুমিত্রা কে অবাক করে ইমরান চলে যাচ্ছে ক্লাস থেকে।
সুমিত্রা মনে মনে নিজেকে বোকা ভাবতে থাকলো।
কারণ যে ওর সাথে কথা বলতে চায়নি তার জন্যই
এতোখন অপেক্ষা করেছে সে। পরক্ষনেই
ইমরান যে বেঞ্চে বসে ছিলো সে বেঞ্চের
দিকে তাকিয়ে দেখে একটা ডায়েরীর পাতা পরে আছে।
সুমিত্রা পাতাটা হাতে নিলো। তাতে সুমিত্রার রুপের
বর্ননা দিয়ে সুন্দর একটা কবিতা লেখা। আর তার অপর পাশে একটু বড়
করে লেখা "বন্ধু হতে পারি?"। সুমিত্রা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বেরিয়ে এলো ক্লাস
থেকে। স্কুলের গেইটের সামনে গিয়ে দেখলো ইমরান
দাড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে সুমিত্রার জন্যই
অপেক্ষা করছে। ইমরান কে দেখে সুমিত্রা ও ছোট একটা চিরকুট লিখে।
তাতে লেখা ছিলো "যে ছেলে আমার
অনুমুতি ছারা আমাকে নিয়ে কবিতা লিখেছে,
যে ছেলে আমার সামনে দাড়িয়ে কথা বলতে পারে না তাকে আমি বন্ধু
করবো না।" চিরকুটটা শ্রেয়া গিয়ে ইমরান কে দিয়ে দুজন
চলে যাচ্ছিলো। ইমরান চিরকুটটা পড়ে দৌরে গিয়ে সুমিত্রার
সামনে দাড়ায়। ইমরানের এমন হঠাৎ আগমনে একটু ভয় পেয়ে যায় সুম
মিত্রা। ইমরান কে না করাতে কিছু করে বসবে না তো আবার?
ভাবছে সুমিত্রা। কিন্তু ইমরান তেমন কিছু না করে সুমিত্রা কে অবাক
করে হাতটা বারিয়ে দেয় সুমিত্রার দিকে........
ইমরান : হায় আমি ইমরান।
সুমিত্রা : (একটু ভাব দেখিয়ে)
তো আমি কি করবো?
ইমরান : না মানে আমরা একি ক্লাসে পড়ি। তাই ভাবলাম পরিচিত হই।
সুমিত্রা : কিন্তু চিরকুটে তো বন্ধু হতে চাইলেন।
ইমরান : হুম,,, কিন্তু
আপনি তো হতে চাচ্ছেন না।
সুমিত্রা : বন্ধু হতে পারি,
তবে আপনি ছেরে তুই করে বলতে হবে।
বন্ধুত্বের মাঝে আপনি,
তুমি শব্দটা বেমানান।
ইমরান : ঠিক আছে, আপনার কথাই
থাকবে।
সুমিত্রা : আবার আপনি?
ইমরান : ওহ স্যরি।
সুমিত্রা : বন্ধুত্বের মাঝে নো থ্যাঙ্কস
নো স্যরি।
ইমরান : এই যা, আবার ভুল হয়ে গেলো।
ঠিক আছে এখন বাসায় যাই। কাল
দেখা হবে।
সুমিত্রা : হুম......
তারপর সুমিত্রা আর ইমরান দুজন চলে যায়
দুদিকে। কিছুদিনের মাঝেই ওরা দুজন খুব
ভালো বন্ধু হয়ে যায়। সাথে শ্রেয়া ও
আছে। কিন্তু সুমিত্রা ওর
গ্রুপে বেশি সময় দেয় না এখন। সারাক্ষন
ইমরানের সাথেই সময় দেয়।
দেখতে দেখতে ১বছর চলে যায়। ওরা ও
ক্লাস নাইন থেকে টেন এ ওঠলো। কিন্তু
ইমরান বুঝতে পারছে ওকে সুমিত্রার
অসুখে খুব ভালো ভাবেই ধরেছে।
সুমিত্রা কে ছারা কিছুই ভালো লাগে না ওর।
খেতে গেলে সুমিত্রা কে দেখে, শুতে গেলে সুমিত্রা কে দেখে, সব
যায়গায় শুধু সুমিত্রা আর সুমিত্রা। কিন্তু
সে সুমিত্রা কে কিছুই বলতে পারছে না।
যদিও ইশারাতে অনেকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু
সুমিত্রা বুঝতে পেরেছে বলে মনে হয়
না। এদিকে সুমিত্রা ও ইদানীং ইমরান
কে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে। ইমরানের মত ওর ও ইমরান কে ছারা কিছুই
ভালো লাগে না। ইচ্ছে করে সারাক্ষন
ইমরানের সাথে থাকতে। ওর কথা শুনতে।
ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে।
ইচ্ছে করছে ইমরানের হাতে হাত রেখে হেটে যেতে জীবনের
বাকিটা পথ। সুমিত্রা ও জানে যে ইমরান ও ওকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু গাধাটা কিছু
বলতে পারছে না।। বুকে একফোঁটা সাহস নেই গাধাটার। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ
ওর মনে পরে যে আজ ইমরানের
পিসি থেকে কিছু গান আনার কথা।
তাই সুমিত্রা পেনড্রাইভটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পরে ইমরানের
বাড়ির উদ্দেশ্যে। এদিকে ইমরান ও ভাবছে আজ
সুমিত্রা আসবে ওর কাছে পিসি থেকে গান নিতে। ওর
পেনড্রাইভ এ ভালোবাসার কথাটা রেকর্ড করে দিলে মন্দ হয় না।
তাই ইমরান কিছুটা নার্ভাস হয়েই রেকর্ড করে ওর ভালোবাসার কথা। প্ল্যান সুমিত্রা পেনড্রাইভ নিয়ে আসলে ওর
পেনড্রাইভে দিয়ে দিবে। ইমরান কাজটা করতে করতেই
সুমিত্রা চলে এলো।
সুমিত্রা : কিরে ইমরান, কি খবর?
ইমরান : ভালো আবার ভালো না। তোর কি খবর বল?
সুমিত্রা : আমারও একি অবস্থা। কিন্তু তোর এমন কেন?
ইমরান : এখন বলা যাবে না। পরে এমনিতেই বুঝতে পারবি।
সুমিত্রা : ও.... আন্টি কোথায় রে?
ইমরান : আম্মু তো একটু আগে বাহিরে গেলেন। কেনো ভয়ে পাচ্ছিস?
সুমিত্রা : না না, ভয় পাবো কেন?
ইমরান :যদি আমি কিছু করি সেই ভয়?
সুমিত্রা : ইমরান,,, দুষ্টুমি করবি না বলে দিচ্ছি। ভালো হবে না। তুই আমাকে গান
ভরে দে। আমি চলে যাবো।
ইমরান : ভয় পাস না। আমি কিছু করবো না। দে পেনড্রাইভ দে।
সুমিত্রা ইমরানের হাতে পেনড্রাইভটা দেয়।
বেছে বেছে ইমরান অনেক গুলো অডিও,
ভিডিও গান লোড করে দেয়। সাথে ওর রেকর্ডিং টা ও।
রেকর্ডিং টা দেওয়ার সময় হালকা হাত
কাঁপে ইমরানের। কিন্ত সেটা সুমিত্রা কে বুঝতে দেয় নি সে।
সুমিত্রা ও বুঝতে পারে নি। পেনড্রাইভ নিয়ে ইমরান কে ধন্যবাদ
দিয়ে বাড়ি চলে যায়। এদিকে ইমরান খুব টেনশনে থাকে।
সুমিত্রা পাবে তো রেকর্ডিং টা? যদিও পায় শুনার পর ওর রিএক্ট
কি হতে পারে? আমাকে মেনে নিবে তো? নাকি আমাদের বন্ধুত্বটাও নষ্ট
হয়ে যাবে? এমন নানান কথা ভাবতে থাকে ইমরান। ইমরান
ঘামছে। এই শীতের মাঝেও দর দর করে ঘাম বেয়ে পরছে ইমরানে শরির
থেকে। রাতে পড়া শেষ করে পেনড্রাইভ নিয়ে পিসির সামনে বসে সুমিত্রা।
একটা একটা করে ফোল্ডার চেক করেছে সুমিত্রা। হঠাৎ একটা ফোল্ডার
দেখে একটু অবাক হয় সে। ফোল্ডার টার না "স্পেশাল ফর ইউ" দেয়া। একটু আগ্রহ
নিয়েই ফোল্ডার টা ওপেন করে সুমিত্রা। বেশি কিছু নেই
সেখানে। শুধু একটা রেকর্ডিং দেখতে পারে সুমিত্রা।
রেকর্ড টা অন করে সুমিত্রা। অন করেই
ইমরানের কন্ঠ শুনে আরো অবাক হয়
সুমিত্রা। রেকর্ডিং ছিলো এরকম:-
""হ্যালো সুমিত্রা, আমি জানি এই মূহুর্তে আমার রেকর্ডিং পেয়ে তুমি অবাক হচ্ছো। আর
এও জানি আরো বেশি অবাক হচ্ছো আমি তোমাকে তুমি করে বলছি শুনে।
কি করবো বলো? আমি যেদিন প্রথম তোমাকে দেখেছিলাম সেদিনই
তোমার প্রেমে পরে গিয়েছিলাম। কিন্তু তোমাকে তা না বলে ফ্রেন্ডশিপ
করতে চেয়েছি। আর আমার চাওয়া ও আমি পেয়েছি। জানো তুমি যখন আমার
সাথে থাকো তখন আমার মনে হয় পুরো পৃথিবী আমার সাথে আছে।
পৃথিবীর সমস্ত সুখ আমার হাতের মুঠুয়। প্রতিটা মূহুর্তে তোমার প্রেমে পরি।
তোমার চোখের গভীরের অতল সাগরে হারিয়ে যাই। ইচ্ছে করে তোমার ঐ মেঘ
কালো কেশের সুগন্ধে নাক ডুবিয়ে দেই। সুমিত্রা তুমি হয়তো জানো না আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি। আমি জানি না মনের মানুষ কে কি করে ভালোবাসার
কথা বলতে হয়। আমি তোমার সামনে দাড়িয়ে কখনই ভালোবাসার
কথা বলতে পারবো না। কারণ আমি যতই ভাবি তোমার সামনে দাড়িয়ে আজ
প্রপোজ করবই। যতই প্রস্তুত হয়ে তোমার সামনে যাই, কিন্তু সামনে গেলেই
আমার সব এলো মেলো হয়ে যায়। কিছুই বলতে পারি না আমি। তাই এই
রেকর্ডিং এর সাহায্যে বলছি,
"আমি তোমাকে ভালোবাসি সুমিত্রা, অনেক অনেক ভালোবাসি,
আমি সারাজীবন তোমার পাশে থাকতে চাই" প্লীজ
আমাকে ফিরিয়ে দিও না। রেকর্ডিং টা শুনে চোখ
থেকে পানি পরছে সুমিত্রার। আর মনে মনে বকা দিচ্ছিলো ইমরান কে।
গাধাটা ঠিক করে প্রপোজ ও করতে পারে না। গুছিয়েও
কথা বলতে পারে না। কাল খবর আছে ওর।
রাতে একটুও ঘুমাতে পারে নি সুমিত্রা। আর এদিকে ইমরান
তো ভাবছে কি জানি কি হয়। সুমিত্রা কি ভেবে বসে? ও
পাবে তো রেকর্ডিং টা? এই চিন্তায় ইমরান ও ঘুমাতে পারেনি সারারাত।
পরদিন সকালে স্কুলে যায় সুমিত্রা। মনে।মনে খুজছে ইমরান কে। মুখে খুব
রাগি রাগি একটা ভাব। কিছুক্ষন পর ইমরান ও আসে স্কুলে। কিন্তু আজ
সরাসরি সুমিত্রার সামনে যায়নি ইমরান। ক্লাসে চলে যাচ্ছিল সে।
ঠিক তখনি সুমিত্রা ডাক দেয় ইমরান কে। ইমরান খুব ভয়ে ভয়ে যাচ্ছে সুমিত্রা র কাছে।
সুমিত্রা খুব রাগি চোখে তাকিয়ে আছে ইমরানের দিকে। ইমরান সুমিত্রার
সামনে এসে দাড়ালো।
সুমিত্রা : কাল পেনড্রাইভ এ
কি দিয়েছিলি এটা? (একটু রাগি গলায়)
ইমরান : না মানে..... ইয়ে মানে.....
(ভয়ে কথা মুখ দিয়ে বের
হচ্ছে না ইমরানের)
সুমিত্রা : কি মানে মানে করছিস? কি ভেবেছিস আমাকে তুই? আমি বাঘ
না ভাল্লুক? আমাকে সরাসরি প্রপোজ করলে কি আমি খেয়ে ফেলবো? ঠিক
করে প্রপোজ ও করতে পারিস না গাধা?
ইমরান : তার মানে তুই....
সুমিত্রা : তুই না। এখন থেকে তুমি করে বলার প্র্যাকটিস করো।
না হলে প্রেম করবো না।
ইমরান : সত্যি তুমি.....
সুমিত্রা : আমিও তোমাকে ভালোবাসি বুদ্ধুরাম। বলেই মুচকি একটা হাসি দেয় সুমিত্রা।
এমন সময় হঠাৎ করেই ওদের পিছনে কিছু হাত তালির শব্দ শুনতে পায় সুমিত্রা আর
ইমরান। পিছনে তাকিয়ে দেখে ক্লাসের সবাই ওদের এই ভালোবাসার মূহুর্তের
সাক্ষী হয়ে আছে। সবাই কে দেখে সুমিত্রা লজ্জায় মুখ লুকায়
ইমরানের বুকে। ইমরান ও পরম যত্নে বুকে জরিয়ে নেয় নিজের
ভালোবাসা কে।