লিখাঃ Shovan Naskar
- কিরে বস কেমন আছিস?
-আরে শালা, এতদিন কোথায় ছিলি? কোন খোঁজ নিস না!
-তুইও কেমন নিস জানা আছে ।
- আরে ভাই বলিসনা ঠাকমা অসুস্থ । অনেক ভুগছেন । ওই নিয়েই ব্যস্ত!
- ওহ তাই নাকি? আর একটু ঠান্ডাটা পড়ুক, ঘুরে আসবো একদিন।
-ঠিক আছে ভাই । অপেক্ষায় থাকলাম ।
-ওকে। বাই রে ।
এইবলে ফোন রেখে দেয় রাহুল । রাহুল সুমন দুজনেই কলেজের জিগরি দোস্ত ছিল একসময়। দুজনেই এখন টিচার। রাহুল এখন চাকরি সুত্রে বারাসাত থাকে আর সুমন থাকে বসিরহাটের এক গ্রামে । কিন্তু দুজনের বন্ধুত্ব এখনো অটুট। রাহুল ভাবল ক্রিস্টমাস আর নিউ ইয়ার টা সুমন দের বাড়িতেই দুই বন্ধু পালন করবে ।
২৫ শে ডিসেম্বর এর সক্কালবেলাতেই রাহুল হাজির । একটু শহুরে হওয়ার দরুন জীন্স জ্যাকেট ছাড়া বাবুর চলে না । সেদিন তার ওপর খুব ঠান্ডাটা পরেছে ।
- ওই হতভাগা ।
এই তো এই তো বলতে বলতে সুমনের সাথে স্টেশনে দেখা হল । সে রাহুলকে ভ্যানে তুলে যাওয়া শুরু করল । রাস্তায় দুই বন্ধুর অনেক কথা হল । বাড়ির কাছে আসতেই রাহুল অবাক হয়ে বলল, একি! তোদের বাড়ির পাশে বড় বাগান টা কই ?
- আর বলিস না এক লোক কলেজ করবে বলে জমি গুলো কিনেছিল । কিন্তু এখন তার পাত্তাই নেই।
- আসেপাশেও তো তেমন বাড়ি দেখছিনা আগের মতন ।
- অনেকে এখন আর তেমন থাকতে চায় না গ্রামে।
মাটির রাস্তা দিয়ে এসে থামল সুমনের বাড়ি এসে। বাড়িতে ছাগল বাঁধা দেখে রাহুল বলল, কিরে বাড়িতে এত অভাব যে ছাগল পুষতে হল?
-আর বলিস না, বাবার কাজ।
রাহুল এ বাড়িতে ছেলের মতন। অনেক যত্নআত্তি পেল সে । সুমনের মায়ের হাতে রান্না করা ফ্রায়েড রাইস আর চিকেন চেটেপুটে খেল সে । কিন্তু অবাক ব্যাপার লক্ষ্য করল সুমনের বাবা মায়ের মধ্যে সে স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাপার টা নেই। বাড়িতে সুমনের এক কাকাও আড্ডা দিত সেও কেমন যেন চুপচাপ। হয়ত ঠাকমা অসুস্থ বলে।
খাওয়া হয়ে গেলে সুমন বলল, চল ভাই ঠাকমার সাথে তোর দেখা করিয়ে আসি।
ঠাকমার ঘরে গিয়ে দেখল ঠাকমা একদম শীর্ণকায় । চোখ মুখ প্রায় সাদা রক্ত বলতে প্রায় কিছুই নেই । অনেক কস্টে সে রাহুল কে চিনতে পারল !
কি হয়েছে রে ঠাকমার ?
- আরে গত বছর আসামে বেড়াতে গেছিলাম। তারপর ম্যালেরিয়া। তারপর একটার পর একটা । ডাক্তার এখনো সঠিক রোগ ধরতে পারেনি ঠিকঠাক । বাদ দে , তুই আজ চলে যাবি তো?
বন্ধুর কথায় রাহুল একটু হতবাক হয়ে গেল !
ও পাঁচদিন থাকবে এই আশা করে এসেছিল । অকস্মাৎ কেউ এমন বললে তার বাড়ি কি থাকা যায়? লজ্জার ব্যাপার হবে ।
ব্যাগ নিয়ে সন্ধ্যার ঠিক আগে সুমন বন্ধু কে রেলস্টেশন এ নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। সুমনের ও তার ফ্যামিলির এহেন আচরন সহ্য হল না । ট্রেন চলে এল সে গেল না। মনের ভিতরের খটকা টা যাচ্ছেই না তার। ব্যাগ টা স্টেশন মাস্টারের কাছে রেখে সে সুমনের বাড়ির অভিমুখে হাটতে লাগল সে । প্রচন্ড ঠান্ডার রাত। মাঝে বিশাল ফাকা জায়গা টা । দুরে কয়েকটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে কিন্তু আলো নেই । ভুতের মত দাঁড়িয়ে। চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সব !
সুমনের বাড়ি দরজা জানালা সব আটকানো। সুমনের ঠাকমার ঘর থেকে শুধু গোঙানির শব্দ শোনা গেল। রাহুলের গায়ে খুব জোর দরজায় জোরে জোরে কয়েকবার ধাক্কা দিতেই খুলে গেল! একি! যা দেখল তাতে তার শরীর টা ঠান্ডা হয়ে গেল! এমন ভয়াল ভয়ংকর দৃশ্য আগে হয়ত কেউ কোনদিন দেখেনি। সুমনের ঠাকমা উঠে বসে সেই ছাগল টাকে ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছিল। তাকে দেখেই বীভৎস চিতকার করে পায়ে বাধা দড়িটা টানতে লাগল । মাথার চুল গুলো এলোমেলো। সারা মুখে রক্ত । ভীষন ভয়ে চিতকার করে উঠল সে । ও ঘর থেকে সুমনের চিতকারের আওয়াজ, রাহুল তুই ফিরে এসেছিস? আমি বলেছিলাম না ঠাকমার রোগ ধরা পড়েনি । তুই কেন ফিরে এলি? পালা পালা, এ মানুষ খায় রে। তোকে দেখলে লোভ সামলাতে পারবে না। এর ক্ষিধে কমাতে রোজ ছাগল দেই সন্ধে হলে । তুই পালা রে ভাই ।
হটাত পায়ের বাঁধন ছিড়ে গেল ঠাকমা গোঙানি করতে করতে হামাগুড়ি দিতে দিতে রাহুলের দিকে তেড়ে এল ।
আকাশে ঝলমলে চাঁদের আলো । রাহুল ছুটছে খোলা মাঠ দিয়ে । পিছনে হামাগুড়ি দিতে দিতে ঠাকমা ছুটছে । পিছন থেকে আওয়াজ, পালা রে ভাই পালা। আরো জোরে ছুটতে লাগল সে । ৯ টায় শেষ ট্রেন । না পেলে হয়ত -