না, সকালে নয়, বিশু পাগলের ডাকটা এল একেবারে মাঝরাতেই। মন দিয়ে সম্পূর্ণ অন্য জায়গার বেড়ানোর একটা লেখা পড়ছিলাম। বইটা হঠাৎ বন্ধ করে ঘুমন্ত দীপকে ডেকে বললাম, শুনছ, আমি এই দোলে শান্তিনিকেতন যাব। পাশবালিশটা আরেকটু ভালো করে টেনে নিয়ে নির্বিকার ঘুমন্ত গলায় জবাব এল, “যাও”। বললাম, যাও মানে? – “যাও মানে যাও...”।
পরদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে আবার মনে পড়ল। বললাম, আমি কিন্তু সত্যিই দোলে শান্তিনিকেতন যাব, সিরিয়াসলি বলছি। দীপ বলল, “যাও না, কে বারণ করছে? আমিও সিরিয়াসলিই বলছি।” কিন্তু থাকব কোথায়? – আমি জানতে চাই, আরতো এক সপ্তাহই দেরি। -“সময় থাকতে বললে তো টুরিস্ট লজেই চেষ্টা করে দেখা যেত, এখন দেখি কিছু একটা ব্যবস্থা হবে।” আমি কিন্তু বেশি টাকা-পয়সা খরচ করে যাব না – সোজা জানিয়ে দিই। যাবতো রবীন্দ্রনাথের কাছে, এই তো কত আর দূর শান্তিনিকেতন!
আমার বন্ধুস্থানীয় দুজনের কাছে খোঁজ নিই যাদের রুটিরুজি এই ভ্রমণকে ঘিরেই - সস্তায় কোথাও ঘর পাওয়া যাবে কীনা? একজনের সোজা উত্তর, নো ম্যাডাম। আরেকজন বলল, দেখছি। কিন্তু কয়েকদিনের চেষ্টায় সে যা খোঁজ দিল তাতে আমার চক্ষু চড়কগাছ। বললাম, থাক যাব না। দীপও টুকটাক যা খোঁজ নিল তার কোনটাই আশাপ্রদ নয়। তারপর বলল, ওদের ফোটোগ্রাফির গ্রুপটার কয়েকজনও দোলে শান্তিনিকেতন যাওয়ার পরিকল্পনা করছে, ওরা যদি কিছু ব্যবস্থা করতে পারে।
বুধবার সাতাশ তারিখ দোল। সোমবার রাতে প্রবীরদার ফোন এল – একটা ঘরের ব্যবস্থা হয়েছে, মাটির ঘর - ওতেই মেয়েরা মানে আমি আর আমার কন্যা থেকে যাব, বাকি সবাই বাইরের দাওয়ায় শোবে। দীপ বলল, কী করবে? বললাম, চলতো। তেঁতুল পাতা যখন জুটেই গেছে ওতেই সকলের হয়ে যাবে – ওই ঘরেই এদিক-ওদিক করে সবাই ধরে যাব, শোওয়ার জায়গা না হলে আড্ডা দিয়েই রাত কাটিয়ে দেওয়া যাবে...।