মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৬৫- বিষাক্ত প্রেম : মুহাম্মদ ইউসুফ

হাসান একজন যুবকের নাম। বয়স বাইশ কি তেইশ হবে। জাজল কালো আঁখি চাঁদের ন্যায় গোলাকার চেহারা। মুখে কালো কিচ কিচে দাড়ি। ছিপছিপে হ্যাংলা পাতলা তার দেহবলরী। স্বাস্থের যতœ সে করেনি কোনও দিন, করার সঙ্গতি ছিলনা তার। কারণ নুন আনতে পান্তা ফুরায় যার তার আবার বিলাসিতার সুযোগ কোথায়। তার বাবা একজন গরীব কৃষক। দরিদ্রতার বিশাল পাহাড়ের সঙ্গে লড়াই করেই কাটে তাদের দিবস রজনী। চার বোন ও এক ভাইয়ের সংসারঘানি টেনে চলছে তার জনক জননী। সংসারে তাদের দরিদ্রতা থাকলেও সর্বদায় তাদের সংসারে প্রশান্তি বিরাজমান ছিল। এক মাত্র ছেলে সন্তান হিসাবে সে ছিল মাতা পিতার স্নেহসিক্ত একান্ত আদরের দুলাল। তার পিতা মাতার কুক ভরা স্বপ্ন হলো, তাকে হাফেজ বানাবে। তাই তারা বুক ভরা আশা নিয়ে তাকে মাদরাসায় ভর্তি করে। হাসানের মেধা শক্তি ভাল থাকায় অল্প দিনেই সে হাফেজ হয়ে যায়। তারপর সে ভর্তি হয় একটি জুনিয়র দাখিল মাদরাসায় সেখানে মেট্রিক পাস করার পর সে ভেবেছিল যে, সে আর পাড়ালেখা করবে না। এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্ম জীবনে পা বাড়াবে সে। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস, গ্রামের কিছু সংখ্যক মুরুব্বী হাসানের পিতাকে পরামর্শ দেয় যে, হাসানকে কলেজে ভর্তি কর, হাসানের মেধাশক্তি খুব ভালো, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আই. এ. পাস করার পর সে ভাল চাকুরী পাবে এবং ভাল বেতন ও পাবে সে। হাসানের পিতা প্রথমে তাতে রাজি না হলেও পরে সকলের চাপে এবং ভাল বেতনের কথা শুনে কলেজে ভর্তি করতে বাধ্য হলেন। কিন্তু এখন সমস্যা হাসানকে নিয়ে সে তাতে রাজি হবে কিনা এই চিন্তায় হাসানের পিতা অস্থির। যেইনা চিন্তা সেই না কাজ। হাসান কিছুতেই তাতে রাজি হতে চায়না। সে বলল যে, আমি হাফেজ হয়েছি তারপর এখন আবার মেট্রিক পাসও করেছি। আমি এখন আর পড়া লেখা করবো না। আমি এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, কর্ম জীবনে পা রাখবো। জবাবে তার পিতা বলল, দেখ বাবা! গ্রামের মুরুব্বীরা বলেছেন, তোর মেধা শাক্তি ভাল। তুই আই. এ. পাস করার পরপরই ভাল বেতনের চাকরী পাবি। তাছাড়া উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য তোকে কলেজে ভর্তি হতেই হবে। আর এটাই তোর প্রতি আমার নির্দেশ। অবশেষে হাসান তার পিতার নির্দেশ রক্ষার্থে কলেজ আই. এ. ফাষ্ট ইয়ারে ভর্তি হয়। পাঞ্জাবী পায়জামা পরেই সে ক্লাসে যেত। বেশ ভালই চলছিল তার পড়া লেখার জীবন। ভাল ছাত্র হিসেবে কলেজে বেশ সুনামও অর্জন করেছিল সে। হঠাৎ মেঘহীন কালো ঝড়ে তার সোনালী জীবন ধ্বংস হয়ে পড়ে, ধ্বংস হয়ে পড়ে তার বাবার সোনালি স্বপ্ন। চাকুরী ও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া তো দূরের কথা এখন তাকেই জীবন্ত রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। বারবারই যেন হাসানের জীবনাকাশের তারকা নিভে যেতে চায়। এর কারণ হল সর্বনাশা প্রেম। তার ক্লাসেই শাহানা নামে একটি মেয়ের সাথে তার অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। অল্প ক’দিনেই জমে উঠে তাদের গরম বাজার, বিরতিহীন চলতে থাকে তাদের প্রেমের গাড়ি। মনে হয় যেন, এই গাড়ির কোন স্টেশন নেই একমাত্র মৃত্যু ছাড়া। হাসানের হৃদয় সাগরে বয়ে চলে প্রেম আনন্দের প্রবল তরঙ্গ। হারিয়ে যায় সে ভাবনার আবর্তে রঙ্গিন স্বপ্নের অতলান্তে। এই মুগ্ধ আবেশে সে নিজেকেই শুধায় শাহানা আমার, কেবলই আমার। আমার জন্যই শাহানার জন্ম। আমার হৃদয় রাজ্যের ছোট্ট রাজপ্রাসাদে ওই হবে রাজরাণী। আমার রক্তে মাংসে অস্থিমজ্জায় মিশে থাকবে সে। মিশে থাকবে অহর্নিশ। মিশে থাকবে জনমের মত অনন্তকাল অবধি। আমিই কেবল তার আর সে কেবলই আমার। আমরা হলাম দুজন দুজনার। অথচ সে কিঞ্চিৎ পরিমাণও ভেবে দেখেনি যে, রাসূল সা. এর বলে যাওয়া ঐ হাদীসের শেষ অংশের কথা যে হাদীসের শেষ অংশে তিনি বলেছেন যে, ‘আমি পুরুষদের জন্য নারীর চেয়ে অধিক ক্ষতিকর কোন বস্তু রেখে যাইনি।’ আচমকা হাসানের জীবনাকাশের চাঁদ যেন ক্রমে ক্রমে আলোহীন হতে লাগল। প্রিয় পাঠক পাঠিকা! ঘটনার আলোচ্য অংশটুকু যদিও তেমন আশ্চর্যজনক অথবা শোকজনক নয়; কিন্তু ঘটনার বাকী অংশটুকু যেমন আশ্চর্যজনক তেমনী শোকজনকও বটে। তাহলে চলুন বাকী অংশটুকু পড়ি! হাসানের গায়ে সুন্নতি পোষাক, মুখে কালো ঘন দাড়ি; এমন কিছুই যেন ভাল লাগেনা শাহানার। তার দু’নয়নে যেন এসব বিষাক্ত তীরের ন্যায় মনে হয়। অথচ সে একজন মুসলমানের সন্তান। যাইহোক, তারপর শাহানা হাসানকে ডুবিয়ে দিল জাহান্নামের জলন্ত অগ্নিতে। সে হাসানকে বললো, দেখ হাসান! এটা ডিজিটাল যুগ, এযুগে মুখে দাড়ি গায়ে পাঞ্জাবী পায়জামা এসব আমার ভাল লাগেনা। জান আমার, তুমি দয়া করে দাড়ি ফেলে দাও এবং তার সাথে সাথে গায়ের পোষাকও পরিবর্তন করে নাও। তাছাড়া তুমি তো একজন কলেজের ছাত্র, আর কলেজের ছাত্রদেরকে এই পরিবেশে মানায় না। হাসান এতে প্রথমে সম্মতি না হলেও পরে শয়তানের ধোঁকায় পরে শুধু পোষাক পরিবর্তন করে ছিল। কিন্তু তবুও শাহানার ক্ষুধার্ত চোখের তৃষ্ণা নিবারণ হলনা। সে বললো দেখ হাসান, আমাকে তোমার করে পেতে হলে দাড়ি তোমাকে ফেলে দিতেই হবে। অতপর হাসান তাকে অপন করে পাওয়ার আশায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও দাড়ি ফেলে দিল। প্রিয়তমাকে আপন করে পাওয়ার আশায় ভবিষ্যতের সোনালি স্বপ্ন হাসানকে ভাবারও অবকাশ দেয়নি বিশ্ব নবী সা. এর ঐতিহাসিক কথা যা তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার দাড়ির মাঝে ক্ষুর লাগালো সে যেন আমার কলিজায় ছুড়ি দিয়ে আঘাত করল।’ যাক এখন হাসান অধুনিক স্টাইলের ছাত্র। দাড়ি বিহীন মুখ, গায়ে প্যান্ট শার্ট পরিধান করে কলেজে যাওয়া আসা করে। কিন্তু সে এখনো একটি বিষয় আঁচ করতে পারেনি যে, তার অবস্থান কোথায় ছিল এখন কোথায় এসেছে। আর ভবিষ্যতে শাহানা তাকে কোথায় নিক্ষেপ করবে? ভালবাসার আনন্দ উল্লাসে চলছে তার বিরতিহীন দিন রজনী। কিন্তু হঠাৎ করে তার আনন্দ উল্লাসের মাঝে বজ্র পরে নিভে যায় তার জীবন পথের মশাল। ধ্বংশ হয়ে যায় ভবিষ্যতের সব রঙ্গিন স্বপ্ন। এর কারণ হলো শাহানাকে তার বাবা মা অন্য জায়গায় বিয়ে দেওয়ার জন্য মনস্থ করলেন। আর শাহানাও তাতে রাজি হলে গেল। আর এই সংবাদটি শাহানা হাসানকে বললো। জবাবে হাসান বলল একি বলছো তুমি? তুমি না বলেছো, তুমি আমার হবে? তাছাড়া তোমার জন্ম তো আমার জন্যই। তখন শাহানা বললো, কে বলেছে আমি তোমার হবো? আর কেইবা বলেছে তোমার জন্য আমার জন্ম ? তুমি তো একটা লম্পট, ইতর, পাষণ্ড, মানবরুপী শয়তান। তখন হাসান বললো, তার কারণ কি? জবাবে শাহানা বললো, তার কারণ হলো আমি একটি সাধারণ রুপবতী মেয়ে। আর এই সাধারণ রুপেই পাগল হয়ে তুমি আমার প্রেমে পড়েছো। পোষাক পরিবর্তন করেছো। দাড়ি ফেলে দিয়েছো। আর কি না করতে পারবে তুমি, যখন আমার চেয়ে অধিক সুন্দরী মেয়ে দেখবে? তখন তার প্রেমে অন্ধ হয়ে আমাকে মেরে ফেলতেও তুমি দ্বিধাবোধ করবে না। এই সমস্ত কথা বলে শাহানা চলে গেল। একথাগুলো কয়েকবার হাসানের কানে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। আর সে ভাবতে থাকে একি করলাম আমি? কার জন্যই বা সোনার জীবন নষ্ট করলাম? সত্যিই তো আমি এখন মানুষরুপী শয়তান। কারণ আমার অন্তরে বিশ্ব মানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল কুরআন সংরক্ষিত ছিল। আমার গোনাহের কারণে আল্লাহ তাআলা তা ছিনিয়ে নিয়েছেন। হাসান এ সমস্ত কথা ভাবতে থাকে, আর তার মনের অজান্তেই কপাল তলে গড়িয়ে পড়তে থাকে লোনা অশ্র“র অবিরল ধারা। বাকরুদ্ধ হয়ে যায় সে। ভাবতে থাকে পরকালে তার অবস্থা কি হবে? প্রিয় পাঠক পাঠিকা শুনলেন তো অবৈধ প্রেম তার সোনালি সোনার এ জীবনটাকে কিভাবে বিষাক্ত সর্পের ন্যায় ধ্বংস করে দিল! ধ্বংস করে দিল তার রঙ্গিন জীবনের সকল স্বপ্ন। প্রবাদ আছে, যে ‘অবৈধ ভালবাসার অনন্দ থাকে শুধু স্বল্পক্ষণ আর বেদনা সরা জীবন।’ প্রিয় পাঠক পাঠিক এবার বলুন আমাদের কি এই নিশ্চিত জীবননাশের হাত থেকে বিরত থাকার প্রয়োজন নেয়? আপনারা হয়তো জবাবে মুচকি হেসে বলবেন, অবশ্যই প্রয়োজন। তাহলে আসুন আমরা পর্দা করার জন্য চেষ্টা করি আর মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের অবৈধ প্রেম থেকে বিরত রাখেন। আমীন। [সূত্র মুহাম্মদ বদরুল আলম]