-এই শার্টটা আমার খুব পছন্দের।
-তাই বলে প্রতিদিন একই শার্ট!
-এরকম শার্ট আমার অনেকগুলো আছে।
-আপনার প্রত্যেকটা শার্টে এরকম ময়লা লাগানো আর বুক পকেটের স্থানে কি দাগ
আছে?
.
ফারিয়ার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনা আহাদ। একটা দীর্ঘঃশ্বাস ছেড়ে ফারিয়ার
দিক থেকে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকায় সে। এরকম পরিস্থিতিতে উত্তর দিতে না পারলে একটা উপায় হচ্ছে, ব্যাপারটিকে এড়িয়ে যাওয়া। আহাদ ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়ার
চেষ্টা করে বলল,
.
-বাহ্, তোমার ফোনটা তো অনেক সুন্দর!
-আগেও দেখেছেন কিন্তু।
-ওহ্। চলো ঐপাশটায় গিয়ে বসি?
-না, যাবনা।
-কেনো?
-আমার প্রশ্নের উত্তর দিন আগে।
-কোন প্রশ্ন?
-এই শার্টটা পড়ে আসেন কেনো?
-ইয়ে মানে! আসলে হয়েছে কি, আর বাকি শার্টগুলো ওয়াশ করেছি তো।
-আমাকে মিথ্যে বলবেন না।
-ফারিয়া আমি আজকে আসি।
.
কথাটা বলেই হাঁটা দেয় আহাদ। ফারিয়া অভিমানী চোখে আহাদের শার্টটার
দিকে তাকিয়ে থাকে নিষ্পলকভাবে। একটা অচেনা
মানুষের সাথে পরিচয় হবার পর তার উপর অভিমান হওয়ার কারণ থাকে।
কারণের পেছনে ছোট ছোট চাওয়া থাকে। চাওয়াগুলো সব সময় লুকোনো থাকে।
ফারিয়া ঘাসযুক্ত মাঠটা থেকে উঠে হাঁটা শুরু করে। তার চোখে জল। এই চোখের
জলের আপাতত কোনো নাম নেই।
.
আহাদের সাথে ফারিয়ার পরিচয় পনের দিন আগে। দিনটি ছিলো মঙ্গলবার।
ফারিয়া সেদিন ভার্সিটিতে ক্লাস করতে বের হবে ঠিক সেই মূহুর্তে সে জানতে পারে তার বাবা অফিসে যাবার পথে বাইকে এক্সিডেন্ট করেছে। ক্লাসে না এসে দ্রুত বাবাকে দেখতে যায় সে।পথচারিদের কেউ একজন ফারিয়ার বাবাকে হসপিটালে এডমিট
করিয়ে দেয়। ফারিয়ার বাবা এক্সিডেন্ট করায় তিনি প্রচূর রক্তক্ষরণের স্বীকার হন। ডাঃ জানায় 'ও-নেগেটিভ' রক্ত লাগবে। ডাঃ এর কথা শুনেই ফেইসবুকে রক্ত চেয়ে একটা পোস্ট করে ফারিয়া। অনেকে কমেন্ট করে, তারা রক্ত দিতে পারত যদিনা দূরত্বটা বেশি হত। ফারিয়া তার ভার্সিটির ফ্রেন্ডদের ফোন করে সব কিছু বলে। ফ্রেন্ডরা ফারিয়াকে এই
বলে আশ্বস্ত করে যে তারা ম্যানেজ করতে পারবে।
.
আহাদ ভার্সিটির 'স্বেচ্ছায় রক্ত দান' কার্যক্রম 'বন্ধন' এর সদস্য। 'বন্ধন' থেকে সব
সদস্যদের ফোন নাম্বারে ম্যাসেজ পাঠানো
হয়, 'ও-নেগেটিভ' রক্ত লাগবে, জরুরী। আহাদের রক্ত 'ও-নেগেটিভ' হওয়ায় ও দ্রুত
ম্যাসেজের রিপ্লায় দেয়। তারপর তাকে নিয়ে ফারিয়ার ফ্রেন্ডরা ফারিয়ার
বাবাকে রক্ত দেয়ার জন্য হসপিটালে নিয়ে যায়। রক্ত দেয়ার পর ফারিয়ার সাথে পরিচিত হয় আহাদ।
.
গত পনের দিন থেকে আহাদের সহজ-সরল মন-মানসিকতার প্রেমে পড়েছে ফারিয়া।
এত অল্প দিনে একটা মানুষের উপর মায়া তৈরী হওয়া তেমন কিছু নাহ্। কিন্তু সেই
মায়া ডাইভার্ট হয়ে ভালোবাসায় পরিণত হওয়াটা অনেক কিছু। এত কম সময়ে একটা
মানুষকে চেনা যায়না। শুধু তার সম্পর্কে আংশিক ধারণা পাওয়া যায়।
ফারিয়া খুব চিন্তায় পড়ে যায়।
.
রাতে ঠিকমত ঘুমোতে পারেনা ফারিয়া। ঘুম না আসার কারণ আহাদ। মধ্য রাতে
ফারিয়া আহাদকে ফোন দেয়,
.
-হ্যাঁ ফারিয়া বলো।
-কি করছেন?
-ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কবিতা লিখছিলাম।
-হিহিহি। ও, আপনি তো আবার বাংলার স্টুডেন্ট।
-হুম। তুমি কি করছিলে?
-ভাবছিলাম।
-কি ভাবছিলে?
-কিছুনা। কাল বিকেলে একটু দেখা করতে পারবেন?
-আচ্ছা।
.
বিকেলে ফারিয়ার সাথে দেখা করতে ভার্সিটি ক্যাম্পাসে অপেক্ষা করে আহাদ।
অপেক্ষা করার মাঝে এক ধরণের বিরক্তি কাজ করে। আহাদের মুখে কোনো বিরক্তির
ছাপ নেই। সে চুপচাপ বসে আছে।
.
-বিরক্ত লাগছে অপেক্ষা করতে?
.
ফারিয়া এসেই জিজ্ঞেস করে আহাদকে। আহাদ হাসতে হাসতে উত্তর দেয়,
.
-উহুঁ।
-এইটা আপনার জন্য।
-কি এটা?
-
মেসে গিয়ে প্যাকেটটা খুলে দেখলেই বুঝতে পারবেন।
-এখন খোলা যাবেনা?
-না। আপাতত কার্ফিউ জারি আছে প্যাকেট এর উপর। হিহিহি।
.
আহাদ বুঝতে পারেনা ফারিয়া নামের মেয়েটা তার সাথে এত মিশছে কেনো? তার খেয়াল রাখতে চায় কেনো? মাঝে মাঝে তো এটাও বলে, এটা পড়বেন না, ওটা করবেন
না। কেনো সে এসব করছে, এতসবের কারণ কি?
.
রাতে খেয়ে ঘুমোনোর আগে প্যাকেটটা হাতে নেয় আহাদ। আহাদ প্যাকেট খোলার
আগে একটাবার আইডিয়া করে নেয় প্যাকেটের
ভেতর কি আছে। সে আইডিয়া করে, সে প্যাকেট খুলেই হয়ত দেখবে একটা সুন্দর
পেইন্টিং করা পেপার। হয়ত পেইন্টিং পেপারে আঁকা থাকবে, দুটো মানুষ দুজনের দিকে
তাকিয়ে আছে।
.
প্যাকেটটা হাতে নিয় প্যাকেটটা খুব ভালো করে দেখে নেয় আহাদ। এই প্রথম কেউ
তাকে গীফট করল। গীফট পেলে প্রত্যেকটা মানুষ আনন্দিত হয়। আহাদও গীফট পেয়ে আনন্দিত হয়েছে। প্যাকেটটা খুলতেই আহাদ অবাক হয়ে যায়। প্যাকেটের ভেতর দুটো শার্ট। শার্ট দুটো বের করতেই শার্টের সাথে একটা ছোট্ট কাগজ বের হয়ে আসে।
কাগজটা টেবিলে রেখে ঘুমিয়ে পড়ে সে।
.
-গতকাল আপনাকে যে প্যাকেট দিলাম খুলে দেখেছেন?
-হুম। শার্ট কেনো দিয়েছো?
-আপনি প্রতিদিন ময়লা শার্ট পড়ে আসেন আমার খুব খারাপ লাগে।
-তোমার খারাপ লাগে কেনো?
-জানিনা। আপনি প্যাকেট খুলে কি কি পেয়েছেন?
-দুটো শার্ট।
-আর কিছু পান নি?
-কেনো, আর কিছু রেখেছিলে নাকি?
-না মানে। না আর কিছু ছিলোনা।
-ও। ফারিয়া এইটা তোমার জন্য?
-কি?
-বাসায় গিয়ে খুলে দেখবে।
-আচ্ছা।
.
ফারিয়া বাসায় গিয়ে প্যাকেট খুলে দেখে 'উপদেশমূলক বানীর' একটা ওয়াল পেপার।
তাতে লেখা,
.
-সৎ সংঘে স্বর্গেবাস, অসৎ সংঘে সর্বনাষ।
-মানুষ চিনিতে সময় নাও।
-ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিওনা।
.
ওয়াল পেপারের এসব বানী দেখে মনে মনে খুব বিরক্ত হয় ফারিয়া।আহাদের মত ছেলে
এরকম উপদেশমূলক বানী তাকে উপহার হিসেবে দিবে সে ভাবতেই পারেনি। প্রচন্ড রাগ করে ওয়াল পেপারটা ছিঁড়তে যাবে তখন পেপারটার উল্টো দিকে চোখ পড়ে তার। পেছনের সাদা অংশটুকুতে হাতের লেখা।
.
'রমাতো য়াদে টেকেপ্যা টাজগকা ছিয়েপে। ওমিআ কেমাতো সিবালোভা।'
.
লেখাটা পড়ে ফারিয়ার মাথা আরো খারাপ হয়ে যায়। কিসব আবোল-তাবোল লেখা!
সে আরেকবার লেখাটায় চোখ বুলায়। ভালো করে লেখাটা খেয়াল করে পড়ে। লেখাটা
বিভিন্নভাবে পড়ে সে। একসময় লেখাটা পড়ে হাসতে থাকে ফারিয়া। আর হাসতে হাসতে
সে বলে ওঠে, 'পাগল একটা!'