মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১২৩- ভালবাসার জয়

লিখাঃ-'হাসান'
উৎসর্গঃ'ইসরাত সামিহা সামি'

-কিরে,আসতে এত দেরি হল কি জন্য?
-আর বলিসনা।
রাস্তায় যে পরিমানে জ্যাম
এটা যদি তুই নিজ
চোখে দেখতি তাহলে একথা বলতে পারতি না।
-তুই আসতে গেলেই রাস্তায় জ্যাম
লেগে যায়,না। প্রতিদিনই এসে একই
কথা বলিস।
-আমার কথা কি তোর বিশ্বাস হয় না।
-আচ্ছা,এসব কথা বাদ দেয়।
চল আজকে কোথাও বাইরে থেকে একটু
ঘুরে আসি।
-আমার বাসায় একটু কাজ আছে।
তুই অন্য কাউকে সাথে নিয়ে ঘুরে আয়।
-অন্য কাউকে সঙ্গে নিলে তো আগেই
চলে যেতাম;তোকে ফোন দিতাম না।
-পেচাল পাড়িছ না।
আমার কাজ আছে,আমি তোর
সঙ্গে যেতে পারবও না।
-তোর এইসব ফালতু কাজের গুষ্ঠি কিলাই।
আজকে তোকে আমার সঙ্গে যেতেই
হবে।
-যদি না যাই তাহলে কি করবি।
-হাত-পা ভেঙ্গে দেব যাতে আর
আগামী তিন মাস তুই ঘর
হইতে না পারিস।তখন
বুঝবি ঘরে বসে থাকা কতটা বিরক্তিকর।
-তোর কথা শুনে আমার
বুকটা কেপে উঠছে রে।তুই মেয়ে মানুষ
হয়ে আমাকে এইরম হুমকি দিতে পারলি।
-হুম একটু আগে তো শুধু হুমকি দিছি।এখন
যদি তুই গাড়িতে না উঠস
তাইলে সেটা বাস্তবে দেখতি পাবি।
-সেটা আর করতে হবে না।
আমি গাড়িতে উঠছি।তবে বেশি সময়
ঘুরাঘুরি করতে পারবও না।
-আচ্ছা,তোর কথাই থাকবে।
এই বলে দিয়া আর আসিফ অনেকদিন পর
লং ড্রাইভে বের হয়।অবশ্য তাদের
মধ্যকার সম্পর্কটা বন্ধুর মত।
দিয়া হচ্ছে একটা উচ্চবিত্ত পরিবারের
আদরের দুলালি।অন্যদিকে আসিফ
একটা সাধারন মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে।
আসিফ আর দিয়ার পরিচয়টা হয়েছিল
তাদের ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার সময়।
দু'জনের সিটই পাশাপাশি পড়েছিল যার
কারনে তাদের মধ্যে একটি-আধটু
কথাবার্তা হয়েছিল।আর এই একটু আধটু
কথা শুধু দিয়াই বলতও আর আসিফ শুধু ওই
কথাগুলোর হ্যাঁ কিংবা না এই উত্তরটাই
দিত।অবশ্য পরীক্ষার সময় আসিফ
দিয়াকে কিছুটা হেল্প করেছিল।কারন
আসিফ অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র আর সেই
তুলনায় দিয়া তার চেয়ে অনেক
পিছিয়ে।যার দরুন
দিয়া আসিফকে এটা-ওটা জিঙ্গেস
করতও।
আর আসিফ তাকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর
বলে দিত।এভাবেই তাদের পরিচয়ের
শুরুটা হয়েছিল।
কিছুদিন পর যখন ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল
প্রকাশ পায় তখন দেখা যায়
যে,দিয়া আর আসিফ দু'জনেরই চান্স
হয়েছে।
যার সুবাধে দিয়া ভার্সিটির প্রথম দিন
থেকেই আসিফের সাথে কথা শুরু
করে দেয়। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পরই
দু'জন দুজনার খুব ভাল বন্ধুতে পরিনত হয়।
তবে এই বন্ধুত্ত্বের পিছনে দিয়ার
অবদানটাই বেশি। এর পেছনেও
একটা যৌক্তিক কারনও রয়েছে।
কারনটা হল দিয়া আসিফকে পছন্দ
করে তবে সেটা আসিফকে বলতে ভয়
পায় যদি তাদের বন্ধুত্ত্বটা নষ্ট হয়ে যায়।
অপরদিকে আসিফ দিয়াকে শুধু তার খুব
ভাল বন্ধুই মনে করে;এর বেশি কিছু নয়।আর
তার লক্ষ্য একটাই জীবনে প্রতিষ্ঠিত
হওয়ার আগে সে কখনও প্রেম-ভালবাসায়
জড়িয়ে পড়বে না।কারন সে তার
পরিচিত অনেককেই তাদের ভালবাসার
মানুষটিকে হারানোর কষ্ট নিজ
চোখে দেখেছে।আর তাই সে এখন এসব
থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে।
মাঝেমধ্যে ভুল বশতঃ কখন
যদি দিয়াকে নিয়ে ভাবতে যায়
তাহলে তার মধ্য একটাই প্রশ্ন
জাগে,দিয়ার পরিবার কি কখনও তাদের
এই ভালবাসাটাকে মেনে নিবে।যার
কারনে সে তার এই অনাগত
স্বপ্নটাকে সাথে সাথে গলাটিপে হত্যা করে।
এভাবেই চলছিল দিয়া আর আসিফের
বন্ধুত্ত্ব।তবে কিছুদিন
থেকে দিয়া চাচ্ছে সে তার মনের
কথাটা আসিফকে বলে দিতে।কিন্তু
অনেকবার
ভালবাসি কথাটা বলতে গিয়েও
মুখে আটকে যাচ্ছে। এ ব্যাপার
দিয়া হাল ছাড়ার মেয়ে নয়।তাই
তো হঠাৎ করে একদিন আসিফকে ফোন
দিয়ে কেএফসিতে আসতে বলে।আসিফ
দিয়ার কথামত কেএফসিতে আসে কিন্তু
এসে দেখতে পায় দিয়া এখনও আসে নি।
তাই সে কিছুটা অবাক হয়।
কিছুক্ষনের মধ্যেই আসিফ দেখতে পায়
দিয়া আসছে।দূর থেকেই
দিয়া আসিফের দৃষ্টি কেড়েছিল কারন
আজ নীল রঙের
শাড়িতে তাকে অপ্সরীর মত লাগছিল।
আসিফের চোখ দু'টো যেন দিয়ার
সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাচ্ছিল
তাই সে সাথে সাথে চোখ
ফিরিয়ে নিয়েছিল।
দিয়া এসে টেবিলে বসতেই আসিফ
প্রশ্ন করে,
-কিরে আজকে এই প্রথম তুই
দেরী করে আসলি।রাস্তায় কোন
সমস্যা হয়েছিল নাকি?
-না,ইচ্ছা করেই দেরীতে এসেছি।
-কেন?
-যাতে তুই বুঝতে পারিস
অপেক্ষা করতে কি পরিমান
বোরিং লাগে।
-ওওও এই ব্যাপার নাকি।
কিন্তু আমার তো মোটেও
বোরিং লাগে নি।
বরং ভালই লেগেছে।
-তুই তো একটা আস্ত গাধা।
তোর বোরিং লাগবে কি করে।
-আচ্ছা এসব বাদ দে।
আমায় কি জন্য এত
জরুরী ভিত্তিতে আসতে বললি?
-তোর সঙ্গে একটা কথা ছিলও।
-মাত্র একটা কথার জন্য তুই আমায় এতদূর
আসতে খবর দিলি।এই
একটা কথা তো ফোনেও বলতে পারতি।
-ফাইজলামি করবি না।
আর সব কথা ফোনে বলা যায় না।
-আচ্ছা,এসেই যখন
পড়েছি তাহলে বলে ফেল।
-কথাটা তুই কিভাবে নিবি,সেটাই
বুঝতে পারছি না।
-আগে কথাটা বলবি তো, তারপর দেখ
আমি কথাটা কিভাবে নেই।
-তুই রাগ করবি না তো।
-না করবও না।এখন প্লিজ
কথাটা কি সেটা বল।
-আই লাভ ইঊ,আসিফ।
-তোর মাথা ঠিক আছে।
(কিছুটা হকচকিয়ে)
-হ্যাঁ আমি বুঝেশুনেই
বলছি আমি তোকে অনেক
বেশি ভালবাসি।
-কিন্তু এটা তো সম্ভব নয়।
-কি জন্য?
-দেখ দিয়া,সমাজে তোদের অবস্থান
কোথায় আর আমাদের অবস্থায় কোথায়।
এছাড়া আমি এখনও প্রতিষ্ঠিত নই।
আর তোর বাবা কখনই আমাদের এই সম্পর্ক
মেনে নিবেন।তাই আমি চাই
না আমাদের মধ্যে কোন সম্পর্কের
সৃষ্টি হোক।
-আমি এসব শুনতে চাই না।
আমি শুধু তোকেই
ভালবাসি এবং ভালবাসবও।
-তুই পাগলামি করিস না।
এটা কখনই সম্ভব নয়।
-এটাই কি তোর শেষ কথা।
-হুম,আমি এখন যাচ্ছি।
-আচ্ছা।
আসিফ চলে যাচ্ছে আর দিয়ার
চোখে কান্নার আভাস দেখা যাচ্ছে।
নিজের ভালবাসাটা আজ
এভাবে মূল্যহীন
হয়ে যাবে এটা দিয়া বুঝতেই
পারে নি।তার চোখগুলো দিয়ে কয়েক
ফোটাঁ জল গড়িয়ে পড়ছে।
আর এদিকে আসিফ চলে যাচ্ছে ঠিকই
কিন্তু তার বুকের হাহাকারটা ক্রমশ
বেড়েই যাচ্ছে।সে নিজেই নিজের
ভাগ্যকে দোষ দিচ্ছে আর দিয়ার
কষ্টটার কথা চিন্তা করছে।
হঠাৎ করে সে কোন এক
অজানা কারনে পিছন ফিরে আবার
দিয়ার কাছে চলে যায়,আর বলে উঠে,
-আই লাভ ইঊ টু,দিয়া।
দিয়া যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস
করতে পারছিল না।আসিফের এই অদ্ভুত
ফিরে আসা দেখে সে মূর্তির মত
দাড়িয়ে আছে,আর
চিন্তা করছে সে কি এটা স্বপ্ন
দেখছে নাকি বাস্তবতা।কিন্তু পরক্ষনেই
পুনরায় আবিরের কথায় তার ভাবনায়
ছেদ পড়ে-
-এই শুনতে পাসনা কানে।
আমি তোকে অনেক ভালবাসি।
-শুনতে পেয়েছিলাম কিন্তু বিশ্বাস
হচ্ছিল না।তাই একটু দ্বিধায়
পড়ে গিয়েছিলাম।
-এখন কি বিশ্বাস হচ্ছে।
-হুম হচ্ছে।
আমার হাতটা কি সারাজীবনের জন্য
ধরে রাখতে পারবি।
-হ্যাঁ সারাজীবনের
জন্যি তোকে আমার আপন করে রাখবও।
-এইতো আমার লক্ষী বাবুটি।(কান্নাজ
ড়িত কন্ঠে)
দিয়া আর আসিফ
কেএফসি থেকে বেরিয়ে রাস্তায়
হেটে যাচ্ছে।একজনের হাতের
সাথে আরেকজনের হাত খুব শক্ত
করে ধরা।আর দু'জন
হেটে যাচ্ছে উদ্দেশ্যহীন পথে।এই নব্য
গঠিত তরুন প্রেমিক যুগলকে অসাধারন
লাগছে।তাদের এই ভালবাসার পথ যেন
কখনও শেষ না হয়।তারা যেন সারাজীবন
এভাবে ভালবাসার
পথে হাটতে পারে এবং সমস্ত
প্রতিকূলতা কাটিয়ে তাদের
ভালবাসাটাকে সার্থক
করতে পারে এই প্রত্যাশাই করি।
সামাজিক বৈষম্য,দূর্বলচিত্তের
মানসিকতা,প্রতিকূলতা এবং অর্থ-সম্পদ
অনেক সময় প্রাচীরের মত
বাধা হয়ে ভালবাসার সামনে দাড়াঁয়।
আর প্রেমিককে প্রাচীর দেখে ভয়
পেলে চলবে না অবশ্যই এই প্রাচীর
টপকানোর মানসিকতা ওবং সাহস বজায়
রাখতে হবে তাহলেই
ভালবাসাটাকে চিরজীবনের জন্য আপন
করে পাওয়া সম্ভব।কারন কথায়
আছে না-"কষ্ট করলে কেষ্ট মিলে"।