লিখাঃ মহাকালের সৈনিক...
আবির এবং অর্না বসে আছে পার্কের ৪৮নম্বর হিজল গাছের নিচের
বেঞ্চটিতে ।সপ্তাহের শনিবার সকালে এবং বৃহস্পতিবার
বিকেলে তারা এখানেই দেখা করে । প্রতিবারের মত আজও তারা বসে আছে ।
অন্যদিনকার মত আজ আর আবিরের মুখে কথার খই ফুটছে না ।আবিরের
জীবনে সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে চুপ হয়ে বসে থাকা ।তবে আজ তার তাই
করতে হচ্ছে....
মিনিট পাঁচেক পর অর্না উঠে চলে যাচ্ছে ।আবির
জানে অর্না উঠে চলে যাচ্ছে ।তবু তাকে আটকানোর মত কোন
চেষ্টা সে করলো না সে ।আর করবেই বা কিভাবে ,অর্না যে নতুন মৌচাকের
সন্ধান পেয়েছে ।অর্নার মত মৌমাছিদের আটকানোর সাধ্য
আবিরের মত সাধারণ ছেলের যে নেই....
.
কিছুক্ষণ আগে...
অর্না > দেখো আবির ,তোমার সাথে রিলেশন কনটিনিউ করা আর আমার পক্ষে সম্ভবপর হচ্ছে না ।
.
আবির >ফাজলামো করছো কেন এমন ??
.
অর্না >তুমি কে যে আমি তোমার
সাথে ফাজলামো করবো ??
.
আবির >কি বলতে চাচ্ছো অর্না ?
.
অর্না >আবির শোনো তোমার মত পাঁচ দশ
টাকার ছেলের সাথে এই অর্না প্রেম করে না ,বুঝছো ??তোমার কি আছে ?
তোমার কিছুই নেই ।কিন্তু আমার বাবার গাড়ী আছে ।এত সুন্দর চেহারা আছে ।
তোমার সাথে আমার মানায় না আবির।তাই ভাবছি তোমার সাথে আমি আর
নেই । আমি তৌসিফকে পেয়েছি ,তৌসিফ অনেক ভাল একটা ছেলে ।তার বাবার
অনেক টাকা আছে....
.
আবির >আমার অনেক সুন্দর একটা মন আছে ,যে মন দিয়ে তোমাকে আমি অনেক
ভালবাসতে পারি...
.
অর্না >আরে ধুরর... রাখ তোর ভালবাসা । ভালবাসা ধুয়ে পানি খাবো নাকি ?
জীবনে একটা ডায়েরি ছাড়া আর কিছু দিতে পারছিস তুই ?সবসময়
দেখা করতি এই পার্কে ।প্রতিদিন বাদাম খেতে খেতে আমার
চাপা ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে ।আজ থেকে তুই অর্না নামের কাউকে চিনিস
না ।ফোন দিবিনা একদম ।আর যদি ফোন দিস অথবা কোনরুপ যোগাযোগ করার
চেষ্টা করিস তবে তোকে ইভটিজিং এর কেসে ফাসিয়ে দিবো...
আবির >অর্না প্লিজ...
অর্না >ঐ মাদার ফা...তোর এই বাস্টার্ড মুখে আমার নাম শুনতে ঘেন্না লাগে ।
এক কাপ কফি খাওয়ানোর যার পয়সা নেই সে আবার আসছে প্রেম করতে !!!
অর্না চলে যাওয়ার পর একঘন্টা চলে গিয়েছে ।পার্ক থেকেও কবুতরের জোড়ারা চলে যাচ্ছে ।নদীর নৌকাগুলোও ঘাটে চলে আসছে । ঝি ঝি পোকারাও ঝি ঝি করা শুরু
করে দিয়েছে ।কিন্তু আবির.!আবির , আগের জায়গাতেই স্থির হয়ে বসে আছে ।
পার্কটা আস্তে আস্তে খালি হয়ে যাচ্ছে । পার্কে এক দিনে দুই পার্টি কাজ করে ।
দিনের বেলা সাধারণ মানুষ আর রাতের বেলা অসাধারণ মানুষ...এই
অসাধারণ মানুষগুলোর দলে রয়েছে হাইজ্যাকার ,নেশাখোর
আর পতিতারা ।তারা নিশাচর প্রাণী । দিনের বেলা যারা সাধারণ মানুষের
সাথে মিশে থাকে...
হঠাৎ আবিরের মাথায় পিছন থেকে কে যেন টোকা দিল ।আবির
ভেবেছিল হাইজ্যাকার ।কিন্তু পিছনে তাকিয়ে দেখলো পরীর মত সুন্দরী একটা মেয়ে...
~ভাইয়া আমি কি আপনার সাথে কিছুক্ষণ বসতে পারি !
~হুমম পারেন...[ আবির মনে মনে ভাবছে হাইজ্যাকার নয়তো ?
আর থাকলেই বা সমস্যা কি ।তার কাছে আছেই মাত্র দুই টাকা আর
১০৯৯টাকা দিয়ে কেনা একবছর আগের হাওয়াই মোবাইল ।কিন্তু
যদি পতিতা হয় ?আরে ধুর পতিতারা আমাকে দিয়ে কি করবে ।দুই টাকা তো তাদের হাত ধরতেই
লাগবে !!! ]
~ভাইয়া ,আমি জানি আপনি আমাকে নিয়ে কি ভাবছেন।আমি পতিতা বা হাইজ্যাকার নই। আমি শ্রাবণের ঝড়া পাতা....
~ও আচ্ছা..
~আপনি কি আপসেট ??
~নাহ্ ! আপনাকে কে বললো !
~আমি জানি ।আমি সব জানি ।
~আমার সাথে মজা করছেন কেন ?আর কেনই বা এত রাত্রে আপনি এখানে ?
~আমি মোটেও মজা নিচ্ছি না ।আপনার সাথে অর্নার ব্রেকআপ হয়েছে তাই আপনার মন খারাপ বলে আপনি এখানে বসে আছেন তাই না ??
~কিভাবে জানলেন ???
...সাথে সাথে আকাশ বাতাস কম্পিত করে একটা হাসি দিলো মেয়েটা..
~আমি কি হাসার মত কিছু বলেছি ?
~অবশ্যই ভাইয়া ।
~কেন ?
~সেটা আমার পরিচয় শুনলেই জানতে পারবেন ।
~তাহলে শুনি আপনার পরিচয় ?
~সত্যি শুনবেন ??সত্যি আপনি আমার সাথে একটু গল্প করবেন ?
~হুমম..আমার আজ হারানোর কিছু নেই । অফুরন্ত সময় আমার ।আপনি বলুন...
~আমি হচ্ছি শ্রাবণী ।দেশের নামকরা একটি বেসরকারি ভার্সিটির ছাত্রী ছিলাম আমি ।
দেখতে শুনতে ছিলাম খুবই সুন্দরী আর বাবা মার একমাত্র মেয়ে হওয়াতে ছিলাম খুবই আহ্লাদী । আমার বাবার ছিলো অঢেল সম্পত্তি । খুবই সুন্দরী আর ধনীর দুলালী হওয়াতে বান্ধবীদের সাথে বাজি ধরে ছেলে পটাতাম আমি ।আমার প্রেমিকের লিস্টে আমার
চেয়ে দুই বছরের জুনিয়র ছেলে থেকে শুরু করে আমার মামার বন্ধুও ছিল...সারাদিন
ছেলেদের বাইকের পিছনে বসে ঘুরতাম আর সারা রাত পাঁচটা সিম দিয়ে অনবরত
কথা বলতাম ।একদিন রাতে আমার এক বয়ফ্রেন্ড যে আমাকে সত্যি খুব
ভালবাসতো সে ফোন করে তার ফ্ল্যাটে যেতে বলে ।আমিও বান্ধবীর বাসায় থাকার অজুহাতে গেলাম সেখানে...
~তারপর ?
~আমাকে আটজনে মিলে গণধর্ষণ করলো আর আমাকে হত্যা করলো তারা ।
আমাকে কেটে ১০৮টুকরা করে বস্তাবন্দী করে নদীতে ফেলে দিল...
~মানে ?গাঁজা খেয়েছেন ?
~বিশ্বাস হচ্ছে না ??তবে দেখেন... বলেই অদৃশ্য হয়ে গেল মেয়েটা....
মার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো আবিরের । এই দুঃস্বপ্নটা প্রায় প্রতিদিনই দেখে এখন আবির...
~বাজে বিকেল পাঁচটা আর এখনও তুই ঘুমাচ্ছিস ??আর এভাবে ঘামছিস কেন ?
~আর বল না মা ।একটা দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম...
~আচ্ছা আচ্ছা ।উঠ এখন । তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয় ।এখনই বেরুতে হবে আমাদের....
সাই সাই করে ছুটে চলেছে আবিরদের গাড়ি ।গন্তব্য পাত্রীর বাসা... আজ তিনদিন যাবৎ এই একই স্বপ্ন দেখছে আবির ।গাড়িতে বসে এই
প্রশ্নের উত্তরই খুজছে সে ।তবে কোন উত্তর খুজে পাচ্ছে না ।কারণ আবির
অর্না নামের কোন মেয়েকেই চিনতো না ।আর শ্রাবণী নামের ভূতটাকে তো নয়ই....
___কিছুক্ষণের মাঝেই তারা পাত্রীর বাসায় পৌছে গেল ।মিনিট পাঁচেক পরে ইয়া লম্বা ঘোমটা দিয়ে আসলো মেয়েটা । মেয়েটার ঘোমটা সরিয়ে দিলো মেয়ের খালা...
মেয়েটা খুবই সুন্দরী ।সবাই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়েটার
দিকে ।আবিরকে দেখেই মেয়েটা মুচকি একটা হাসি দিল ।তার
হাসির ধরন দেখে মনে হচ্ছে কতদিনের পরিচিত তারা দুজন...আর আবির থ
হয়ে তাকিয়ে আছে ।কারণ মেয়েটি যে তার স্বপ্নের
শ্রাবণী ,শ্রাবণের ঝড়া পাতা..!!!