বছর ১২-১৪ আগের এই ঘটনা। আমরা, অর্থাৎ আমি,
আমার স্ত্রী নীলা আর আমার মেয়ে রুচিকা, এক
শিতের ছুটিতে বেড়াতে গিয়েছিলাম দার্জিলিং। এক
সপ্তাহের ছুটি কাটিয়ে আমরা নেমে আসছিলাম
শিলিগুড়ির দিকে। পাহারের কোল ঘেঁসে আমাদের
গাড়ি দ্রুত নেমে চলেছে সরু পাহাড়ি রাস্তা ধরে।
রাস্তার পাশে পাহারের ঢাল ধরে শালবন আর তার
মধ্যে মধ্যে ছোট ছোট শহর, গ্রাম আর
চা বাগানের এস্টেট। গারির নেপালি চালক বাহাদুর সিং নিপুণ
হাতে আমাদের গাড়ি দুর্গম
রাস্তা দিয়ে নিয়ে চলেছেন।
আমরা দার্জিলিং থেকে দুপুরের
খাওয়া শেরে বেরিয়েছি। পথ চলতে ৩ ঘনটার
বেশি লাগবে না – বিকেল ৪টের
মধ্যে শিলিগুড়িতে পৌঁছে যাওয়া উচিত।
বাহাদুরের পাশে সিটে বসে আমি পথের
শোভা উপভোগ করে চলেছি। গারির
ঘড়িতে তখন বাজে ৪টে।রাস্তায়ে একটু
আগে দেখলাম আমাদের সামনে অন্য
গারি গুলো আটকে গেছে। গাড়ি থামিয়ে খোঁজ
নিয়ে জানা গেল যে ধ্বস
নেমে সামনে রাস্তা বন্ধ হয়েছে। সৈনিক
বাহিনীর লোক লাগিয়ে পথ পরিষ্কার করার কাজ শুরু
হয়েছে, কিন্তু ষে কাজ কতক্ষণ লাগবে কেউ
তা সঠিক জানে না।বাহাদুর আর নীলার সাথে পরামর্শ
করে ঠিক করলাম
যে আমরা গাড়ি ঘুরিয়ে পিছনে ফেলে আশা মকাই-
বারির দিকে ফিরে জাব। সেই পথে আসতে কিচ্ছু
চা বাগানের বাংলো নজরে পড়েছিল। আমরা ঠিক
করলাম যে আজ রাতটা চা বাগানের ডাক
বাংলোয়ে কাটিয়ে পরের দিন সকাল বেলা ফের
রওনা হব।
অল্প রাস্তা আবার গাড়ি চলল পাহাড় বেয়ে উপর
দিকে। মকাই বারি থেকে কিছু
আগে একটা ছোটো এস্টেট দেখে আমাদের
গাড়ি বড় রাস্তা ছেরে কাচা রাস্তা ধরল। চা বাগানের
ভিতর দিয়ে অল্প দূর এগতেই চোখে পরল কিছু
অফিস বারি – একটু পৃথক একটা সুন্দর এবং বেশ
পুরনো কাঠের বাংলো বাড়ি।
বাংলোটা জমি থেকে অল্প উঁচুতে, যেরকম
পাহাড়ি অঞ্চলের বাড়ি হয়ে। চার পাশ
ঘিরে চওড়া বারান্দা রয়েছে। বারিটার মাথাতে টালির ছাদ,
এক কালে হয়ত লাল রঙ ছিল, এখন অনেক
জায়গাতে শ্যাওলা পরে গেছে। ছাদের
মাঝা মাঝি একটা পুরনো পাথরের চিমনি উঠে গেছে,
যেটা দিয়ে অল্প ধুয়ও বেরচ্ছে। বারির
পেছনে একটা ছোটো বাগান দেখতে পেলাম।
তার তিন ধার পাহাড়ি ঝোপ দিয়ে ঘেরা।
বুঝতে অসুবিধে হয় না যে এই বাংলোটি ভালই
দেখা শুনা হয়। আমরা গাড়ি থেকে নামতেই
দেখলাম এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক বারির সামনের
বারান্দা থেকে নেমে এসেছেন। তার
সাথে আলাপ করে জানলাম তিনি এখানকার
কেয়ারটেকার – নাম হরিনাথ বাবু। তিনে জানালেন
যে ঘরটি আপাতত খালি আছে এবং আমরা এক রাতের
জন্য সেখানে থাকতে পারি। গাড়ি থেকে মালপত্র
নামিয়ে আমরা বাড়িটাতে প্রবেশ করলাম। বারির
ভেতরটা পুরনো ধাঁচে সাহেবি কায়দায়ে সাজানো।
ঢুকে বসবার ঘর এবং খাবার ঘর দুটোই বেশ বড়।
সঙ্গে লাগোয়া রান্নার ঘর আর এক
পাশে দুইটা শোবার ঘর।বসবার ঘর
থেকে পেছনের বারান্দায়ে বেরনোর
জরা কাচের দরজা।ঘরের আসবাব পত্র
দেখে বেশ অনুমান করা যায় যে এই
বাড়ি যিনি বানিয়েছিলেন তিনি ছিলেন শৌখিন রুচির মানুষ।
বারান্দায়ে বসে সূর্য ডোবা দেখতে লাগলাম
আমরা আমাদের জিনিসপত্র শোবার
ঘরে তুলে পেছনের বারান্দাতে একটা বেতের
সোফা সেটে গিয়ে বসলাম।হরি বাবু চায়ের
আয়োজন করেছেন। পাহাড়ি এলাকায়ে অন্ধকার চট
করে পরে যায়। আমরা সেই বারান্দায়ে বসে সূর্য
ডোবা দেখতে লাগলাম। সামনে ছোট্ট সুন্দর
সাজানো বাগান।বাগানের চার পাশে অনেক রকম
ফুলের গাছ। মাঝখানে একটা পুরনো পাথরের
ফোয়ারা – সেটা থেকে অনেক দিন জল
বেরনো বন্ধ হয়ে গিয়েছে মনে হল।
একটা সরু পাথর বাধানো পায়ে চলার পথ
বারান্দা থেকে নেমে এই ফোয়ারা প্রদক্ষিণ
করে বাগানের পেছন দিকে ঘুরে গেছে।
বাগানের তিন দিক পাহাড়ি ঝোপ দিয়ে ঘেরা। ঝপের
ওই ধারে চা বাগান শুরু। যত দূর চোখ যায় পাহারের ঢাল
ধরে সবুজ চা গাছের বাগান বহু দূরে কালচে নীল
তেরাই শালবনের সাথে মিশে গেছে।
চা খেয়ে আমরা বাগানের পথটা দিয়ে অল্প এগলাম।
পাথরের ফোয়ারাটা পার
হয়ে পথটা বেকে গেছে একটা গন্ধরাজ
কাঠগোলাপ গাছের গাঁ ঘেঁষে। সেই
দিক্টায়ে দেখি রুচিকা পথের ধারে দারিয়ে কিছু যেন
মন দিয়ে দেখছে।
কাছে গিয়ে দেখি একটা ছোটো সমাধি।
সমাধিতে তিনটে কবর। প্রায়
গাছগাছড়ায়ে ঢেকে গেছে। নজর করে পাথরের
গায়ে খোদাই করা লেখা পরলাম।
In Memory of Mary Anne Stuart (1926 -1960)
Rebbecca Stuart (1950- ) Charles Stuart
(1921-1960) R.I.P.
বুঝতে অসুবিধে হল না, যে এরা সবাই
একটা পরিবারের। বোধহয়ে বাবা, মা, মেয়ে –
মনে প্রশ্ন জাগল – রেবেকার কবরের গায়ে শুধু
জন্ম তারিখটাই দেওয়া আছে কেন? মনটা খারাপ
হয়ে গেল, দূর বিদেশে তাদের জীবন
কাহিনীর সমাপ্তি হয়েছে অল্প সময়ের
ব্যবধানে মাত্র এক বছরের মধ্যে। এক
অচেনা অজানা ছায়া নেমে এলো আমার মনে।
এদিকে সূর্য অস্ত গেছে পশ্চিমের পাহারের
পিছনে। দিনের আল
ফুরিয়ে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। আমরা আবার
বাংলোর ভিতর ফিরে এলাম।
রাতের খাবারের বেশ ভালই আয়োজন
করেছিলেন হরি বাবু। মুরগির ঝোল দিয়ে ভাত
খেয়ে আমরা ফায়ার প্লেসের সামনে বসে গল্প
করলাম কিছুক্ষণ। হরি-বাবুও যোগ দিলেন আমাদের
সাথে। বাহাদুর সিং তার খাবার নিয়ে আগেই
চলে গেছে – ষে রাতে গড়িতেয়ই শোবে।
কিছু পরে রুচিকা একটা গল্পের বই নিয়ে নিজের
ঘরে শুতে চলে গেল। রুচিকার বয়স তখন দশ।
এখানে পউছন থেকে ওকে খুব চুপচাপ
মনে হচ্ছে। যেন কিছু চিন্তা করছে। একটু
পরে নীলা হাই তুলে উঠে পরল। নীলা যাবার পর
আমি হরি-বাবুর সাথে কিছুক্ষণ গল্প করলাম। তার
থেকেই জানতে পারলাম বাগানে দেখা সমাধির
ইতিহাস।
দেশ স্বাধীন হবার পরেও বাগানের মালিকানা ছিল
সাহেবি হাতে। ১৯৫০ শালে এই বাগানের ম্যানেজার
হয়ে আসেন চার্লস স্টুয়ারট তার সঙ্গে আসেন
নতুন মেমসাহেব পত্নী মেরি অ্যান। আসার এক
বছরের মধ্যেই তাদের এক সন্তান হয়ে। এই
বাগানেই জন্মায়ে ফুটফুটে মেয়ে রেবেকা। তার
পরের কয়েক বছর খুব সুখে কাটে এই ছোট তিন
জনের পরিবার। ছোট রেবেকা বেরে ওঠে ওই
বাগানে। বাগানের সবাই তাকে স্নেহের
চোখে দেখে। বাবা মার ষে চোখের মনি।
একটা ছোটো সমাধি
তবে প্রকৃতির নিয়ম – কোন কিছুই চির স্থায়ী নয়।
এই সুন্দর সংসার ও এই নিয়মের গণ্ডি রেখায়
সীমা বধ্য। এক দিনের ঘটনা এই
ছোটো পরিবারের শান্তির পটচিত্র ছিরে দিল।
রেবেকার ছিল দুরন্ত ডানপিটে স্বভাব – একাই
বেরিয়ে ঘুরত চা বাগানে ঘোড়ায়ে চেপে। এক
দিন দুপুর বেলায়ে রোজের
মতো ষে ঘোড়ার পিঠে ঘুরতে বেরাল।
ঘণ্টা খানেক পরে তার ঘোড়া ফিরে এল কিন্তু
রেবেকা ফিরল না। সাহেব দল বল
নিয়ে কানায়ে কানায়ে পাহাড় জঙ্গল তল পার
করে খুঁজলেন, কিন্তু কোন লাভ হল না।
রেবেকা কে আর কোন দিন কেউ খুঁজে পেল
না। ওই বাগানের কোনাতেই রেবেকার
স্মৃতিতে একটা সমাধি বানালেন সাহেব।এই
ধাক্কা মেরি-আয়ন সামাল দিতে পারলেন না।
রেবেকা কে হারানোর পরেই
তিনি শোকে শয্যাশায়ী হয়ে পরলেন।
ধীরে ধীরে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকল।
কলকাতা থেকে ডাক্তার আনিয়েও
তাকে বাঁচাতে পারলেন না সাহেব। শেষ পর্যন্ত
সবাই বুঝতে পেরেছিল মেমসাহেবের কষ্ট
শরীরের নয় মনের। এক দিন
রাতে শুতে গিয়ে সকাল বেলা তার আর ঘুম ভাঙল না।
রেবেকার সমাধির পাশেই নিজের স্থান
করে নিলেন মেরি অ্যান।
এর পরে চার্লস সাহেবের মধ্যে একটা পরিবর্তন
নজর করলে সকলে। যে লোকটা সবার
সাথে হেসে কথা বলত, জাকে সব বন্ধু রা ভালবাসত,
যাকে তার কর্মচারীরা শ্রদ্ধা করত, সেই
মানুষটা রাতারাতি পাল্টে গেল। রোজ দুপুরের পর
থেকেই মদ খেতে শুরু করলেন।
লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ
করে দিলেন একদম। বাগানের লোক ও বাড়ির
কাজের লোকেরা দেখলো যে সাহেবের
চোখে মুখে একটা কালো ছায়া নেমে এসেছে।
সন্ধ্যার পর থেকে তিনে বসে থাকতে শুরু
করলেন বাগানের দিকে মুখ করে পেছনের
বারান্দায়ে। নিজের আর মদের গ্লাস নিয়ে নিজেই
নিজের সঙ্গে কথা বলতেন।
লোকে তাকে ভয়ে পেতে শুরু করল। এরকম
বেশি দিন চলল না। একদিন ভরে গুলির আওয়াজ
শুনে ছুটে বেরিয়ে এল মালী আর রান্নার
লোক। তারা দেখলও সাহেব নিজের যাওয়ার
সময়ে নিজেই বেছে নিয়েছেন।বারান্দায়ে তার
লাশ পরে আছে। নিজের পিস্তলের গুলিতেই
নিজের প্রাণ নিয়েছেন চার্লস স্টুয়ারট।
রাত দশটা নাগাদ শুতে গেলাম। বাইরে অল্প বৃষ্টি শুরু
হয়েছে। ঘরে দেখি নীলা গভীর নিদ্রায়ে –
আমি তার পাশে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুলাম। বেশ
শীত, সারা দিনের খাটা খাটনির পর সহজেই
ঘুমিয়ে পরলাম।
ঠিক কখন বা কেন ঘুম ভাঙল বলতে পারব না। কিন্তু
একটা সময়ে আমি সজাগ। পর্দার ফাঁক
দিয়ে ঘরটায়ে অল্প চাঁদের আলো ঢুকছে।
বুঝতে পারলাম বৃষ্টি থেমে গেছে। পাশে টের
পেলাম নীলা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আমার
মনে হল যেন বসবার ঘর থেকে আমি কিছু আওয়াজ
শুনতে পাচ্ছি। বিছানা ছেড়ে উঠে পরলাম –
দরজা পেরিয়ে গেলাম বসবার ঘরে। ষে ঘর তখন
নিঝুম – ফায়ার প্লেসের আগুন নিভে ছাই
হয়ে গেছে। ঘরের ভেতরটাতে জ্যোৎস্নার
আলো পরেছে। বারান্দার দরজা হাট করে খোলা।
খটকা লাগল – তাহলে কি শোবার আগে হরিনাথ বাবু
বন্ধ করতে ভুলে গেছেন? দরজাটা বন্ধ
করতে যাব, তখন দেখলাম রুচিকার ঘরের দরজাটাও
ভেজানো নয়। অল্প হাওয়াতে সেটা সামান্য
খুলে গেছে। তার দরজা বন্ধ করতে গিয়ে আমার
নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে এলো। আমি দেখলাম
রুচিকার বিছানা খালি।
একটা পুরনো পাথরের ফোয়ারা
মুহুর্তের জন্য একটা বরফের ছুরি আমার
বুকটা চিরে দিল।
তারপরে নিজেকে সামলে নিয়ে আমি বেরিয়ে এলাম
পিছনের বারান্দায়ে। বাগানে চারিদিক নিস্তভধ –
জ্যোৎস্নার সাদা আলোতে সব কিছু পরিষ্কার
দেখা যাচ্ছে। ওই মাঝরাতে সেই বাংলর
বাগানে আমি রুচিকাকে দেখলাম।
রুচিকা বসে আছে পাথরের ফোয়ারাটার পাশে।
ষে একা নয় – ওর পাশে বসা ওরই বয়সী এক
ছোটো মেমসাহেব কন্যা। আমার বুকের
ভেতর জমা বরফটা চূর্ণ হয়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল।
আমি ছুটে গিয়ে রুচিকাকে নিয়ে আস্তে চাইলাম,
কিন্তু আমার সারা শরীর যেন অসার। টের পেলাম
আমার পিছনে কেউ আছে – নাকে একটা চুরুটের
গন্ধ এলো। ঘুরে তাকিয়ে দেখি বারান্দার
কোনায়ে বেতের চেয়ারে বসা এক সাহেব।
আঙ্গুলের ফাকে চুরুট, সামনে টেবিলে মদের
বোতল। স্থির চোখে আমার
দিকে চেয়ে আছেন। হাতের ইশারায়ে আমায়
ডাকলেন। আমি মন্ত্র মুগ্ধের
মতো এগিয়ে গেলাম। বসলাম তার পাশের সাফায়।
একটু হেসে ষে বললে, “ওদের এখন
ডেকো না, একটু খেলতে দাও। আমার
মেয়েটা বড় একা”।
চুরুটের ধোয়ার গন্ধে আমার মাথা ঘুরতে থাকল।
চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে গেল।
যখন আমার জ্ঞান ফিরল তখন সকাল। হরি বাবু
আমাকে ঝাঁকাচ্ছেন।
“আরে আপনি তো মশাই
চিন্তায়ে ফেলে দিয়েছিলেন – ঠিক আছেন
তো”? আমার তখন ঘোর কাটেনি, উত্তর
দিতে পারলাম না। “সারা রাত এই বারান্দায়ে কাটালেন
বুঝি – এরকম করে আপনার ঠাণ্ডা লেগে যাবে”
বেশ করা শুরে আমায়ে শোনাতে শুরু করলেন
হরি বাবু।
আমার গত কাল রাতের সব কথা মনে পরে গেল।
হরি বাবুকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম –
“রুচিকা কথায়ে”? ছুটে গেলাম রুচিকার ঘরে, ওর
ঘরের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম। রুচিকা ওর
বিছানায়ে শুয়ে ঘুমচ্ছে। সব কিচ্ছু মাথার ভেতর
গণ্ডগোল হয়ে গেল। কাল রাতে কি আমি পুরটাই
স্বপ্ন দেখেছি।
এর পর আর গল্প বিশেষ বলার নেই। বাহাদুর
সিং এসে খবর দিল রাস্তা পরিষ্কার হয়ে গেছে।
সকালের খাওয়া সেরে, মালপত্র
গাড়িতে তুলে আমারা যাত্রার প্রস্তুতি করছি।
আম্বাসেডরের বুটে মাল ঢুকিয়ে আমি হরি বাবুর
সাথে হিসাব সারছি। রশিদ বানিয়ে দেবার
সময়ে বললেন – ” আশা করি আপনাদের
বাকি যাত্রা শুভ হোক, আপনারা নিরাপদে ঘরে পৌঁছান”।
তার পর অল্প থেমে একবার আমার চোখের
দিকে ধীর দৃশটিতে তাকিয়ে বাকিটা – “ছোট
দিদিমণি বড় মিষ্টি – আপনারা ওকে সামলিয়ে রাখবেন,
কারো নজর না লেগে যায়”। এ কথার কোনও জবাব
দিতে পারলাম না।
বাংলো থেকে বেরিয়ে গাড়িতে বাহাদুর সিং এর
পাশে বসলাম। গারি স্টার্ট দিল জলপাইগুড়ির পথে।
এই শেষ যাত্রাটুকু আমরা সকলেই চুপচাপ।
পিছনে রুচিকা ওই বইটার মধ্যে ডুবে আছে।
নীলা বাইরের রাস্তা দেখছে। গারি ঠিক
জলপাইগুড়ি ঢোকার আগে নীলা পেছন
থেকে বলল – “তুমি কি আবার সিগারেট খাওয়া শুরু
করেছো ? তোমার কাল রাতের জামাতে ভীষণ
চুরুটের গন্ধ পেলাম” ।