হিজরী তৃতীয় সনে মুশরিকদের সাথে সংঘটিত হয় উহুদের যুদ্ধ। তীরন্দাজ বাহিনীর ভুলের কারণে মুসলিমবাহিনী চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন। খালেদের আক্রমণে মুসলমানেরা দিশেহারা। ৭০ জন মুসলিম বীরশাহাদাত বরণ করেছেন। শহীদ হয়েছেন রাসূলের চাচা হযরত হামজা (রা)। যাঁর লাশ ৮০টি টুকরায়বিভক্ত করা হয়েছে। অনেকে পালাচ্ছিল, ইবনে কিমিয়ার তীরের আঘাতে রাসূলুল্লাহ (সা) এর দান্দানমুবারক শহীদ হলো। লোহার টুপি ভেদ করে তীর রাসূলের মস্তক মুবারকে ঢুকে পড়েছে। কসওয়া থেকেনবীজি (সা) গড়িয়ে পড়ে গেলেন। যুদ্ধের মাঠে আওয়াজ উঠলো মুহাম্মদ (সা) শহীদ হয়ে গেছেন।
যে ১০/১২ জন বীর সাহাবী অটল ও অবিচল হয়ে রাসূল (সা) কে ঘিরে রেখেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতমছিলেন হযরত তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা)। হযরত আবী দোজানা (রা) তীরের বৃষ্টির মধ্যে রাসূল (সা)কে বুকের ভিতর নিয়ে উপুড় হয়ে পড়ে রইলেন। তীরের বৃষ্টির মধ্যেও স্বীয় বক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহকেছাড়েননি।
আর হযরত তালহা (রা) উন্মাদ হয়ে রাসূল (সা) এর দিকে নিক্ষিপ্ত তীরগুলোকে নিজ পিঠে ধারণ করতেছিলেন যেন রাসূলকে স্পর্শ করতে না পারে, আর কঠিনভাবে শত্রুদের প্রতিহত করতে ছিলেন। অসহ্যঅবস্থায় নিজেকে বলছিলেন, "হে তালহা! আমি কি আমার রক্ত, গোশত ও জীবনকে রাসূলের জন্যওয়াক্্ফ করে দেইনি?"
অতঃপর হযরত আলী এগিয়ে এসে শত্রুদের উপর বেরহম আক্রমণ শুরু করলে তারা নবীজি (সা) কেআহত রেখে পিছু হটে গেল। শেষে হযরত তালহা রাসূল (সা) কে নিজের কাঁধে বহন করে পাহাড়েরপাদদেশে নিয়ে রাখলেন।
ইতোমধ্যে আবু বকর (রা) রাসূলকে খেদমত করতে দৌঁড়ে আসলে নবীজি (সা) বললেন, "আমাকে নয়,তোমরা তালহাকে দেখ।" আবু বকর (রা) বলেন, "আমি দেখি হযরত তালহা একটি গর্তে রক্তাক্ত অবস্থায়পড়ে আছেন। একটি হাতের সমস্ত আঙ্গুল নেই, সারা শরীর তীর নেজার আঘাতে জর্জরিত।"
রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, "যদি কেউ কোন মৃত ব্যক্তিকে পৃথিবীতে হেঁটে বেড়াতে দেখতেচাও তবে ঐ তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহকে দেখ।"