আজ বউ আমাকে ছেড়ে তার বাপের বাড়ি চলে গেছে। অপরাধ কিছুই
না তেমন সামান্য জিনিস নিয়েই ঝগড়া আর কি। এই মেয়েটা এত
অভিমানি কেন বুঝি না। বিয়ের আগে যখন দেখা করতে দেরি হত তখন ই শুরু
হয়ে যেত অভিমান। একদিন দেরি করে দেখা করলাম। জেরিন বলল
-এই দেরি করলে কেন?
-আমার কি কাজ নাই? দেরি তো হতেই পারে।
-তোমার কি কাজ আমি জানি। সারাদিন ঘুমানো।
-কি বললে তুমি? ঘুমানো?
-তুমি আমার সাথে কথা বলবে না।
-কেন?
-তুমি আমা সাথে যোগাযোগ করবে না।তুমি একটা মিথ্যেবাদী।
-আচ্ছা যাও যাও যোগাযোগ করবো না। রেগে বাড়িতে চলে আসলাম। যাল একটা ঝামেলা থেকে বাঁচলাম। কিন্তু বাড়িতে আসার পরে খারাপ লাগলো। কেন এমন করলাম। এর আগে অনেকবার এমন হয়েছে। জেরিন নিজে থেকেই আমার রাগ ভাঙিয়েছে।আমার আমিও অনেকবার রাগ ভাঙাইছি। কিন্তু এবারে ফোন করবো না।
কিন্তু বাড়িতে এসে খারাপ লাগলো। ভাবলাম নিজে থেকেই ফোন
করবে কিন্তু অনেক সময় হলেও ফোন করলো না।
.
একটু পরে মায়ের ফোন বেজে উঠলো। মা রান্না করছিল। মা বলল
-রাব্বি।ফোনটা ধর।
-আমি পারবো না। তোমার ফোন তুমি ধরো গিয়ে।
-আরে বাপ। ফোনটা ধরলে কি হয়?
আমি রান্না করছি ফোনটা ধর। মা আমাকে বাপ বলে ডাকছে। তাই
যেতেই হবে। গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে আমি নিজেই
অবাক হলাম। কারন নাম্বারটা জেরিনের। আমি মনে ভাবলাম একটু অভিনয় করি।
তাই ফোণোটা হাতে নিয়ে মেয়ে মানুষের কন্ঠে কথা বললাম।
-হ্যালো।
-হ্যালো কেমন আছেন আন্টি?
-জি ভালো।তুমি কেমন আছো? তোমাদের বাড়ির সবাই কেমন আছে?
-জি ভালো আছি। বাড়ির সবাই ও ভাল আছে। আপনার কন্ঠ এমন শোনা যাচ্ছে কেন?
-না এমনি। কি মনে করে ফোন করলে?
-রাব্বি আছে বাড়িতে?
-কেন? রাব্বিকে দিয়ে কি করবে?
-ওর সাথে একটু কথা ছিল তো। তাই কথা বলতে চাচ্ছি।
-ওর ফোন এ কল দাও।
-ওর সাথে রাগারাগি হয়েছে। তাই ওর সাথে কথা বলতে চাচ্ছি না।
-রাগারাগি হয়েছে কেন?
-এমনি হয়েছে। আসলে ওর জন্য আমার খারাপ লাগছে। ওর কাছে একটু দিন। কথা বলবো।
-তবে নামি আমার সাথে কথা বলবে না?(আসল কন্ঠে)
-তুমি?
-হ্যা।আমি এতক্ষণ আমি কথা বললাম।
-তুমি ফোন ধরেছ কেন?আমি তোমার সাথে কথা বলবো না।
-একটু আগে তো আমার জন্য খারাপ লাগছিল। আমার সাথে কথা বলতে চাইলে।
-তখন এমনি বলেছি। কথা বলবো না।
-কথা বলতেই হবে। একটু পরে মা এসে বলল
-কার ফোন।
-একটা পেত্নি।
-জেরিনের?
-হ্যা।
-আবার রাগারাগি করেছিস?
-আমি একা নাকি? ও জেরিন ও রাগ করেছে।
-দে ফোনটা আমার কাছে দে। আমি কথা বলছি।
.
একটু পরে মা ফোনে কথা বলল। তারপরে আমার মোবাইল এ একটা এস এম এস আসলো।
"I Sorry Baby. I Miss You" আমি কল ব্যাক করে আবার আগের মতই কথা বললাম।
.
এটা ছিল বিয়ের আগে।বিয়ের পরেও আমাদের মাঝে রাগারাগি হয়।
তবে বেশি সময় রাগটা থাকে না। আবার আগের মত হয়ে যায়। কিন্তু
এবারে রাগটা ভাঙলোনা। এবারে সরাসরি বাপের
বাড়ি চলে গেল। এদিকে মাও বাপের
বাড়ি চলে গেছে। আবার বউ ও চলে গেল। এখন বাড়ির কাজ করবে কে?
দুইজন দুইদিকে চলে গেছে। আর মাঝখানে আমি পরে আছি।
বউ কে অনেকবার সরি বললাম। কিন্তু কাজ হলো না।চলেই গেল।
.
এত রাগ কেন বুঝি না। বউ এর সাথে যতই ঝগড়া লাগুক। বিবাহিত পুরুষের বউ
ছাড়া থাকা কত কষ্ট তা আমি বুঝে গেছি। কিন্তু এত রাগ
করে কেন আমার উপরে? আমি নাহয় রাগের মাথায় একটা থাপ্পড়
মেরেছিলাম। পরে তো সরি বলেছি। তাই বলে এমন করতে হবে। তখন ভাবলাম
সরাসরি গিয়ে সরি বলবো বউ কে।তাই চলে গেলাম শশুরবাড়িতে।কিন্তু
বাসার ভেতরে গেলাম না। ভাবলাম বউ কে সারপ্রাইজ দিবো। কিন্তু
এখানে এসে নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে যাচ্ছি। অনেক সময় ধরে বউ কে ফোন
করছি। কিন্তু ফোন ধরছে না।এমনিতেই শিত কাল ঠান্ডা লাগছে। তার
উপরে মশাও প্রচুর।
.
তাই বউ কে মেসেজ দিলাম
"আচ্ছা তোমাদের বাসার সামনে এত মশা কেন? আর ঠান্ডা লাগছে কেন?"
মেসেজ দিয়ে বাসার সামনে দারিয়ে আছি।একটু পরে বউ
বারান্দায় এল। আসার সাথে আমি কান ধরে সরি বললাম। কিন্তু বউ
ভিতরে চলে গেল।একটু পরে দেখি নিচে নেমে দৌড়
দিয়ে আমার কাছে চলে আসছে। কাছে আসতেই কান ধরে বলালাম
-সরি।মাফ করে দাও।
-আরে কান ধরে আছো কেন?
-তুমি আমার উপরে রাগ করে আছো। প্লিজ মাফ করে দাও।
-কান ছারো। সবাই যদি দেখে আমার স্বামি কান ধরে দারিয়ে আছে।
তাহলে কি ভাববে? আর আমি কি তোমার উপরে রাগ করে থাকতে পারি।
-সত্যি তুমি আমার উপরে রেগে নেই?
-নাহ। তোমার সব ভুল থাকলেও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিবো।
-আসলে আমি থাপ্পড় টা মারতে চাইনি। হঠাত করে।
-আমি জানি তখন তোমার মাথা ঠিক ছিল না। আর আমার ও তখন তোমাকে ওই
সব কথা বলা ঠিক হয় নি।
-তাহলে আমার উপরে রেগে চলে আসলে কেন?
-আমি অনেকদিনে এই বাড়িতে বেড়াতে আসতে চাচ্ছিলাম।
কিন্তু সময় হচ্ছিল না।তাই ভাবলাম এই ঝগড়া টা কাজে লাগাই।
-আর আমার উপরে রাগ করে আসলে?
-আমি দেখলাম তুমি আমাকে কত ভালবাসো।আর আমাকে ছাড়া তুমি কেমন থাকো।
-তোমাকে এই কয়দিন আমি এলটুও ভাল ছিলাম না। তোমাকে অনেক মিস
করেছি।
-আমিক তোমাকে অনেক মিস করেছি।
-তাহলে ফোন ধরলে না কেন?
-আমি চাচ্ছিলাম। তুমি নিজে এসে আমার রাগ ভাঙাও।
-এখন তো রাগ ভাঙিয়েছি।
-বাসায় চলো। এখানে অনেক ঠান্ডা। আর মশাও আছে।
-চলো বাসার ভেতরে যাই।
.
বউ এর সব রাগ এখন শেষ। বাসার ভেতরে গিয়ে খেয়ে দেয়ে লেপের
ভেতরে শুয়ে পড়লাম। একটু পরেও বউ ও শুতে এল। এসেই জিজ্ঞেস করলো
-তুমি গোসল করো নাই কয় দিন?
-মত্র দুইদিন।
-কি!! যাও তুমি আমার সাথে ঘুমাবে না।তুমি অন্য জায়গায় ঘুমাবে।
-আমি এই ঠান্ডার ভেতরে কোথায় যাবো?
-তা জানি না। এখন ই বাথরুমে গিয়ে গোসল করো। আমি তোমার জন্য গরম পানি দিচ্ছি।
.
বাধ্য হয়ে গোসল করতেই হলো। গোসল করতেই ঠান্ডা শুরু হলো।তবে ভালও
লাগছে। দুইদিন ধরে গোসল করি নাই। তাই গায়ে গন্ধ হয়েছিল।এখন আর গন্ধ
নাই।তারাতারি লেপের ভেতরে শুয়ে পরলাম। এবারে বউ
এসে শুয়ে পরলো। আর বলল
-ঠান্ডা লাগছে?
-তা লাগবে কেন?এই ঠান্ডায় গোসল করলে কি গরম লাগে?
-আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো। তাহলে আর ঠান্ডা লাগবে না।
-হ্যা। ঘুমাও।
একটু পরে আর ঠান্ডা লাগলো না। বউ আমাকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পরলো।
ঘুমালে জেরিনকে আরো সুন্দর লাগে। তাই তাকিয়ে থাকলাম সেই অপরুপ
সুন্দরির দিকে।যত দেখি ততই প্রেমে পরে যাই। এটাই আমার
ভালবাসার বউ।