আজকে থার্টি ফার্স্ট নাইট। সেই প্রাচীন যুগ থেকে রীতি চলে আসছে নতুন বছরকে আনন্দের সাথে বরণ করে নেয়ার। রাত বারটা বাজার সাথে সাথে একে অপরকে চিৎকার করে বলে, “Happy New Year”, “Happy New Year”। রূপকের এসব রীতিতে একটুও আগ্রহ নেই। শুধু শুধু সময় নষ্ট করতে সে একদম পছন্দ করে না। সেই ছোটবেলা থেকেই একনাগাড়ে কাজ করে এসেছে সে। এটি তার দোষ না গুণ তা নিরূপন করা একটু কঠিন বৈকি।
রূপকের আস্তানার কাছেই একটা বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে। এটা নাকি কয়েক মিলিয়ন তলার বিল্ডিং হবে। সে ওখানেই শ্রমিকের কাজ করে। তার কাজ খুব সাধারন হলেও বেশ শ্রম দিতে হয় তাকে।মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে পড়ে সে। একবার মারাত্তক আহতও হয়েছিল সে। TBC-342 যে কিনা তার যাবতীয় ঘরের কাজ করে দেয়া রোবট, সে না থাকলে হয়ত রূপক সেবার বাঁচত না। TBC-342 খুব নিম্নমানের রোবট। আজকাল আর কেউ তেমন এ ধরনের রোবট ইউজ করে না।রূপকের দামী রোবট কেনার সামর্থ নেই বলে ও বাজার থেকে TBC-342 কেই কিনে এনেছে। ওর এতে বেশ কাজ চলে যায়।
পৃথিবীর এই অংশে আসতে পারবে রূপক সেটা কখনো কল্পনায় করেনি। পৃথিবী মানুষ আজ নিজেদেরকে দুই ক্যাটেগরিতে ভাগ করে ফেলেছে। এ এবং বি। এ গ্রুপের মানুষেরা বুদ্ধিবান। তারাই বিশ্বকে চালায়। থাকে উন্নত জায়গায়। আর বি গ্রুপের মানুষদের ধরা হয় জড়বস্তুর মত। বি ক্যাটেগরির মানুষেরা সবাইশ্রমজীবী। এর চেয়ে বড় কাজ তারা করতে পারে না। রূপক বি ক্যাটেগরির মানুষ। সে ছোট থেকে যখন বড় হয়েছে তখন সে শুনেছে সে অথর্ব, কিছু করতে পারে না। যে পিতা মাতার কাছে রূপক পালিত হয়েছে তারাও বি ক্যাটেগরির মানুষ।এগুলো ভাবতে ভাবতে রূপক একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।
পরের দিন সকালে উঠে রূপক কাজে যাওয়ার জন্যে রেডি হতে থাকে। যখন সে বেরুবে ঠিক তখন দরজার কাছে একটি লাল সবুজ খাম আবিষ্কার করে। খামের উপর R.W. এর সীল মারা রয়েছে। রূপক বাস্তবিকই খুব অবাক হয়। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে এ যুগে কেউ কাউকে চিঠি পাঠায় না। আর তাছাড়াR.W. হচ্ছে রিপাবলিক অব ওয়ার্ল্ড। সেখান থেকে রুপকের কাছে চিঠি আসার কথা না। নিশ্চয় কোন ভুল হয়েছে। সে খামটা নিয়ে কিছুক্ষন নেড়ে চেড়ে রেখে দেয়। অবশ্যই এটা অন্য কাউকে দেওয়ার কথা ছিল। ভুল করে তার কাছে চলে এসেছে। নিশ্চয় পরে কেউ এটা চাইতে আসতে পারে। রূপক সযত্নে খামটি ঘরে রেখে কাজের জন্যে বেড়িয়ে যায়।
রূপক তার কাজ করার জায়গায় এসে জানতে পারে তাকে তার কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর মানে তাকে এ জায়গা ছেড়ে শীঘ্রই চলে যেতে হবে।রূপকের মনটা খারাপ হয়। সে সাধারন শ্রমিক হলেও তার ইচ্ছে জীবনটা এ এলাকায় কাটিয়ে দেওয়ার। কিন্তু তা আর সম্ভব নই। তাকে ফিরে যেতে হবে সেই নোংরা, ঘিঞ্জি এলাকায়। রূপকের সহকর্মীরা তাকে সহমর্মিতা দেখায়। রূপক তার আস্তানায় ফিরে আসে। সবকিছু গুছিয়ে রাখা দরকার কিন্তু তার ইচ্ছে করে না।TBC-342 এর সাথে কথা বলে কিছুক্ষন সময় কাটায় সে। হঠাৎ তার চিঠিটার কথা মনে পড়ে। কেউ চাইতে এল না যখন তখন খুলে দেখা যাক, ভাবে রূপক। চিঠিটা হাতে নিয়ে এবার তার হাত কাঁপতে থাকে। খামের উপর যে তারই নাম লেখা। সকালে সে লক্ষ্য করে নাই। এবার সে বুঝতে পারে যে কেন চিঠি পাঠানো হয়েছে তাকে। তার ডাটা মডিউল (যার মাধ্যমে হলোগ্রাফিক স্ক্রীনে তথ্য আদান প্রদান করা হয়) নাই। তাই তাকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কি আছে এই চিঠিতে? রূপক কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠিটা খুলে। উত্তেজনায় তার মন ছটফট করে উঠে। কোন দুঃসংবাদ নয় তো। রূপক চিঠি পড়তে শুরু করে।
রূপক,
তুমি জান যে, তুমি একজন বি ক্যাটেগরির মানুষ। স্বাভাবিক জীবন যাপন করার ক্ষমতা তোমার নেই। তবু আমরা ঠিক করেছি তোমাকে এ ক্যাটেগরি মানুষের অঞ্চলে স্থায়ীভাবে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এবং সেটা বাস্তবায়নের জন্যেই এই চিঠি। চিঠির সাথেই একটি সবুজ কার্ড পাবে। এই কার্ড দিয়ে যে কোন জায়গায় যাওয়া যাবে এবং সবধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে। ঠিক এক মাস পর R.W. বিল্ডিংয়ের এক হাজার নয় তলায় যোগাযোগ করবে। তোমাকে একটা মহাকাশযানের ক্যাপ্টেন করে মহাকাশে প্রেরণ করা হবে। আশা করি তোমার ভবিষ্যত জীবন সুন্দর হবে।
তুমি জান যে, তুমি একজন বি ক্যাটেগরির মানুষ। স্বাভাবিক জীবন যাপন করার ক্ষমতা তোমার নেই। তবু আমরা ঠিক করেছি তোমাকে এ ক্যাটেগরি মানুষের অঞ্চলে স্থায়ীভাবে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এবং সেটা বাস্তবায়নের জন্যেই এই চিঠি। চিঠির সাথেই একটি সবুজ কার্ড পাবে। এই কার্ড দিয়ে যে কোন জায়গায় যাওয়া যাবে এবং সবধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে। ঠিক এক মাস পর R.W. বিল্ডিংয়ের এক হাজার নয় তলায় যোগাযোগ করবে। তোমাকে একটা মহাকাশযানের ক্যাপ্টেন করে মহাকাশে প্রেরণ করা হবে। আশা করি তোমার ভবিষ্যত জীবন সুন্দর হবে।
মহাপরিচালক
গ্রাইটন হাসান
R.W.
গ্রাইটন হাসান
R.W.
রূপক নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না। এও সম্ভব। বি ক্যাটেগরির মানুষ হয়েও তাকে এ ক্যাটেগরি মানুষদের সাথে থাকতে দেওয়া হবে। তারপরও কেমন যেন সন্দেহ লাগে তার। তার মনে হয় কোথাও যেন গন্ডগোল আছে। তাছাড়া মহাকাশযানের ক্যাপ্টেন সে কিভাবে হবে? সে তো এ সম্পর্কে কিছুই জানে না। তবু পাত্তা দেয় না ব্যাপারটা। R.W. যখন তাকেই সিলেক্ট করেছে তখন অবশ্যই তার প্রতিভা আছে। ভিতরে ভিতরে সে গর্ববোধ করে।
বাইরে রাস্তায় নেমে একটা উড়ন্ত জাহাজকে থামিয়ে ফেলে রূপক। এক জায়গায় লেখা “দয়া করে আপনার কার্ডটি প্রবেশ করান”। রূপক সেখানে সবুজ কার্ডটিপ্রবেশ করিয়ে দেয়। সাথে সাথে দরজা খুলে যায়। দায়িত্বপ্রাপ্ত রোবটটি যান্ত্রিক গলায় বলে উঠে,
-কোথায় যাবেন স্যার।
রূপক কি উত্তর দিবে বুঝতে পারে না। আধ সেকেন্ড পর বলে,
-আমাকে এই এলাকাটা ঘুরিয়ে দেখাতে পারবে?
-জ্বি স্যার পারব। কিন্তু কেন এলাকাটি ঘুরতে চাচ্ছেন বুঝতে পারছি না স্যার।
রূপক হঠাৎই রেগে যায়। এটি তার চরিত্রে কখনোই ছিল না। হয়ত তার বর্তমান অবস্থাই এর জন্যে দায়ী।
-সেটা তোমাকে জানানোর প্রয়োজনবোধ করছি না। তোমাকে যা বলা হচ্ছে তার উত্তর দাও।
-জ্বি আচ্ছা স্যার। আমি দুঃখিত স্যার।
-সম্পূর্ণ ঘুরতে মোট কত সময় লাগবে?
-স্যার দুই ঘন্টা একচল্লিশ মিনিট তেত্রিশ সেকেন্ড।
-এত কম সময়?
রূপক বাস্তবিকই অবাক হয়।
-জ্বি স্যার। এটি দ্রুতগামী উড়ন্ত জাহাজ।
রূপক আর কথা না বাড়িয়ে সিট গ্রহণ করে।সাথে সাথে দরজা বন্ধ হয়ে যায়। উড়ন্ত জাহাজটি চোখের নিমিষে রূপককে উড়িয়ে নিয়ে যায়।
-কোথায় যাবেন স্যার।
রূপক কি উত্তর দিবে বুঝতে পারে না। আধ সেকেন্ড পর বলে,
-আমাকে এই এলাকাটা ঘুরিয়ে দেখাতে পারবে?
-জ্বি স্যার পারব। কিন্তু কেন এলাকাটি ঘুরতে চাচ্ছেন বুঝতে পারছি না স্যার।
রূপক হঠাৎই রেগে যায়। এটি তার চরিত্রে কখনোই ছিল না। হয়ত তার বর্তমান অবস্থাই এর জন্যে দায়ী।
-সেটা তোমাকে জানানোর প্রয়োজনবোধ করছি না। তোমাকে যা বলা হচ্ছে তার উত্তর দাও।
-জ্বি আচ্ছা স্যার। আমি দুঃখিত স্যার।
-সম্পূর্ণ ঘুরতে মোট কত সময় লাগবে?
-স্যার দুই ঘন্টা একচল্লিশ মিনিট তেত্রিশ সেকেন্ড।
-এত কম সময়?
রূপক বাস্তবিকই অবাক হয়।
-জ্বি স্যার। এটি দ্রুতগামী উড়ন্ত জাহাজ।
রূপক আর কথা না বাড়িয়ে সিট গ্রহণ করে।সাথে সাথে দরজা বন্ধ হয়ে যায়। উড়ন্ত জাহাজটি চোখের নিমিষে রূপককে উড়িয়ে নিয়ে যায়।
একমাস পর……
R.W. এর মহাপরিচালক গ্রাইটন হাসান নিজে দাঁড়িয়ে সব কাজ সম্পন্ন করালেন। প্রথমে রূপককে হীমশীতল কফিনে ঢুকানো, তারপর তাকে অজ্ঞান করা।মহাকাশযানে অটোচালক সেট করা এবং সেটাকে সফলভাবে যাত্রার উদ্দেশ্যে পাঠানো।
পরিশিষ্ট
প্রাচীন যুগে মানুষেরা নিজেদেরকে ধনী, গরিব নামে দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করেছিল। আর বর্তমান কালে তারা নিজেদের ভাগ করেছে এ এবং বি ক্যাটেগরি রূপে।সময় পাল্টালেও শোষন জিনিসটা আজও সভ্যতা থেকে উঠে যায়নি। রূপককে বলা হয়েছিল তাকে মহাকাশযানের ক্যাপ্টেন করে পাঠানো হবে। কিন্তু আসলে তাকে হিমায়িত কফিনে করে উপহার পাঠানো হয়েছে হাস্কাদের (মহাজাগতিক প্রাণী) কাছে। R.W. এর আশা ছিল এর বিনিময়ে তারাও হয়ত কোন উপহার পাবে হাস্কাদের কাছ থেকে। কিন্তু তাদের সে আশা পূরণ হয়নি। পৃথিবীতে এসব তথ্য গোপন রাখা হয়। ফলে পৃথিবীতে আরেকবার প্রমাণিত হয় যে, বি ক্যাটেগরির মানুষ কোন কাজ করতে সক্ষম নয়।