-- দ্যা হিডেন ওয়ার্ল্ড --__
পর্ব-- এক । ০ Zephyr ০
--ইডিটর রুমে রাফানের ডাক পড়ল।পুশ করে ভেতরে ঢুকতেই চেয়ারে বসা চিফ এডিটর মিঃ হাজরা বললেন--"কাল রাত থেকে ডঃ কান্টকে পাওয়া যাচ্ছেনা"
রাফান বিস্ময় নিয়ে বলে উঠল- সেকি!!
মি হাজরা বলতে থাকেন--"এ নিয়ে পাঁচমাসে পাঁচজন নিখোজ হল । তুমি এখনই টার্কহিলে কান্টের বাড়িতে যাও গিয়ে দেখো কোন সূত্র পাও কিনা । তারপর সব মিলিয়ে বেশ একটা রিপোর্ট লিখ । আমার কালকের মধ্যে চাই রিপোর্ট ।
রাফানের বয়স বিশ । সুশ্রী এই যুবকটি অল্প বয়সেই রিপোর্টার হিসেবে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে । তীক্ষ্ণ বুদ্ধিধার তার মস্তিস্ক । সবকিছু নিয়ে খুব গভীরভাবে ভাবতে পারে । রহস্যের পেছনে ধাওয়া করাই ওর ফ্যান্টাসি ।
পথে নেমে রাফান একটা ট্যাক্সি নিল।সকালের ফাঁকা রাস্তায় হাইস্পিডে ছুটে চলছে ট্যাক্সিটা । রাফান বাইরে তাকিয়ে ভাবতে লাগল---
"পাচমাসে পাচজন নিখোজ,পাচজনই বিশিষ্ট ব্যক্তি।প্রথমে গেলে জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড.ন্যাশ,তারপর যথাক্রমে পরমাণু বিজ্ঞানী ড.তার্কান,রসায়নবিদ প্রফ,পদার্থবিদ নার্ফার আর এবারে উদ্ভিদবিদ ড.কান্ট ।
বাছা বাছা এসব লোককে অপহরণ করছে কে? ব্যপারটা যে ভীষণ রহস্যময় তাতে কোন সন্দেহ নেই । আচ্ছা কোন শত্রুরাষ্টের হাত নেইতো এতে??
এসব সাতপাচ ভাবতে ভাবতে টাক্সি কান্টের বাড়ির সামনে এসে থামল।দরজায় নক করতেই এক অল্পবয়সী লোক দরজা খুলে দিল।ওনি ড.কান্টের ছেলে।ওর কাছে সব জানতে চাইল রাফান।
উনি বলল-- প্রতিদিনের মত খেয়ে দেয়ে শুতে যায় বাবা।সকালবেলা তার রুমে চা দিতে যেয়ে দেখি ঘরের দরজা খোলা।বাবা কোথাও নেই।তারপরে পুলিশে খবর দেয়া।
রাফান ওনার অনুমতি নিয়ে কান্টের শোবার ঘরে গেল । বিছানা অস্বাভাবিক কোঁচকানো।আলমারিতে মোটা সব বই ঠাসা । একটা টেবিলের ওপর বেশ কতগুলো ফাইল । সবগুলোই চিঠিপত্রে ভরা । হঠাত রাফানের চোখ আটকে গেল একটা ফাইলের ওপরে । ফাইলের ওপরে লেখা---"ব্যক্তিগত" ---
রাফান ওটা খুলে পড়তে লাগল । নানা লোককে লেখা চিঠিপত্রে ঠাসা । রাফান আরেকবার চমকালো । যাদের কাছে চিঠি লেখা হয়েছে তাদের মধ্যে ন্যাশ,তার্কান প্রফ আর নার্ফাররাও আছেন !! রাফান চিঠিগুলো পড়তে লাগল । তেমন কিছুনা । ব্যক্তিগত চিঠি । হঠাত রাফান চিঠি পাঠানোর তালিকায় আরো দুজনের নাম দেখতে পেলো । তারা হল, ড.সার্ফারান আর ড.থুম্বার । আশ্চর্যজনক ভাবে এরা দুজনেও নিঁখোজ!!! তাহলে কি এদের মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে??বেশ চিন্তার বিষয় । এরা ছাড়াও রাফান আরো সাত আটজনের নাম পেল । ও সবার নাম আর ঠিকানা টুকে নিল । এরা কেউ নিখোজ হয়নি । রাফান এদের সবার সাথে দেখা করবে । যদি এদের সবার মধ্যে কোন সম্পর্ক থেকে থাকে তাহলে এরা নিশ্চয়ই নিঁখোজের ব্যপারে কোন তথ্য দিতে পারবে ।
রাফান বেশ বড় একটা রিপোর্ট লিখে মি হাজরার কাছে জমা দিল । তারপরে ট্যাক্সি নিয়ে ছুটল নাম ঠিকানা লিখে আনা ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ড.হার্নেসের সাথে দেখা করার জন্য । লেক ভিউ রোডে তার বাড়ির সামনে এসে নক করল রাফান । সুদর্শন এক বৃদ্ধ দরজা খুলে দিল ।ইনিই ড হার্নেস ।
অভিবাদনের পর রাফানকে বসার ঘরে নিয়ে গেলন হার্নেস ।
রাফানই প্রথমে বলতে শুরু করল--আজকের খবরের কাগজে ড কান্টের নিখোজ হওয়াটা পড়েছেন নিশ্চয় । তার সাথে আপনার কি পরিচয় ছিল ?
--সামান্য ছিল । কেন বলতো ?
-সামান্য বলছেন অথচ তার সাথে আপনার পত্রালাপ ছিল ।
--!! তুমি জানলে কিভাবে?
-দেখুন আমি ওনার ব্যক্তিগত চিঠিগুলো পড়েছি । আর তা থেকে তো মনে হলো যে আপনাদের মধ্যে বেশ ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল ।
--হ্যা তা সম্পর্ক বলতে ওই যা চিঠিপত্রেই ।
-আচ্ছা বুঝলাম । আপনি কি ড.ন্যাশ,তার্কান,প্রফ,নার্ফার এদের চিনতেন
--না
-তাহলে থুম্বার আর সার্ফারান ?
--আমি এদের কাউকেই চিনিনা । আর তুমি এসব অবান্তর প্রশ্ন করছ কেন?
-আপনার এদের চেনার কথা । যাহোক আসল কথা হচ্ছে । ড.কান্টের সাথে যাদের যোগাযোগ ছিল তারা সবাই নিখোজ হচ্ছে । তার মানে যারা এখনো নিখোজ হননি তাদের নিখোজ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । আর সেই হিসেবে ঐ তালিকায় আপনিও আছেন ।
--দেখো তুমি হয়তো তিলকে তাল করছ ।
-তাহলে পুরোটাই কি কাকতালীয়?
ড.হার্নেস খুব উত্তেজিত হয়ে বলেন--এই পৃথিবীতে কত কিই তো ঘটছে তার কটার খবর কে রাখে ?
-আপনি তাহলে ড.কান্টের নিখোজের ব্যপারে কিছুই জানেন না?
--আশ্চর্য!আমি জানব কিভাবে?
-হুম তাইই আমাকে এখন তাহলে বাকি সাতজনের সাথে দেখা করতে হবে ।
--ও!উইশ ইউ গুডলাক । আশা করি আবার দেখা হবে ।
-হয়তো ।অবশ্য ইতিমধ্যে আপনি যদি নিখোঁজ না হন ।
সন্ধার পর রাফান কার্সান স্ট্রিটের মুখে দাড়িয়েছিল । ওর ঠিক পাশেই একটা গাড়ি এসে দাড়াল । ভেতর থেকে কেউ ওর নাম ধরে ডাকল । রাফান তাকিয়ে দেখল ড.হার্নেস হাসিমুখে ওকে গাড়িতে ওঠার জন্য বলছে । রাফান ইতস্তত করছিল । গাড়িতে আরো একজন লোক আছে ।
হার্নেস ওকে বলল-- আসো,তোমার সাথে কথা আছে ।কান্টের ব্যপারে আরো কিছু বলব তোমাকে ।
রাফান আর দিরুক্তি না করে গাড়িতে উঠে বসল । গাড়ি ছুটে চলল ।
ড.হার্নেস বলল-- ভেবে দেখলাম তোমার সকালের কথা গুলোর মধ্যে যুক্তি আছে । তোমার বুদ্ধির প্রশংসাই করতে হবে । এত গভীরভাবে আগে কেউ ভেবে দেখেনি ।
রাফান মনে মনে একটু আত্মপ্রসাদ অনুভব করল । আর সাথে সাথে একটা তীব্র মিষ্টি গন্ধে রাফানের মাথা ঘুরে উঠল । একটা শক্ত হাত ঝাঁঝালো ওষুধ লাগানো তুলোর প্যাড ওর নাকে চেপে ধরেছে । ও হাতটা সরিয়ে দেবার চেষ্টা করল । কিন্ত পারলোনা ।
জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়ল রাফান ।
to be continued...-->
-চলবে-->