মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৪- প্রতিশোধ।

 “অন্ধ ভূমিগর্ভ হতে শুনেছিলে সূর্যের আহবান,
প্রানের প্রথম জাগরনে তুমি বৃক্ষ আদিপ্রান
                                            - 
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
{}
তার চোখ নেই কিন্তু সে দেখছে। দেখছেঅনুভব করছে সবকিছু। সে দেখছে দিনদিন তার বংশধররাতার প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আগে এই বিলুপ্তির ধারা ছিল ধীরে ধীরে কিন্তু এখন দিন দিন সেটা দ্রত হতে দ্রুততর হচ্ছে,। আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সমস্যাটা। কিন্তু সে কিছুই করতে পারছে না। শুধু চাপা কষ্টআর দুঃখ বয়ে বেড়াচ্ছে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এই প্রাণীগুলো কত নিষ্ঠুরকত অকৃতজ্ঞ। তারা নিজের আশ্রয় দাতাকে ভূলে যাচ্ছেভূলে যাচ্ছেপালনকর্তা,অন্নদাতাকে। সে স্মৃতি হাতড়ে চলে গেল সেই টারসিয়ারী যুগেজুরাসিক যুগে। মহাকালের ভাজে ভাজে খুজে দেখল। হ্যাএইতো ধারাবাহিক ভাবে সব মনে পড়েছে। এই সুন্দও গ্রহবিশ্বভ্রক্ষান্ডের একমাত্র প্রাণ সমৃদ্ধ গ্রহএটা তো একদা আমাদেরই রাজত্বে ছিল। শুধু আমরাই ছিলাম। যেদিকে দৃষ্টি যেতশুধূ সবুজ আর সবুজ আর ছিল সাগরের নীলাভ পানি। সেই পানির নিচেও আমাদের বংশধরদের রাজত্ব ছিল। আসমান ছোয়া বৃক্ষগুলি প্রতিদিন খেলা করত মেঘবালিকার সাথে। মেঘবালিকা কত ভালবাসতো তাকেদান করত অমৃত জলধারা আর পূর্বে উদিত সে নক্ষত্র শীতল রাখত মায়ের আচল। কথা হত মেঘবালিকা,সূর্য আর রাতের চাদ কিংবা তারার সাথে। মেঘ আর সূর্য প্রায়ই একে অপরকে সহ্য করতে পারত না। যখন মেঘকে নিমন্ত্রম করতামঅভিমানে সূর্য তখন লুকিয়ে পড়ত কিংবা যখন সূর্যকে নিমন্ত্রম করতাম তখন অভিমানে মেঘ ডানা মেলে উড়ে যেত। কিন্তু তারকারাজি এবং চাদ ছিল একে অপরের ভাল বন্ধু,প্রতি রাতে তারা আমায় ডাকত। আমিও নেচে গেয়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাতাম। কিন্তু এখন ওরা সবাই আমার শত্রু হয়ে যাচ্ছে এই নিষ্ঠুর প্রাণীগুলোর জন্যমেঘবালিকা এখন আর আমার ডাকে সাড়া দেয় নাসূর্য কষ্ট দেয় আমার জননীকে। কত সাত-পাচ ভাবেকিন্তু অতীতকে সে বিষন্ন করে তুলতে চায় না
স্মৃতির পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় পাঠ করে সে- হ্যা এই তো পাওয়া গেছে। কত যত্নে আমি ওদের আগলে রেখেছিলামআশ্রয় দিয়েছি আচল তলেঅন্ন দিয়ে বাচিয়ে রেখেছিপ্রাকৃতিক বিপর্যয় আর স্রষ্টার অভিশাপ হতে। এরা কত অসহায় ছিলআমিইতো এদের লুকিয়ে লুকিয়ে রাখতাম শত্রুর আক্রমন হতে। নাহ্ এরা বড় অকৃতজ্ঞ,এরা মানুষএরা নিশ্চয়ই বড় অকৃতজ্ঞ জাতিএরাতো নিজেরাই একে অপরকে ধ্বংস করে ফেলছে এটা পৃথিবীঅপূর্ব সুন্দর আর চিরকল্যানময়। এখানে এমন অকৃতজ্ঞদের বাস করার কোন অধিকার নেইএরা খুবই কুৎসিত জাতি। আর নাহ্ কিছুতেই ওদের এই অসৎ উদ্দেশ্য সহ্য করা হবে না। তীব্র প্রতিশোধের নেশায় জ্বলে ওঠে সে। ওরা কি নিজেরাই ধ্বংস হয়ে যাবে না কি আমাকেই প্রতিশোধ নিতে হবেকিন্তু এখনও তো আমি ওদের জীবিকার প্রধান অবলম্বন তবে কেন আমাকে ওরা ধ্বংস করে দিতে চায়ওরা কি বুঝতে পারছে না যেআমি অস্থিত্বহীন হয়ে পড়লে ওরাও অস্থিত্বহীন হয়ে পড়বে?
অবশেষে এই রহস্যের উৎঘাটন করল সে- নাহ্ আমার ধ্বংসের পরও ওরা ধ্বংস হবে না। ওরা টিকে থাকবে আরো কোটি-কোটি বছর। ওরা জীবিকা আর খাদ্যের অন্বেষণনে চলে যাচ্ছে মাটির তলদেশেসমুদ্রের গভীরে। আমার বিলুপ্তির পর ওরা ভূগর্ভের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে এবং ততদিনে ওরা নিশ্চয়ই বেচে থাকার একটা অবলম্বন পেয়ে যাবে। ওরা প্রস্তুত করবে কৃত্রিম খাদ্য এমন কি মাটিস্থ প্রোটিন বের করে ওরা খাদ্য তৈরী করবেতবুও ওরা আমাকে বাচতে দেবে না। এরই মধ্যে আমাকে প্রতিশোধ নিতে হবে। প্রতিশোধের নেশায় হিস হিস করে ওঠে সে। এক প্রকার হিংস্র বাতাস গাছের শাখাগুলোকে যেন দুমড়ে মুচড়ে ফেলছে
এই পৃথিবীতে আমিই প্রথম এসেছিপ্রানের স্পন্দন ঘটিয়েছি আর ওরা কিনা আমাকেই মেরে ফেলতে চায়ক্ষোভের সাথে মানুষ গুলোর দিকে তাকায় সে- কেমনবিশ্রী শব্দ করেকেমন কুৎসিত কাঠামো আর কেমন গর্বভরে পৃথিবী প্রকম্পিত করেযেমন রুক্ষ তাদের চেহারা তেমন রুক্ষ তাদের ব্যবহার । কান্না আসে তার-এমন অকৃতজ্ঞদের আমি কোটি-কোটি বছর লালন করেছিবিশ্বাস করতে কষ্ট হয তার
নাহ্ আমাকে বাচতেই হবে। জীবনের স্পন্দনে আমিইতো প্রথম প্রান। আমিইতো এতদিন আশ্রয় দিয়ে সবাইকে টিকিয়ে রেখেছি আর আজ আমিই এখানে থাকতে পারব নাতা হয় নাএই পৃথিবী আমার। অঝোর ধারায় কাদছে সে
পৃথিবীর কোটি কোটি বছরের ইতিহাস পাঠ করল সেপ্রানের সমসত্দ রহস্য নিংড়ে বের করে আনল। সমসত্দ রহস্যের সমাধান দেওয়া আছে সেখানে। দেওয়া আছে শত্রুকে ধ্বংস করার কৌশলআত্মরক্ষার উপায়। সবসব আছে সেখানে। সে সমাধান খুজে পায়- তাকে মরতে হবে। বাচতে হলে মরতে হবেতবে মরার আগে মরতে হবে- হ্যাএই তো পেয়ে গেছি । এতদিনে এই মানুষগুলিকে একটা উপযুক্ত শিক্ষা দিতে পারবযেন ভবিষ্যতে কোন প্রজাতি নিজেদের মানুষ দাবি করতে লজ্জা পায়। আমি সেই ব্যবস্থাই করব
হঠাৎ এক টুকরো মেঘ ওর মাথার উপর দিয়ে উড়ে যায়। কান্না জড়িত কন্ঠে সে ডাক দেয়- মেঘ ভাইকই যাওএকটু দাড়াও না। কতদিন তোমায় দেখি নাআমার কষ্ট হয় না বুঝিঅভিমান ঝরে পড়ে তার। পরিচিত কণ্ঠ পেয়ে থমকে দাড়ায় মেঘ- কি করব বোনতোমরা নেই তাই এখন আর পৃথিবীময় ঘোরার ইচ্ছে জাগে না। সূূর্যটা যখন পশ্চিমে ঢলে পড়ে তখন সে ডাক দেয়- সূর্যি্য মামাআজ আমার সাথে কথা বলনি কেন?
-তোমায় বিষন্ন দেখে কষ্ট হয়মেঘবালিকা আর আগের মত আসে নাতাই তোমার কষ্ট আর বাড়াতে চাই না। কষ্ট চেপে রেখে বলে সূর্যি্য মামা 
সন্ধ্যার পর একটুকরো বাতাস যখন তাকে পরশ বুলিয়ে যায়সে ডাক দেয়- ও ভাইদিনের শেষে এলে তাও ক্ষনিকের জন্য। দাড়াও না ভাইকিছু কথা বলি্
সে বুঝতে পারছেদিনদিন সবাই দূরে সরে যাচ্ছেপ্রিয়জনরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না । প্রতিশোধ নিতে হবেচরম প্রতিশোধথরথর করে কেপে ওঠে সে
{}
তখনও শেষ বিকেলের আলো ফুরিয়ে যায় নিঅন্যসব দিনের মতই চলছে সবার কাজকর্ম ব্যসত্দ তরুন-তরুনীরা বিপনী বিতান গুলোতে কেনাকাটায় ব্যসত্দ,কেউবা হাটছে পার্কেমাঠে অথবা নদীর ধারে। সারাদিনের অফিস শেষে সবাই ঘরে ফিরছে। কারো মধ্যে দুঃচিনত্দার ছাপ নেই। সবার মধ্যে একই কথা শেষ পর্যনত্দ কিছুই হবে না’ টেলিভিশনে কিছুক্ষন পর-পরই প্রচার করা হচ্ছে ভয়াবহ ভবিষ্যৎবানী বিজ্ঞানীরা আগত সাইক্লোনটির নাম দিয়েছেন রিভেনজ’ (Revenge)। প্রতিটি বেতার কেন্দ্র হতে ঘোষনা করা হচ্ছে সমুদ্রের মাঝিরা যেন সন্ধ্যের পূর্বেই ফিরে আসে। কেউ-কেউ ফিরলকেউ ফিরল না। উপকূলীয় এলাকা গুলোতে পুলিশ আর সামরিক বাহিনীর লোকজন গিয়ে মাইকিং করছে কিন্তু কারো আগ্রহ নেই সাইক্লোন শেল্টার স্টেশন গুলোতে যাওয়ারএকপ্রকার বাধ্য করেই সবাইকে নিয়ে যাচ্ছে ওরা সন্ধ্যের সাথে সাথেই আকাশে জমে উঠল কালো মেঘ। অনেকে উৎকণ্ঠায় তাকালো আকাশে অভিজ্ঞতার আলোকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের আর বুঝতে বাকি রইল না এ কিসের আলামত যে মতু্যর পরওয়ানা নিয়ে আসছে মৃতু্যদূতৃ রিভেনজ’ (Revenge) । দশ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের তাৎপর্য এবার কেউ-কেউ কিছুটা অনুভব করছে। সবাই ছুটছে দ্বিগ্ববিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে। ছুটছে আশ্রয়ের আশায়ছুটছে বেচে থাকার আশায় বহন যোগ্য সম্বলটুকু কাপড়ে বেধে ওরা ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসল। চোখের জল ফেলতে-ফেলতে মুক্ত করে দিল গবাদি পশু-পাখিদের
রাত নামার সাথে-সাথেই সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠলবাতাসের গতিবেগ ক্রমেই বাড়ছে রাত্রির প্রথম প্রহরেই আঘাত হানল প্রলয়ংকরী সাইক্লোন রিভেনজ্’ (Revenge)  প্রায় চারশ কিলোমিটার বেগে ঝড়টি আঘাত হানল সারা রাত্রি ধরে। লন্ড ভন্ড করে দিল কোটি-কোটি মানুষের ঘর-বাড়িফসলের ক্ষেত ,সনত্দান-সনত্দতি আর গবাদি পশু-পাখি
সকাল হল। আকাশে বাতাসে শুধু মানুষের চিৎকার আর হাহাকার। স্বজন হারানোর কান্নায় পৃথিবীর আকাশ ভারী হয়ে উঠল। পৃথিবীর বাতাসে শুধুই লাশের গন্ধ। এখন শুধুই বেচে থাকার আকুতি। চাই খাদ্য আর পানি। পর্যাপ্ত ত্রাণ।। কিন্তু কে দেবে তাদের সাহায্য। রাসত্দাঘাট সব বিধ্বসত্দ স্থল যোগাযোগের কোন উপায় নেইরাসত্দার উপর ভেঙ্গে পড়ে আছে শতবর্ষী গাছগুলোও। চারিদিকে লক্ষ-লক্ষ মানুষের লাশ আর লাশলাশের মিছিলে মানবতা খুজে পাওয়া ভার। সবার চোখে মুখে উৎকণ্ঠাপ্রকৃতি এ কি নিষ্ঠুর খেলা খেলল মানুষের জীবন নিয়েপ্রকৃতি এ কেমন প্রতিশোধের নেশায় মেতে উঠল?
{}
বিসত্দীর্ন ধান ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে করিম মিয়া। এক দাগে দশ একর জমি তার । গত বছরও এখানে ছিল সুউচ্চ গাছের সমাহার। মৃতু্যর সময় বাবা বলেছিল একসাথে যেন সব উজাড় না করে আর অবশ্যই যেন নতুন গাছ লাগায়। একদিন শহরের এক পার্টি আসেচড়া দাম হাকে। কাচা টাকার গন্ধ পেয়ে করিম মিযা সব গাছই বিক্রি করে দেয়। সে এখন কোটি টাকার মালিকএলাকার সবচেয়ে বড় ধনী প্রতিবেশীরা বলেছিল আবার গাছ লাগাতে। কিন্তু আবার পনেরবিশ বছর। নাহ্ বাকীতে বিশ্বাসী নয় করিম মিয়া। তার চাই কাচা টাকানগদ টাকা। সে ধান আবদ করেবছর না ঘুরতেই আসবে টাকা,করিম মিয়া উঠোনে বসে ভাবে আর পান চিবোয় কিনত্দ এখন যেন তার কান্না আসছেদীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। বাড়নত্দ ধানের চারা গুলি কেমন শুকিয়ে যাচ্ছেযত্মতো কম হচ্ছে নানিজের মেশিনপর্যাপ্ত পানিসারতবুও চারা গুলি দিনিিদন শুকিয়ে যাচ্ছে। করিম মিয়া ছুটে যায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকতর্ার কাছেউপজেলা কৃষি অফিসারসহ সবাই সরেজমিনে পরিদর্শন করল
কয়েক বছরের মধ্যেই কৃষি মন্ত্রনালয়ে জমা পড়ে হাজার হাজার প্রতিবেদন নির্দিষ্ট কোন কারণ খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। সবর্ত্র একই অবস্থা। প্রকৃত কারণ খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই হতাশ। এভাবে কেটে গেল বহু বছর
{}
লম্বা কাঠের টেবিলের এক প্রানত্দে বসে আছেন মাননীয় ফারুক খাঁন। সম্মেলন কক্ষের সবাই নিরব। কথা সরছে না কারো মুখে। তিনি তাকিয়ে আছেন টেবিলটির দিকে আর ভাবছেন এই টেবিলটা তৈরি করতে কত ব্যয় হয়েছিলঅনেকঅনেক টাকাএকটা কৃত্রিম বন তৈরী করা যেত। অথচ কত বিলাসিতা করা হয়েছিলহেলিকপ্টারে করে সেই আমাজান হতে দূর্লভ প্রজাতির এই গাছ সংগ্রহ করা হয়েছিল
নিরবতা ভঙ্গ করল একজন পরিবেশবিদ- স্যার নি:সন্দেহে আমরা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছি
-ডাইনোসর ছিল নিবের্াধ প্রাণী। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তাই তারা হারিয়ে গেছে হেরে গেছে। কিন্তু আমরাআমরা মানুষসৃষ্টির সেরা জীব। আমরাও হেরে যাবপ্রকৃতির কাছেমাঠের ঘাস শুকিযে মাটি বের হয়ে এসেছে। শহর ছেড়ে বেরুলেই শুধু ধু-ধু মরুভূমি আর মাঠ। সবুজের চিহ্ন মাত্র নেই। পৃথিবীতে এটা কিহচ্ছেউপকূলীয় দেশগুলো পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। সমুদ্রের উচ্চতা দিন-দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মারাত্মক ভাবে গলছে এন্টার্কটিকার বরফ। সবচেয়ে করুন হচ্ছেঅনুন্নত আর উন্নয়নশীল দেশগুলোদুর্ভিক্ষ আর গৃহ যুদ্ধের কবলে পড়ে অসত্দিত্বহীন হয়ে পড়ছে। এখনও যারা টিকে আছে শুধু তাদের মজুদ খাদ্যের জোরেইকেউ কাউকে সাহায্য করছে না। উপরন্তু এক জাতি তাতারি কিংবা বেদুইনদের মত অন্য জাতির উপর হামলে পড়ছে। সমুদ্রের গর্ভে খাদ্য হিসেবে যা ছিল তাও দিন দিন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সমসত্দ উদ্ভিদও মরে গেছে। পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। অথচ এখানে উপস্থিত আছেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আর মহাজ্ঞানীরাযারা বলতে পারেন মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিলপৃথিবীর বয়স কতমঙ্গল গ্রহের মাটিতে কি কি উপাদান আছে। কিনত্দ এখনকি কাজে আসবে তাদের সেই জ্ঞান যদি আমরাই টিকে না থাকি। মহাবিশ্বে পৃথিবীই তো একমাত্র মানুষের বসবাস উপযোগী গ্রহ তাহলে এই পৃথিবী ছেড়ে আমরা যাবো কোথায়কি খাবকিভাবে বাচবোগত সম্মেলনে আপনারা আমাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা অত্যাধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ এক প্রকার রাসায়নিক খাদ্য তৈরী করতে সক্ষম হবেনকিন্তু এখনও তার কোন অগ্রগতি নেই। অথচ প্রতিদিন পথে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে মৃত লাশ। পৃথিবীর আবহাওয়া বিষাক্ত হয়ে উঠছে,কিন্তু আপনারা কিছুই করতে পারছেন না অথচ এক সময় সবাই গর্বভরে পৃথিবী দাপিয়ে বেড়িয়েছেন যেন আপনাদের পদভারেই ধন্য ছিল পৃথিবী। ছিঃছিঃছিঃলজ্জালজ্জাএটা মানব জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ লজ্জার বিষয়

ক্ষোভের সহিত মুখ বিকৃত করলেন মহামান্য ফারুক খাঁন
আজ এখানে সবাই অপরাধী। সবার অবনত মসত্দক। আজ নেই কারো অহংকার কিংবা গর্ব আজ কেউ কারো নয়।। একদা যে বলত আমিই মঙ্গলে প্রথম পদচারী ব্যক্তিআমিই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনী কিংবা শ্রেষ্ঠ ক্ষমতাধরআমি কৃত্রিম মানব তৈরীর গুপ্ত রহস্য জেনেছি। আজ কোথায় তারাআজ কথা সরছে না কারো মুখে। আচ্ছা চিনত্দা করুন আগামীকাল যখন খাদ্য ফুরিয়ে আসবেকি করবেনআপনাদের মধ্যে কি এমন একজন মাত্র ব্যক্তি নেই যিনি এর সমাধান দিতে পারবেন। একজনশুধু একজন কান্নাজড়িত কন্ঠে থরথর করে কেপে উঠলেন বৃদ্ধ ফারুক খাঁন। আপনাদের অনভূতি কি ভোতা হয়ে গেছেবুঝতে পারছেন তো পৃথিবী তথা মহাবিশ্ব হতে মানব সভ্যতার বিলুপ্তি ঘটতে যাচ্ছেকেউ একজন কথা বলুন। আপনাদের আমি পৃথিবীর ঐসব শোষিত নিরক্ত মানুষের কসম দিয়ে বলছি যাদের অর্থে আপনারা উন্নত জাতির মহাজ্ঞানী উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। কেউ নেই। আজ যারা জীবিত তারাও মৃত
পুরো সম্মেলন কক্ষে থমথমে নিরবতা
-আচ্ছা কেউ যেহেতু পারছেন না তাহলে আমিই একটা সমাধান দিচ্ছি। কাপা কাপা কন্ঠে বলতে লাগলেন মিঃ খাঁন। এই দেশে এখন আমরা যারা টিকে আছি তাদের জন্য প্রায় দশ বছরের খাদ্য মজুদ আছে
সবাই অবাক হলএকে অন্যের মুখের দিকে তাকাল
-অবাক হবেন না। এটা ছিল অতি গোপনীয়যা শুধু জানতাম আমি আর মুষ্টিমেয় বিশ্বত্ব লোকজন। আরো আছে বেশ কিছু ওষুধ পত্র। কিন্তু পৃথিবীর আবহাওয়াবিষাক্ত হয়ে গেছে। এ আবহাওয়ায় আমরা আরো দুটো বছরও টিকতে পারব না । তার চেয়ে এই ভাল আমাদের নিকটবর্তী যে দুটো দেশের কিছু মানুষ এখনও টিকে আছে তাদের মাঝে কিছুটা খাদ্য বিলিয়ে দেই যেন তারাও আরো কিছুদিন বেশী বাচতে পারেনতুবা দুমাস পরেই ওদের খাদ্যও ফুরিয়ে যাবে
আর্তনাদ করে উঠল সবাই- না মহামান্য খাঁননা। আমরা অবশ্যই খাদ্য ফুরিয়ে যাওয়া পর্যনত্দ বেচে থাকার চেষ্টা করব। আমরা কিছুতেই সেটা করতে দেব নাপ্রতিবাদ করল জর্জ রর্বাটসন
তরুন বিজ্ঞানীর দিকে তাকালেন ফারুক খাঁন – না রর্বাটআমি কারো পরামর্শ ছাড়া কিছুই করি নি এবং করব না। সবার মত আমিও আশাবাদী
সেদিনের মত আলোচনা শেষ হল কোন প্রকার সমাধান ছাড়াই
ধীর পদক্ষেপে হাটছেন খাঁন। কখনো সমুদ্রের বেলাভূমিতেকখনো খোলা মাঠে অলস সময় কাটান। বড়-বড় অট্রালিকাগুলোর দিকে তাকিয়ে নিরবে চোখের জল ফেলেন ওগুলো এখন সব অভিশপ্ত। জেটিতে বাধা বিশালাকার জাহাজগুলো ফাকা পড়ে আছে। এয়ার ক্রাফট কেরিয়ারগুলোর উপর শতশত যুদ্ধ বিমানসবই এখন নিশ্চল। পৃথিবীতে বিজ্ঞানের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছিল শুধূ মানুষ হত্যা করার জন্য। শতশত বন উজাড় করে তৈরী করা হয়েছিল সামরিক ঘাটি,পারমানবিক স্থাপনা। অধিকাংশ ভূমি কিংবা বনভূমি গুলো দখল করে রাখত সামরিক বাহিনীরা। সরকার সবোচ্র্চ অর্থ ব্যয় করতো যুদ্ধ খাতে। অথচ কেউ ভাবেনি পরিবেশ নিয়ে। পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসেনি কেউ। আজ কোথায় তারা যারা মানুষ হত্যা করে তৃপ্তি লাভ করতোগর্বভরে দাপিয়ে বেড়াত পৃথিবী,যাদের অস্ত্রের মুখে থরথর করে কাপতো পৃথিবী। আজ তারা কেউ নেইকেউ নানিঃশেষ হয়ে গেছে তাদের সমসত্দ প্রতাপসব জৌলসসব অহংকার ধুলায় লুটিয়ে গেছে সব। পৃথিবী এখন মৃত্যুপুরি। যাদের চোখের ইশারায় অস্ত্র হাতে জীবন দিত লাখো সৈনিকঐতো কংকাল সেই সব জেনারেলভাইস এডমিরাল আর মাশর্ালগনেরযারা কিছুদিন আগেও অহংকারী দৃষ্টি মেলে দিত পৃথিবীজুড়েদাপিয়ে বেড়াত আকাশ-বাতাস-সমুদ্র। পৃথিবীর বিষাক্ত আবহাওয়া তাদের কাউকে ক্ষমা করে নি। মৃত্যুর কাছে আজ সবাই তারা পরাজিত
{}
-মাননীয় পরিষদ। আজ এটাই সম্ভবত শেষ আলোচনা। শব্দগুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে বললেন ফারুক খাঁন পৃথিবীতে আমরা এখন শপাচেক লোক জীবিত আছি। আমি যে নির্দেশ দিয়েছিলাম সেই মত কাজ করা হয়েছে। সংরক্ষিত সমসত্দ খাদ্য প্যাকেটজাত করা হয়েছেযা দ্বারা আপনারা বিশ বছরের অধিক সময় পার করতে পারবেন। বেশ কিছু ওষুধও আছে আমাদের সাথে। পাচেক নারী পুরুষের মধ্যে ডাক্তারবিজ্ঞানীপ্রকৌশলীপ্রায় সব পেশার লোকই আছেযারা পৃথিবীর সবের্াচ্চ মেধাবীদের অনর্ত্দভুক্ত। আরো আছে শিশু-কিশোর এমন কি সদ্যজাত শিশুও। পৃথিবীর অত্যাধুনিক মহাকাশযানটি প্রস্তুত করা হয়েছেযেখানে প্রায় এক হাজার লোকের সংকুলান হবে। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এ অল্প কদিনেই পৃথিবীর জনসংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে তাই দ্রত কেটে পড়তে হবে। পৃথিবীর আবহাওয়া এখন খুবই বিষাক্ত
আমরা কোথায় যাব মহামান্য ফারুক খাঁনবলল এক তরুনী
আমি জানি না। তবে বিজ্ঞানীরা আমাকে জানিয়েছেন মঙ্গলের কোন এক পৃষ্ঠে নাকি সামান্য কিছু পানি আর অতি অল্প পরিমান অঙ্েিজনের উপসত্দিতি লক্ষ্য করা গেছে। আপনারা সেখানে গিয়ে বেচে থাকার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। সেটাও যদি ব্যর্থ হন তবে অজানার পথে মহাশূন্যে ভেসে চলবেন। কিন্তু পৃথিবী হতে পালিয়ে গিয়েই যে সবাই বেচে যাবেন এমন নিশ্চিত বলা যায় না কারণ সবাই দেহে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন রোগের জীবানু। আর সাথে নিয়ে যাবেন বিভিন্ন খাদ্য শস্যের বীজ। আপনারা জানেন আজ পৃথিবীতে একটি ঘাসও অবশিষ্ট নেইশুধু মরুভূমি আর পাথুরে জমি
{}
নারী পুরুষ সবাই একে একে মহাকাশযানে উঠল। শুধু ফারুক খাঁন আর গুটি কয়েক লোক এখনও বাহিরে ব্যসত্দ-কথায় মগ্ন
মহামান্য খাঁন আপনী এ-কি বলছেনআপনার বুদ্ধিতে আমরা নতুন জীবনের আশা খুজে পেয়েছি আর আমরা আপনাকে ফেলে চলে যাবো?
না ডাক্তার। আমি এমনিতেই বৃদ্ধ। আমি পৃথিবী হতে পালিয়ে যেতে চাই না। আমি এখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করব। তোমরা আমাকে অনুরোধ করো না
তা হয় না মহামান্য খাঁন । আপনার জন্য না হলেও আমাদের জন্য হলেও চলুন। আপনাকে আমাদের খুব দরকার। বলল অন্য এক বৃদ্ধ বিজ্ঞানী
না বন্ধু। তোমরা জান আমার কথার নড়চড় হয় নাআমি অনেক ভেবে চিনত্দে কথা বলি এবং সিদ্ধানত্দ নিই। বরং তোমরা আমাকে কিছুদিনের খাদ্যওষুধ আর একটি অঙ্েিজনের সিলিন্ডার দিয়ে যাও যদি আরো কিছুদিন বেশী বেচে থাকতে পারি এই পৃথিবীর বুকে
অনেক্ষন যাবৎ বাকবিতন্ডা চললকিছুতেই বৃদ্ধ মহাকাশযানে চড়তে রাজী হলেন না
কিন্তু আপনার অবদান এই সভ্যতা আমৃত্যু মনে রাখবে। এই সভ্যতা হবে খাঁন সভ্যতা। কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল বিজ্ঞানীরা
ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে এল জর্জ রর্বাট -মহামান্য খাঁনআপনীতো সিদ্ধানত্দ নিয়ে নিয়েছেন। আমি আপনাকে অনুরোধ করব না। আমার স্ত্রী মারিয়াসে আপনাকে খুবই শ্রদ্ধা করেখুবই ভালবাসে। মারিয়া আপনার সাথেই পৃথিবীতে মারা যেতে আগ্রহী
অবাক হলেন বৃদ্ধ। তারপর ক্ষোভে চোখ রক্তবর্ন করে ফেললেন। বরার্ট তুমি ওকে ভালবাস নাকি বাজে বকছো তুমি?
মাফ করবেন স্যার। আমি অবশ্যই তাকে খুব ভালবাসি আর তাই তো ওর ভালবাসার প্রতিদান দিতে চাই
কি বলছ রবার্টতোমার মাথা ঠিক নেই
স্যারআমার মারিয়া অসুস্থ। পৃথিবীর বিষাক্ত আবহাওয়া ওর রন্দ্রে রন্দ্রে ঢুকে পড়েছে। দুচারদিনের মধ্যেই হয়তো সে মারা যাবে। মৃত্যুর কিছু লক্ষনও ফুটে উঠেছে ওর শরীরে। কিন্তু এখনও সে শাররীক ভাবে সক্ষম। স্বাভাবিক হাটাচলা করতে পারে। টা দিনতো আপনাকে সাহায্য করতে পারবে
না রবার্ট তুমি ওকে নিয়ে যাও। মৃত্যুর সময় তোমার কাছে থাকা খুবই জরুরী
সবাই মহাকাশযানে উঠে পড়ল। মারিয়া কান্না জড়িত কন্ঠে রবার্টকে বিদায় জানাল। ফারুক খাঁন বাবার স্নেহে মারিয়াকে জড়িয়ে রাখলেন। বন্ধ হয়ে গেলমহাকাশযানের সব প্রবেশ পথ। একদল মৃত্যুপথ যাত্রী নতুন জীবনের আশায় মহাকাশে ছুটে চলছে। পৃথিবীর মাটিতে শুধু দাড়িয়ে রইল মারিয়া আর মিঃ খাঁন দুজন প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে সরে আসল
{}
এতদিনে সে’ প্রশানত্দি অনুভব করল। সে অননত্দ আকাশে তাকিয়ে খুজতে লাগল- মেঘ ভাইএসএদিকে এসদেখে যাও আমি পেরেছি। আমি সফল হতে যাচ্ছি। তোমাকে আর আমা হতে দূরে থাকতে হবে না। সূয্যর্ি মামা আজকে আমি বিষন্ন নইআজ আমার সাথে কথা বল। দেখ আমি মানুষের উপর প্রতিশোধ নিতে পেরেছি। এবার সে তার ছোট্র একটি হাসি ছড়িয়ে দিল পৃথিবীতে
{}
বৃদ্ধ ফারুক খাঁন দেখল যেখানে সে দাড়িয়ে আছেপায়ের কাছেই একটি ঘাস ফুলের চারামারিয়ার মুখের কালো তিলকের আকৃতির একটি ফুলও ফুটেছে। দুই-তিন সেন্টিমিটার উচ্চতার একটি চারা গাছ। আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলেন বৃদ্ধ- দেখমারিয়া দেখএই দেখ ঘাসফুল উদ্ভিদ। পৃথিবীতে আবার প্রাণ ফিরে এসেছে। দেখ ফুলটা কি সুন্দর হাসছে। প্রাণ এসেছে পৃথিবীতেপ্রাণ। তুমি এখানে দাড়াও মারিয়া
ফারুক খাঁন দৌড়ে গেল মহাকাশযান লক্ষ্য করে। চিৎকার করতে থাকল- রবার্টরবার্ট এই দেখ প্রাণ এসেছে পৃথিবীতে । কিন্তু ততক্ষনে মহাকাশযানটি ছুটেচলেছে মঙ্গলের উদ্দেশ্যে। বিষন্ন চিত্তে মারিয়ার কাছে ফিরে এল ফারুক খাঁন  একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল ঘাসফুলের দিকে। দৃষ্টি ফেরাল মারিয়ার চোখে- মারিয়াপ্রাণ এসেছে পৃথিবীতে। আবার প্রানের স্পন্দনে মুখরিত হবে পৃথিবী। মানব শিশুদের কোলাহলে আবার মুখরিত হবে এই বিরান ভূমি। আমার সবোচ্র্চ বিদ্যা আমি ঢেলে দেব তোমার প্রতি। তোমাকে কিছুতেই মরতে দেব না। আবার সুস্থ হবে তুমি তুমি হবে এই পৃথিবীর প্রথম মানবী ইভ
{}
সন্ধ্যে না হতেই আবার ঘাসফুলটি শুকিয়ে গেল। দেখতে দেখতে বেশ কয়েক মাস চলে গেল। মারিয়া মাঝে কিছুটা সুস্থ হয়েছিলএখন আবার অবনতি ঘটছেইতিমধ্যে বৃদ্ধ ফারুক খাঁন মারা গেছেন। মারিয়া বুঝতে পারছে তারও বেশীদিন বাকী নেই
ব্যসত্দ পদক্ষেপে মারিয়া শহরে প্রবেশ করল। খা-খা করছে সমস্থ দালান-কোটারাসত্দা-ঘাট। থমথমে পরিবেশে ভূতুড়ে আতংক বিরাজ করছে। কোথাও প্রানের চিহ্ন মাত্র নেই। অট্রালিকার গায়ে খোদাই করে কিছু আকিবুকি করল মারিয়ানেমে এল বিশাল অট্রালিকার সামনে। গাড়িটির দিকে তাকিয়ে হাসল- পৃথিবীর সবচেয়ে দামী গাড়ি। হাঃ হাঃ। পৃথিবীর সবোচ্র্চ ধনী ব্যক্তির জন্য তৈরী করা হয়েছিল এটি গাড়িতে চড়ল মারিয়া। জিপিএস ফেড অটোমেটিক কন্ট্রোলারসম্পূর্ণ কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত গাড়িটি। কম্পিউটার গাড়ির সমসত্দ যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করল গ্যাসক্যামেরাছোট রাডারটিসব পরীক্ষা করল। সমপূর্ণ অপারেশনাল। গাড়ির ভিতর ছোট একটি কনফারেন্স টেবিলচারপাশে স্বর্ণ আর হীরা খচিত কারুকার্য। বসার আসনগুলিও চমৎকার। গাড়ি স্টার্ট নিল। চলতে শুরু করল শহরের রাসত্দা ধরেশহর ছেড়ে গ্রামে আবার শহরেচলছে তো চলছেই
এবার মুচকি হাসল মারিয়া। একা একাই বলল- মহামান্য মারিয়াপৃথিবীর একছত্র অধিপতিআপনী আসন গ্রহণ করুন
মারিয়া আসন গ্রহণ করল এবং চির নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। গাড়িটি এগিয়ে চলছে তাকে দেয়া গনত্দব্যের পথ ধরে
{১০}
আবার সবুজে- সবুজে মুখরিত হল পৃথিবী। আকাশ ছোয়া বৃক্ষ এখন খেলা করে মেঘের সাথে। পাখির কিচির মিচির শব্দ ভেসে যায় সুদুরে। অরন্যে- অরন্যে ছেয়ে গেল মাঠ-ঘাট। পৃথিবীর আবহাওয়া এখন সমপূর্ণ সতেজ। সমুদ্রের পানি স্বাভাবিক ঠান্ডা হাওয়া এখন দোল দিয়ে যায় কাশবনে
এখন সে আনন্দিত। সূর্য আর মেঘ এখন তার সাথে অভিমান করে না। সে সারারাত প্রেম করে চাদের সাথে। চাদকে সে আমন্ত্রণ জানায় পৃথিবীর মাটিতে আরতারকারাজি মিটমিটিয়ে হাসে বন্ধুর পাগলামি দেখে। পৃথিবীতে এখন কোন মানুষ নেই তাই সবাই তার আপনজন
{১১}
ধীরে-ধীরে মহাকাশযানটি নেমে আসে সবুজ ঘাসের উপর। আনন্দে আত্মহারা হয়ে বেরিয়ে আসে সাত জনের একটি অভিযাত্রীদল। দুজন নারীদুজন পুরুষ আর তিন জন শিশু-কিশোর। সবার উস্ক-খুস্ক চুলপরনে ছেড়া মলিন পোশাক। পুরুষ দুজনের হাতে দুটি ক্ষুদ্র অস্ত্র। শিশু- কিশোররা চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিল। নারী দুজন ঝোলার মধ্য হতে মানচিত্র বের করে ধরলমানচিত্র দেখে-দেখে হাটছে সবাই কবুতরের ঝাক যখন ওদের মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেলগুলির আঘাতে ছিটকে পড়ল ঘাসের উপর আর করুন আর্তনাদ ভেসে চলল বাতাসে ভর করে
চমকে উঠল সে”- আর্তনাদকরুন কান্না। এ কার কান্নাশীতল ভয়ের এক অনুভুতি বয়ে গেল ওর শরীরের মধ্য দিয়ে। তবে কি—? নাহকিছু ভাবতে পারছে না সে। মানুষ কি আবার ফিরে এল তাহলেপাখির কান্নাপশুর আর্তনাদ। এগুলো তো মানুষের উপস্থিতিরই লক্ষন। বাতাসে বারুদের গন্ধ। হ্যা সবই তো মিলে যাচ্ছে এরাই তো একদিন আমাকে নিচিহ্ন করতে চেয়েছিল। নাহকিছুতেই এটা বরদাশত করা হবে না
{১২}
দাড়াও তো রবার্ট। বলল বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বৃদ্ধটি। অভিযাত্রীর দলটি থমকে দাড়ায়
এই দেখ এটি আমাদের সেই অট্রালিকাটি নয়যেখানে আমরা শেষ সম্মেলন করেছিলামওই তো আমাদের ন্যাশনাল পালর্ামেন্টমনে আছে রবার্ট মহামান্যখাঁনের সাথে আমরা কতবার এখানে এসেছিলাম!
-হ্যাতাই তো। আর পায়ের তলায় ঘাসের নীচে তাহলে রাসত্দা। আগ্রহ ভরে বলল রবার্ট
হ্যাসেটাই তো মনে হচ্ছে
সোনামনিরা এই দেখ এটা তোমাদের আসল মাতৃভুমি। বলল এক নারী। দেখ দেখ যে সব গল্প তোমাদের শুনাতাম সেইসব অট্রালিকাগাড়ি আরো কতোকিছু। সব আমাদের জন্যই প্রস্তুতএখন আমরা সুখে শানত্দিতে বসবাস করব।। বাচ্চারা গাড়ি গুলো দেখে লাফালাফি শুরু করে দিল
জর্জ রবার্টসনবন্ধু আমার। দেখ তো এই দেয়ালে কি লেখা?
রবার্টসন এগিয়ে আসে- আরেআরেএতো আমার প্রিয়তমা মারিয়ার হাতের লেখা
খোদাই করে লেখাগুলো পড়তে লাগল রবার্ট- হে পথিক একটু দাড়াও। হে মানবতোমরা যদি ভূল করে এই গ্রহে এসে থাক তবে এখুনি ফিরে যাও। এটা পৃথিবীচির কল্যাণময় যার অর্থ। কোন যুদ্ধাংদেহী মানব কিংবা ৰমতা লোভীদের জন্য নয়। কোন মানুষ এখানে বাচতে পারবে না। তোমরা কি দেখছ না সুউচ্চ অট্রালিকাসুবিশাল আকাশসমুদ্রের ঢেউ আর প্রশসত্দ রাসত্দা এসবই একদা তাদের রাজত্বে ছিল যারা একদা সগর্বে পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াত। আজ কোথায় তারা যাদের সম্মুখেপশ্চাদে সারি-সারি নত মাথা এগিয়ে যেতবিন্দু মাত্র বিপদ যাদের স্পর্শ করতে পারত নাকিন্তু মৃত্যুর কাছে আজ সবাই পরাজিতশকুকে খেয়েছে তাদের লাশ। পড়ে আছে শুধু শূন্য কংকাল। প্রতিশোধের আগুনে কেউ টিকতে পারে নি। এখানে চলছে খেলাপ্রতিশোধের খেলাপ্রকৃতির চরম প্রতিশোধের খেলা। সে তোমাকেও ক্ষমা করবে না এখনও সময় আছে মনকে ভাবার অবকাশ দিও না। দোহাই লাগে হে মানবমহাবিশ্বে অনত্দত একটি গ্রহে মানব সভ্যতা টিকিয়ে রাখ। চলে যাও এখুনি। আর যদি দেখা পাও রবার্টসনতবে তাকে জানিও প্রিয়তমা মারিয়ার অভিনন্দন
সবার চোখের জল টপটপ করে পড়ছে। কান্নাজড়িত কন্ঠে রবার্ট বলল- কোথায় যাব মারিযামহাবিশ্বে কোথাও যে মানুষের বসবাসের যোগ্য ভূমি নেই। মঙ্গলেরঅনুপযোগী বায়ু আর পাথুরে মাটির সঙ্গে লড়াই করতে করতে অবশিষ্ট আছি আমরা এই জন
ক্লানত্দ পদক্ষেপে আবার হাটতে শুরু করল সবাই
রবিনসন দেখ থোকা-থোকা আংগুর। দেখ কত ফলজ বৃক্ষ। এখন সবই আমাদের। আমরা এখানে আবার বংশবিসত্দার করব। প্রশসত্দ রাসত্দা ধরে আবার ছুটে চলবে আমাদের গাড়িআকাশে উড়বে বিমানসমুদ্রে বিশালাকার জাহাজ। চিনত্দা কিসব তো তৈরী করাই আছে। আমাদের বংশধররা শুধূ আহরোন করবে। ঐ দেখ বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্রন্থাগারসমসত্দ জ্ঞান সংরক্ষিত আছে সেখানে। পুরো গ্রহ জুড়ে আছে কম্পিউটারের বিশাল নেটওয়ার্কজ্ঞানের অসীম ভান্ডার। সবসব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আমাদের জন্য প্রস্তুত। একটা শানত্দিময় ভূমি আমরা গড়ে তুলব
দুজনে মুঠো ভরে থোকা থোকা আংগুর পেড়ে আনল। একফালি কাপড় বিছিয়ে রাসত্দায় বসল। বোতলে ভরে আনল টাটকা পানি
-পানিআহ্ কি চমৎকার। তৃপ্তির সাথে পান করল ওরা
মুঠোভরে আংগুর মুখে পুরল সবাই। এমন সুস্বাধু খাবার বুঝি কেউ কখনো খায় নি
মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠল- কি ব্যাপার মাথা ব্যাথা করছে কেনশরীরটা এমন করছে কেন?
দাড়ানোর চেষ্টা করল সবাই কিন্তু পারল না। বিষাক্ত ফলের বিষক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেল ওরা। চোখ দুটো যেন বন্ধ হয়ে আসছেচোখ বন্ধ করার আগে সবাই দেখতে পেল আকাশে কিছু শকুন সবোচ্র্চ উচ্চতায় উড়ে বেড়াচ্ছেযেন এদিকেই ছুটে আসছে
শুধু নয় বছরের একটি বাচ্চা মেয়ে হামাগুড়ি দিয়ে একটি গাছ জড়িয়ে ধরেছেসে যেন কিছু বলতে চায়
ইমা। কেউ যেন ডাকল। চমকে উঠল মেয়েটি
ইমা। কি চাও তুমিযেন মসত্দিস্কের নিউরনের ভাজে ভাজে আবার শুনতে পেল মেয়েটি
আমাকে বাচাও। আমি বাচতে চাই। কান্না জড়িত কন্ঠে বলল ইমা
নিঃশব্দে হাসল কেউ – কেন তুমি বাচতে চাওগর্বভরে পৃথিবী প্রকম্পিত করতে চাও বলে?
নানা আমি বাচতে চাই তোমার মহিমা আর সৌন্দর্য দেখব তাই
আমি দুঃখিত ইমা। তুমি মানুষএখানে মানুষ বাচতে পারবে না। তোমাদের জন্য এটা একটা নিষিদ্ধ গ্রহ
আমি তো কোন অপরাধ করি নি
হ্যা ইমাআমি জানি তুমি পুতঃপবিত্র। পৃথিবীর সমসত্দ সুন্দর তোমার মাঝে তবুও আমি খুব দুঃখিত ইমা। হ্যাতুমি বেচে থাকবে আমার অনত্দরেফুল হয়ে ফুটবে আমারই শাখে। তুমি এখন যাও । আমি সত্যি খুব দুঃখিত ইমা
নানা আমাকে বাচতে দাও। কান্নায় থরথর করে কাপছে শরীর। কিন্তু সব নিরবকোন উত্তর এল না। ইমার নিথর দেহটি পড়ে গেল মাটিতে
{১৩}
অট্রালিকা গুলো এখন পশু-পাখিজীব-জানোয়ারের আবাসস্থল। লতা-পাতা আর গাছে ঢাকা পড়েছে বহুতল ভবনগুলো
সে এখন চরম আনন্দে উদ্বেলিত। এখন বুঝি তার মহাবিশ্বে আর কোন শত্রু অবশিষ্ট রইল না। মৌমাছিরা মধু আহরনে ব্যসত্দ। পাখিরা গাছের শাখে বসে কিচিরমিচির ডাকছে। বাতাস এসে আলতো করে চুমো খায় তার শরীরে। সমসত্দ দুঃখ বেদনা আর আত্ম-অহংকার ভূলে সে এখন বিজয়ীর বেশে দাড়িয়ে আছেএটাই বুঝি তার প্রশানত্দি কারণ সে প্রতিশোধ নিতে পেরেছে