মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১০- এক হতভাগা বিজ্ঞানীর ডায়েরি।

আমার নাম আশফাক চৌধুরী। পেশায় বিজ্ঞানী। বাংলাদেশে আমার মত বিজ্ঞানী আর একটিও জন্মায়নি। আমি ২০৫৩ ও ২০৬৬ সালে দুইবার নোবেলপুরুস্কার পাই। আমার সবচেয়ে বড় আবিষ্কারটি হচ্ছে মৃত্যুর পরও মানুষের মস্তিষ্ক সচল রাখা। তবে এর একটি সীমাবদ্ধতা আছে। আমি মানুষের শুধু মস্তিষ্কটাকেই সচল করে রাখতে পেরেছিলাম। কিন্তু মানব দেহের অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গ নয়। আমি সর্বপ্রথম এটি একজন সাধারন নভোচারীর উপর প্রয়োগ করেছিলাম। সেই নভোচারী একটি দূর্ঘটনায় মারা গিয়েছিল। আমি তার মৃত্যুর পরও তার মস্তিষ্কটি সচল রেখেছিলাম। সারাবিশ্বে আমাকে নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়েছিল তখন। কিন্তু এই সুখ বেশিদিন আমার কপালে জোটেনি। ২০৭৩ সালের ১০ ই এপ্রিল অর্থাৎ আমার জন্মদিনেই আমার মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছিল
সেদিন ছিল শুক্রবার। সাধারণত এই দিনটির বেশিরভাগ সময় আমি আমার স্ত্রীর সাথে কাটাতাম। কিন্তু সেদিন হঠাৎই আমার মাথায় কিছু ফর্মূলা আসেযেগুলোতে সফল হলে মানুষকে অমর বানানো সম্ভব। তাই ল্যাবরেটরিতে যাওয়ার জন্যে আমি ছটফট করছিলাম। আমার স্ত্রী লাবণ্য আমাকে বলল,
-আজকে আমি নিজ হাতে কেক বানিয়ে তোমাকে খাওয়াব
আমি একটু অবাক হলাম। জিজ্ঞেস করলাম,
-কেক কেন?
-বারে আজকে তোমার জন্মদিন না! শুভ জন্মদিন আশফাক
-ধন্যবাদ লাবণ্য
কিন্তু এতে আমার ছটফটানি আরো বেড়ে গেল
-তুমি এইরকম করছ কেন?
-না মানে
-খবরদার বাইরে যাওয়ার নাম নিবে না। সপ্তাহের সাতটা দিনই যদি আমি তোমাকে না পাই তাহলে আমাকে বিয়ে করেছিল কেন?
আমি হাসি। হেসে বলি,
-শুধু আজকের দিনটা মাফ করা যায় না লক্ষীটি?
আমার স্ত্রী হাতের কাছেই একটা ফুলদানি (যেটা কিনা আমার আবিষ্কার জাফনিয়াম নামে নতুন একটা ধাতব দিয়ে তৈরি এবং বাসার যাবতীয় কিছু নিয়ন্ত্রন করা যায়এটি দিয়ে) নিয়ে ধপাস করে মাটিতে ফেলে দিলেন। স্বাভাবিকভাবেই ওটা ভাঙ্গল না কারন জাফনিয়াম দিয়ে তৈরি জিনিস কখনো ভাঙ্গে না। রাগে দুঃখে আমার স্ত্রী মাটিতে পড়ে থাকা ফুলদানিটার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমি আমার স্ত্রীর কাছে গিয়ে বসলাম। তার হাত ধরে বললাম,
-রাগ করেছো?
-না। আমি কারো উপর রাগ করি না। আমি তো এতিম। আমার কেউ নাই
-এভাবে বলছ কেন?
-কিভাবে বলছি?
কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে লাবণ্য আমার বুকে মাথা রাখে। বলে,
-তুমি কি জান আমি সব সময় কত একাবোধ করি?
-হুমম। আমি জানি। তবে তুমি হার্মার (আমার আরেকটি আবিষ্কার যেটি পৃথিবীর সর্বপ্রথম আবেগ সম্পন্ন রোবট) সাথে সময় কাটাতে পার। আমার মনে হয় সে গল্প করার জন্যে চমৎকার একজন সঙ্গী
আমার স্ত্রী সামান্য ঠোঁট বেঁকে বলল,
-ধুর। হার্মার সাথে কথা বলতে গেলেই আমার কেমন যেন লাগে। রোবটের সাথে কি গল্প করা যায়?
-তুমি আগে থেকেই জান যে সে রোবটতাই তুমি একথা বলছ। নাহলে পৃথিবীর কোন মানুষের সাধ্যি নেই যে বুঝতে পারে এটা রোবট না মানুষ
কিছুক্ষন চুপ থেকে গ্লোরি বলে,
-সত্যি তোমার আজকে যাওয়া লাগবে?
তার সকরুণ কণ্ঠ আর মুখ দেখে আমার না বলতে ইচ্ছে করল কিন্তু তবু আমি বললাম,
-হ্যাঁ
-বাসার ল্যাবরেটরিতে কাজ করলে হবে না?
-না। আমাকে অফিসের ল্যাবেই যেতে হবে। ওখানে ফর্মূলার অর্ধেকটা আছে আর অর্ধেকটা আমার মাথায়
লাবণ্য এবার আরো কিছুক্ষন চুপ করে থাকে। তারপর বলে,
-এক শর্তে তোমাকে যেতে দিতে পারি?
আমি হাসলাম। লাবণ্যকে আমার বাহু বন্ধনে চাপ দিয়ে বললাম,
-কি শর্ত?
-আমার সাথে আশার কানন স্কুলে যেতে হবে
আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলাম। তবু জিজ্ঞেস করলাম,
-ওখানে গিয়ে আমি কি করব?
-তোমাকে দেখলে ওরা খুশি হবে। ওদের কাছে তুমি একজন ফ্লিমস্টারের মতই পপুলার
আশার কানন হচ্ছে এতিম এবং পথশিশুদের জন্যে স্কুল। স্কুলটা আমার বাসার কাছেই। এর সম্পূর্ণ ব্যায়ভার আমার স্ত্রী চালান। আমার স্ত্রীও এতিম। হয়তসেজন্যেই তিনি এই স্কুলটা চালু করেছেন। লাবণ্যকে আমি প্রথম দেখি এরকমই একটা স্কুলে। প্রধান অতিথি হয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। লাবণ্যর গান গাওয়া দেখে আমি মুগ্ধ হই এবং বিয়ের প্রস্তাব দেই। ভেবেছিলাম সারাজীবন একাই কাটিয়ে দিব কিন্তু গ্লোরিকে দেখার পর মনে হয়েছিলঅনেক হয়েছেএবার আমার একটা সঙ্গিনী চাই
অনেকটা সময় পার করলাম আশার কানন স্কুলে। ছেলেমেয়েদের গোল করে বসিয়ে তাদের সাথে গল্প করলাম। গ্লোরি এতে খুব খুশি হল এবং শেষ পর্যন্ত আমাকে যেতে দিতে সম্মত হল। কিন্তু কে জানত জীবিত অবস্থায় লাবণ্যর সাথে এটাই আমার শেষ দেখা
আমি আমার উড়ন্ত গাড়িটি (যেটি কিনা ভূপৃষ্ঠ থেকে চার/পাঁচ ফুট উপর দিয়ে যায়) নিয়ে নির্দিষ্ট দিকে যাত্রা শুরু করেছিলাম। কিছুদূর যাওয়ার পরেই কিছু একটা সমস্যা হয়েছে অনুভব করলাম। তবু পাত্তা দিলাম না। এক রাস্তার বাঁকে ব্রেকের সুইচে চাপ দিতেই বুঝতে পারলাম আমার গাড়ির ব্রেক কাজ করছে না। সাথেসাথে আমি গাড়ির কম্পিউটারকে ড্রাইভিংয়ের আদেশ দিলাম। সে গাড়ির স্পিড আস্তে আস্তে কমাতে লাগল। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। কিন্তু তা ক্ষনিকেরজন্যে। তারপর আবার হু হু করে গাড়ির স্পিড বাড়তে লাগল। এবার আমি সত্যি ভয় পেলাম তবু ঘাবড়ালাম না। আমার গাড়ি বর্তমান বিজ্ঞানে এক বিস্ময়সব ধরনের সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম। কিন্তু আমার বিশ্বাস ভেঙ্গে গেল একটু পড়েই। পাশেই একটা ইলেকট্রিক পোলের সাথে (অন্যকিছু হতে পারে,ঠিক খেয়াল নেই আমার) ধাক্কা খেয়ে আমার গাড়িটি শূন্যে বনবন করে ঘুরতে থাকে। ততক্ষনে কম্পিউটার স্ক্রিনে লাল অক্ষরে লেখা উঠেছে দেখলাম, “নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ভেঙ্গে পড়েছে। আমি বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকলাম। তারপরেই আবার লাল অক্ষরে লেখা উঠেছে, “ভাসমান কক্ষ ভেঙ্গে পড়েছে। আমি আমার কোমরের বেল্ট খুলে গাড়ি থেকে ঝাপ দিতে চাইলাম কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারনে আমি সেটা পারলাম না। আমাকে নিয়ে গাড়িটি মাটিতে আছড়ে পড়ল। তারপর ডিকবাজি খেতে থাকল এবং পাশেই একটি ছোট জলাশয়ে গিয়ে পড়ল। জলাশয়ের পানিতে গাড়িটি যখন ডুবে যাচ্ছিল তখন আবার কম্পিউটার স্ক্রিনে লাল অক্ষরে আবার লেখা দেখলাম, “আপনাকে ছুড়ে ফেলা হল আমি বুঝতে পারলাম এটি একটি কম্পিউটার ভাইরাস। তার কিছুক্ষন পরেই আমি চেতনা হারাইমনে হয় ঠিক তখনই আমার মৃত্যু ঘটেছিল
এরপরের ঘটনা আমি জানতে পারি ওয়ার্ল্ড ডাটা নেটওয়ার্ক (এটি বিশ্বব্যাপী বার্তা সংস্থাএখানে সব ধরনের তথ্য পাওয়া যায়) থেকে। সাতদিন পরে নিরাপত্তাকর্মীরা আমার লাশ উদ্ধার করেছিল। ততদিনে আমার সারা শরীরে পচন ধরেছে কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা হচ্ছে আমার মস্তিষ্কে তখনো পচন ধরেনি। তাইস্বাভাবিকভাবেই আমাকে খুব সহজে সনাক্ত করে নিরাপত্তা কর্মীরা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আমার মৃত্যুতে দুই দিনের শোক দিবস পালন করার আহবান জানান। মন্ত্রিপরিষদের মিটিং এ সর্বসম্মতিক্রমে সবাই রাজি হোন যে আমার আবিষ্কারটি আমার উপরেই প্রয়োগ করা হবে। অর্থাৎ আমার মস্তিষ্ক সচল রাখা হবে। কারন তারা চিন্তা করলেন আমার মস্তিষ্ক দেশের অনেক সুফল বয়ে আনবেএবং আমার সহকারীকে এর দায়িত্ব অর্পণ করলেন
এক মাস পর
ধীরে ধীরে আমি চোখ খুলে তাকালাম। একবার চোখ খুলেই আবার বন্ধ করে নিলাম। এত তীব্র আলো কেনআবার আস্তে আস্তে আমার চোখজোড়া খুললামমাথার উপর সবুজ একটা বাতি জ্বলছে যার আলো ঠিক আমার কপালের মাঝ বরাবর পড়েছে (এটি জাইকা রশ্মি যার মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্ক থেকে কম্পিউটারে ডাটা ট্রান্সফার করা হয়) আমি কোথায় আছি কিছুই বুঝতে পারি না। আমি বসে আছি না দাড়িয়ে আছি না শুয়ে আছি তাই বুঝতে পারলাম না। হঠাৎ আমার নাকে দুইটা নল আবিষ্কার করলাম। কিরকম লাল একটা তরল পদার্থ আমার নাকের মধ্যে ঢুকছে সেই নল দিয়ে (এই তরল পদার্থের নাম কলাক্সিক- মূলত এর তরলটার সাহায্যেই মানুষের মস্তিষ্ক সচল রাখা হয়)। ঠিক এ সময় ঘরের মধ্যে একটা উত্তেজনা দেখা দেয়। লোকটিকে খুব চেনা মনে হল কিন্তু এখন তাকে চিনতে পারলাম না। সে আরো তিনজন মানুষকে উত্তেজিতভাবে কিছু বলছে তারপর সবাই মিলে কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে ঝুকে পড়তে দেখলাম। আমি প্রাণপণে নিজের স্মৃতি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলাম। মানুষগুলোর একজনকে দেখলাম কার সাথে যোগাযোগ করে কথা বলছে। আমার ব্যাপারেই হয়ত,ভাবি আমি। ঠিক এসময় হঠাৎই আমার স্মৃতি ফিরে আসতে থাকে। এক্সিডেন্টের কথা মনে পড়ে যায়। আমি কি তাহলে বেঁচে আছিনিশ্চয় বেঁচে আছিপরক্ষণেই আমার ভুল ভাঙ্গে। আমার দেহ বলতে আর কিছু নেই। আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করি। তাহলে আমি কি মারা গিয়েছিএরপর আমারই ফর্মুলাই আমার মস্তিষ্ক সচল করা হয়েছেআমি আর কিছু ভাবতে পারি না। ঠিক এসময় আমার সহকারী নুরুল হুদা আমার দিকে এগিয়ে আসে
-ওয়েলকাম ব্যাক স্যার। আপনার মস্তিষ্ক সচল করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে
কেমন লাগছে স্যার?
নুরুল হুদার চেহারা দেখে হঠাৎই বলে ফেলি আমি
-আমার মৃত্যুর জন্যে তাহলে তুমিই দায়ী?
নুরুল হুদা অবাক হয়। কিন্তু সাথে সাথে সামলিয়ে নেয়। মুখে ক্রুর হাসি ফুটে উঠে
-ঠিকই ধরেছেন স্যার। আমিই দায়ী। কি করব বলেন স্যারআর কতদিন আপনার ছায়া হয়ে থাকব। আমারও তো নাম জশ খ্যাতি ইত্যাদি পেতে হবে। তাই না?
-তাই বলে আমাকে মেরে ফেললেআমি তো তোমাকে সেরকম চোখে কখনো দেখতাম না এমনকি নোবেল পুরুষ্কার নিতে গিয়েও তোমাকে সাথে নিয়ে গিয়েছিআর তুমি কিনা
-ফালতু কথা রাখেন স্যার। ওইসব লোক দেখানো কাজে আমার মনে ভরে না। লোকজন তো আপনার কথাই বলে। আমার কথা কি কেউ বলেকেউ আমাকে চিনেচিনে না
-আমি তোমাকে ধরিয়ে দিব নুরুল হুদা
নুরুল হুদা হা হা করে হেসে উঠে। বলে,
-পারবেন না স্যার। সে ক্ষমতা আপনার নেই স্যার। কারন কিছুক্ষন পর আপনার এই স্মৃতিটুকু ধ্বংস করা হবে
আমার মন বিষাদে ছেয়ে যেতে থাকে
-আমি তোমাকে অভিষাপ দেই নুরুল হুদা
-হুমমম। আমিও আপনাকে কিছু অভিশাপ দিব স্যার। সরকার আপনার মস্তিষ্ক নিয়ে কাজ করতে চা। তাদের ধারনা আপনি এখনো দেশের উপকার করতে পারবেন। কিন্তু আমি কি করে তা হতে দেই বলুন
-কি করবে তুমি?
-কালা দবিরের কথা শুনেছেন স্যারমানুষ খুন করা যার কাছে ছিল ডাল ভাত প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাছে কাল মারা গেছে বেচারা। ভাবছি তারই কিছু স্মৃতিআপনার মস্তিষ্ক দিয়ে দিব। কেউ বুঝতে পারবে না
নুরুল হুদা হা হা করে হাসতে থাকে। আর আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম
আবার যখন আমার জ্ঞান ফিরল তখন দেখলাম এক পরিচিত মুখ আমাকে ঘিরে আছে। একটু চেষ্টা করতেই বুঝতে পারলাম আমার স্ত্রী লাবণ্য
-ভাল আছ লাবণ্য
লাবণ্য কোন কথা বলল না। অশ্রু নয়নে তাকিয়ে রইল আমার দিকে। কিছুক্ষন পর ক্রন্দনরত কণ্ঠে বলল,
-যদি আমি তোমাকে যেতে না দিতাম। সব আমার দোষ। আমার কপালে সুখ নেই
আমি সান্তনা দিতে গিয়েও দিলাম না। বললাম,
-এখানে কিভাবে এলে?
-প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলাম। যদি তোমার জ্ঞান ফিরে তবে আমাকে একটি বারের জন্যে যেন দেখা করতে দেয়
-ভাল করেছ। তোমার সাহায্যই আমার এখন দরকার। হার্মারকে এখানে আনতে হবে। তার আগে ওকে নতুনভাবে প্রোগ্রাম করতে হবে
-কিভাবে?
এরপর আমি তাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিলাম। লাবণ্য চুপচাপ শুনল। ওকে বলে দিতে হল না আমি কি করতে যাচ্ছি
-কিন্তু হার্মারকে যদি না ঢুকতে দেয়?
-প্রোগ্রামটা ঠিক মত কর। তাহলেই সব হবে। এবার কথা না বাড়িয়ে প্রোগ্রামটি লিখে নাও
এরপর লাবণ্য চলে গেল। কষ্টে আমার বুকটা ফেটে গেলেও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলাম। কিছুক্ষন পর নুরুল হুদা আসল
-কি খবর স্যারজীবনটা কেমন?
আমি কিছু বললাম না
-আপনি মৃত হয়েও যে কষ্ট পাচ্ছেনআমি জীবিত হয়েও সেই কষ্ট পেতাম স্যার। শুধু আপনার জন্যে আমার কোন পরিচিতি নেই
-নুরুল হুদা তুমি আমাকে ভুল বুঝেছ
নুরুল হুদা হেসে উঠে। বলে,
-চলুন স্যার। কালা দবিরের স্মৃতি আপনার মস্তিষ্কে পাঠিয়ে দেই। তারপর আপনার স্মৃতি চিরতরে বাতাসে উড়িয়ে দিব
নুরুল হুদা হা হা করে হাসতে থাকে। তারপর কম্পিউটারের বোতামে হাত চালাতে থাকে। আমার মস্তিষ্কে তীব্র ব্যাথা হতে থাকেঠিক এসময় সিকিউরিটি ভাঙ্গারশব্দ শোনা যেতে থাকে। হার্মার যখন ঘরে ঢুকে নুরুল হুদা মনে হয় বুঝতে পারে আমি কি করতে যাচ্ছি। কিন্তু হার্মার তাকে করার কিছু সুযোগ না দিয়েই বাড়িমারে তার মাথায়। অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে নুরুল হুদা। এরপর কলাক্সিক তরলের ট্যাংকসহ আমার মস্তিষ্ক নিয়ে দ্রুত সরে পড়ে ওখান থেকে এবং আমার গোপন ল্যাবটরিতে নিয়ে আসে। এরপর বাকি কাজটুকু করে আমার স্ত্রী লাবণ্য। হার্মারের কপোট্রনের জায়গায় আমার মস্তিষ্কটি জুড়ে দেয় সেকলাক্সিকের জন্যে ছোট্ট একটা ট্যাংক বসায় হার্মারের বুকে। সফল অস্ত্রপাচার শেষে আমার যখন জ্ঞান ফিরল তখন আমার কোন বোধশক্তি নেই। কালা দবিরের স্মৃতি আমার মস্তিষ্কে দিতে গিয়ে কোন স্মৃতি আর অবিশিষ্ট ছিল না
মানুষের শৈশব আর ফিরে আসে না। কিন্তু স্মৃতি হারিয়ে ফেলার কারনে আমি শিশুর জীবন ফিরে পেলাম। লাবণ্য আমাকে মায়ের মত একটু একটু বড় করতে থাকে আমার মস্তিষ্ক হারিয়ে যাওয়ায় দেশে তোলপাড় শুরু হলেও কিছুদিন পর তা স্তিমিত হয়ে পড়ে। আস্তে আস্তে আমি আবার আগের মত হতে থাকিআবিষ্কার করি আমি আর সব স্বাভাবিক মানুষের মত নই। লাবণ্যর মুখে সব শুনে আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়
লাবণ্য আমাকে আমাদের বিয়ের ভিডিও দেখায়। আমি প্রাণপন আমার অতীত ফিরে পেতে চেষ্টা করতে থাকি। এক ভিডিওতে নুরুল হুদাকে দেখে আমি চিৎকার করে উঠি। আমার মস্তিষ্কে তীব্র ব্যাথা হতে থাকে। একসময় অজ্ঞান হয়ে পড়ি। যখন আমার জ্ঞান ফিরে তখন আমি আমার স্মৃতিশক্তি ফিরে পেয়েছি
আমি লাবণ্যকে অপেক্ষা করতে বলে ল্যাবরেটরির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। গিয়ে শুনলাম নুরুল হুদা এক্সিডেন্টে মারা গেছে। প্রতিশোধ নিতে না পারলেও আমি আমার আগের জীবন ফিরে পেলাম
পরিশিষ্ট
হার্মার আশফাক চৌধুরীর ব্যক্তিগত ডায়েরি থেকে সবকিছু জানতে পারে। আশফাক চৌধুরী তার স্ত্রীর ইন্তিকালের পর আর বেঁচে থাকার প্রয়োজন অনুভব করেননি যাওয়ার আগে তিনি হার্মারকে পুরনো স্মৃতি দিয়ে বাঁচিয়ে দিয়ে যান