মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৭- জন্মকথা

।।১।।
বাইরে কি বৃষ্টি হচ্ছেএই মধ্যরাতে এক পশলা বৃষ্টি হলে মন্দ হয় না। ভাবে শাওন। অনেক্ষন ধরেই সিডি প্লেয়ারে গান শুনছে সে। ঘরে টেবিল ল্যাম্প জ্বলছে ঠিক তার বিছানার কাছে। এই আলোতে বিছানায় শুয়ে থাকতে বেশ মজা লাগে শাওনের। আলো আঁধারিতে মন কেমন যেন খেলা খেলে যায়। কিছু না ভেবেই অনেকক্ষন কাটিয়ে দেওয়া যায় মোবাইল বাজছে কি? শাওন সিডি প্লেয়ারটা বন্ধ করে মোবাইল হাতে নেয়। কে কল করেছে না দেখেই মোবাইলটা সুইচ অফ করে দেয়। তারপর আবার সিডি প্লেয়ারটা ছেড়ে দেয়। যেন পুরো পৃথিবীর উপরই তার অনেক অভিমান জানালার পাশে এসে দাড়ায় সে। সারি সারি ছয়তলাদশতলা বিল্ডিং। চারিদিকে কৃত্রিম আলোর ছড়াছড়ি। শহরের এ দিকটা অনেক পরিষ্কার পরিছন্ন। শাওন জানালার পাশ থেকে সরে আসেসিডি প্লেয়ারটা বন্ধ করে টেবিল ল্যাম্পটা বন্ধ করে দেয় তারপর নরম বিছানায় এলিয়ে দেয় নিজেকে

ফজরের দিকে ঘুম ভেঙ্গে যায় শাওনের। তীব্র ব্যাথায় কাতরাতে থাকে সে। ডাইনিং টেবিলের দিকে ছুটে যেতে চাইল সে। কিন্তু কোথায় রুমের দরজাকিছুতেই সে দরজা খুজে পাচ্ছে না। চারিদিকে দেয়াল। তার মনে হচ্ছে ঘরের ভিতর অসংখ্য ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাকছে একসাথে। পাগলের মত চারিদিকে হাতরাতে থাকে সে। ভয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। জ্ঞান হারাবার আগে তার মুখ দিয়ে মা শব্দটি ছাড়া অন্যকিছু শোনা যাচ্ছিল না
শাওনের যখন জ্ঞান ফিরে তখন সে দেখতে পায় চারিদিকে শুধু সাদার ছড়াছড়ি। এটা কোন জায়গাসে কি মরে গেছে?
হঠাৎ মাথায় কার কোমল স্পর্শ পায় সে। কোমল স্পর্শদানকারিনীর দিকে তাকায় সে চিনতে পারে মাকে। স্মিত হাসি দেয় শাওন। বুঝতে পারে সে হাসপাতালে। গতরাতের কথা মনে পড়ে
এখন কেমন লাগছে বাবাজিজ্ঞেস করেন শাওনের মা
ভাল। অস্ফুট স্বরে উত্তর দেয় শাওন। কিছুক্ষন চুপ করে থাকে তারপর মাকে জিজ্ঞেস করে বসে,
মাআমি কি আর বাঁচব না?
শাওনের মা দিশেহারা বোধ করেন। তবু মুখে হাসি ফুটিয়ে বলেন,
ধুর পাগল। তুই মরতে যাবি কোন দুঃখেতোর কি মরার বয়স হয়েছেপাগল ছেলে
শাওন মার মুখের দিকে তাকায়। কিছু বলে না। তারপর জিজ্ঞেস করে,
আম্মু আব্বু কোথায়?
আছে। ডাক্তারদের সাথে কথা বলছে
আম্মু তোমাদের বিয়ের গল্পটা আবার শুনাবে?
শাওনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে হেসে উঠেন শাওনের মা
এক গল্প কতবার শুনবি?
বলই না। বিশেষ করে ওই জায়গাটা যখন তুমি আব্বুর হাত ধরে বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলে
কেন ওই জায়গাটা কেন?
আমার হেভি মজা লাগে। কেমন জানি সিনেমা সিনেমা ভাব আছে
ওরে দুষ্টরে
এই সময় শাওনের বাবা এসে ভিতরে ঢুকেন। মুখটা কালো। মুখ দেখেই শাওনের মা অনুমান করতে পারেন ডাক্তাররা কি বলেছেন। শাওনের মাশাওনের শক্ত করে ধরে রাখেন শাওনের লাস্ট স্টেজে ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। ঠিক পাঁচদিন পরে তার মৃত্যু হয়

।।।।
আজ রেজাল্ট বের হয়েছে। দুরু দুরু বুকে রেজাল্ট আনতে যাচ্ছে আফরিন রেজাল্ট যা ভেবেছিল তাই হয়েছে। লিস্টে তার নাম নেই। প্রফেসর মোঃ আলী তাকে পাশ করাননি। সে প্রফসরের কাছে ছুটে যায়। ওকে দেখেই প্রফেসর মোঃ আলী বলে উঠল,
- আফরিন তোমাকে আগেই বলেছিলাম১০২৫ নম্বর কোর্সটা তুমি নিও না
কিন্তু প্রফেসর?
কিন্তু কিতুমি যেসব প্রাণি তৈ্রি করেছিলে তা আমার কাছে বুদ্ধিমান মনে হয়নি। আর শারিরীকভাবে খুবই দূর্বল
কিন্তু বুদ্ধিমান প্রাণি তো শারিরীকভাবে বিচার করা হয় না। তাছাড়া তারা অনেক উন্নতি সাধন করেছিল এবং তা সম্পূর্ণ নিজেদের দক্ষতায়
না তা হয় না। বুদ্ধিমান প্রাণিগুলোর এত সহজে মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না
কিন্তু অন্যদের চেয়ে আমার প্রাণিগুলো মধ্যে কিছু ব্যতিক্রম ছিল। ওদের মধ্যে প্রেমভালবাসাসুখ-দুঃখ ছিল
অপ্রয়োজনীয় বিষয়
কিন্তু?
এখনো সময় আছেকোর্সটা পাল্টিয়ে ফেল
না
আর কোন কথা না বলে আনহা বের হয়ে আসে প্রফেসরের রুম থেকে
এরপর আফরিনকে কেউ প্রকাশ্যে দেখেনি। তবে সে বড় একটা ল্যাবরেটরি তৈরি করে যেখানে সে তার তৈ্রি প্রাণিগুলো ছেড়ে দেয়। বিস্ময়করভাবে প্রাণিগুলো এখনো বেচে আছে। কিছু তরুন বিজ্ঞানী তা আবিষ্কার করে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আফরিনকে অবশেষে স্বীকৃ্তি দেওয়া হয়। এবং ‘আফরিন ডেনামে একটা দিন ঘোষনা করে